স্বাধীনতা-দিবস
কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীনতা

স্বাধীনতা দিবস

তাহমিনা খাতুন

 

ছাব্বিশ মার্চ স্বাধীনতা দিবস আজ,
বাংলার মানুষ দিনটি উদযাপিবে
কত শত আয়োজন!
উদযাপিতে দিনটি আজিকার,
পড়িবে তাহাদের মনে?

একাত্তরের ছাব্বিশ মার্চ
প্রথম স্বাধীনতা দিবস
শ্যামল বাংলা দেখিয়াছিল
শাসকের সন্ত্রাস।

সন্ত্রাসী শাসকের বাস ছিল,
পশ্চিম পাকিস্তানে,
জানিও তাহারা ছিল,
শত শত মাইল দূরের
অবস্থানে।

আজব এক দেশ ছিল
সেই পাকিস্তান
জন্মের শুরুও তাহার আছিল
বড়ই বেমানান।

ছিল নাকো কোনই মিল
ভাষা অথবা সংস্কৃতির,
শোষণের তরে তাহাদের ছিল
শুধুই ফন্দি ফিকির।

লুঠেরার দল লুটিতে লাগিল
বাংলার সম্পদ,
অভূক্ত রাখিয়া, শিক্ষা না দিয়া,
আমাদেরে তারা রাখিল পশ্চাৎপদ।

সাতই মার্চের বজ্রকণ্ঠ দিল
স্বাধীনতার ডাক,
সে ডাক শুনিয়া বাংলার মানুষ,
হৃদয়ে বাজালো শাঁখ।

তস্কর রুপী শাসকের মনে,
ছিল নাকো কোন মায়া।
বাংলা জুড়িয়া শকুনের দল,
ফেলেছিল অশুভ ছায়া।

ঘন কাল মেঘ ঘনাইল হঠাৎ
জাগাইতে বুকে ত্রাস।
আর্তনাদ আর হাহাকারে ভরিয়াছিল,
সেদিনের নীলাকাশ।

দাউ দাউ করা অনলে পুড়িল
শত শত জনপদ।
কত মায়ের কোল খালি করেছিল,
মনুষ্যরূপী শ্বাপদ।

পিশাচের হাসি হাসিয়াছিল,
ঘৃণ্য হায়েনার দল।
সীমাহীন সে নিষ্ঠুরতা যেন,
পায়নিকো কোন তল।

রক্তগঙ্গা বহাইয়াছিল,
ঘৃণ্য সে পাক সেনা,
বাঙ্গালীর খুনে রাঙা হয়েছিল
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা।

লাখো মা বোনের সন্মান নিয়ে,
খেলেছিল খান সেনা।
বুনো সে খেলার জবাব দিয়েছিল
বাংলার মুক্তি সেনা।

পাক সেনারা ভাবিয়াছিল
বাঙ্গালী ভীরুর জাতি।
দমন করিতে পারিবে তাদেরে,
হয়তো বা রাতারাতি।

তাদের সে ভুল ভাঙ্গিয়া দিল
বাংলার অযুত বিচ্ছু।
মুক্তির তরে জীবন সঁপিল
না ভাবিল কোন কিচ্ছু।

বঙ্গজননীর লাখো সন্তান দিল,
মায়ের ডাকেতে সাড়া।
বাংলা মায়ের সম্মানহানি
হতে দেয় নিকো তারা।

বাঘের গর্জন তুলি,
ঝাঁপাইয়া পড়িল দেশ মাতৃকার তরে,
সে গর্জনে শিয়ালের দল
পলাইল গুহা ছেড়ে।

হার্মাদ দস্যুর দল নিতে চেয়েছিল,
বাংলার সব কেড়ে,
বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা
এসেছিল তাই তেড়ে।

‘জয় বাংলা’ ধ্বনিতে কাঁপিল,
বাংলার চতুর্দিক।
সে ধ্বনি শুনিয়া শত্রু সেনারা
পালালো দিকবিদিক।

নয়টি মাসের সংগ্রাম শেষে
আসিল স্বাধীনতা
বিশ্বের বুকে উড়িয়াছিল
লাল সবুজ পতাকা।

কত শত ত্যাগ, কত বেদনা
কত না চোখের পানি,
বাংলার বুকে গড়াইয়া গেল
আমরা তো তাহা জানি।

স্বাধীন বাংলার মানুষ আমরা
গর্ব করিয়া বলি,
আজকে আমরা বিশ্বের বুকে
মাথা উঁচাইয়া চলি।

মুক্তি সেনার রক্তের সে ঋণ
হয়ে আছে আজও জমা।
সে ঋণ ভুলিলে নব প্রজন্ম,
করিবে না কভু ক্ষমা।

যাহাদের চরম ত্যাগের দানেতে
স্বাধীন বাংলাদেশ
তাদেরে সর্বদা স্মরণ রাখিও,
তাদেরই গড়া স্বদেশ।

আরও পড়ুন তাহমিনা খাতুনের কবিতা-
কাল রাত্রির খাম
দুর্বিনীত পুত্রগণের প্রতি

 

স্বাধীনতা

স্বাধীনতা, মুক্তি
বল কে বা নাহি চায়?
বিহঙ্গ চায় সুনীল আকাশ
পাখা মেলি উড়িবার তরে।
হরিণ শাবক চাহে সবুজ বনানী
যেথায় সে ছুটিবারে চায়,
অবাধ গতির বেগে।
রাজহংশী করে সন্তরন
দীঘির গভীর নীলে
সেথায় কেহ নাহি তার,
বিঘ্ন ঘটাবার কাটিতে সাঁতার, পরম পুলকে।
বনের পাখিরে যদি কেহ রাখে, সোনার খাঁচায়
সে তো চাহে খাঁচা ভেঙ্গে, বাহিরে উড়িবার।
কভু কি সে চাহে দানা-পানি, কেড়ে নিয়ে তার স্বাধিকার।
বনের পশু চাহে, কেহ যেন কভু না করে হরণ অধিকার তার,
বনে বনে ঘুরিয়া বেড়াবার।
নদী কি চাহে, কোন বাধা কভু, অবিরাম ছুটিয়া চলার?
বৃক্ষ চাহে, সব বাধা ঠেলি উন্নত করিতে শির খানি তার।
মানুষও যে চাহে তাই, ভাঙ্গিতে শৃঙ্খল বাধা,
চাহে বুঝি স্বাধীনতা নিরন্তর।
আমরাও চাহিনিকো বহিতে গ্লানি,
চাহিনিতো ছাড়িতে ন্যায্য অধিকার।
একাত্তর দিল ডাক, মাথা উঁচু করি দাঁড়াবার,
আমরা সে ডাকে দিয়া সাড়া, হাতে নিয়াছিনু হাতিয়ার।
সব বাধা পায়ে দলি নিয়াছি কাড়িয়া,
আপন অধিকার।
প্রাণ দিয়ে সে অধিকার রাখবই মোরা রাখবই,
কেহ যদি আসে করিতে হরণ
সবলে তাহা রুখবোই।
দেশ মাতৃকার সমৃদ্ধির তরে করিব অনেক সাধনা, করিব অনেক ক্লেশ,
তবেই সবার শ্রদ্ধা লভিবে,আজিকের বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন কবিতা-
এসেছি স্বাধীনতা সাথে করে
বিষণ্ন বাসন্তী বাংলা
স্বপ্ন ও স্বাধীনতা

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

Facebook Comments Box

তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি এবং নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তার পেশাগত জীবনে তিনি নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাহমিনা খাতুন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে এই গ্রামেই।

error: Content is protected !!