-
হোড় জমিদার বাড়ি
হোড় জমিদার বাড়ি পাবনার সুজানগর উপজেলার হাটখালি ইউনিয়নের কামালপুর গ্রাম, সুপ্রাচীনকালের স্মৃতিবাহী, ঐতিহ্যের বাতিঘর। এ গ্রামের মাটি গভীরভাবে ধারণ করে আছে অতীতের গৌরব, স্মৃতি, আর বংশপরম্পরায় চলে আসা প্রতাপের গল্প। এ গ্রামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো হোড় জমিদার বাড়ি—একসময়কার ক্ষমতার প্রতীক, প্রভাবশালী হোড়ে বংশের কীর্তির সাক্ষী। সময়ের আবর্তে হয়তো ধূসরিত হয়েছে সেই দিনগুলো, কিন্তু ইতিহাসের পাতায় রয়ে গেছে তাদের স্মৃতি। হোড়ে বংশের দুজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, শ্রীনাথ হোড় ও অক্ষয়কুমার হোড়, ছিলেন এ জমিদার বাড়ির মূল কর্ণধার। তারা শুধুমাত্র ধনসম্পত্তির অধিকারীই ছিলেন না, ছিলেন এ জনপদের শাসক। দুলাই জমিদার আজিম চৌধুরীর অধীনস্থ থাকলেও, হোড়ে বংশের জমিদাররা ছিল তাদের নিজস্ব অঞ্চলে একচ্ছত্র…
-
বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশ পরিচয়
বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশ পরিচয় পাবনার সুজানগর উপজেলায় দুইজন বড় জমিদারের দেখা মেলে। তার মধ্যে একজন তাঁতিবন্দের চৌধুরী জমিদার এবং অপরজন দুলাইয়ের জমিদার আজিম চৌধুরী। তাঁতিবন্দ চৌধুরী জমিদাররা শুধু সুজানগর উপজেলার মধ্যে নয়, পাবনা জেলার মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন। এরা ছিলেন বারেন্দ্র শ্রোত্রীয় ব্রাহ্মণ; এদের পূর্ব উপাধি সান্যাল। এদের আদি নিবাস ছিল চাটমোহর উপজেলার বোঁথর গ্রামে। এ জমিদার বংশের পূর্বপুরুষ রাজবল্লভ চৌধুরী তার মায়ের সঙ্গে শৈশবে এসে তাঁতিবন্দের অদূরে চণ্ডীপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। পূর্বে তাঁতিবন্দে কুলিন ব্রাহ্মণ ছিল না। পরবর্তীতে উপেন্দ্রনারায়ণ ও তার বংশধরদের সময়ে কুলিন ব্রাহ্মণদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দান করে তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করলে, তারা…
-
কালো কঙ্কাল (১ম পর্ব)
কালো কঙ্কাল (১ম পর্ব) সাইফুর রহমান তালেব মিয়াকে দেখলে যে কোনো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষেরই চমকে ওঠার কথা। এত মানুষ নয়, যেন জীবন্ত এক কঙ্কাল। পার্থক্য বোধকরি এতটুকুই, যেখানে মানুষ সাদা কঙ্কাল দেখে অভ্যস্ত, সেখানে হয়তো তারা দেখে জাজ্বল্যমান কালো এক কঙ্কাল। মুখ বুজে কাজ করছে কামারশালায়। লিকলিকে, দির্ঘাঙ্গী ও কুচকুচে কালো হাত-পাগুলো এতটাই শীর্ণ যে, শরীরের হাড়গুলো যেন চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসার জন্য সদা উন্মুখ। হাড়চর্মসার মানুষটি যখন উবু হয়ে বসে হাপরটা টানতে থাকে, তখন খানিকটা দূর থেকে সত্যি বোঝা যায় না কোনটা হাপর আর কোনটা তার পেট। জীর্ণ ও কৃষ্ণাভ লুঙ্গিটা হাঁটু ডিঙ্গিয়ে চলে যায় একেবারে উরু…
-
উপজেলার ইতিহাস, জমিদার, তাঁতিবন্দ (গ্রাম), তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, তাঁতিবন্ধ, সুজানগর উপজেলা
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী ছিলেন ইতিহাসখ্যাত এক হিন্দু জমিদার ও প্রখ্যাত শিকারি। জন্ম: বিজয়গোবিন্দ চৌধুরী আনুমানিক ১৮২৪ সালে, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের তাঁতিবন্দ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম গুরুগোবিন্দ চৌধুরী। তৎকালীন নাটোর কালেক্টরির সেরেস্তাদার উপেন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী তাঁতিবন্দের জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেও তার উত্তসূরী বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর শাসনামলেই তাঁতিবন্দসহ আশপাশের এলাকায় তাদের জমিদারিত্বের প্রভাব প্রতিপত্তি ছড়িয়ে পড়ে। জমিদারী: অত্যন্ত দক্ষ এবং প্রতিভাবান বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী অতি অল্প সময়ে জমিদারিত্বের হাল ধরে তাঁতিবন্দসহ আশেপাশের এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জমি ক্রয় করে তাঁর জমিদারিত্বের বিস্তৃতি এবং প্রসার ঘটান। মূলত বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর…
-
কে এম আশরাফুল ইসলাম (গল্প), গল্প, জমিদার, তালিমনগর, পুকুরনিয়া, শ্যামসুন্দরপুর, সাগরকান্দি, সাগরকান্দি ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সাহিত্য
সুরেন বাবু (২য় পর্ব)
সুরেন বাবু (২য় পর্ব) কে এম আশরাফুল ইসলাম মাধু পাগল। তাঁর বংশ পরিচয় সঠিকভাবে জানা যায়নি। শ্যামগঞ্জ হাট সংলগ্ন গ্রামের নাম পুকুরনিয়া। প্রবীণ এলাকাবাসীর বিশ্বাস তিনি অন্য এলাকা থেকে সাগরকান্দির পুকুরনিয়া গ্রামে এসে মুসাফিরের ন্যায় মো. আলী আকবরের পিতার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন এবং এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। যদিও আশ্রয় প্রদানকারী বংশ তাঁকে ঐ বংশের লোক বলেই পরিচয় দেন এবং নিজেদেরকে পরিচিত করাতে ইজ্জত ও গৌরবের বিষয় মনে করেন। বর্ণাঢ্য জীবনের কিংবদন্তি এই মাধু পাগল। সাধু, দরবেশ, সন্ন্যাসির লেবাসে থাকতেন। কখনো ধুতি পাঞ্জাবি, গলায় জপমালা, হাতে চিমটা। কখনো লাল গেরুয়া বসন। তিনি গাজায় আসক্ত ছিলেন। কথিত আছে, বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের…
-
কে এম আশরাফুল ইসলাম (গল্প), গল্প, জমিদার, তালিমনগর, পুকুরনিয়া, শ্যামসুন্দরপুর, সাগরকান্দি, সাগরকান্দি ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সাহিত্য
সুরেন বাবু (১ম পর্ব)
সুরেন বাবু (১ম পর্ব) কে এম আশরাফুল ইসলাম ব্রিটিশ শাসন আমল। পাবনা জেলা ছিল সিরাজগঞ্জ মহকুমার অধীন। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। প্রশাসনিক সুবিধার্থে রাজনৈতিক মানচিত্রও পাল্টে যায়। এই পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত সাগরকান্দি ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি নানা কারণে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে। এখানে যেমন জন্ম নিয়েছে অত্যাচারি জমিদার; বিপরীতে জন্ম নিয়েছেন অনেক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ। সাগরকান্দি বাজারের উত্তর-পূর্ব কোণ ঘেঁষে রাজবাড়ির আদলে ছিল বাবুজি সুরেন্দ্রনাথ ওরফে সুরেন বাবুর আবাসিক ভবন। প্রাসাদের পিছনে ছিল পুকুর। প্রাসাদ প্রাচীরের বাইরে প্রধান ফটক সংলগ্ন সাগরকান্দি বাজার। কথিত আছে, তখন পদ্মা নদীর কোল ঘেঁষে ছিল এই বাজার। পদ্মা নদীর বিশাল পরিসর…
-
জমিদার আজিম চৌধুরীর বংশ পরিচয়
জমিদার আজিম চৌধুরীর বংশ পরিচয়: আজিম চৌধুরীর পিতামহ শরফুদ্দিন সরকার আঠারো শতকে মধ্য এশিয়ার সমরখন্দ থেকে এদেশে আসেন। ধারণা করা হয় ইসলাম ধর্ম প্রচারকদের সাথে তিনি এদেশে এসে পাবনা জেলার সুজানগরের দুলাইতে (আহ্লাদিপুর গ্রামে) বসতি স্থাপন করেন। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন। তার ছেলে রহিমুদ্দিন (আনুমানিক ১৭২২-১৮১৫ খ্রি.) সরকার আরবি-ফারসি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি বাংলা ও ইংরেজি ভাষাও জানতেন। মেধাবী রহিমুদ্দিন নাটোরের রাজবাড়িতে মুহুরিগিরি ও নকলনবিশের কাজে দক্ষতা দেখিয়ে ‘মুন্সি’ উপাধি লাভ করেন। তিনি উত্তরোত্তর কাজে দক্ষতার জন্য পেঙ্কার পদে উন্নীত হয়। এ সময় তিনি প্রভুত ক্ষমতা ও অর্থ অর্জন করেন। তিনি ও তাঁতিবন্দের জমিদার বংশর প্রতিষ্ঠাতা উপেন্দ্র নারায়ণ…
-
জমিদার আজিম চৌধুরী
জমিদার আজিম চৌধুরী যুগের পরিবর্তনে এবং কালের পরিক্রমায় মানুষের অনেক কর্মযজ্ঞ এবং স্মৃতি চিহ্নই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু শুধু নিশ্চিহ্ন হয় না তার কর্মক্ষেত্রের ঐতিহ্য মন্ডিত ইতিহাস। ইতিহাস তার নিজের গতিতেই চলে। ইতিহাস কখনও মুছে যায় না। এমনকি শত চেষ্টা করেও ইতিহাসের অমোঘ সত্য ঘটনাবলী এবং প্রচার-প্রচারণাকে চাপা রাখা যায় না। আর তাইতো পাবনাবাসী যুগ যুগ ধরে স্মৃতিচারিত করছে জমিদার আজিম উদ্দিন চৌধুরীর নাম ও তাঁর কর্মযজ্ঞ। মুসলিম জমিদারদের মধ্যে প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন পাবনার সুজানগর উপজেলার দুলাই গ্রামের আজিম উদ্দিন চৌধুরী। তাঁর প্রকৃত নাম ফখরউদ্দিন আহলে আহসান আজিম চৌধুরী। জন্ম: আনুমানিক আড়াইশ বছর আগে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার দুলাই…