বোনকোলা গ্রাম পরিচিতি
বোনকোলা গ্রাম পরিচিতি:
বোনকোলা পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার একটি সুনামধন্য গ্রাম। গ্রামটি সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের অনেকটা মধ্যভাগে অবস্থিত। সুবিশাল আয়তন নিয়ে অনাবিল সৌন্দর্যের গাজনার বিল ঘেঁষে, ব্যস্ত বাজার, নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক নিয়ে বীর দর্পে স্থিত রয়েছে নামকরা এ গ্রামটি।
গ্রামের ইতিহাস ও নামকরণ: বোনকোলা গ্রামের নামকরণের ইতিহাস তেমন কিছু জানা যায় না। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিমত অনুসারে গ্রামটি অনেক পুরাতন। নির্ভরযোগ্য কিছু বয়োবৃদ্ধ লোকদের নিকট জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেলো, বহু আগে পদ্মা নদীর উত্তর পারের কোল ধরে বন-খাগড়ায় আবৃত্ত ছিলো। কিছু মানুষ এই বন কেটে জনবসতি শুরু হয়, এই জনবসতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আর এই ভাবে গ্রামটির নাম হয় “বোনকোলা”।
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের আগে এই গ্রামসহ আশে পাশের সকল গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে যেত, ফলে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের শেষ ছিলো না, অনুন্নত জীবনযাপন করতে হত। পদ্মা নদীর পারে “মুজিব বাঁধ” দেওয়াতে এই এলাকা বন্যার কবল থেকে রক্ষা পায়। সাথে সাথে ফসলের উৎপাদনও ভালো হয় এবং উন্নয়নের ছোয়া লাগে এই গ্রামে। ২০০১ খ্রিস্টাব্দের দিকে গ্রামের রাস্থা-ঘাটের উন্নয়ন ঘটে।
অবস্থান: বোনকোলা গ্রামের উত্তরে ও পূর্বে গাজনার বিল, পশ্চিমে ক্ষেতুপাড়া, তৈলকুণ্ড, উত্তরে দাশপাড়া ও চরগজারিয়া গ্রাম। বোনকোলা মানিকহাট ইউনিয়নের মোটামুটি মধ্য স্থানে অবস্থিত, ফলস্বরূপ আশে পাশের গ্রামের মানুষদের যাতায়াতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন বোয়ালিয়া গ্রাম পরিচিতি
- বোনকোলা হাই স্কুল (স্থাপিত: ১৯৬৮ খ্রি.)
- বোনকোলা গার্লস স্কুল ( স্থাপিত: ১৯৮৬ খ্রি.)
- বোনকোলা কলেজ (স্থাপিত: ১৯৯৮ খ্রি.)
এছাড়া বোনকোলাতে ৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে-
-
৫৬ নং বোনকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (স্থাপিত: ১৯২০ খ্রি.)
-
৫৭ নং বোনকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (স্থাপিত: ১৯৪৪ খ্রি.)
-
১২২ নং বোনকোলা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় (স্থাপিত: ১৯৭২ খ্রি.)
-
১৩৮ নং বোনকোলা-রাঘবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (স্থাপিত: ১৯৯৯ খ্রি.)
গ্রামে স্থানীয় মাদ্রাসা ও মক্তব রয়েছে-
- বোনকোলা ঈদগাহ হাফেজিয়া ও কওমি মাদ্রাসা
- বোনকোলা ঈদগাহ সংলগ্ন মহিলা কওমি মাদ্রাসা
- বোনকোলা গোরস্থান মাদ্রাসা মক্তব
আরো পড়ুন চরদুলাই গ্রাম পরিচিতি
হাট বাজার: বোনকোলা গ্রামে একটি বড় হাট (সপ্তাহে ৬ দিন) ও একটি ছোট বাজার (হাজীর বাজার নামে পরিচিত) রয়েছে। এসব বাজারে কাঁচা বাজার থেকে শুরু করে সকল প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র পাওয়া যায়। বোনকোলা হাটের এই বটতলা মোড় থেকে এক রাস্তা বোনকোলা গ্রামের মধ্যে, এক রাস্তা ক্ষেতুপাড়া-রাইপুরের দিকে আর এক রাস্তা তৈলকুণ্ড-মানিকহাটের দিকে চলে গেছে। এটাই বোনকোলার মূল কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত। এই অঞ্চল বোনকোলা কলেজ পাড়া নামে পরিচিত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: অত্র গ্রামের মধ্য দিয়ে অনেকগুলো কাঁচা-পাকা রাস্তা চলে গেছে। অধিকাংশ রাস্তা পাকা হলেও কিছু কাঁচা রাস্তা রয়েছে। সরাসরি বোনকোলা থেকে উপজেলা শহর ও জেলা শহর পর্যন্ত সিএনজি পাওয়া যায়।
দর্শনীয় স্থান: বোনকোলা গ্রামের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক স্থান হল গাজনার বিল। গাজনার বিল সংলগ্ন বোনকোলা জাঙ্গালে বর্ষাকালে অসংখ্য দর্শনার্থী জমায়েত হয়। জাঙ্গাল থেকে নৌকা ভ্রমণের ব্যস্ততা পরে যায়, স্থানীয় মানুষ পড়ন্ত বিকালে জাঙ্গালে ঘুরতে যায়, সেখানে দুইটা ব্রিজ আছে, সেখানে বসে অবসর সময় কাটায়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বোনকোলা গ্রামের মানুষ ধর্মভীরু ও শান্তিপ্রিয় মানুষ। গ্রামের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ মুসলমান। ২টি হাফেজিয়া মাদরাসা, ১টি মহিলা কওমি মাদরাসা, ১০ টি মসজিদ রয়েছে। এসকল মসজিদে বেসরকারিভাবে মক্তব চালু রয়েছে। এছাড়াও গ্রামের মধ্য পাড়ায় একটি বড় ঈদগাহ ও বোনকোলা কলেজ পাড়ায় তথা বোনকোলার শেষ সীমানায় একটি বৃহৎ গোরস্থান রয়েছে ।
পেশা ও সামাজিক জীবন: গ্রামে অধিকাংশ মানুষদের পেশা কৃষি কাজ। এই গ্রামে পিঁয়াজ,পাট ও ধানের আবাদ হয় প্রচুর পরিমাণে। পিঁয়াজ উৎপাদনের জন্য বোনকোলা সারা পাবনাতে বিখ্যাত। তবে চাকুরীজিবি, শিক্ষকতা, মাছ ধরা সহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সমন্বয় রয়েছে।
আরও পড়ুন বিল গাজনার ইতিহাস
ব্যাংক ও এনজিও: অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় উন্নয়নশীল গ্রাম বোনকোলাতে ৩টি ব্যাংক ও কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে ।
ব্যাংকের মধ্যে রয়েছেঃ
লেখক: প্রদীপ্ত দেলোয়ার, বোনকোলা কলেজ পাড়া