• রৌদ্রডোবা-চাঁদ-শেষ-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    রৌদ্রডোবা চাঁদ (শেষ পর্ব)

    রৌদ্রডোবা চাঁদ (শেষ পর্ব) আবু জাফর খান   দুজনই চুপচাপ বসে আছে। হয়তো একযুগ আগের কোনো উচ্ছ্বল মুহূর্তে দুজনই বিভোর। ট্রেন হুইসল বাজিয়েছে। লোকজন দ্রুতপায়ে ছুটছে ট্রেনের দিকে। বিদিতা উঠে পা বাড়াতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে রুদ্রর দিকে তাকাল। রুদ্র কী ভাবনায় যেন মগ্ন। তাকিয়ে আছে দূরের অন্ধকারের দিকে। বোধ হয় হুইসলের শব্দ শোনেনি রুদ্র।বিদিতা চেঁচিয়ে বলল, “অ্যাই রুদ্র, কী রে, চল ওঠ, ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে যে!” অন্যমনস্ক রুদ্র মুখ ঘুরিয়ে বিদিতার দিকে তাকাল। চোখ দুটি কী ভীষণ নির্জন! বিদিতার বুকের ভেতর হু হু করে উঠল। ঘোর-লাগা মানুষের মতো রুদ্র ফিসফিস করে বললো, “যদি আর না যাই? তবে কেমন হয়?” “মানে?”…

  • রৌদ্রডোবা-চাঁদ-২য়-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    রৌদ্রডোবা চাঁদ (২য় পর্ব)

    রৌদ্রডোবা চাঁদ (২য় পর্ব) আবু জাফর খান   সে রাতের কথা বিদিতা কখনো কোন বন্ধুকে বলেনি। রুদ্রকে সে যতদূর চেনে, সে নিশ্চিত, রুদ্রও কাউকে কিছু বলেনি। রুদ্র-বিদিতার দূরে সরে যাওয়াকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি ওদের বন্ধুরা। তারা ভেবেছিল এটি সাময়িক চিড়। কেউ কেউ মধ্যস্থতা করতে এসেছিল। বিদিতা রাজি হয়নি। নাক উঁচু বলে তাকে নিয়ে বন্ধু মহলে এক ধরনের গুঞ্জন আছে। সে বরাবরই একটু জেদি টাইপের। বিদিতা ভেবেছিল রুদ্র নিজেই এসে ক্ষমা চাইবে। তাহলেই সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। তা হয়নি। রুদ্র আসেনি আর। সেটি ছিল ফাইনাল ইয়ার। দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ছিটকে গেল এদিক-সেদিক। কেউ কারও ঠিকানা রাখেনি। বিচ্ছিন্ন…

  • রৌদ্রডোবা-চাঁদ-১ম-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    রৌদ্রডোবা চাঁদ (১ম পর্ব)

    রৌদ্রডোবা চাঁদ (১ম পর্ব) আবু জাফর খান   সুবর্ণ আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভৈরব বাজার স্টেশন ছেড়ে একটু আগে বেরিয়েছে। ট্রেনের জানালা দিয়ে মিষ্টি বিকেলটির দিকে তাকিয়ে আছে বিদিতা। দূরের আঁকাবাঁকা পথ ধরে কয়েকটি মেয়ে হেঁটে আসছে। পড়ন্ত সূর্যের সোনালি আলোয় রাঙানো তাদের মুখ। খানিক বাদেই আলোটি মুছে গেল জানালা থেকে। একটি শ্বাস ফেলে ভেতরের দিকে তাকাল বিদিতা। ট্রেনটি ধীরে ধীরে গতি বাড়াচ্ছে। দেখতে দেখতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পেরিয়ে গেল। বিদিতার পাশের সিট এখনো খালি। আখাউড়ায় ট্রেন দাঁড়াল বেশ কিছুক্ষণ। টিকেট এগজামিনার এলেন কামরায়। তখনই ব্যস্তসমস্ত হয়ে ট্রেনে উঠলেন এক সুদর্শন ভদ্রলোক, সঙ্গে এক প্রৌঢ়া। ডেনিম জিন্‌স আর খয়েরি শার্টের মানুষটিকে দেখে চমকে…

  • কপিশ-নয়ন-শেষ-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    কপিশ নয়ন (শেষ পর্ব)

    কপিশ নয়ন (শেষ পর্ব) আবু জাফর খান   ছয়. মধ্যরাত। কে যেন আব্দুর রহিত ব্যাপারীর সদর দরজায় কড়া নাড়ে। একবার দুবার নয়, অনবরত। ব্যাপারীর তন্দ্রামতো এসেছিল। সে উঠে বসে। রাগে বিরক্তিতে তার হাত-পা কাঁপছে। ভয়ও পেয়েছে। তার শত্রুর অভাব নেই। চারপাশে বৈরিতা। শত্রুসংকুল পরিবেশে তার বাস। সুহৃদ বলে কেউ নেই। আগে তবু আড়ালে আবডালে চলত। ইদানিং অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। “কে? কে কড়া নাড়ে?” রহিত ব্যাপারীর গলা কেঁপে যায়। “মামা আমি। আমি শাওন। দরজা খুলুন। প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে এসেছি। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। একটু তাড়াতাড়ি করুন।” শাওন গলা চড়িয়ে বলে। “এত রাতে আমাকে উদ্ধার করতে এসেছে! যতসব অপদার্থের…

  • কপিশ-নয়ন-৩য়-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    কপিশ নয়ন (৩য় পর্ব)

    কপিশ নয়ন (৩য় পর্ব) আবু জাফর খান   পাঁচ. রুদ্র শাওনের মন ভীষণই খারাপ। সে দিনের পর দিন উপোস করে কাটিয়েছে, তবুও এত মন খারাপ হয়নি। বছর ঘুরে এল মজু মামার খোঁজ নেই। সে চরকির মতো ঘুরে ঘুরে তাঁকে খুঁজেছে। পায়নি। শাওনের মেজাজ সপ্তমে চড়তে থাকে। সে রোষে ফুঁসতে ফুঁসতে হাটে। ক্রুদ্ধ শাওনের সমস্ত কোপ আব্দুর রহিত ব্যাপারীর ওপর। সে আর একবারই স্বার্থপর লোকটির মুখোমুখি হবে। থলির বিড়াল বের করে জনসমক্ষে লোকটিকে উদোম করে দেবে। ব্যাটা লেবাসধারী কঞ্জুস। শাওনকে চেনো না তুমি। মজহাব চৌধুরীকে বাড়িতে দেখেই আব্দুর রহিত ব্যাপারীর রক্ত ফুঁসে ওঠে। এই শালা আবার কোত্থেকে উদয় হলো! নিশ্চয়ই মাগি…

  • কপিশ-নয়ন-২য়-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    কপিশ নয়ন (২য় পর্ব)

    কপিশ নয়ন (২য় পর্ব) আবু জাফর খান তিন. মজহাব চৌধুরী ওরফে মজু মামা উচ্চ বংশীয় মানুষ। পুরুষ পরম্পরায় তাঁদের আভিজাত্য যেমন ছিল, ধন সম্পদেরও কমতি ছিল না। তাঁর বাবা ব্রিটিশ এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের আমলে পদস্থ পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি ছিলেন কর্মনিষ্ঠ অতি সজ্জন। উদারহস্ত এই পুলিশ কর্মকর্তা দু’হাতে দুঃস্থ মানুষদের দান করতেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অতি সুখের সংসার ছিল তাঁর। ছেলে-মেয়েরা অতিশয় মেধাবী। মজহাব চৌধুরী পাকিস্তান আমলে ম্যাট্রিকুলেশনে রাজশাহী বোর্ডে প্রথম হন। তিনি ইংরেজি বিষয়ে ছিলেন তুখোড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরজিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন। তাঁর মতো একজন মানুষের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও তিনি হয়ে যান ভবঘুরে ধরনের এক…

  • কপিশ-নয়ন-১ম-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    কপিশ নয়ন (১ম পর্ব)

    কপিশ নয়ন (১ম পর্ব) আবু জাফর খান এক. আব্দুর রহিত ব্যাপারী দিঘির পুব পাড়ে দাঁড়িয়ে উত্তর পাড়ের একখণ্ড জমির দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নানা প্রলোভন দেখিয়েও আজ অবধি মালিককে রাজি করাতে পারেনি। বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে নানারূপ কুটিল ফাঁদ পেতেও জমিটি হাতানো সম্ভব হয়নি। সব রকম ফন্দি-ফিকির ব্যর্থ হয়েছে। রহিত ব্যাপারীর মনের কোমল জায়গায় কাঁটার মতো কী যেন খচ করে বেঁধে। ছিয়াত্তর ঊর্ধ্ব এই লোকটির লালসা সীমাহীন। এত করেও এত পেয়েও ভিখিরির মনটি রয়ে গেছে। তারই বা দোষ কী। এ যে পরম্পরাগত প্রবৃত্তি। আব্দুর রহিত ব্যাপারী বাবা কাপড়ের পুঁটলিতে টাকা বেঁধে মাল কেনাবেচার টুকটাক ব্যবসা করত। সেই দিয়ে ১৯৪৭…

  • স্বপ্ন-গোধূলি-শেষ-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    স্বপ্ন গোধূলি (শেষ পর্ব)

    স্বপ্ন গোধূলি (শেষ পর্ব) আবু জাফর খান   পাঁচ. ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে মাস ছয়েক হলো মিস অরুশি চৌধুরী মৃত্যুর প্রহর গুণছে। দিন যায়, রাত আসে। একেকটি রাতকে তার কাছে বড় বেশি প্রলম্বিত মনে হয়। রাত কিছুতেই ফুরায় না। যেন থমকে দাঁড়িয়ে থাকে, এগোয়ই না। প্রত্যূষে পুবাকাশ যখন আরক্ত আভা ছড়ায়, ভীষণ ভালো লাগে তার। কারা কর্তৃপক্ষ অরুশিকে জানিয়েছে, হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে। অরুশি জানে, উচ্চতর আদালত ফাঁসির আদেশ অনুমোদন করলে অনুমোদনের তারিখ থেকে একুশতম দিন থেকে আটাশতম দিনের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ইতোমধ্যে ষোলোদিন পেরিয়ে গেছে। তার মানে পৃথিবীর আলো বাতাসে…

  • স্বপ্ন-গোধূলি-২য়-পর্ব; www.amadersujanagar.com
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    স্বপ্ন গোধূলি (২য় পর্ব)

    স্বপ্ন গোধূলি (২য় পর্ব) আবু জাফর খান   তিন. আদালত প্রাঙ্গণে উপচেপড়া ভিড়। লোকে লোকারণ্য। কোথাও একতিল জায়গা খালি নেই। শহর, শহরতলি, এমন কি গ্রাম থেকেও মানুষ ছুটে এসেছে। আজ সেই চাঞ্চল্যকর মামলার রায়। প্রতিটি দৈনিকে মর্মস্পর্শী শিরোনাম করা হয়েছে। লোকজন হামলে পড়েছে খবরটির ওপর। অরুশিকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো। কালো আলখাল্লায় মোড়া বিচারক এসে এজলাসে বসলেন। আদালতে পিন পতন নিস্তব্ধতা। ব্যারিস্টার এম আলি চুপচাপ বসে আছেন। তিনি নিশ্চিত জানেন, রায় কী হবে। তিনি তাই পরবর্তী করণীয় নিয়ে ভাবছেন। প্রসূন আহমেদ এক কোণে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে। তার দৃষ্টি অরুশির মুখে স্থির। তার বুকের ভেতর মহাপ্রলয়ের যে তাণ্ডব চলছে,…

  • স্বপ্ন-গোধূলি-১ম-পর্ব
    আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

    স্বপ্ন গোধূলি (১ম পর্ব)

    স্বপ্ন গোধূলি (১ম পর্ব) আবু জাফর খান   এক. মহিলা ওয়ার্ডের প্রায় অন্ধকার কক্ষের দেয়াল ঘেঁষে পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে ঘুলঘুলিতে চোখ রেখে আকাশ দেখার বৃথা চেষ্টা করছে মেয়েটি। কতকাল সে ভোরের আকাশ দেখেনি। আজ কি মেঘ করেছে? এত অন্ধকার কেন? মাঝে মাঝে মেঘের মৃদুগম্ভীর ডাক কানে আসছে যেন। এটি কোন মাস মেয়েটি কিছুতেই মনে করতে পারে না। শুধু মনে পড়ে, কৈশোরে প্রত্যুষে প্রাতঃকৃত্য সেরে খিড়কি দ্বার খুলে পায়ে পায়ে গাঁয়ের মেঠোপথের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে পূবাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকত সে। ভোরের মোলায়েম বাতাসে গা জুড়িয়ে যেত। পূবের ফিকে লাল আকাশ ক্রমশ রক্তবর্ণ হয়ে উঠত এবং অতঃপর আরক্ত…

error: Content is protected !!