বোশেখ-বন্দনা
কবিতা,  তাহমিনা খাতুন

বোশেখ বন্দনা

বোশেখ বন্দনা

তাহমিনা খাতুন

চৈত্রের অগ্নিবান হলো সবে শেষ
বোশেখ এলো যেন নিবারিতে সব ক্লেশ।

চৈত্রের রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির
কোথাও মেলে না দেখা শান্তির নীড়।

জনশূন্য ফাঁকা নিস্তব্ধ চারিধার
ভুলেছিল প্রাণীকূল শোনাতে কলস্বর।

ঘুঘুর ক্লান্ত সুর ভরাত দুপুর
মনের তারে বাজাতো শুধু বিষাদের সুর।

বন-বনানী হয়েছিল কাতর পিপাসায়
চাতকের মতো গুনছিল দিন বোশেখের প্রতীক্ষায়।

চৈত্রের ভয়াল তাপে ওষ্ঠাগত সব প্রাণ
রুদ্র কালবৈশাখী গাইল যেন নতুন দিনের গান।

রুদ্র বোশেখের আজ হলো আগমন
নতুন দিনের তরে জানাল আমন্ত্রণ।

ঈশানকোণে শুনি মেঘের গুরু গুরু
সোনালি দিনের বুঝি হলো আজ শুরু।

দুরন্ত দূর্বার ঝড়ের হাওয়ায়
পুরনো দিন সে তো উড়ে চলে যায়।

উন্মাতাল হাওয়ার সাথে এলো বারিধারা
তৃষাতুর মাটি তা শুষে নিল ত্বরা।

মাঝে মাঝে শোনা যায় বজ্রের হুঙ্কার
কৃষক ছুটিছে মাঠে ভুলে ভয় ডর।

বোশেখের ডাকে আগে দিয়েছে সে সাড়া
নতুন ফসল বোনার তার রয়েছে যে তাড়া।

নবজীবনের ছন্দ আজ লাগল সকল প্রাণে
সে ছন্দ শুনি আজ নদীর কলতানে।

চারদিকে শুনি আজ শিশুর কলধ্বনি
প্রাণের তারে দিকে দিকে তার মধুর আলাপনি।

চারদিকে দেখি শুধু উৎসবেরই ধুম
বন-বনানীর চোখেও বুঝি নাই আজ ঘুম।

ফুল বাগানে হলুদ লাল নীল বেগুনি ফুলে
মৌমাছি নেচে যায় আপনা ভুলে।

বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে আজ, মাতোয়ারা সবে
এত খুশি আগে কেউ, দেখেছে কে কবে?

কোকিলের কুহুতান ধরিত্রী মাতায়
বউ কথা কও তার সুরে, সুরটি মিলায়।

লাল-নীল প্রজাপতি, উড়ে ফুলে ফুলে
খুশির বারতা জানায়, তারা দুলে দুলে।

বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দে আজ মাতোয়ারা সবে
এত খুশি আগে কেউ দেখেছে কে কবে?

খোকা-খুকু উচ্ছল, জাম-জামরুল বনে
কুড়ায় ঝরা আম, সখা সখি সনে।

গাছে গাছে দেখা দিয়ে নব কিশলয়
ঘুম ভেঙে জেগে উঠে, সুপ্রভাত জানায়।

দূরন্ত কালবোশেখীর বেগে দুঃখ হোক দূর
নতুন আনন্দে হবে জগৎ হবে ভরপুর।

প্রভাতের রাঙা রবি দিল এ অভয়
বোশেখের আগমনে অশুভ হবে লয়।

সুখ আনন্দে সকল ঘর, আজকে উঠুক ভরে
নববর্ষে এ শুভেচ্ছা থাকল সবার তরে।

আরও পড়ুন কবিতা-   
 কিশোর কবি
অগ্নিঝরা বৈশাখ
তোমাকে পাইনি বলে

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

বোশেখ বন্দনা

Facebook Comments Box

তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি এবং নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তার পেশাগত জীবনে তিনি নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাহমিনা খাতুন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে এই গ্রামেই।

error: Content is protected !!