-
মেঘে যতো জল
মেঘে যতো জল ফজলুল হক ভীষণ তাড়াহুড়ো মুক্তি চাইছো? অথচ দুজনার অভিন্ন স্বপ্ন ছিলো, একটা ছোট্ট ঘর হবে ঘরের এক কোণে মেঠোফুলের ফুল সজ্জা, ছোট শিশুর হামাগুড়ি ও আধো আধো বোলে শব্দ অন্বেষার শব্দে আমাদের ঘরটি দিনে দিনে বাড়ি হয়ে উঠবে, শুরু হবে একটি নতুন গল্পের পথচলা। সংসারে অনেক অভাব থাকবে আমি একটু একটু করে পূরণের চেষ্টায় ক্লান্ত হয়ে যখন বাসায় ফিরবো তুমি তখন তালপাখা দিয়ে বাতাস করতে করতে মনের খোঁজ জেনে নেবে; হৃদয় ভিটেয় জ্বলে উঠা আগুন নিভিয়ে লজ্জা লুকানো হাসি মুখে বলবে,শোনো খুকির বাপ আমার এত্তো কিছু দরকার নাই, একবেলা পান্তা হলেই চলবে। কথা ছিলো সংসার পাতার…
-
কালের উঠোন
কালের উঠোন __// ফজলুল হক প্রস্থানেই যদি সব শেষ হয়ে যায় সে নাম লিখো না হৃদয়-খাতায়, বেলা শেষে যদি দেখো অনাদরে পড়ে আছে গোপন কথার খোলা সিন্দুক, ভেবে নিও কোনো কথা হয়নি লেখা হৃদয়-গভীরে। গগনে মধ্য দুপুরের সূর্য্যের মতো যে আগুন বিলায় ভালোবাসা মন বলে সে শুধু পোড়াতেই জানে। কেউ একজন আসে দীঘল পথের মতো সুবিস্তীর্ণ সময় সাথে নিয়ে, সুরভিত শয্যা-আলিঙ্গনে হৃদয় খামে লিখে ঠিকানা বিলাসী। তারপরও কালের অমোঘ নিয়মে অন্তর্হিত হলে, সাড়ম্বর পড়ে থাকে সেই মাধবী রাত অমল আলোয় গড়া জাগতিক রঙের সংসার। অতঃপর আরো কিছুদিন গেলে প্রস্থিত এই তুমি স্মৃতির সম্ভার ফুঁড়ে হয়ে ওঠো গুরুত্বহীন গদ্য রচনা;…
-
বেওয়ারিশ অশ্রু
বেওয়ারিশ অশ্রু ফজলুল হক এতোদিন পরেও দেখো কোলাহলময় স্মৃতির চত্বর জীবনের মতোই যেনো ব্যস্ত, শুধু নতুনের ভীড়ে বদলে গেছে সময়ের আয়োজন। এভাবেই গল্প মুছে আর এক গল্পের পাণ্ডুলিপি লিখে যায় প্রত্নতাত্ত্বিক সময়, কালের আবর্তে মানুষ হয়ে ওঠে স্মৃতির শিরোনাম। মনে আছে তোমার? শেষবার কোথায় দেখা হয়েছিলো? অভিমানে চোখ নামিয়ে বললে, হবে হয়ত প্রিয় ক্যাম্পাসে, গোধূলির কফিশপে অথবা মেঠোপথে; ভাগ্যিস বলোনি যে, কখনো দেখা হয়নি তো। বিষাদের ক্লান্তি ছাপিয়ে কী যেনো একান্ত ভাবতেই তোমার বেওয়ারিশ অশ্রু নিঃশব্দে গড়িয়ে গড়িয়ে তৃষ্ণার্ত মাটিকে করে গেলো ঋণী, আমি জেনে গেলাম জল নিঃসরণের ইতিবৃত্ত ভালো নেই তুমি ঠিক আগের মতো। আর কখনো…
-
সীমাবদ্ধতা
সীমাবদ্ধতা ফজলুল হক অগণন বিবর্ণ চুলে বয়স গুনছো? জানিয়ে দিলাম- প্রতিটি ধূসর চুলে এক একটি বছর লুকিয়ে রেখেছি; স্বচ্ছলতার কথা ভাবছো? আমার সীমাবদ্ধতার দিকে তাকিয়ে দ্যাখো, পূরণের উপায় নেই জেনে অভাবগুলো ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে; কী খাই, কী পরি-এসব জানাও একান্ত দরকার, তাই তো? বন্ধ হেঁসেলের সকরুণ কান্না শোনো, কতোবার আশ্বাস দিয়েও তার জ্বলে ওঠার উপকরণ দিতে ব্যর্থ হয়েছি। বাঁশ-বিছানায় বসে চালের ফুটোয় যখন আকাশের তারা দেখতে পাবে বৃষ্টিতে ঘরে-বাইরে যখন তেমন কোনো ব্যবধান খুঁজে পাবে না তখনই বুঝতে পারবে আমার মাথা গুঁজবার ঠাঁই আর তৈজসপত্র কতো নাজুক! দৈন্যের কাছে হেরে যাই বারবার সময়ের ধূসর আয়নায় থমকে দাঁড়াই! আর…
-
মেঠোপথে
মেঠোপথে ফজলুল হক সবুজ কুঁজবন আর মাঠ অবিশ্রামী মানুষের পাহারায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে খড়কুটোর সারি সারি ঘর, কুয়াশার কান্না শেষে সোনালি রোদের অকৃপণ হাসি শীর্ণ দেহে উষ্ণতার প্রলেপ; পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত সবুজ ঝোপঝাড়– মাঝের সরু আলটি ধরে চলে গেছে কোন সুদূরের গ্রাম, যেনো সোনালি-সবুজে আঁকা চিরচেনা জীবনের আল্পনা। রাখালের ভাটিয়ালি গান কৃষাণ কৃষাণীর মনে ছন্দের দোলা, কী করে ভুলি আমিও যে এই মাটিরই সন্তান! বিধবা মায়ের একাকীত্বতা আঁকে ধূসর জীবনের আল্পনা, ঋণের বোঝা মাথায় ফিরবো ফিরবো করে ফেরা হয় না, তারপর ফেরা হলো। শিশিরভেজা মেঠোপথে বেদনার দীপ নিভে জীবন উপভোগ করি ফসলের লকলকে ডগায়; রিক্ত নীড়ে হেসে…
-
নিঃসঙ্গ নির্জনতা
নিঃসঙ্গ নির্জনতা ফজলুল হক স্বাধীনতাকে ভালোবাসার আঁচলে বাঁধতে পারিনি; খাঁচায় একটি পাখি পুষতে ব্যস্ত ছিলাম- গম ও চালের মিহিদানা সরিষা, ঘাসের কচি ডগাসহ সবকিছু খেতে দিতাম। কাছে গেলেই ঠোঁট বের করে সোহাগ ঢেলে দিতো হরহামেশায়, একদিন খাঁচা খুলে আদর করতেই সুযোগ বুঝে বাঁধন ছিঁড়ে ডানা মেলে উড়ে গেলো আকাশে! আমি নির্বাক হয়ে ডানার স্বাধীনতা দেখছিলাম। অনুভবে শিহরণ জাগে এমন একটি নরম হাত যেনো পিঠে স্পর্শ করে অদ্ভুতভাবে বললো, তুমি পাখিটাকে খাঁচাবদ্ধ করে রেখেছিলে-এর নাম নির্যাতন তিনবেলা খাবার দিয়েছো- এর নাম অনুগ্রহ বা দয়া আর পাখিটা ডানা মেলে উড়ে গেলো- এর নাম স্বাধীনতা। ঘোর কেটে গেলো ততোক্ষণে নিঃসীম নিঃসঙ্গতায় ডুবে…
-
প্রতিবেশি সমাচার
প্রতিবেশি সমাচার ফজলুল হক দাদি প্রায়ই বলতেন গাছগাছালিতে ঘেরা গ্রামের এ্যাতো বড় বাড়ি, দেড় বিঘা পুকুর- গৃহপালিত পশুপাখি পালন না করলে হয় নাকি? মাচান থেকে ধান নিয়ে হাটে গেলাম চার জোড়া হাঁস কিনে ফিরলাম- উঠোনের একপাশে তাদের জন্য ঘর তৈরি করা হলো। পাড়ায় পড়ে গেলো হৈচৈ বাড়ির ছোট সদস্যদের উৎসাহের কোনো কমতি নেই। প্রথম কয়েকদিন হাঁসগুলোকে সকালে ঘর থেকে বের করে পুকুরে নিয়ে যাই বেলাশেষে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসি নিরাপদ আশ্রয়ে, সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতে ওরা নিজেরাই চেনা পথ ধরে প্রতিদিন নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে লাগলো, যতোক্ষণ আঙিনার ভেতরে থাকে সমস্বরে ডাকাডাকি করে। মা বলেন,ওদের পেটে খিদে বাবা বলেন, নতুন…
-
নতুন জলের ঘ্রাণ
নতুন জলের ঘ্রাণ ___// ফজলুল হক পথটি ছিল অভিন্ন বেড়ে গ্যাছে দূরত্ব; মনে পড়ে? অযুত অভিমানে মুখ লুকিয়ে অপেক্ষা করতে একটা চেনা কণ্ঠস্বরের জন্যে, সোনালি স্বপ্নের হাতছানিতে তোমার তুমিতে নতজানু হয়েছো যতো, মহাকালের স্রোতে পাশে ডেকে তারচেয়ে বেশি করেছো ঋণী। ইদানীং হোঁচট খাই অথচ এ পথেই একদিন পদধাপ ফেলতাম তোমারই নামে। পুরাতন কাঁথার নকশী সুতোর ঘ্রাণ তোমাকে আর আকৃষ্ট করে না, নতুন জলের ঘ্রাণে উড়িয়ে দিয়েছো রঙিন পাল। ভুল করে হয়ত ভুলে গ্যাছো সেই দিনগুলোর কথা- অনিদ্রার অযুহাতে জেগে জেগে তারা গুনতে বর্ধিত ভালোবাসার নামে, মান ভাঙাতে জড়িয়ে দিতে অনুরাগের কোমল ছোঁয়া। সেই তুমি কী এক ব্যগ্রতায় রচনা…
-
এক জোড়া আয়ত চোখ
এক জোড়া আয়ত চোখ ফজলুল হক কফিনটা খোলা হলো ডুকরে কেঁদে উঠলো টুঙ্গিপাড়ার মাটি! তখনও নেতার শরীর হতে রক্ত ঝরছিলো, যেনো একটি মানচিত্রের ক্ষত-বিক্ষত ব্যবচ্ছেদ! সেদিন দীর্ঘতর হয়েছিলো অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর মিছিল, কলংকিত ইতিহাসের রসদ জুগিয়ে লাল-সবুজের পতাকা ঘিরে ক্ষমতালিপসু কিছু শকুনের অকৃতজ্ঞ উল্লাস। একজোড়া নিথর আয়ত চোখ আজও যেনো চেয়ে আছে চেতনার পথজুড়ে, চোখের ভাষায় বলছেন কথা শপথ ভেঙো না কেউ। ছয়চল্লিশের বারান্দায় দাঁড়িয়ে এখনও আঁচড় কাটে মানচিত্রে, স্বাধীনতার শরীর থেকে রক্ত ঝরে থেমে থেমে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের কালো থাবায়, এ দায়,এ লজ্জা কী শুধুই সার্বভৌমত্বের! কোথায় স্বাধীনচেতা দেশ প্রেমিকের দল হৃদয়-বিবেক কি জেগে উঠবে না? নেতা কি আর একবার আহ্বান…
-
যদি বেঁচে যাই
যদি বেঁচে যাই ফজলুল হক কোভিড ১৯, রাক্ষুসে সময়ে ভাগ্যক্রমে যদি বেঁচে যাই- স্বাক্ষী হয়ে অনাগত প্রজন্মকে বলে যাবো অভিশপ্ত জীবনের কথা। বলে যাবো- অখণ্ড এক আকাশের নীচে ধর্ম-বর্ণ ও জাতিভেদে ক্ষমতা লড়াইয়ের সিন্ধুসম বিষাদ গল্পকথা। যুদ্ধের দামামা বাজলে- মরণাস্ত্র ধ্বংসের খেলায় কীভাবে মেতে ওঠে, কীভাবে তোর জন্ম হলো কীভাবেই-বা মানুষের অভিন্ন রক্তে ভাসে রণতরী–সব বলে যাবো যতদূর পারি। আরো যা যা বলবো- কেনো আজ অখণ্ড আকাশ খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত! সব-ই মানুষের অনাসৃষ্টি। যদি বেঁচে ফিরি- প্রাণপণ চেষ্টা করব মানবিকতার শরীর ছুঁয়ে নিজেকে বদলে ফেলতে, প্রেয়সির চাপা কান্নার জল মুছে প্রতারকের তালিকা থেকে কেটে নিবো নিজের কলংকৃত নাম। যদি…