মধুর স্মৃতি
মধুর স্মৃতি
অল্প বয়সের স্মৃতি হয়তো মানুষ কখনো ভোলে না। তেমনি একটি স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। আমার বড় ভাবী ও ওনার মায়ের টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়া জাতীয় কোন জ্বর হয়েছিল। আমার ভাবী ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ভাবীর বাবার একার পক্ষে দুই জন অসুস্থ মানুষকে সুশ্রুষা করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। খবর পেয়ে মা ওনাদের সেবা করার জন্য আমাকে আর ছোট দুই ভাই-বোন বাসার আর তুষারকে নিয়ে ভাবীর বাবার বাড়ি সৈয়দপুর গেলেন। কয়েকদিন পর আব্বা আমাকে আনতে গেলেন। কয়দিনেই ভাবীর চাচাত বোনদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। আমি ফিরে আসার আগে আমার বন্ধুটি আমাকে ভালবেসে তার কিছু পুতুলের কাপড় আমাকে উপহার দিল। পুতুলের শাড়িগুলো আমি আমার ছোট্ট ফ্রকের ততোধিক ছোট্ট কোঁচড়ে পোঁটলা পাকিয়ে নিয়ে সন্ধার কিছু আগে হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা নেমে এল।
আব্বার হাত ধরে হাঁটছিলাম। কিছু দূর আসার পরেই বুঝলাম পুতুলের শাড়ির পোঁটলাটি কোঁচড় গলিয়ে পড়ে গেছে। পিছনে অনেক খানি দৌড়ে গিয়ে পোঁটলাটি কুড়িয়ে পেয়ে আনন্দ আর ধরে না! কিন্তু সে আনন্দ বেশীক্ষণ স্থায়ী হল না। আবার হাটতে শুরু করলাম। বর্ষাকালের গ্রামের রাস্তায় এক জায়গায় অনেকটা পথ পানির মধ্যে হেঁটে পার হতে হল। পানির পথটুকু পাড় হওয়ার সময়ে আমার অজান্তেই কখন পোঁটলাটি কোঁচড় গলিয়ে পড়ে গেছে। আর খুঁজে পাইনি। আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও যেন মনে হয়, লক্ষ টাকার মূল্যের কোন জিনিস হারালেও বুকের গভীরে সেই পুতুলের শাড়ি না পাওয়ার বেদনার তূল্য আর কিছুই হয় না। অল্প বয়সের আবেগ তুলনাহীন!
আরও পড়ুন গ্রন্থাগার আইন
খুব ছোট বেলায় সন, তারিখ কিছু মনে নাই। একবার আমাদের গ্রামে বায়োস্কোপ দেখাতে এসেছিলো কোন একটি বায়োস্কোপ দল। অত অল্প বয়সে সে বায়োস্কোপের কিছুতো বুঝতে পারি নাই। বায়োস্কোপের দল গ্রামে আসায় নিস্তরঙ্গ গ্রামীণ জীবনে একটা উৎসবের সাড়া পড়েছিল- এটুকু মনে পড়ে! বায়োস্কোপের বিভিন্ন দৃশ্য দেখে রুপকথার জগত বলে মনে হয়েছিলো! তবে আর একটু বড় হওয়ার পর সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখে যারপরনাই খুশী হয়েছিলাম। ষাটের দশকের শেষ দিকে সম্ভবত সাতষট্টি বা আটষট্টি সালের দিকে প্রথম ঢাকা বেড়াতে গেলাম। সেই ছিল আমার প্রথম ঢাকা দর্শন! হাজার হোক তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী বলে কথা!
তখন ঢাকা যেতে নগরবাড়ি ঘাট থেকে ফেরীতে করে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে আরিচা পৌঁছাতে হতো। এরপর সেখান থেকে ছোট ট্যাক্সি করে ত্বরা ঘাটে পৌঁছে একটি ফেরী পার হতে হত। যমুনার সাথে তুলনামূলক ভাবে অনেক ছোট এই নদীগুলো এপার ওপার করা হত বড় বড় দুটো নৌকাকে এক সাথে জোড়া দিয়ে। ইঞ্জিনের সাহায্যে চালানো হতো এই আজব ফেরী! ছোট ছোট ট্যাক্সি আর মানুষ জন পারাপার করা হত এই ফেরীতে করে। নয়ার হাটে পৌঁছার জন্যও একইভাবে আরও একটা ফেরী পার হয়ে ট্যাক্সি ঢাকা পৌঁছে দিত।
ঢাকা পৌঁছার পর রীতিমতো গর্বে মন ভরে গেল। সে সময়ের ঢাকাকে আজকের ঢাকার সাথে মিলাতে গেল রীতিমত হোঁচট খেতে হবে। সে সময়ের ঢাকা বর্তমানের কোন মফস্বল শহরের চেয়েও ছোট ছিল। মূলত বর্তমানের পুরান ঢাকা থেকে পলাশী, আজিমপুর পর্যন্তই ছিল ঢাকার বিস্তৃতি। ধানমন্ডি এলাকা তখন নতুন আবাসিক এলাকা হিসাবে গড়ে উঠছে। এছাড়া মিরপুর, মোহাম্মদপুর এলাকা ছিল মূলত ভারত থেকে আগত অভিবাসী প্রধান এলাকা। একাত্তরে ভারত প্রত্যাগত এই সব অভিবাসীদের (যাদেরকে বিহারী বলা হয়) ভূমিকাও ছিল রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসাবে বাঙ্গালী নিধনেও এদের জুড়ি ছিল না।
আরও পড়ুন ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা
ঢাকাকে এক সময় বলা যেত প্রকৃতির আশীর্বাদ। পৃথিবীর আর কোন শহর ঢাকার মতো প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট কিনা-সন্দেহ আছে। ঢাকার চারপাশে চারটি বড় বড় নদী-বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, বালু, তুরাগ। এই চার নদীই মৃত প্রায়! দখলে, দূষণে নদীগুলো জীবন্মৃত! কোন ক্রমে ধুঁকে ধুঁকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে! সেদিন হয়তো আর বেশী দূরে নয়-যেদিন এদের অবস্থান হবে ইতিহাসের পাতায়। এ সব নদী ছাড়াও ঢাকার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া ধানমন্ডি আর গুলশান লেক ঢাকাকে দিয়েছিল নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। দুটি লেক ছাড়াও ঢাকার বুক চিড়ে বয়ে যেত দোলাই খাল, রামপুরা বা আরও অসংখ্য খাল আর জলাধার। গুলশান আর ধানমন্ডি লেকের অনেকটাই ভরাট করে আবাসিক এলাকা তৈরি করা হয়েছে! অথচ পৃথিবীর অনেক বড় বড় শহরেই কৃত্রিম লেক তৈরি করে একদিকে শহরের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে, আবার সুপেয় পানির আধারে পরিণত করা হয়েছে।
পৃথিবীর বড় বড় শহর যেমন লন্ডন, প্যারিস, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, সিডনি ইত্যাদি বড় বড় শহরগুলো আমাদের পদ্মা, মেঘনা, যমুনার চেয়ে অনেক অনেক ছোট নদীর তীরে গড়ে উঠেছে। কিন্তু রাষ্ট্রের কর্ণধারদের সু্ষ্ঠু পরিকল্পনা এবং ওই সব দেশের নাগরিকদের সচেতন কর্মকান্ডের ফলে এই ছোট ছোট নদীগুলোই দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখছে। উদার হাতে ঢেলে দেওয়া প্রকৃতির এ সমস্ত উপহারকে আমরা আমাদের সর্বগ্রাসী লোভ আর কান্ডজ্ঞানহীন আচরণ দ্বারা অবলীলায় ধ্বংস করে চলেছি। বড় বড় নদী, খাল- বিল, হ্রদ ভরাট করে গড়ে তুলছি আকাশচুম্বী ইমারত।
বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় আজ ঢাকার গুরুত্ব যেমন বেড়েছে, একইভাবে ঢাকা বার বার অপরিকল্পিত এবং দূষিত শহর হিসাবে বিশ্বের কাছে উপস্থাপিত হচ্ছে। বাসযোগ্য শহরের তালিকায় আমার প্রিয় শহর ঢাকার অবস্থান যখন বিশ্বের অন্য অনেক শহরের সাথে তুলনা করা হয়, তখন ঢাকার নিম্নমুখী অবস্থান নিয়ে লজ্জিত হতে হয়। একে তো জনসংখ্যার চাপ তার উপর প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্য, বিনোদন-সব কিছু যখন রাজধানী কেন্দ্রিক হয়, তখন সে শহরকে আর বাসযোগ্য শহর হিসাবে বিবেচনা করা যায় না। বিষয়টি নিয়ে নগর পরিকল্পনাবিদদের অবশ্যই গভীর ভাবে চিন্তা-ভাবনা করার সময় এসেছে।
আরও পড়ুন শানশি লাইব্রেরি ও মোরগের ডাক
যাহোক, ছোট ভাই ঢাকার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখাতে নিয়ে গেলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ মিনার, লালবাগের কেল্লা, কমলাপুর রেল স্টেশন (ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন) ইত্যাদি দেখলাম। কমলাপুর রেল স্টেশন চালু হওয়ার পর তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের নিকট কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বা ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনকে এশিয়ার বৃহত্তম রেল স্টেশন বলে অপপ্রচার চালাতো! অথচ সে সময়ই কোলকাতার হাওড়া অথবা শিয়ালদহ রেল স্টেশনই ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে অনেক অনেক বড় ছিল। বাংলার মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টায় পাকিস্তানি শাসকদের কোন জুড়ি ছিল না!
একইভাবে বর্তমান শেরে বাংলা নগরকে সে সময় নতুন রাজধানী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। লাল রঙের কয়েকটি নতুন ভবন তৈরি করেই এই নামকরণ করা হয়েছিল! অথচ সেই সময়ই করাচীকে বাদ দিয়ে ইসলামাবাদকে আধুনিক রুপে গড়ে তুলে পাকিস্তানের নতুন রাজধানী করা হয়। এই ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের ধাপ্পাবাজি! কিন্তু দুঃখজনক হল, আমরা ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীন হলাম, ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পাকিস্তানি শাসন মুক্ত হলাম, এখন আমরা আমাদের নিজেদের সাথেই ধাপ্পাবাজি করে চলেছি!
ঢাকার রাস্তায় তখন চলতে শুরু করেছে ডাবল ডেকার বা দোতলা বাস। গুলিস্তান থেকে মিরপুর রুটে চলতো ডাবল ডেকার বাসগুলো। বড় দুলাভাই (মরহুম জনাব আব্দুস সাত্তার) আমাকে দোতলা বাসে করে মিরপুরে ওনার এক আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে নিয়ে গেলেন।
আরও পড়ুন সমকালীন ভাবনা
ঢাকার পলাশী ব্যারাকে থাকতেন বড় ভাই মরহুম খন্দকার আবু তাহের। আমরা আমাদের বড় ভাইকে ডাকতাম মিয়াভাই বলে। পাশাপাশি থাকতেন আমার ফুফাতো ভাই মরহুম কাজী মোকাররম হোসেন। ওনাকে আমরা বড় মিয়া ভাই বলে সম্বোধন করতাম। আমাদের ফুফাতো ভাই-বোনদেরকে আমরা এবং চাচাতো ভাই-বোনেরা নিজেদের ভাই-বোনদের মতোই সম্বোধন করতাম। যেমন- বড় মিয়াভাই, বড় মেজভাই,বড়বু, মেজ বু, সেজ বু, ছোট বু ইত্যাদি। ওনারা আমার বড় ভাই বোনদের চেয়ে বয়সে বেশ বড় ছিলেন এবং আমাদেরকে ছোট বেলায় চাচাতো, ফুফাতো ভাই বোনদেরকে এভাবেই ডাকতে শেখানো হয়েছিলো। আমরা ওনাদেরকে আপন ভাই বোনের মতোই ভাবতাম। পক্ষান্তরে ওনারাও আমাদেরকে যথেষ্ট স্নেহ করতেন। বড় মিয়া ভাই, ভাবী খুবই স্নেহ করতেন আমাদের ভাই-বোনদের। প্রথম যখন ঢাকায় যাই, বড় মিয়াভাই এবং ভাবী কোথাও বেড়াতে গেলে আমাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এছাড়া একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়েও যখন ঢাকায় ছিলাম, বড় মিয়া ভাইয়ের ধানমন্ডির বাসায়ও প্রায়ই থাকা হত।
ছোট ভাইও (মরহুম খন্দকার আবুল খায়ের) তখন ঢাকায় থেকে চাকুরীর পাশাপাশি জগন্নাথ কলেজে (নৈশ কালীন) গ্রাজুয়েশন কোর্স করছিলেন। ছোট ভাই একদিন আমাকে সিনেমা দেখাতে নিয়ে গেলেন ঢাকার স্টার সিনেমা হলে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান নির্মিত এবং জনপ্রিয় অভিনেতা, অভিনেত্রী সুচন্দা-রাজ্জাক অভিনীত হিন্দু কিংবদন্তী কাহিনী নির্ভর বেহুলা চলচ্চিত্র দেখে দারুণ আনন্দ পেয়েছিলাম। প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের আজকের পৃথিবীতে ষাটের দশকের গ্রাম থেকে আসা এক সরল বালিকার সে অনাবিল আনন্দ আর ভাল লাগার অনুভূতি খুঁজতে যাওয়া, আজকের প্রজন্মের কাছে নিছক বোকামিই হবে!
ঢাকায় প্রথমবার বেড়াতে গিয়ে চমৎকৃত হয়েছিলাম, প্রথমবারের মত একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাত ফেরী দেখে! মেয়েরা কালো পাড়, সাদা শাড়ি এবং ছেলেরা সাদা পাজামা, পাঞ্জাবি পড়ে হাতে ফুল নিয়ে খালি পায়ে রাস্তায় হেঁটে চলেছেন শহীদ মিনারে, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে!
আরও পড়ুন ভাষা নিয়ে ভাবনা
আরও একটা ভাল লাগার স্মৃতি আজও মনে দোলা দিয়ে যায়। পাকিস্তানের সেনা শাসক আইয়ুব খান দশ বছর ধরে ক্ষমতায়। আইয়ুব খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা পুনরুজ্জীবনের জন্য শুরু হলো তীব্র গণ আন্দোলন। সারা পাকিস্তানের গণ আন্দোলন রুপ নিল গণঅভ্যুথানে। মিছিলে, স্লোগানে উত্তাল রাজপথ। গণঅভ্যুথান দমন করার উদ্দেশ্যে চলল কারফিউ, গুলি! পুলিশের গুলিতে ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারিতে শহীদ হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদ, ২৪ জানুয়ারিতে শহীদ হন ঢাকার নব কুমার ইনস্টিটিউটের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মতিউর এবং আরও অনেকে। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথান আইয়ুব খানের ক্ষমতার ভীতকে নাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। উনসত্তরের সেই গণঅভ্যুথানকে উপজীব্য করে অমর চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান নির্মাণ করলেন তাঁর কালজয়ী চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া! অল্প বয়স থেকেই রাজনীতি সচেতন মানুষদের সাহচর্যে আসার কারণে বিশেষত ছোট ভাই তৎকালীন প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতির সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী থাকার কারণে আমাদের ছোট ভাই-বোনদের মধ্যেও তার প্রভাব পড়েছিল।
জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রটি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। চেনা-জানা অনেকের মুখেই সিনেমাটির প্রশংসা শুনে সিনেমাটি দেখার ইচ্ছা হলো। মেজ ভাইকে বললাম জীবন থেকে নেয়া সিনেমা দেখতে যাওয়ার ইচ্ছার কথা। জীবন থেকে নেয়ার মতো সিনেমা দেখতে মেজ ভাইয়েরও আগ্রহ ছিল খুব। কাজেই মেজ ভাই সিনেমা দেখাতে আমাকে পাবনা শহরে নিয়ে গেলেন। পাবনা শহরে তখন রূপকথা আর বানী নামে দুটো সিনেমা হল ছিল। প্রথমে যাওয়া হল রুপকথা হলে। সিনেমার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে ইভনিং শো এর টিকেট পাওয়া না যাওয়ায় নাইট শো (যেটা শুরু হবে রাত নয়টায়) এর টিকেট কিনে মাঝের সময়টা কাজে লাগানোর জন্য আমরা বানী সিনেমা হলে গেলাম।
আরও পড়ুন আত্মকথন
বানীতে তখন চলছিল তৎকালীন আর এক জনপ্রিয় জুটি রাজ্জাক-ববিতা অভিনীত সিনেমা পীচ ঢালা পথ। অন্য অনেকের মতোই মেজ ভাইয়েরও সিনেমা দেখার বেশ নেশা ছিল ওই সময়। আমার এখনও মনে আছে, আমাদের আরেক ফুফাতো ভাই প্রয়াত মনা ভাইয়ের সাথে মেজ ভাইয়ের ছিল খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। আমি যখন বেশ ছোট, কেবল মাত্র পড়তে শিখেছি, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতাম, মেজ ভাই আর মনা ভাই হয়তো পাবনা শহরে গিয়ে সিনেমা দেখে এসেছেন, সিনেমার শুরুর আগে সিনেমার কাহিনী সংক্রান্ত যে ছোট ছোট পুস্তিকা দেওয়া হতো, সেটা খুব কষ্ট করে পড়তাম। কাহিনীর শেষে লেখা থাকতো বাকী রুপালী পর্দায় দেখুন! পাতা উল্টে পাল্টে হন্যে হয়ে রুপালী পর্দা খুঁজতাম। ছেলেবেলার সে বোকামী মনে হলে এখনও হাসি পায়!
পীচ ঢালা পথ দেখা শেষ করে আমরা আবার রুপকথা হলে ঢুকলাম এবং জীবন থেকে নেয়া দেখা শেষ করে আমি আর মেজ ভাই শেষ বাসে করে রাত প্রায় ১২ টায় বাড়ি ফিরলাম। সে যেন ছিল রীতিমত এক এ্যাডভেঞ্চার!
আরও পড়ুন যাপিত জীবনের কথকতা-
দ্বারিয়াপুর গ্রাম
আত্রাই নদী
আমার বাবা
আমার মা
ভাই-বোনদের কথা
আমার শিক্ষাজীবন
একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলো
যেভাবে আইনজীবী হলাম
শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ
সংসার ও আইনজীবী জীবন
পাশের বাড়ির আপনজন
আমার নানী
প্রথম শহর দেখা ও প্রথম বিদেশ ভ্রমণ
তৎকালীন গ্রামের চিত্র
ছেলেবেলার ষড়ঋতু
স্নেহশীল কজন
তৎকালীন গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থা
ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
মধুর স্মৃতি