রূপসী-বাংলার-কবি
কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

রূপসী বাংলার কবি

রূপসী বাংলার কবি

তাহমিনা খাতুন

 

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ
বাংলার ছবি এঁকে গেছো কত সহজ, অনায়াস!

বিশালাক্ষী দিয়েছিল বর
জনম লভেছিলে তাই, নীল বাংলার ধান আর ঘাসের ভিতর।

নাটোরের বনলতা সেন
পাখির বাসার মতো চোখ দেখে যার হয়েছিল কবি ভাবনা মগন।

সোনালি ডানার চিল, সদা কেঁদে যায় এ কবির ভাবনায়
লক্ষ্মী পেঁচা শিমুলের ডালে বসে অবিরাম ডেকে যায়।

কার্তিক মাস আর ধানের ছড়া
হৃদয়ের গহন কোণে, কেবলি দিয়ে যায় নাড়া।

ধানসিঁড়ি নদী আর হিজল তমালের বন
রূপমুগ্ধ কবির মনে সদা, করে গেছে বিচরণ।

বাংলার নদী মাঠ ভাঁট ফুলের বর্ণিল সুষমায়
ঘুরে ফিরে আসে দেখি তাহার কবিতায়।

চায়নি এ কবি কোথাও যেতে এই বাংলা ছেড়ে
তাই রয়ে গেছে আজও ঢেউয়ে ভেজা জলাঙ্গীর তীরে।

এক রাশ পাতার পিছে রুপোলি চাঁদ
মোহিনী মায়ায় পেতে রাখে কি অনুপম ফাঁদ!

শীতের শিশির কিংবা সন্ধ্যার কাক
মনকে উদাস করে, করে হতবাক।

খই রঙা হাঁসের কিংবা পাখির নীড়ের খড়
উদাসী মন করে তোলে, শুধুই বিভোর।

ফণীমনসা শর আর কাশের ঝাড়
জীবনানন্দের কবিতায় বিলিয়ে যায়, সৌন্দর্য অপার।

জারুল শিরীষ অশ্বত্থ আর বাবলার বন
অপরূপ বর্ণনায় দোলা দেয় হৃদয়ের গহীন কোণ।

রৌদ্রের গন্ধ পায় যে কবি চিলের ডানায়
মন মাতাল করা ব্যঞ্জনা খুঁজে পাই তার কল্পনায়।

রূপসার ঘোলা জলে রয়ে গেছে কবি এই বাংলায়
কলমীর গন্ধ ভরা জলের ঘ্রাণ, খুঁজে পাই তার কবিতায়।

কত রূপে ফিরে আসে কবি এই বাংলায়
রূপসার ঘোলা জলে ফিরে আসে, কিশোরের পাল ছেঁড়া ডিঙ্গায়।

কখনো বা সাঁতরায় ধবল বকের মতো রাঙা মেঘের গায়
শত রূপে ফেরে কবি এই বাংলায়।

কখনও বা ফেরে সুদর্শন হয়ে সন্ধ্যার বাতাসে
কখনও ফেরে কচি লেবুপাতার মতো নরম সবুজ ঘাসে।

কখনও ফেরে খইয়ের ধান ছড়ানো শিশুর মতো
শংখচিল আর শালিকের মতো ফিরে আসে অবিরত।

ফিরিতে চায় কবি কুয়াশার বুকে ভেসে কাঁঠাল ছায়ায়
না হয় ঘুঙুর হয়ে বাজিবে কিশোরীর লাল পায়।

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর করুণ বাংলায়
রয়ে যেতে চায় কবি আপন বাসনায়।

শত রূপে এই বাংলায় রয়ে যাবে কবি, চিরটা কাল
রূপসী বাংলার মানুষ পড়িবে তাহার কবিতা, হয়ে ভাব বিহ্বল।

আরও পড়ুন কবিতা-
গোলাপ ফুল
তিতাস নদীর পাড়ে
অন্ধকারের জ্যোতি

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

রূপসী বাংলার কবি

Facebook Comments Box

তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি এবং নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তার পেশাগত জীবনে তিনি নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাহমিনা খাতুন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে এই গ্রামেই।

error: Content is protected !!