যেভাব-আইনজীবী-হলাম
তাহমিনা খাতুন (ভ্রমণকাহিনি),  ভ্রমণকাহিনি,  সাহিত্য

যেভাব আইনজীবী হলাম

যেভাব আইনজীবী হলাম

তাহমিনা খাতুন

 

ম্যাট্রিক পাশ করার চৌদ্দ বছর পর সিদ্বেশ্বরী ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হলাম। আমার দুই মেয়ে তখন ঢাকার ভিকারুন্নেসা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলেকে নার্সারি ক্লাসে ভর্তি করেছি। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলাম। যদিও আইন পড়ার কথা কখনও চিন্তা করি নাই।

শিক্ষকতা করা ছিল জীবনের আকাঙ্ক্ষা। যেহেতু দীর্ঘ বিরতির পর লেখা-পড়া শুরু করেছি, সরকারি-বেসরকারি কোন ক্ষেত্রেই চাকুরি করার আমার সুযোগ নেই। সে কারণে কয়েক জনের পরামর্শে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হলাম এবং আইন পাশ করলাম।

এরপর বার কাউন্সিল পরীক্ষা পাশ করে আইনজীবীর সনদ নিলাম এবং ঢাকা বার এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হলাম। আদালতে মামলা করার প্রক্রিয়াগুলি শেখার জন্য একজন সিনিয়র আইনজীবীর শিক্ষানবিশি হিসাবে কাজ শুরু করলাম। অল্প কিছু দিন আদালত চত্বরে ঘোরাঘুরি করে বুঝতে পারলাম, এ জগত আমার জন্য নয়। অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ার সময় এক সহপাঠীর মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’ নামে মহিলা আইনজীবীদের একটি সংগঠনের সদস্য হই। সংগঠনটি সমাজের অসহায়, নির্যাতিত নারী-শিশুদের উদ্ধার, আশ্রয় প্রদানসহ আইনী সহায়তা দিয়ে থাকে। সদস্য হিসেবে সমিতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সমিতির সেবামূলক কাজগুলো আমাকে আকৃষ্ট করে। এ কারণে ‘মহিলা আইনজীবী সমিতি’তে যোগ দিলাম।

আরও পড়ুন  আত্মকথন

সমিতিতে কাজ করার কারণে সমাজের দরিদ্র, নির্যাতিত অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করার একটা বড় সুযোগ তৈরি হল, যা ছিল আমার ছেলেবেলা থেকে লালিত স্বপ্ন। দীর্ঘ প্রায় ২৩/২৪ বছর সমিতিতে কাজ করেছি। এতে একদিকে যেমন সমাজের কদর্য চেহারাটা দেখেছি, তেমনি অসহায় বৈষম্যের শিকার মানুষদের জন্য কিছু করার সুযোগ পেয়েছি। পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রেনিং, মিটিং, সেমিনার করার সুযোগ পেয়ে নিজের জানার পরিধিকেও বিস্তৃত করার চেষ্টা করেছি। একদিকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিগণের সাহচর্যে আসার সুযোগ পেয়েছি এবং তাঁদের সহযোগিতায় সমাজের নির্যাতনের শিকার নারী শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি করে দিতে পেরেছি।

‘ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুল’-এ পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি ‘মানবাধিকার’ বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রায় দশ বছর যাবত ‘অতিথি বক্তা’ হিসেবে ‘ডিটেকটিভ ট্রেনিং স্কুল’-এ অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের নারী-শিশুর অধিকার, অভিযুক্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির অধিকার বিষয়ে সেশন পরিচালনার মাধ্যমে পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ হয়েছিল।

এছাড়া যে কোন অপরাধের শিকার নারী-শিশুকে উদ্ধার, সমিতির আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় প্রদান, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ইত্যাদি কাজের প্রয়োজনে থানার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সংগঠনটিতে কাজ করার সুবাদে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে’ বেশ কয়েক বছর আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। ‘মানুষ নামের দানবদের’ নারী- শিশুদের সাথে করা ভয়ঙ্কর সব অপরাধ দেখে নিজেকে মানুষ ভাবতেও ঘৃণা বোধ হত!

আরও পড়ুন  ভাষা নিয়ে ভাবনা

আমি যখন ‘মহিলা আইনজীবী’ সমিতিতে কর্মরত ছিলাম সে সময় বাংলাদেশের এক নারীর সাথে ভারতের কোলকাতায় ঘৃণ্যতম এক অপরাধের ঘটনা ঘটে। উক্ত অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে কোলকাতায় মামলা দায়ের হয়। উক্ত মামলায় সমিতির পক্ষ থেকে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল আমার। মামলাটি ছিল একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলা। এ কারণে মামলাটির শুনানী চলাকালীন সময়ে ঢাকা থেকে ভুক্তভোগীকে সাথে নিয়ে আমাকে একাধিক বার কোলকাতা যেতে হয়েছিল। কোলকাতা থাকাকালীন সময়ে ভুক্তভোগী নারী এবং তার সঙ্গী আইনজীবীকে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা প্রদান করা হত। এ কারণে ভুক্তভোগী নারী এবং আমি কোলকাতায় পুলিশের পূর্ণকালীন নিরাপত্তার আওতায় থাকতাম।

বেশ কিছু দিন কোলকাতা অবস্থানের কারণে উক্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ কোলকাতা পুলিশের অনেক সদস্যের সাথেই আমার বেশ আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। এদের অনেকেরই পিতা, পিতামহের মাতৃভূমি ছিল তৎকালীন পূর্ব বঙ্গে এবং অনেকেই ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময়ে অথবা পরবর্তীতে তাঁদের মাতৃভূমি তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান) ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন! এদের একজন ছিলেন বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলা থেকে আগত ইন্সপেক্টর সুভাষ। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে কোলকাতা চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন! ইন্সপেক্টর সুভাসের সাথে কথা বললেই সাতক্ষীরার শান্ত গ্রামের জন্য তাঁর মনের গভীর আবেগ বোঝা কঠিন হতো না! ইনস্পেকটর সুভাসসহ ঐ সময় আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা হাওড়া পুলিশের অধিকাংশ পুলিশ সদস্যের মাতৃভূমিই ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে।

আরও পড়ুন  সমকালীন ভাবনা

এ ছাড়া নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে, ‘সয়াম’ নামের এমন একটি সংগঠনের সদস্য কৃষ্ণা রায়, যিনি ঢাকার রমনার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর মুখেও শুনেছি মাতৃভূমি ছেড়ে আসার মানসিক কষ্টের কথা! বাংলাদেশের জন্য আকুতি। একই সংগঠনের অনুরাধা কাপুরের মুখে শুনেছি তার প্রিয় মাতৃভূমি পাকিস্তানের পেশোয়ারের জন্য মনের গভীরে থাকা দুঃখ! বহু বহু বছর পরেও মাতৃভূমির জন্য এই মানুষগুলির যে আবেগ, অনুভূতি দেখেছি, তা যে কোন মানুষকে আবেগ আপ্লুত করে তুলবে-সন্দেহ নাই। দায়িত্ব পালনের ফাঁকে ফাঁকেই তাঁরা বাংলাদেশ সম্মন্ধে জানতে চাইতেন অথবা নিজেদের স্মৃতিচারণ করতেন! তৎকালীন বৃটিশ শাসকদের নিষ্ঠুর এবং দায়িত্বহীন ভাবে দেশভাগ লক্ষ লক্ষ মানুষকে আপন আবাস ছেড়ে উদ্বাস্তু হতে বাধ্য করেছিল! হৃদয়হীন রাজনীতির মারণ খেলার কাছে মানুষের জন্মগত অধিকার, আবেগ, অনুভূতি সব কিছুই মূল্যহীন।মাতৃভূমি ছেড়ে যাওয়া এসব মানুষদের আবেগের স্মৃতিগুলো এখনও আমাকে আন্দোলিত করে।

ঐ সময়ের আরও অনেক স্মৃতিই এখনও মনের আয়নায় জীবন্ত হয়ে আছে। যেমন হাওড়া পুলিশ আমার অনুরোধে বিভিন্ন সময়ে কোলকাতার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান-যেমন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, বিদ্যাসাগর ব্রীজ, প্লানেটরিয়াম, মেট্রো রেল দেখাতে নিয়ে গিয়েছে। কোলকাতায় নেতাজী সুভাস বোসের বাড়িও, যে বাড়ি থেকে নেতাজী ভারত বর্ষকে পরাধীনতার গ্লানি মুক্ত করতে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে গিয়েছিলেন। রুপার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছিলেন এই মহান নেতা। মাতৃভূমিকে ঔপনিবেশিক শাসন মুক্ত করাই ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। সে কারণেই ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের লোভনীয় চাকুরীর সুযোগকে তিনি অকাতরে উপেক্ষা করেছিলেন।

ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে অবলীলায় নাজী জার্মানী এবং জাপানের নিকট থেকে সামরিক সহযোগিতা গ্রহণেও কুণ্ঠিত হননি! ১৯৪২ সালে ঔপনিবেশিক শক্তি বৃটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করতে ভারতীয় জাতীয়তা বাদীদের দ্বারা গঠিত ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ নামের সেনাবাহিনী প্রধানের দায়িত্ব নেতাজীর উপর অর্পিত হয়েছিল। নেতাজী সুভাস বোসের অন্তর্ধান বিষয়ে অনেক বিতর্ক প্রচলিত আছে। এ বিষয়ে সিনেমা তৈরী হয়েছে। এ বিতর্কের সমাধান আজও হয়নি। তবে দেশ-মাতৃকার স্বাধীনতার প্রশ্নে, লোভনীয় জীবনের আকর্ষণকে পায়ে ঠেলে তাঁর আত্মত্যাগ-এই মহান ব্যক্তিত্বকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে-সন্দেহ নাই!

আরও পড়ুন গল্প একজন অনন্যা

ইন্সপেক্টর সুভাস একদিন নেতাজীর বাড়ি দেখাতে নিয়ে গেলেন। বৃটিশ শাসক কর্তৃক ‘গৃহবন্দী’ থাকা অবস্থায় তিনি এই বাড়ি থেকেই পালিয়ে গিয়েছিলেন দেশকে পরাধীনতার অর্গল মুক্ত করতে! যে গাড়িটিতে করে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন, সেটি এখনও বাড়ির প্রবেশ মুখে রাখা আছে। বর্তমানে বাড়িটি নেতাজীর জীবন ও কর্মকাণ্ডের গবেষণাগার হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এখানে একটি লাইব্রেরি এবং একটি আর্কাইভ তৈরি করা হয়েছে। নেতাজীর স্মরণে নির্মিত লাইব্রেরি থেকে তাঁর জীবন নিয়ে গবেষণা ধর্মী কয়েক খানা বই সংগ্রহ করলাম। সবশেষে ভারতবর্ষের এই মহান নেতার প্রতি বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরে গেলাম কোলকাতার ‘গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে।’

কোলকাতা আসার আগেই পরিকল্পনা ছিল, কোলকাতার জোড়াসাঁকোর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি দেখে যাওয়ার। একদিন হাওড়া পুলিশের ইনস্পেকটর সুভাস চন্দ্রকে অনুরোধ করলাম, আমাকে কোলকাতার রবীন্দ্রনাথের বাড়ী দেখাতে নিয়ে যেতে। ইন্সপেক্টর সুভাসকে বললাম, যে মানুষটির মাধ্যমে বাঙ্গালীর বিশ্ব পরিচয়, কোলকাতা এসে তার জন্মস্থান না দেখে গেলে মনে অতৃপ্তি থেকে যাবে। ইনস্পেক্টর সুভাস খুব আন্তরিকভাবে ঠাকুর বাড়ি দেখাতে নিয়ে যাবেন বলে জানালেন। কিন্তু মামলার দীর্ঘ শুনানীর কারণে সময় করা সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ পাঁচটা বাজলেই ঠাকুর বাড়ি দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। যেদিন মামলার শুনানী শেষ হলো তার পরদিন ভুক্তভোগীকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে ঢাকা ফিরতে হবে।

ভাগ্যক্রমে শেষ দিন মামলার শুনানী শেষ হলো একটু আগেই। আমি সুযোগটি হাত ছাড়া না করে এসপি ভারতী রায়-যিনি মামলাটির দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনি ছিলেন একজন বাঙ্গালী-তাঁকে বিশ্ব কবির বাড়ি দেখতে যাওয়ার আগ্রহের কথা জানালাম। তখন পাঁচটা বাজতে কিছু সময় বাকী আছে। এস পি ভারতী ইন্সপেক্টর সুভাষকে নির্দেশ দিলেন আমাকে নিয়ে যেতে। আমরা পৌঁছানোর আগেই ঠাকুর বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পুলিশের অনুরোধে আমার জন্য আবার সেটি খুলে দেওয়া হলো। আমার বহু কাঙ্খিত ঐতিহাসিক ঠাকুর বাড়ী দেখার সুযোগ পেলাম।

আরও পড়ুন গল্প সোনালী

এই বাড়িতেই ১৮৬১ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের দিকপাল রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল। রবির উজ্জ্বল আভায় দিকবিদিক রাঙিয়ে বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যকে সমৃদ্ধির চূড়ায় পৌছে দিয়ে, বিশ্ব সভায় স্থান করে দিয়ে ১৯৪১ সালে এই বাড়িতেই চির বিদায় নেন কবি গুরু!

কবি গুরুর ব্যবহৃত বিভিন্ন দ্রব্যাদি, তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর রান্নাঘর সহ তিন তলা বিশিষ্ট লাল রঙের বিশাল জমিদার বাড়ির বিভিন্ন কামরা ঘুরে দেখলাম। দোতলায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অংকিত চিত্র কর্মসমূহ। কবির রচনা থেকে জানা যায় জমিদার বাড়ির বারান্দা থেকে গঙ্গা নদী দেখা যেত। কালের পরিক্রমায় অসংখ্য ঘর-বাড়ি সেই মনোরম দৃশ্যকে আড়াল করে দিয়েছে। তবে বহু স্মৃতি বিজড়িত সেই বারান্দাটি এখনো রয়ে গেছে। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্রনাথের শততম জন্ম দিন থেকে পশ্চিম বঙ্গ সরকার কর্তৃক কবি গুরুর স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটি ‘রবীন্দ্র জাদুঘর’ এবং ‘রবীন্দ্র ভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে রুপান্তরিত হয়। গাছ-পালা, রঙ-বেরঙের ফুলে শোভিত বাগান দর্শক মনকে আজও ভাল লাগার মুগ্ধতায় ভরিয়ে দেয়।

বহুল আলোচিত মামলাটির কথা একটু না বললে লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এ মামলাটির গোপন শুনানী হয়েছিল কোলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। অপরাধটি যেহেতু কোলকাতায় সংঘটিত হয়েছিল, সেহেতু মামলার তদন্ত থেকে শুরু করে শুনানী সব কিছুই কোলকাতায় সম্পন্ন হয়েছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, সরকারী কৌঁসুলী মোট কথা মামলার সংশিষ্ট সবাই ছিলেন কোলকাতার। ’স্বয়াম’ নামে স্থানীয় একটি নারী সংগঠন সহযোগিতা করেছিল এই মামলায়।মামলার গোপন শুনানী চলাকালীন সময়ে বাদী এবং বিবাদীগণের আইনজীবী ছাড়া আদালতে অন্য কারোরই প্রবেশাধিকার ছিল না, সে কারণে আমার উপস্থিতি আসামী পক্ষের আইনজীবীগণ মানতে পারছিলেন না।

আরও পড়ুন গল্প বড় বাবা

আমি আদালত পরিত্যাগ করতে চাইলে সরকারী কৌঁসুলি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এই বলে যে, আমি একজন বিদেশী এবং পশ্চিম বঙ্গ সরকারের একজন আমন্ত্রিত অতিথি। কাজেই আদালত কক্ষে অবস্থান করতে না দেওয়া অতিথিকে অপমান করার শামিল হবে। মাননীয় বিচারক তাঁর যুক্তি বিবাদী পক্ষের আইনজীবীগণকে অবগত করলে, তাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে আমাকে বিচার কক্ষে থাকার ব্যাপারে আর কোন আপত্তি করলেন না।

যাই হোক, বাদীপক্ষ যথাযথ ভাবে প্রমান করতে না পারায় আসামীদের বেশীর ভাগেরই তেমন কোন গুরুদণ্ড হয়নি। মামলার ভূক্তভোগীর চূড়ান্ত শুনানী শেষ হওয়ার পরের দিনই আমি ভূক্তভোগীকে সাথে নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসি।

আরও পড়ুন যাপিত জীবনের কথকতা-  
দ্বারিয়াপুর গ্রাম
আত্রাই নদী 
আমার বাবা
আমার মা
ভাই-বোনদের কথা
আমার শিক্ষাজীবন
একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলো 
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ
সংসার ও আইনজীবী জীবন
পাশের বাড়ির আপনজন
আমার নানী
প্রথম শহর দেখা ও  প্রথম বিদেশ ভ্রমণ
তৎকালীন গ্রামের চিত্র
ছেলেবেলার ষড়ঋতু  
মধুর স্মৃতি
স্নেহশীল কজন
তৎকালীন গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

যেভাব আইনজীবী হলাম

Facebook Comments Box

তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি এবং নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তার পেশাগত জীবনে তিনি নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাহমিনা খাতুন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে এই গ্রামেই।

error: Content is protected !!