সম্রাট-জাহাঙ্গীরের-স্বর্ণমুদ্রা-১ম-পর্ব
গল্প,  সাইফুর রহমান,  সাহিত্য

সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (১ম পর্ব)

সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (১ম পর্ব)

সাইফুর রহমান

 

সাইকেলের বাঁ হাতলটিতে কিছুতেই হাতের মুঠোটি স্বস্থানে রাখতে পারছে না নিতাই। পিছলে যাচ্ছে শুধু বারবার। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরমে হাত দুটো ঘেমে একেবারে প্যাঁচ প্যাঁচে অবস্থা। শুধু হাত হবে কেন? এমন প্রচণ্ড গরমে পুরো শরীরটিই যেন ঘেমে নেয়ে একেবারে একাকার, সে এক বিশ্রী অবস্থা। সাইকেল নামক এই শকটটি যদিও বা একটু জোরে চালানো যেত তবুও না হয় কথা ছিল। নিদেনপক্ষে গরমের হাত থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু সেই উপায়ই বা কোথায়? চরগোবিন্দপুর গ্রামের এই রাস্তাটি বড্ড দূর্গম ও এবড়ো-থেবড়ো। সাইকেলটি খুব সাবধানে ও ধীরে সুস্থে চালাতে হচ্ছে বলেই শরীরে গরমের উষ্ণতা আরো বেশি করে অনুভূত হচ্ছে। বাঁ হাতদানীর যে স্থানটি রাবার দিয়ে মোড়া থাকে সেটি সম্ভবত অতি ব্যবহারে ও সময়ের ভারে কালক্রমে নষ্ট হয়ে উঠে গেছে। সেজন্যই বাঁ হাতের মুঠিটি পিছলে যাচ্ছিল বারবার।

হাতেরই বা কি দোষ? এতকালের পুরনো সাইকেল যে! সাইকেলটি অবশ্য তার নিজের নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে এটি সে পেয়েছে তার পিতার কাছ থেকে। ব্রিটিশ র‍্যালি কোম্পানির এই সাইকেলটি তার বাবা নরেন কুণ্ডু দেশ ভাগের বেশ কিছুকাল পর দেশত্যাগী এক পরিবারের কাছ থেকে কিনেছিলেন বিয়াল্লিশ টাকায়। সে বহুকাল আগের কথা, তারপর কেটে গেছে কতকাল- তা কমপক্ষে দুই তিন যুগ তো হবেই।

ঘর্মাক্ত হাত দু’টি রুমাল দিয়ে ভালো করে মুছার জন্য সাইকেল থেকে নেমে এলো নিতাই। রাস্তার পাশে একটি শিরিষ গাছের সঙ্গে সাইকেলটিকে দাঁড় করালো সে ঠেস দিয়ে। হাতের পাতা দু’টো ভালো করে মুছতে গিয়ে হালকা ঘীরঙা রুমালটি হঠাৎ হাত থেকে খসে পড়ে গেল মাটিতে। নিতাই উবু হয়ে ভূমি থেকে রুমালটা যেই না তুলতে যাবে ওমনি রুমালটির পাশে নজরে এলো পিতল রঙের মুদ্রা সদৃশ্য একটি বস্তু। যা অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে রাস্তার ধূলো ময়লার ভেতর।

আরও পড়ুন গল্প হাইয়া আলাল ফালাহ

নিতাই খুব সতর্কতার সঙ্গে চারপাশটা দেখে নিল একবার ভালো করে। তারপর ধাতব মুদ্রাটি হাতে তুলে নিল সে। স্বর্ণাভ রঙের পয়সাটিতে ময়লা লেগে একেবারে কালচে আকার ধারণ করেছে। মুদ্রাটির গায়ে সেঁটে থাকা মাটি ও ময়লাগুলো বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে পরিষ্কার করতেই, মুদ্রাটির এক পিঠে উপর নিচ ও আড়াআড়িভাবে দুটো মাছের ছবি ফুটে উঠলো। একেবারে যেন মীন রাশির প্রতীকের মতো। মুদ্রাটির অপর পিঠে অবশ্য মাছের ছবি নেই। বরং আরবি হরফে কি যেন হেজিপেজি করে লিখা। গভীর অনুধ্যানে মুদ্রাটির মাহাত্ম কী হতে পারে এসব বিষয়ে নিতাই যখন সাত-পাঁচ ভাবায় ব্যস্ত, ঠিক তখনই কে যেন চিৎকার করে ডাকল তাকে।

-ও নিতাই দাদা। হাটের তিন সদাইপাতি কইরে ফিরলে বুঝি?
-নিতাই এবার ফিরে তাকাল পেছনে। তাকে চেঁচিয়ে তার নাম ধরে ডাকছে, তার পাশের বাড়ির লক্ষণ। সে অতি সন্তর্পণে ধাতব মুদ্রাটি তার প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দিল, যাতে করে লক্ষণ এর বিন্দু বিসর্গও বুঝতে না পারে।
-হয় রে, তুইও হাটের তিন ফিরতিছিস বুঝি?
-তে আর কী? দুডে পাঠা বেইচপের নি গিছিলাম হাটে। সে কি ভুগান্তিগো দাদা। মানষির ট্যাকের তিন পয়সাকড়ি মনে হয় যিন একেবারে উধাও হয়া যাচ্ছে দিন দিন। বড়ড়া বেচা হইলে মুটামুটি ভালো দামেই। কিন্তু ছোটডার ভালো দাম উইটলিনা তাই ফিরে নি আলাম। ভালো কইরে কেউ দাম পর্যন্ত কইবের চায় না। তা দাদা গতকাইল তুমার খামারে নাহি তিনডে বাছুর জন্মায়ছে?
-তুই ইকটু বেশিই শুইনে ফেলিছিস। বাছুর জন্মায়ছে আসলে তিনডে নারে, দুড়ে।
-তিনডেই হোক আর দুডেই হোক। গরুর বাছুর হলে আর তুমি তিরিনাতের মেলা দিবে না? বাছুর জন্মানের জন্যি আমরাও না   হয় ইকটু খাই। তুমি তো গরুর বাছুর জন্মালিই মেলা দ্যাও।
-মেলা দেবো জন্যিইতো হাটে গিছিলাম। আচ্চা লক্ষণ, তুই আমাক ক তো দেহি, তিন পয়সায় কী এহন আর কিছু পাওয়া যায়? নাকি সেই তিন পয়সার যুগ এহনো আছে?
-তুমি তিন পয়সার কতা কচ্চ ক্যা দাদা?

আরও পড়ুন গল্প লালু

-ক্যারে আমারে ধর্মে তো এই রহমই বিদান। তিন পয়সার মদ্যি এক পয়সার পান-সুবুরি, এক পয়সার ত্যাল আর তোর হইলোগে আরাক পয়সার যিন কি? ও হ মনে পড়েছে। আরাক পয়সার হইলো গে সিদ্দি। এহন আমরা যে যুগি আইসে পড়িছি তিরিনাতের মানে শিবির পুঁজার জন্যি কোমপক্ষে শুধুমাত্তর পান-সুবুরিই কিনা লাগে পাঁচশ টাহার। ত্যাল আর সিদ্দির কতা না হয় বাদই দিলেম। সিডা যাকগিন, এই সুমায়ে কাঁটাল মুড়ির ব্যবস্তা তো আর হওয়ার না। আমি গুটা পঞ্চাশেক তালের ব্যবস্তা করিছি। তোর বউদিক কইছি গুড় দি ভালো কইরে জ্বাল দি মিষ্টি বানাবির। মেলা শ্যাষে মানুষজন হুরুম-মুড়ি দি সেতাই না হয় খাবিনি।

নিতাইয়ের গরুর খামারটি চরগোবিন্দপুর গ্রামের পশ্চিম প্রান্তের একেবারে শেষ সীমানায়। খামারের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রকাণ্ড বিলগণ্ডহস্তি নামক বিলটি। ভরা বর্ষার উন্মুক্ত ও যৌবনবতী বিলটিকে দেখে আদৌ বোঝার উপায় থাকে না যে খরা মরশুমে এটি শুকিয়ে একেবারে রুগ্ন শিশুর মত হয়ে যায়। তখন বিলটিকে দেখে যেন মনে হয় যেন- এটি একটি শীর্ণ ও সরু নালা। যা সাপের মতো এঁকেবেঁকে গিয়ে তালিমনগর হয়ে একেবারে যমুনা নদীতে গিয়ে মিশেছে। সেই সরু নালার দু’পাশে বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে জন্মে কঁচি কঁচি সবুজ ঘাষ। নিতাই কুন্ডের তখন পোয়াবারো। তার খামারের বিভিন্ন প্রজাতির ষাঁঢ়, এঁড়ে, বলদগুলো নেমে পড়ে সেই পর্যাপ্ত ঘাসের যথাযথ শ্রাদ্ধ করতে।

যদিও চরগোবিন্দপুর গ্রামটি একটি হিন্দু বর্ধিষ্ণু গ্রাম। কিন্তু নিতাই আসলে পুরোপুরি হিন্দু ধর্মের অনুসারী নয়। তার প্রপিতামহ হরেণকুণ্ড ছিলেন একজন ব্রাহ্ম। তিনি যখন কলকাতায় ব্যবসা বাণিজ্য করতেন তখনই তিনি নাম লিখিয়ে ছিলেন ব্রাহ্ম সমাজে। তার দাদা খুব শক্তভাবেই ব্রাহ্ম আচার আচরণ আর অনুশাসনগুলো মেনে চলতেন যতদিন বেঁচে ছিলেন। কিন্তু নিতাইয়ের বাবা নরেন কুন্ডু সেসব ব্রাহ্ম ধর্মটর্ম না মেনে হিন্দু ধর্মেরই রীতিনীতি পালন করে আসছিলেন বহু বছর ধরে। নিতাই অবশ্য আস্তিকতার দিক দিয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে। তিনি মোটামুটি সব ধর্মই বিশ্বাস করেন। যদিও তার এই গোপন ব্যাপার স্যাপারগুলো কাউকে বুঝতে দেন না তিনি।

আরও পড়ুন গল্প সুরেন বাবু

কিছুদিন আগে তিনি কাশি গিয়েছিলেন তীর্থ যাত্রায়। ফেরার পথে তিনি আজমির শরীফও জিয়ারত করে এসেছেন। চলার পথে কোনো মাজার কিংবা মন্দির যেটাই সামনে পড়ুক না কেন- তিনি নতশিরে সেগুলোকে ভক্তি শ্রদ্ধা করেন। গভীর একাগ্রতায়।

ভাদ্রের তেজদীপ্ত সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়তেই নিতাই কুন্ডের গরুর খামারে শুরু হলো ত্রিনাথের মেলা। ত্রিনাথ মানেই শিব। বৃষ যার বাহন। শিবের বেশভূষা থেকে ধরে সবই যেমন সাধারণ, ঠিক তেমনি এই ত্রিনাথের মেলার উপকরণ অনুষঙ্গও খুবই সাধারণ। খামারের দক্ষিণ দিকের খালি জায়গাটাতে তৈরি করা হয়েছে মেলাযজ্ঞের স্থান। নিতাই কুন্ডের খামারে যে ছেলেটি কাজ করে তার নাম বিশু। বয়স বাইশ-তেইশের মতো হবে। ছিপছিপে গড়ন। মাথা ভর্তি উসকো খুসকো ঝাকড়া চুল। সে এসে একটি জলচৌকি পেতে তার উপর একটি কাঁসার ঘটি বসিয়ে রেখে গেল। খানিকবাদে নিতাই কুন্ড এসে সেই ঘটিতে ঢাললো বেশ খানিক পরিমাণ জল ও হরিতকি ফল। তারপর একটা আম্রপল্লবে সিঁদুরের টিপ দেওয়ার মধ্য দিয়ে ত্রিনাথ মেলার শুভ সূচনা হলো।

নতুন গাইয়ের দুধ দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ঝুড়ির বেশ কয়েক ঝুড়ি নাড় নিতাইয়ের বউ বিমলা গতকাল রাতেই তৈরি করে রেখেছিল, এই মেলাকে উপলক্ষ্য করে। চরগোবিন্দপুর গাঁয়ে আটপৌড়ে সাধারণ লোকজনদের সকলেরই এই বিষয়টি জানা যে, ত্রিনাথের মেলার বিশেষত্বই হচ্ছে নতুন গুড়ের নির্ভেজাল বিশুদ্ধ দুধ দিয়ে তৈরি নাড়ু। যাকে সনাতন ধর্মের অনুসারীরা বলে গোরক্ষের নাড়ু। সুজির সাথে মেশানো হয় যৎসামান্য ভাং। যার ফলে একটা অদ্ভুত স্বাদের নাড়ু তৈরি হয়। গোরক্ষনাথের তুষ্টির জন্যই বোধ করি এই ভাংয়ের ব্যবহার। শিবের আরেক নাম গোরক্ষনাথ। তাই নামকরণ থেকে শুরু করে সব কিছুই এই শিবকে কেন্দ্র করেই।

আরও পড়ুন দুলাইয়ের জমিদার আজিম চৌধুরী

বিশু ও লক্ষণ উপস্থিত অতিথি ও অভ্যাগতদের হাতে তুলে দিতে লাগল সেসব স্বাদু নাড়ু, তাল থেকে তৈরি মিষ্টান্ন ও মুড়ি। লক্ষণ এবার প্রসন্ন ও আমুদে কণ্ঠে ছেলে-বুড়ো-জোয়ান সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো- আপনেরা আর দাড়া না থাইকে সারিবাইদে বইসে পড়েন। এহনই শুরু হবি গান-বাজনা আর কীর্তন। নিতাই কুন্ড আগে থেকেই পাশের গ্রাম শাহদুল্লাপুরের এক গানের দলকে ঠিক করে রেখেছিলো। খোল, করতাল, হারমনিয়াম ও খঞ্জর প্রভৃতি গান বাজনার উপকরণ ও সরঞ্জাম নিয়ে গাইয়ের দল সন্ধ্যা নামার ঈষৎ আগেই এসে পৌঁছেছে সেখানে। খোলের বোল শুনে আশপাশের আরো লোকজনের সামাগম হতে লাগল খুব দ্রুতই এই উৎসবটিকে ঘিরে।

গানের দলটি প্রথমে শুরু করলো আবাহন দিয়ে- “জয় ত্রিনাথ ঠাকুর, প্রেমনন্দে হরি হরি বল…”। গাইয়ের দল উৎসবের মচ্ছবটিকে মাতিয়ে দিতে ও উপস্থিত জনমানুষকে চাঙ্গা করতে শুরু করলেন লালনের কিছু জনপ্রিয় গান। আর এতেই উপস্থিত লোকজন হৈ হৈ করে হাত তালি দিতে শুরু করলো। দলটির যে লোকটি প্রধান তার নাম রুস্তম বয়াতি। মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল। আর এটিই মনে হয় বয়াতিদের হালফিলের ফ্যাশন। গান করবে আর মাঝে মধ্যে শুধু মাথার ঝাকড়া চুলগুলো চরকির মতো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচাবে। লালনের পর রুস্তম বয়াতি গাইলেন দেহতত্ব নিয়ে কিছু গান। তারপর শুরু হলো কৃষ্ণতত্ত্ব নিয়ে। আর সব শেষে ত্রিনাথ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ এই মেলার একটি বিশেষ গান । রুস্তম আলী দু’হাত উপরে তুলে অপরূপ দেহ ভঙ্গিমায় অসামান্য দরদী গলায় গাইতে শুরু করলো-

তিন পয়সাতে হয় যার মেলা
কলিতে ত্রিনাথের মেলা
এক পয়সার তৈলরে ভাই
তিন বাতি জ্বালাইয়া-
বাতি জ্বলছে ধীরে নিভে নারে
এই কি পাগলের খেলা।
এক পয়সার পান সুপারি
তাতে নাই মশলা কেয়ে পানের খিলি সাধু মিলি
বসে বাজায় একতারা
এক পয়সার সিদ্ধিরে ভাই
তিন কলকে সাজাইয়া
গাঁজায় মারছে টান ছাড়ছে ধূম
বলছে বোম্‌ বোম্ বোম্‌ ভোলা।
কলিতে ত্রিনাথের মেলা।

 

এসব গান শেষে মেলা যখন ভঙ্গ হলো, তখন রাতের প্রথম প্রহর শেষ হয়ে সবেমাত্র দ্বিতীয় প্রহর শুরু হয়েছে। দু একটি পেঁচার ডাকও শোনা গেল দূরে কোথাও।

আরও পড়ুন সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা-
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা (১ম পর্ব)

Facebook Comments Box

সাইফুর রহমান মূলত একজন গল্পকার। মানবজীবনের বৈপরীত্য ও মনস্তাত্ত্বিক বহুমুখিতা তাঁর লেখার প্রধান উপজীব্য। প্রকাশিত নিবন্ধনগ্রন্থ: জানা বিষয় অজানা কথা, যুক্তি তর্ক ও গল্প, ভিঞ্চির কালো জুতো, করোনায় শেক্সপিয়র রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য; গল্পগ্রন্থ: শরৎচন্দ্রের শরৎ উপাখ্যান ও অন্যান্য গল্প, পক্ষিরাজের ডানা, মরিচপোড়া। তিনি ১৯৭৭ সালের ১২ ডিসেম্বর, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত দুলাই ইউনিয়নের চরদুলাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!