বিজয়-গোবিন্দ-চৌধুরীর-বংশ-পরিচয়
উপজেলার ইতিহাস,  জমিদার,  তাঁতিবন্দ (গ্রাম),  তাঁতিবন্দ ইউনিয়নের ইতিহাস ও ঐতিহ্য,  তাঁতিবন্ধ

বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশ পরিচয়

বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশ পরিচয়

 

পাবনার সুজানগর উপজেলায় দুইজন বড় জমিদারের দেখা মেলে। তার মধ্যে একজন তাঁতিবন্দের চৌধুরী জমিদার এবং অপরজন দুলাইয়ের জমিদার আজিম চৌধুরী। তাঁতিবন্দ চৌধুরী জমিদাররা শুধু সুজানগর উপজেলার মধ্যে নয়, পাবনা জেলার মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন। এরা ছিলেন বারেন্দ্র শ্রোত্রীয় ব্রাহ্মণ; এদের পূর্ব উপাধি সান্যাল। এদের আদি নিবাস ছিল চাটমোহর উপজেলার বোঁথর গ্রামে। এ জমিদার বংশের পূর্বপুরুষ রাজবল্লভ চৌধুরী তার মায়ের সঙ্গে শৈশবে এসে তাঁতিবন্দের অদূরে চণ্ডীপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। পূর্বে তাঁতিবন্দে কুলিন ব্রাহ্মণ ছিল না। পরবর্তীতে উপেন্দ্রনারায়ণ ও তার বংশধরদের সময়ে কুলিন ব্রাহ্মণদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দান করে তাদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করলে, তারা এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তখন থেকেই এখানে লাহিড়ী, রায়, বাগচি, মৈত্র প্রভৃতি উপাধির ব্রাহ্মণদের আগমন ঘটে।

রাজবল্লভের তিনপুত্র ছিলেন- প্রেমনারায়ণ, রামভদ্র ও রামচন্দ্র। রামচন্দ্রের পুত্র উপেন্দ্রনারায়ণ বাংলা, ফারসি ও ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা অর্জন করে নিজ চেষ্টায় নাটোররাজের কালেক্টরিতে সেরেস্তাদার পদ লাভ করেন। ওই সময়ে দেশে সবেমাত্র থানা ও জেলা ইত্যাদি স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিদেশি ইংরেজ কর্মচারীরা তখন এদেশের ভাষা ও অবস্থা সম্পর্কে অজানা, অনভিজ্ঞ ছিল। ফলে এদেশীয় কর্মচারিগণই অনেক বিষয়েই কর্তৃত্ব স্থাপন করত। দেশের এমন পরিস্থিতিতে উপেন্দ্রনারায়ণ অল্পদিনের মধ্যেই নাটোরের রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ট ও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন। ধীরে ধীরে তিনি অনেক অর্থ-উপার্জন করেন। নাটোররাজের অনেক ভূ-সম্পত্তি নিলামে উঠলে উনিশ শতকের মাঝামাঝিতে তিনি নাটোররাজের তাঁতিবন্দ জমিদারি এলাকা ক্রয় করেন। তাঁকেই তাঁতিবন্দ জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে গণ্য করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে তার ছেলে গঙ্গাগোবিন্দ চৌধুরী ও গঙ্গাগোবিন্দের ছেলে গুরুগোবিন্দ চৌধুরী তাঁতিবন্দের নিকটে ভবানীপুরের নন্দী ও হেমরাজপুরের সরকার উপাধি কায়স্থ জমিদারদের সম্পত্তি ক্রয় করেন।

আরও পড়ুন দুলাইয়ের মুসলিম জমিদার আজিম উদ্দিন চৌধুরী

উল্লেখ্য, উপেন্দ্রনারায়ণ শেষ জীবনে তার গৃহদেবতা ‘গোবিন্দ জিউর’-এর পূজার সুবন্দোবস্ত করেছিলেন. তিনি উক্ত বিগ্রহের নাম চির জাগরুক রাখার জন্য তার বংশীয় নামের সঙ্গে আরাধ্য দেবতা ‘গোবিন্দ’-এর নাম যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন; তখন থেকেই এই বংশের প্রত্যেকের নামের সঙ্গে ‘গোবিন্দ’ নাম সংযুক্ত হয়ে আসছে।

গঙ্গাগোবিন্দ চৌধুরীর তিন ছেলে গুরুগোবিন্দ, দূর্গাগোবিন্দ ও বরদাগোবিন্দ চৌধুরীর সময়ে এই জমিদারির বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হয়। বিশেষ করে উশিশ শতকের প্রথম দিকে গুরুগোবিন্দ চৌধুরীর প্রথম পক্ষের ছেলে বিজয়গোবিন্দ এ জমিদারির প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। তিনি এই অঞ্চলে বেশ কিছু স্থাপনা তৈরিসহ তার জমিদারি অঞ্চল বৃদ্ধি করেন। হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা দমনে তিনি মুসলমানদের কুরবানির জন্য আলাদা জায়গা করে দেন।

বরদাগোবিন্দ চৌধুরীর দত্তক পুত্র অন্নদাগোবিন্দ চৌধুরী পাবনা শহরে নিজ নামে ১৯০৬ সালে ‘অন্নদাগোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি’ নামে একটি সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন; যা এখনো সাধারণ পাঠকদের জ্ঞানের আলো বিতরণ করে চলেছে। বিজয়গোবিন্দের সৎভাই অভয়গোবিন্দ প্রজাসাধারণের কল্যাণের জন্য পাবনা শহরে জমি দান করে সেখানে ‘লক্ষ্মীসাগর’ নামে একটি দীঘি খনন করেন; যা বর্তমানে ‘জুবলি ট্যাঙ্ক’ নামে খ্যাত। এছাড়া তিনি একটি দাতব্য চিকিৎসালয় ও ‘পাবনা ব্যাংক’ নামে একটি সমবায় ঋণ দান সমাতি স্থাপন করেছিলেন যা পরবর্তীতে ‘পাবনা ব্যাংক লিমিটেড’ নামে সুনাম অর্জন করেছিল এবং এটিই ছিল পাবনার প্রথম ব্যাংক।

বংশ-পরিচয়

 

তথ্যসূত্র:
১। সুজানগরের ইতিহাস; লেখক: ড. আশরাফ পিন্টু

আরও পড়ুন-
জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরী
তাঁতিবন্দ জমিদার বাড়ি

 

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশ পরিচয়

Facebook Comments Box

‘আমাদের সুজানগর’ সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত একটি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন। সংগঠনটি সুজানগর উপজেলার কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে নিয়মিত ম্যাগাজিন প্রকাশ, বইমেলা ও সৃজনশীল মেধা বিকাশে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন আয়োজন করে আসছে। এছাড়া গুণিজনদের জীবন ও কর্ম নিয়ে ধারাবাহিক লাইভ অনুষ্ঠান ‘অন্তরের কথা’ আয়োজন করে থাকে। ‘আমাদের সুজানগর’ সংগঠনের মুখপত্র হলো ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিন, যা সুজানগরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, গুণিজনদের জীবন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রচার করে থাকে। এছাড়া সুজানগর উপজেলার কবি, সাহিত্যিক ও লেখকদের লেখা কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নিবন্ধ, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি ও বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি প্রকাশ করে থাকে। ওয়েব অ্যাড্রেস: www.amadersujanagar.com মেইল অ্যাড্রেস: editor.amadersujanagar@gmail.com

error: Content is protected !!