-
ওরা তেরোজন (শেষ পর্ব)
ওরা তেরোজন (শেষ পর্ব) কে এম আশরাফুল ইসলাম সংখ্যায় ওরা বারোজন। বিলগাজনায় নকশাল গঠনের পূর্বেই তারা বিভিন্ন অপরাধমূলক দুর্ধর্ষ ক্রিয়াকলাপে জড়িত। বিলগাজনায় নব গঠিত নকশালের উদ্দেশ্য, ‘খাও দাও ফুর্তি করো, নারী নিয়ে মজা করো!’ ওদের আরও একটি মোক্ষম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল। আর তা হলো রিক্তদলকে নির্মূল করে নিজেরাই রাম রাজত্বে বিনা বাধায় অপরাধ জগতের সব কাজ করবে। দুই গ্রুপই একে অপরের অস্তিত্বের রক্তে লেখা ১০ নম্বর হুমকি। বারোজনের সাথে যোগ দেয় করম আলী । উদ্দেশ্য ভাই হত্যার বদলা নেওয়া। ফলে দুই গ্রুপই একে অপরের বিধ্বংসী নিশানায় পরিণত হয়। মাঝে মাঝেই গভীর রাতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে নিশিপুর, শ্যামাপুর,…
-
ওরা তেরোজন (২য় পর্ব)
ওরা তেরোজন (২য় পর্ব) কে এম আশরাফুল ইসলাম নিশিপুরের করম আলী সর্বহারা ছেড়ে বাড়িতে বসে আছে। এটা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। একদিন পড়ন্ত বিকেলে গোধূলি বেলায় সশস্ত্র কিছু জোয়ান এসে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তাকে ধরে নিয়ে যায়। পদ্মার কোল পার হওয়া মাত্রই একজন তার বামবাহু এক কোপে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ডান কাঁধে ঝুলিয়ে দেয়! কি পাশবিক রোমহর্ষক দৃশ্য! করম আলী নির্বিকার। ও জানে ওদের কাছে কাকুতি মিনতি করা আর পাথরের সাথে কথা বলা একই কথা। পিছনে স্বজনদের কান্নার আহাজারি। নির্দয় পাষাণেরা বীরদর্পে এগিয়ে চলে। কিছুক্ষণ অগ্রসর হয়ে করম আলীকে বলে, ── এই ব্যাটা, এইখানে গর্ত কর। নিরুপায়…
-
ওরা তেরোজন (১ম পর্ব)
ওরা তেরোজন (১ম পর্ব) কে এম আশরাফুল ইসলাম শিশু আর ক্ষমতালোভী নির্বোধের হাতে অস্ত্র বা ক্ষমতা থাকলে তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। তার খেয়াল খুশির অন্তরালে থাকে একান্তই ব্যক্তিস্বার্থ। ভারসাম্য হারিয়ে উন্মাদ বিবেকের পিঠে সওয়ার তার অর্বাচীন অভিলাষের দীঘল স্বপ্নচারিতা। মহাকালের অপ্রতিরোধ্য বহমান স্রোতে জগত জীবনের সবকিছুই অসহায়। ক্ষণিকের আস্ফালন আর লুকোচুরি যেন কচুপত্রে মুক্তা সদৃশ শিশির বিন্দু। পৃথিবীর কোনো দম্ভই স্থায়িত্ব বা প্রশংসিত হয়নি, হবেও না। পদ্মা-মেঘনার গর্ভে যে অঞ্চল বিলীন হয়, তা আবার কালচক্রে চর হিসেবে জেগে ওঠে। আবার বিলীন হয়। এ যেন প্রমত্তা নদীর স্বৈরাচারী স্বভাব। জেগে ওঠা বুকে আশ্রয় নেয় লাঠিয়াল স্বভাবের লোকগুলো। কিছু ভূমিহীন অসহায়…
-
কে এম আশরাফুল ইসলাম (গল্প), গল্প, তালিমনগর, বালিয়াডাঙ্গি, শ্যামসুন্দরপুর, সাগরকান্দি, সাগরকান্দি ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সাহিত্য
সুরেন বাবু (শেষ পর্ব)
সুরেন বাবু (শেষ পর্ব) কে এম আশরাফুল ইসলাম রেকাত শাহ, বাড়ি সাগরকান্দি ইউনিয়নের পুকুরনিয়া গ্রামে। তিনি কলকাতায় লেখাপড়া করতেন। কথিত আছে তিনি হযরত শাহ মাহতাব উদ্দিনের খাস দোয়া পেয়েছিলেন। তৎকালে রেকাত ইংরেজিতে ৯৯% নম্বর নিয়ে বাংলাখ্যাত ফলাফল করেন। বাবুজি রেকাতের পিতাকে বলেছিলেন, “রেকাত কখনো পাস করতে পারবে না। পাস করলেও টেনেটুনে।” পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে রেকাতের পিতা বাবুজিকে খবরটি জানানোর জন্য মহাখুশিতে রওয়ানা দিলেন। খুশির জোয়ারে ভাসতে ভাসতে তিনি পথ হারিয়ে অন্য পথে চলে গিয়েছিলেন। পথচারী একজন জিজ্ঞাসা করলেন, -এমন খোশ মেজাজে কোথায় যাচ্ছেন? -বাবুজির দরবারে। -আপনি পথ ভুলে গেছেন বুঝি? রেকাতের পিতার সম্বিৎ ফিরে আসে। এরপর তিনি বাবুজির দরবারে…
-
কে এম আশরাফুল ইসলাম (গল্প), গল্প, জমিদার, তালিমনগর, পুকুরনিয়া, শ্যামসুন্দরপুর, সাগরকান্দি, সাগরকান্দি ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সাহিত্য
সুরেন বাবু (২য় পর্ব)
সুরেন বাবু (২য় পর্ব) কে এম আশরাফুল ইসলাম মাধু পাগল। তাঁর বংশ পরিচয় সঠিকভাবে জানা যায়নি। শ্যামগঞ্জ হাট সংলগ্ন গ্রামের নাম পুকুরনিয়া। প্রবীণ এলাকাবাসীর বিশ্বাস তিনি অন্য এলাকা থেকে সাগরকান্দির পুকুরনিয়া গ্রামে এসে মুসাফিরের ন্যায় মো. আলী আকবরের পিতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যদিও আশ্রয় প্রদানকারী বংশ তাঁকে ঐ বংশের লোক বলেই পরিচয় দেন এবং নিজেদেরকে পরিচিত করাতে ইজ্জত ও গৌরবের বিষয় মনে করেন। বর্ণাঢ্য জীবনের কিংবদন্তি এই মাধু পাগল। সাধু, দরবেশ, সন্ন্যাসির লেবাসে থাকতেন। কখনো ধুতি পাঞ্জাবি, গলায় জপমালা, হাতে চিমটা। কখনো লাল গেরুয়া বসন। তিনি গাজায় আসক্ত ছিলেন। কথিত আছে, বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের…
-
কে এম আশরাফুল ইসলাম (গল্প), গল্প, জমিদার, তালিমনগর, পুকুরনিয়া, শ্যামসুন্দরপুর, সাগরকান্দি, সাগরকান্দি ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সাহিত্য
সুরেন বাবু (১ম পর্ব)
সুরেন বাবু (১ম পর্ব) কে এম আশরাফুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসন আমল। পাবনা জেলা ছিল সিরাজগঞ্জ মহকুমার অধীন। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। প্রশাসনিক সুবিধার্থে রাজনৈতিক মানচিত্রও পাল্টে যায়। এই পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত সাগরকান্দি ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি নানা কারণে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এখানে যেমন জন্ম নিয়েছে অত্যাচারি জমিদার; বিপরীতে জন্ম নিয়েছেন অনেক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। সাগরকান্দি বাজারের উত্তর-পূর্ব কোণ ঘেঁষে রাজবাড়ির আদলে ছিল বাবুজি সুরেন্দ্রনাথ ওরফে সুরেন বাবুর আবাসিক ভবন। প্রাসাদের পিছনে ছিল পুকুর। প্রাসাদ প্রাচীরের বাইরে প্রধান ফটক সংলগ্ন সাগরকান্দি বাজার। কথিত আছে, তখন পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে ছিল এই বাজার। পদ্মা নদীর বিশাল পরিসর…
-
রাজামারা
রাজামারা কে এম আশরাফুল ইসলাম কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত গ্রামটি প্রকৃতির অবারিত সবুজ লীলা দিয়ে নকশীকাঁথার মত বুনন দিয়ে জমিনকে সৌন্দর্যে লীলায়িত করেছে। ধান আর বিভিন্ন সবজির সমারোহ গ্রামটিকে আরও অপরূপে সজ্জিত করেছে। যেন মায়ার চাদরে ঘিরে রেখেছে। যতদূর যায় আঁখি অক্লান্তে মুগ্ধ হয়ে সব অবলোকন করে তৃপ্ত হই। আষাঢ় মাস। মেঘলা আকাশ। কখন যেন অঝর ধারায় বৃষ্টি পরে। মেঠো পথ। প্রতিদিন সাইকেল চালিয়ে যাতায়াতে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে হয়! ১৯৯৪ সাল। জয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রক্সি ক্লাস নেই। থাকি আমার পিতৃতুল্য শ্রদ্ধেয় শিক্ষক শহিদুল্লাহ স্যারের বাড়িতে। শহিদুল্লাহ স্যার উক্ত বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক। …