-
প্রজ্বলিত স্মৃতি
প্রজ্বলিত স্মৃতি জাহাঙ্গীর পানু আজ এই পড়ন্ত অবেলায় কৃষ্ণচূড়ার তলায় দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রশ্ন করি কোথাও কী একটু অবসর ছিল না? একান্তে নিজেকে জানিবার, বুঝিবার। এইতো সেদিন – গোলাপের পাপড়ি আর শিউলি ফুলের মালা হাতে নিয়ে এসে বলেছিল- “প্রিয়তমেসু, অল্প সময়ের জীবনে আমাদের চাওয়াগুলো অফুরন্ত, নিটোল। জানি তোমাকে পাব না! কিন্তু আজ এই পড়ন্ত বিকেলে নীলাকাশকে স্বাক্ষী রেখে বলে গেলুম, তোমাকে জীবনে হারাতেও চাই না আমি রব নিরবে তোমার শয়নে, স্বপনে, তোমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দনে।” শাব্দিক কথা শেষ হয়েছিল পুস্পিতার । কিন্তু! তার প্রতিটি নিশ্বাসের হা-হুতাশের উচ্চারিত বাক্যগুলো ছিল খুবই স্পষ্ট এবং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। তার কথার গভীরতা সেদিন বুঝিনি। কিন্ত আজ…
-
আত্মশুদ্ধির মাস
আত্মশুদ্ধির মাস জাহাঙ্গীর পানু স্বাগতম হে মাহে রমাদান। তোমার আগমনে হৃদয় হয় স্পন্দনে উদ্বেলিত। মহান রবের প্রতি চির কৃতজ্ঞতায় হয়েছি মোরা ধন্য। আপন শরীরের অযাচিত আবর্জনা ধুয়ে মুছে পরিষ্কার হয়ে যাক; আদায় হোক দেহের পরিপূর্ণ যাকাত। মানবতার মুক্তির সনদ কোরআনের আগমনে বেড়েছে তোমার সম্মান; সত্য মিথ্যার পার্থক্য বুঝে আমরা করি মহান স্রষ্টার গুণগান। তোমার মাধ্যমে মহান স্রষ্টা সুযোগ দিয়েছে তাঁর সম্পর্কে জানিবার মানবজাতির সহজে সুযোগ হয়েছে মহান প্রতিপালককে চিনিবার। রহমত, বরকত আর মাগফেরাতের মাস দোযখ হতে মুক্তি যেন অতিরিক্ত বোনাস। ভোররাতে খাদ্য তালিকায় বরকতময় সাহরি, আর সুর্যাস্তের পর দোয়া কবুলের আনন্দময় ইফতারি। মানুষের কল্যাণে রয়েছে নামাজ তারাবিহ, রাতের ইবাদাত যেন…
-
একুশ মানে, দুয়ারে একুশ
একুশ মানে জাহাঙ্গীর পানু একুশ মানে – ফাগুন মাসের ঠান্ডা হাওয়ায় তপ্ত মনের উচ্ছাস। বাংলা মায়ের দামাল ছেলের বীরত্বগাঁথা উপন্যাস। একুশ মানে – কৃষকের মুখের হাসি স্বপ্নবোনা সোনার মাঠ। নদীতটের বটতলার বিকিকিনির গঞ্জ হাট। একুশ মানে – কিশোরীর মলিন ঠোঁটে মুক্ত আলোর বিচ্ছুরণ। সন্ধেবেলা পড়তে বসা খোকার কণ্ঠের উচ্চারণ। একুশ মানে – পাতা ঝরা শেষ বিকেলের মুক্ত ধরার প্রাণ। মধুর সুরে গেয়ে যাওয়া কোকিল পাখির গান। একুশ মানে – শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার লাল বর্ণে ধারণ। রাজপথে দামাল ছেলের রক্তমাখা বসন। একুশ মানে – নদীর বুকে মাঝির কণ্ঠে ভাটিয়ালি সুর। উর্দুই শুধু রাষ্ট্র ভাষার দম্ভ ভেঙে চুর। একুশ মানে – আঞ্চলিকতার…
-
ঘনঘটা
ঘনঘটা জাহাঙ্গীর পানু গভীর রজনী হবে কী প্রত্যাশিত ভোর? নতুন আলোয় হাসবে কী কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতি? আচমকা রাত জেগে চিন্তাক্লিষ্ট ভাবাবেগ নিয়ে নিশাচর পাখির সাথে মিতালি। নতুন আলোয় উদ্ভাসিত ভোরের অপেক্ষায় চৌদ্দ শিকায় বন্দিদের আর্তনাদ কোনো দিশা খুঁজে পায় না হাওয়ায় উড়তে থাকা সাদা সিংহ শাবকের দল। অভিনয়ের আগুনে জীবন্ত চিতায় পোড়ে শত মানুষের স্বপ্ন। আতঙ্কিত সিংহাসনের কাঁপুনিতে রাজপথে রক্তিম হয় গার্মেন্টসের সাদা সুতো। উদাস দুপুরে আকাশের পানে ছলছল করে চেয়ে থাকে পিতৃস্নেহ বঞ্চিত শিশুর চোখ; আবার কবে আসবে ফিরে আপন গৃহে। জনগণের সেবায় নিয়োজিত পাইক পেয়াদারা আজ সিংহাসনের খুটি ধরে বসে আছে; যদি আবার পরে যায়, উন্মত্ত হাওয়ায়। থমথমে রাজপথের…
-
তুমি কাঁদিতেছ কেন, অযাচিত অহমিকা
তুমি কাঁদিতেছ কেন? জাহাঙ্গীর পানু শীতকালে এমন বৃষ্টি দেখিনি কখনো! ব্যথিত হৃদয়ে তুমি কাঁদিতেছ কেন? নেই বৈশাখের ইশান কোণের নিকষ কালো মেঘ নেই আষাঢ়ের কালো মেঘের ঘনঘটা তবে কেন তোমার চোখে ঝরছে বারিধারা। হঠাৎ সঙ্গীহারা কোনো যুবতীর আর্তনাদের মতো ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ নীড়হারা আশ্রয়হীন পাখির মতো যেমন কাঁদে ব্যর্থ প্রেমিকের বিধ্বস্ত হৃদয় ; অনেক জমানো কথা না বলার অভিযোগে- আশাহত পৌষ তুমি কাঁদিতেছ কেন? নেই নদীর উত্তাল তরঙ্গের প্রথাগত আস্ফালন নেই শ্রাবণের বিরামহীন বারিধারার প্রচণ্ড ঢল নেই নদী স্রোতের তোরে নদীভাঙা কোনো জনপদ তবে কেনো নদীগর্ভে সব হারানো রমণীর মতো- নির্লীপ্ত মাঘ তুমি কাঁদিতেছ কেন? নেই দখলদার কোনো রাজার রক্তচক্ষুর…
-
বেকারত্ব, বনের পশু, ধূসর স্মৃতি
বেকারত্ব জাহাঙ্গীর পানু বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে হেঁটে চলছে ফুটপাত ধরে দমকা হাওয়ায় উড়ে উস্কো খুস্ক মাথার চুল লোকাল বাসের ভাড়া মিটিয়ে চলছে হেটে দিতে হবে মৌখিক পরীক্ষা অনেকদিন ধরে শুধু ইন্টারভিউ দিয়ে চলেছে গ্রামের অজপাড়াগাঁয়ের বেকার ছেলেটি কিন্তু সরকারি চাকুরীতো দূরের কথা কোনো বেসরকারি চাকুরীও ভাগ্যে জোটে না। শরীরের ঘামে অনার্স প্রথম বর্ষে বাবার কিনে দেয়া হাত ঘড়িটা কেমন যেনো কালচে হয়ে গেছে। অনেকদিন হলো একজোড়া নতুন জুতা কেনা হয় না; একপাশে ক্ষয়ে গেছে, দ্রুত হাঁটতে গেলে অনেক অসুবিধা হয়। বাড়িতে অসুস্থ বাবা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে ছেলের ভালো একটা চাকুরী হবে, ছোট বোনের বিয়ের বয়স হয়েছে মা বলেছে,…
-
অন্ধকারের জ্যোতি, যখন সন্ধ্যা আসন্ন, ক্ষতচিহ্ন
অন্ধকারের জ্যোতি জাহাঙ্গীর পানু নিকষ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত ধরণী অসভ্য মানবতা ধ্বংস সামাজিক রীতি। চারিদিকে হত্যাযজ্ঞ নেই মানবিক গুণাবলী বহু ঈশ্বর বিভক্তিতে জ্বলছে পূজার দীপালি। আদিকালের আবাসভূমি মূল্যহীন মান সৃষ্টিতত্ত্বের শিকড় মূল ইবরাহিমের দান। স্বীয় পুত্রের পদাঘাতে বইলো ঝর্ণাধারা অনুর্বর বাক্কা হলো সজিবতায় ভরা। মধ্যগগণে উঠলো চাঁদ স্নিগ্ধ হলো ধরিত্রী অন্ধকার কেটে গেলো সভ্য সমাজ রীতি। হস্তে তব ঐশীবাণী হবে না পথ বিচ্যুতি মানবতার মুক্তির বাহক অন্ধকারের জ্যোতি। আরও পড়ুন কবি জাহাঙ্গীর পানুর কবিতা- শ্বাশত বাণী বেকারত্ব যখন সন্ধ্যা আসন্ন অস্তগামী সূর্যের লালিমার রক্তিম আভার আলোকছটা পেরিয়ে পৃথিবীর বুকে নামে সন্ধ্যা। পাখির কিচিরমিচির কলকাকলি থেমে আসে ফিরে চলে…
-
শ্বাশত বাণী, স্রষ্টার লীলাশৈলী, সৌখিন কবি
শ্বাশত বাণী জাহাঙ্গীর পানু পৃথিবী নিমজ্জিত ছিল আচ্ছন্ন অন্ধকারে। বিপন্ন মানবতা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন মরু প্রান্তর পাহাড় বেষ্টিত কা’বার চত্বরে বিশৃঙ্খল পরিবেশ মদ, জুয়া ও নারীর প্রতি আসক্তিতে নৈতিক স্খলন আন্তঃগোত্রীয় কলহপূর্ণ সামাজিক অবক্ষয়। আসিল নতুন সুর্য সাথে নিয়ে স্রষ্টার অমিয় বাণী। পাঠে তার হৃদয় হয় বিহ্বলিত, সুরের মুর্চ্ছনায় আচ্ছন্ন হয় গোটা সৃষ্টিকুল। নিবিষ্ট চিত্তে শ্রবণে সমস্ত মানব জাতি পায় আত্মতুষ্টি পথহারা পাখি ফিরে পায় তার আপন নীড়ের ঠিকানা বিজ্ঞানীরা গবেষণায় খুঁজে পায় নতুন আবিস্কারের সূত্র আউলিয়ারা পায় তাঁদের মহান স্রষ্টার সান্নিধ্য। সাধারণ মানবকূল জীবন যাপনে পায় সহজ সরল পথ নশ্বর পৃথিবীর কোলাহলপূর্ণ, মিছে মায়া শেষে যে পথ তাকে নিয়ে যাবে-…
-
স্বপ্ন ও স্বাধীনতা, অস্পৃশ্য স্বপ্ন, বাংলার কৃষক
স্বপ্ন ও স্বাধীনতা জাহাঙ্গীর পানু আমার স্বপ্ন দেখা স্বাধীনতাকে ঘিরে অবারিত দিগন্ত জোড়া সবুজ ধানক্ষেতে মৃদু হাওয়ায় দোল খাওয়া পাখির কলকাকলীতে কেটে যায় ভোর স্রোতস্বিনী পদ্মার কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে দেখা ঢেউ বয়ে যাওয়া ফাগুনের গাছের ডালে গজানো কচি পাতার নিঃশব্দে বেড়ে ওঠা, আনন্দে উদ্বেলিত বিকেলের সবুজ প্রান্তরে শিশু কিশোরের ছোটাছুটি, সকালে পূব আকাশে সোনালী রঙে উদিত হওয়া রুপালী রবি। পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় ঝলমলে শ্রাবণের কুমারী নদী। আমার স্বপ্ন বুনন স্বাধীনতাকে নিয়ে ইচ্ছের স্বপ্নেরা যেন থমকে না যায় পথহারা পাখিদের ভিড়ে, মানবিক মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য জীবন যাবে না অন্যের পানে চেয়ে। নারীর সম্ভ্রম যেন না যায় অন্যের লালায়িত জিঘাংসা…
-
স্বাধীনতার সাধ, আমার যতো ভালবাসার ঋণ
স্বাধীনতার সাধ জাহাঙ্গীর পানু ফুলের সাথে পাখীর সাথে করবো আমি প্রীতি নদীর মাঝির ভাটিয়ালি সুরে শুনবো আমি গীতি। চাঁদনী রাতে জোস্না মেখে তারার পানে চেয়ে রহস্য ঘেরা সপ্ত আকাশ দেখবো অবাক হয়ে। সবুজে ঘেরা বনভূমিতে নানান পশুর মেলা বন বাদারে তাদের সাথে করবো আমি খেলা। নদীর বুকে ভাসবো আমি বানিয়ে কাঠের ভেলা। পাতাল পুরি দেখবো সেথা করবো না আর হেলা। মেঘ হয়ে ভাসবো আমি নীল আকাশের পানে পাখির চোখে দেখবো আমি বিশ্ব জগৎ টাকে। পাখির বেশে আকাশ পানে উড়বো সবার আগে ইচ্ছে মতো স্বাধীনতার সাধ যে মনে জাগে। আমার যতো ভালবাসার ঋণ বার…