স্মৃতিতে সুজানগর
স্মৃতিতে সুজানগর
ড. রেবেকা বানু
আমি সুজানগরেরই সন্তান। আমার বাড়ি সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাট গ্রামের পদ্মা পারে, যদিও আমার জন্ম এবং বড় হওয়া ঢাকাতেই। সুজানগরকে চেনা মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময়; আতাইকুলা, কামারহাট, আবার গাজনার বিল পার হয়ে আলোক চরে কিছুদিন থেকে আতাইকুলা হয়ে ঢাকায় ফিরে আসা।
আমার স্বামী অধ্যাপক ফজলুল করিম ১০ বছরের মতো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন। সে সময় তিনি বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় দেশে উদ্ভাবিত লাগসই প্রযুক্তির উপর অনুষ্ঠান করতে যেতেন। সালটা ঠিক মনে নেই, সম্ভবত ১৯৯৮ বা ৯৯ হবে। অনুষ্ঠানগুলো হতো শুক্রবার আর শনিবার। স্থানীয় যেকোন স্কুল বা কলেজের মাঠে চারদিকে ছোট ছোট স্টল করা হতো; একদিকে একটা মঞ্চ, সামনে দর্শকদের জন্য বসার ব্যবস্থা। ঢাকা সায়েন্স ল্যাবরেটরী থেকে অনেকে যেতেন, ড. পারভীর নূর, রহিমা আপা, শামসুল হক সাহেব; তাঁরা উন্নত চুলা, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এগুলো সম্বন্ধে বলতেন, এগুলোর বৈশিষ্ট্য আর উপকারিতা সুন্দর করে বোঝাতেন। এসব অনুষ্ঠানে আমি প্রায়ই করিম সাহেবের সাথে যেতাম।
আরও পড়ুন মধুর স্মৃতি
সেবার সুজানগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল, আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে বাসে সবাই রওনা হতো; সকালে পৌঁছে ফ্রেস হয়ে ১০টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুষ্ঠান শুরু হতো। প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও মঞ্চে আছেন, নামটা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। করিম সাহেবের কাছে যখন শুনলেন আমি কথাশিল্পী সরদার জয়েনউদদীনের কন্যা, তিনি আমাকে বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে ডেকে তুললেন কিছু বক্তব্য দেবার জন্য। কি বলেছিলাম মনে নেই। তবে তাঁর কথাটা এখনো কানে বাজে “জয়েন ভাইয়ের যে এতো বড় একটা মেয়ে আছে ভাবতেই অবাক লাগছে”।
এদিকে কামারহাট থেকে আমার চাচাতো ভাই এসেছে, বলছে একটা গাড়ি ঠিক করি, বাড়ি চলেন দুই একদিন বেড়িয়ে যাবেন। করিম সাহেব বললো, “আমি অফিসিয়াল কাজে এসেছি, স্টেশন লিভ করতে পারবো না”। পরের দিন অবশ্য কর্তৃপক্ষ কয়েক ঘন্টার জন্য একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন, ভাইটাকে বলে দিলাম ভাত, মাছ রান্না করতে, কোন পোলাও কোরমা হবে না। সকালে ও নদীর ঘাট থেকে বিভিন্ন রকম তাজা মাছ এনেছে, পেয়াজ দিয়ে রান্না (সুজানগর তো পেঁয়াজ উৎপাদনে বিখ্যাত), গরম ভাতের সাথে কি যে মজা, খেয়ে দেয়ে চলে এলাম সুজানগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।
আরও পড়ুন ছোটবেলার ইদ ও আমি
শনিবার অনুষ্ঠান শেষে আবার ঢাকার পথে রওনা। মাত্র এ-ই কয়েক দিন আগে জানতে পতপাদন, তখন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ওখানে যিনি ছিলেন তিনি আমার মেজ বোনের (রূপরেখা বানু) সহপাঠি, মোখলেছুর রহমান।
সুজানগরবাসী আমাকে সেদিন যে ভালোবাসা আর সম্মান দিয়েছে তা চিরকাল মনে থাকবে।
————————————–
ড. রেবেকা বানু, অধ্যাপক (অবঃ)
ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ,
ফার্মেসী অনুষদ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
স্মৃতিতে সুজানগর