বিষণ্ন বাসন্তী বাংলা
বিষণ্ন বাসন্তী বাংলা
তোমাকে পসরা সাজিয়ে
তুখোড় দোকানীর মতো বানিয়ে মূলধন
আজকাল চলছে ব্যবসা চুটিয়ে,
ময়দানে মাঠে পরিপাটি আলোচনা টেবিলে
কিম্বা ধুমায়িত চায়ের কাপে
তোমার মুখে ঠোঁট রেখে ফুটাচ্ছে খই হামেশাই
কুশলী কারিগর সব।
হায়রে বাংলাদেশ
এখন তোমাকে নিয়ে বাহারী প্রদর্শনী,
গিলে করা পাঞ্জাবী পাট করা চাদর
আর শোভন চশমার কাঁচে
অহরহ তোমার বাসন্তী ছবি উৎকীর্ণ করে
কপট দেশপ্রেমের জোয়ার বয়ে যায়,
অনায়াসে কেউ কেউ তোমার দেহে
মৌরসি পাট্টার কায়েমী দখল জাহির করে,
আবার কেউবা
তোমার জন্ম-লগ্নে ধাত্রীর অধিকারে
দুর্লঙ্ঘ স্বত্ত্বের কথা বলে,
অতঃপর সেই সব দুরাচারী ব্যবসায়ী সব
সুবর্ণ কাসকেটে অপরূপ সাজিয়ে তোমায়
নিলামের বাজারে উঠায়,
এক-দুই-তিন চড়া দামে বিকিয়ে সটান
গাঁট বেঁধে অলক্ষে দৃশ্যান্তর হয়।
জল চোখে স্বদেশ আমার
স্বার্থের যূপকাষ্ঠে বলি হয়ে যায়।
হায়রে রূপসী বাংলা আমার
তোমার প্রাণময় অপরূপ বাসন্তী শ্রী
আদিগন্ত স্নেহমাখা শ্যামল আঁচল
আর নিটোল নিসর্গে চোখ রাখলেই ভরে যেতো মন,
সেই প্রশান্ত বটমূল শান্তির উদার চতুর
যেখানে জীবনের শ্রান্তি দূর হতো,
সেখানে মেতেছে অশুভ নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ
মদ্যপায়ী, গেঁজেল, ভাড়াটে হন্তারক সব গেরেছে আস্তনা,
রক্তাক্ত হাতে হয় নিয়মিত বখরা কটন,
তোমার ছন্দসী নদী কূলে
নামে রাত বিভীষিকা নিয়ে ব্যাধের শঠতা সাথে করে,
ফাগুনের সুবাসিত আমের বোলে
ঘূর্ণি-বায়ুর বিনাশী নাচন
ঝড়ে যায় কত যে স্বপ্ন অকালে,
তোমার শান্ত মেঠো পথে
আর্তনাদ করে ফেরে অভক্ত কৃষক
অগনন ছিন্নমুল কঙ্কাল মানুষ অহর্নিশ করে হাহাকার,
শহরের ডাস্টবিনে কুকুরে-মানুষে যুদ্ধ হানাহানি,
আর, অসহায় দুখিনী জননী আমার
বিভাহীন ম্লানমুখে
অন্তহীন কাঁদে অগোচরে,
এখন জ্বলে ওঠার এসেছে সময়
অবিনাশী একাত্তুর সর্বাঙ্গে জড়িয়ে আবার
অব্যর্থ নিশানায় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিকষিত দেশপ্রেমে
মনে হয় প্রাণপণ ঝাঁপিয়ে পরি অশুভ সংহারে,
আজ বুঝি বড়ো প্রয়োজন
নির্মোহ সত্যাগ্রহ, নিখাদ দেশপ্রেম
হতশ্রী তোমাকে হৃদয়ে-মগজে এঁটে
বিবেকের ঋণ শোধ দিতে
জ্বলে উঠা অশুভ-সংহারে
পরিশুদ্ধ আত্মার অনন্ত উদ্বোধন
নিকষিত দেশপ্রেমে আত্মলীন হওয়া।
আরও পড়ুন কবিতা-
অগ্নিশ্বর
হেমন্তের বিকেল
প্রেমের পদ্য
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
বিষণ্ন বাসন্তী বাংলা