হারানো ফাল্গুন
হারানো ফাল্গুন
খুঁজে ফিরি ফাল্গুনী মায়া রুক্ষ অকরুণ খাঁ খাঁ প্রান্তরে।
ফাল্গুন খুঁজে ফিরি জারুলের বনে,
খুঁজে তো পাই না তা হারায়েছে জারুলের বন।
ফাগুনের আগুন খুঁজি কৃষ্ণচূড়ার বনে।
কৃষ্ণচূড়ার বোন উধাও! সাথে হারায়েছে ফাগুনের আগুন
রাধাচূড়া ফিরে গেছে, নয়ন জুড়ানো হলুদের আলপনা মুছে গেছে তাই।
বৃক্ষহীন শাল বনে নাই পাতা ঝরার গান
ফাল্গুনে শুনি না তাই কোকিলের ‘কুহুতান।
বাঁশ বন উধাও, ঘাস ফড়িং পুচ্ছ নাচায় না আর
বাঁশের কঞ্চির ডগায় ফাগুনের দিনে।
‘বউ কথা কও’ বুঝি ভুলেছে আহ্বান নিষ্ফল বেদনায়
দোয়েল ফিঙে ভুলেছে নাচের ছন্দ বিষাদ ভরা অন্তরে।
প্রজাপতির ডানার কাঁপন থেমে গেছে, ওড়ে না তারা আর ফুল থেকে ফুলে
মৌমাছির গুঞ্জনও বুঝি থেমে গেছে ফাল্গুনী মেলায়।
তাল তমালের বন উধাও, ঘুঘুর ডাক শুনি না আর ফাল্গুনের বিষন্ন দুপুরে
খুঁজে ফিরি শিমুল পলাশ মহুয়ার বন।
হারায়েছে তারা নিষ্ঠুর মানবের কঠিন কঠোর কুঠারাঘাতে
ফাল্গুনী অতিথিরা হারায়েছে আপন ঠিকানা।
নিয়াছে বিদায় দুঃখ ভরা মনে, সাথে নিয়ে গেছে তারা ফাল্গুনের সব রং!
বছর ঘুরে আসে ফাল্গুন মাসন, নিয়মের বেড়াজালে
ইট-কাঁঠ-পাথরের বনে আসে না বসন্ত আর।
হারায়েছে ফাল্গুনের শোভা, নাই লাল নীল বেগুনীর মোহিনী মায়া
তাই বুঝি অভিমানে আসে না ঋতু রাজ! রাঙাতে ভুবন খানি, আসে না বর্ণিল সাজে।
অশান্ত মন তবু আজও খুঁজে ফেরে হারানো ফাল্গুন
রুক্ষ ধুসর বাংলার পথে-প্রান্তরে।
আরও পড়ুন কবিতা-
অর্চনা
টাল
অসমাপ্ত চাদর
ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর-এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলে
হারানো ফাল্গুন
তাহমিনা খাতুন
তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি এবং নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তার পেশাগত জীবনে তিনি নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাহমিনা খাতুন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে এই গ্রামেই।