সীমানা-বিহীন-পৃথিবী
কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

সীমানা বিহীন পৃথিবী

সীমানা বিহীন পৃথিবী

তাহমিনা খাতুন

 

বিধাতা যবে গড়িল বসুধা
সীমানা নাহি দিয়া,
অবাধ আকাশ সীমা নাহি মানে,
ভরায় সকল হিয়া!

ভোরের সূর্য ছড়ায় উত্তাপ,
সকল প্রাণীর তরে
আকাশের চাঁদ মধুর কিরণ
বিলায় যে অকাতরে!

সাগর ছুটিছে, জগত জুড়িয়া,
হইয়া আপন হারা,
নদীও যে তাই সাগরে মিলায়
বিলাইয়া আপন ধারা।

সবারে ঢাকিতে স্নেহের চাদরে
উঁকি দেয় হিমাচল,
তারে আশ্রয়ি ঝর্ণা ধারা
ছুটিতেছে অবিরল!

সবুজ বনানী সীমা নাহি মানে,
নাহি মানে মানচিত্র,
সবারেই সে ছায়া দিয়ে যাবে
খুঁজিবে না কোন গোত্র!

পুষ্প বিলায় রুপের রাশি
না মানিয়া দেশ-কাল
পাখি যে সদাই শুনাইছে গীত
বাধা হীন উচ্ছ্বল!

মানুষই টানিল সীমা রেখা উন্মুক্ত বসুধার,
বানাইল কত দেশ,
মানুষে মানুষে বিভেদ করিতে তাই
নাহি বুঝি কোন ক্লেশ!

মানুষের টানা সীমা রেখা যদি
ভাঙিতে চায় কেহ,
জিজ্ঞাসা চিহ্ন হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে
ফেলানীর মৃতদেহ!

‘নিজ দেশ’ আর ‘পর দেশ’ হোল
কখন তা নাহি জানি!
সব দেশ ফের ‘এক দেশ’ হোক
মুছে যাক সব গ্লানি!

মেকি ‘বসুধার’ লাঞ্ছনা বুঝি
সহিতে পারি না আর,
বিধাতার গড়া আদি বসুধাকে
ফিরিয়ে আনো আবার!

নব ফুলদল ফুটুক আবার
দেখা দিক নব ভোর
নতুন মানুষে ভরিয়া উঠুক
নব বসুধার ক্রোড়!

দূর হয়ে যাক সব টুকু বাধা,
সব টুকু সীমানা
এক ‘বসুধা’ হয় যেন ফের
সব মানুষের ঠিকানা!

আরও পড়ুন তাহমিনা খাতুনের কবিতা-
কাল রাত্রির খাম
দুর্বিনীত পুত্রগণের প্রতি
স্বাধীনতা দিবস

 

সভ্যতা

খেলা চলে!
যুদ্ধ বুঝি সে খেলার নাম!
যুদ্ধ নামের খেলা তাই
চলছেই অবিরাম!

‘যুদ্ধ’ নামের সে খেলার নাম
সবে কহে ‘সভ্যতা’!
এ সভ্যতায় হায়, দূর হয়ে যায়
সব টুকু মানবতা!

এ খেলা চলিয়াছে বুঝি,
আবহমান কাল ধরি
এ খেলায় কেবলই নিঃস্ব হয়,
অসহায় নর-নারী!

সভ্যতা যবে হল শুরু,
সভ্য মানুষ বুঝি
মানিয়া লইল
যুদ্ধকেই তাহাদের গুরু!

যুদ্ধ ছাড়া বুঝি বাঁচিতে নাহি পারে,
মানব সভ্যতা,
সভ্যতার অপর নাম বুঝি তাই,
মায়া হীন বর্বরতা!

সভ্যতা যবে শুরু হয়নিকো
এই ধরনীর পরে,
শান্তি বারি ঝরিত
বুঝি সবার মাথার পরে!

হানাহানি আর রেষারেষি যেন
সভ্যতার আরেক নাম,
শান্তি ভুলিয়া অশান্ত মানুষ
ছুটিয়াছে অবিরাম!

কত না যুদ্ধ দেখিল মানুষ,
এই ধরনীর পরে,
মাথার খুলিতে পিরামিড গড়ে
দমিয়া বিজিতেরে!

যত দিন যায় তত বুঝি বাড়ে,
সভ্যতার হাঁক-ডাক
মরণাস্ত্রের উৎকর্ষতা দেখি,
বিশ্ব যে হতবাক!

কোন মরণাস্ত্র ঘটাইতে পারে
কত বেশী সর্বনাশ,
আরও কত বেশী ধ্বংসিতে পারে
চলে তার অভিলাস!

সভ্যতা বুঝি আনন্দ পায় দেখে,
রক্তের হোলি খেলা,
তাই তো সদাই খুঁজিয়া বেড়ায়
সর্বনাশের মেলা!

বাঘের খাঁচায় বন্দী মানুষ,
ছটফটিয়া মরে,
কবে যে আসিবে পরম মুক্তি
ভাবে বুঝি অন্তরে!

জগত জুড়িয়া বাড়িছে যুদ্ধ
কত যে ভয়ঙ্কর
ভূখা-নাঙ্গা মানুষ পাল্লা দিয়া,
বাড়িছে নিরন্তর!

ক্ষুধাতুর শিশু কাঁদিয়া ফিরিছে
এক মুঠি অন্ন লাগি,
শূন্য উদরে নিঁদ আসে নাকো
সারা রাত থাকে জাগি!

প্রতিক্ষণে শুধু বাড়িয়া চলিছে
মৃত্যু-ক্ষুধার ভয়,
আছে কি কেহ, যে পারিবে দিতে
কাঙ্খিত বরাভয়!

জেগে রয় বুঝি দূরের আকাশ
বিস্ময় ভরা চোখে,
সভ্য মানুষের দুর্দশা হেরি
চেয়ে রয় অপলকে!

আর কত দিন সহিবে বল
এমন নিষ্ঠুরতা,
পায়েতে দলিয়া, পিষিয়া মারিবে
আপন মানব সত্বা!

কঙ্কাল সার মানবাত্মার,
গভীর দীর্ঘশ্বাস,
অভিশম্পাত হয়ে ঘটায় যেন
দুরাত্মার সর্বনাশ।

থামাও এবার সভ্য মানুষ,
থামাও এ অসভ্যতা,
হের! অর্থ-বিত্ত আর ক্ষমতার কাছে
লুণ্ঠিত মানবতা!

মুক্তি দাও প্রাণের বিহঙ্গীরে
মুক্তি দাও তবে এবার,
আকাশ ঢুঁড়িয়া মুক্ত বায়ু
সেবন করুক সে আবার!

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

সীমানা বিহীন পৃথিবী

Facebook Comments Box

তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি এবং নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তার পেশাগত জীবনে তিনি নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাহমিনা খাতুন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে এই গ্রামেই।

error: Content is protected !!