শূন্য-তরী
ছড়া,  জাহাঙ্গীর পানু (ছড়া),  সাহিত্য

শূন্য তরী, বিচ্ছিন্ন পঙক্তিমালা, স্বপ্ন সারথি, ইচ্ছে ঘুড়ি

শূন্য তরী

জাহাঙ্গীর পানু

 

যাচ্ছে সময় যাচ্ছে দিন
মাস পেরিয়ে বছর যায়
ভালবাসার শূন্য তরী
একলা হাতে বৈঠা বায়।

কাল যে মনে রাধার বাস
আজ সে মনে সর্বনাশ
কৃষ্ণ ডাকে বাশির সুরে
দুপুর বেলার তপ্ত রোদে।

ফাগুন হাওয়া থমকে যায়
কোকিলের সুর বিহনে
নদীর বুকে ঢেউ থেমে যায়
অবাক চেয়ে দূর গগণে।

দেখবো না আর চাঁদের হাসি
শরতের নিশিত রাতে।
জীবনে আর ফুটবে না ফুল
ফাগুনের কোনো প্রাতে।

 

বিচ্ছিন্ন পঙক্তিমালা

গভীর রাতে অন্ধকারে
পথচলার বাতি
বন্ধুর পথে ছুটে যাওয়া
জীবন চলার সাথি।

চলেছি পথে একলা মনে
তুমিও কিন্তু তাই।
সুযোগ পেয়ে সেদিন কেনো
করেছিলে বড়াই?

এক তরীতে ভাসবো দু’জন
হারিয়ে নদীর কূল
তুমি তখন হবে আমার
মধু বনের ফুল।

পুরুষ হৃদয় পূর্ণতা পায়
নারীর ভরা যৌবনে
স্বর্গের হুর মর্তে এসে
দেয় ধরা মৌবনে।

শরতের স্নিগ্ধ বিকাল শেষে
গোধূলির লগন
প্রেম পিয়াসী যুবক মনে
উঠে প্রেমের পবন।

তোমার হৃদয়ের জ্যোস্নার আলো
আমাকে একটু দিও।
সেই আলোতে আমি পথ চলবো
ওগো মোর প্রিয়।

জীবন আমার সংগোপনে
চলতে গিয়ে পথ
পথের বাঁকে লুটিয়ে পরে
পায় না খুঁজে রথ।

 

স্বপ্ন সারথি

তুই যে আমার সপ্নে দেখা
ভোরের ফোটা পদ্ম,
তোকে নিয়ে লিখবো আমি
সাফল্যে গাঁথা গদ্য।

তুই যে আমার জীবন যুদ্ধে
শক্ত হাতের ঢাল,
তোকে নিয়ে লড়াই করে
জিততে হবে কাল।

তোকে নিয়ে বুনেছি আমি
স্বপ্নের মায়াজাল,
পরিশ্রম করলে সফলভাবে
কাটবে জীবনকাল।

তুই যে আমার অন্ধকারের
জ্যোস্না মাখা আলো
সারা জীবন ধরেই এমন
বাসবো তোকে ভালো।

 

ইচ্ছে ঘুড়ি

ইচ্ছে ঘুড়ি
স্বপ্নে বিভোর
রাত বিহনে
কিংবা দুপুর।

জীবনের জয়গান
কণ্ঠে বাজে
সকাল দ্বিপ্রহর
কিংবা সাঁঝে।

সোনার তরী
উঠবে ভেসে
ইচ্ছে হাওয়ায়
স্বপ্ন হাসে।

তোমাতে আমাতে
কিংবা তাহাতে
মিলিয়ে দৃষ্টি
নয়ন চাহনিতে।

সুরের তালে
হৃদয় নাচে
সৌখিন ইচ্ছে
চলছে ধাঁচে।

জীবন তরী
স্রষ্টার সৃষ্টি
ইচ্ছে মতো
দ্বিধাহীন দৃষ্টি।

পথহারা পাখিদের
অবিরাম যাত্রা
মৃত্যুর ক্ষণকালে
শেষমেশ মাত্রা।

ইচ্ছেরা ভবঘুরে
ঘুরেফিরে চারিদিক
জীবনের পথচলায়
উদাসীন পথিক।

আরও পড়ুন কবিতা-
অলিখিত কবিতা
বসন্ত কোকিল
শূন্যের নিক্তিরা

 

ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজে

Facebook Comments Box

কবি জাহাঙ্গীর পানু—এক নিরন্তর পথিক, যাঁর কলম চলে জীবনের বিভিন্ন বাঁকে। তাঁর লেখালেখির কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই; সময়, প্রাসঙ্গিকতা এবং অন্তরের আকর্ষণই তাঁকে পথ দেখায়। তিনি শব্দের মাঝেই খুঁজে নেন জীবনের গভীরতাকে, যেখানে প্রতিফলিত হয় তাঁর অনুভূতির মগ্নজগৎ। তাঁর সৃষ্টিকর্মে গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা, প্রকৃতির মমতা, আর মানুষের অন্তর্লীন আবেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনো তাঁর রচনায় দেখা মেলে গ্রামবাংলার উর্বর মাটির টান, কখনোবা সংস্কৃতির রঙিন বৈচিত্র্য। প্রতিটি লেখায় তিনি সময়ের চিহ্ন ধরে জীবনের মায়াজাল বুনে চলেন। তিনি নিয়মিত লিখছেন ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনে, যেখানে তাঁর লেখাগুলোর মাধ্যমে পাঠক খুঁজে পান নতুন এক ভাবনার দিগন্ত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণতার নীল চাদর” এক অনন্য সংকলন, যেখানে বিষণ্ণতার নীল ছায়ায় ঢাকা জীবনের নানা রূপ, অনুভূতি আর প্রতিফলন মূর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে জন্ম নেওয়া কবি জাহাঙ্গীর পানু প্রকৃতির স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা এক সৃষ্টিশীল কবি। তাঁর লেখায় আজও মেলে সেই মাটির গন্ধ আর শেকড়ের টান।

error: Content is protected !!