বিপরীত
বিপরীত
এ কে আজাদ দুলাল
কক্সবাজার মানেই বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগর মানেই কক্সবাজার। বাংলাদেশের একটা অহংকারের জায়গা।এখানে গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন অপূর্ব পর্যটন কেন্দ্র। বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশ হতে পর্যটকদের ভীড়। সমুদ্রের বালিরাশিতে ঢেউয়ের চিহ্ন স্তরে স্তরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কি সুন্দর দৃশ্য! তাছাড়া রয়েছে সমুদ্রের গর্জন। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। ছোট বেলায় স্কুলে পড়ার সময় ভূগোল পাঠে জানা যায়। হ্যাঁ, আমরা তো তাই পড়েছিলাম। সমুদ্রের তীরে বসে বসে ভাবছেন আর মন-প্রাণ দিয়ে সমুদ্র অবলোকন করছেন মো. আব্দুর রাজ্জাক। উপজেলা শিক্ষা অফিসার। সপরিবারে এসেছেন কক্সবাজারে তথা সমুদ্র দেখার জন্য। মানে একগুঁয়েমি জীবন থেকে কিছুটা আনন্দ ভোগ করতে। আর মাত্র দুই বছর চাকরি আছে। তার স্ত্রী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারও ছয় বছর চাকরি আছে। বড় মেয়ে স্নাতক সমাপ্ত করে স্নাতকোত্তর শেষ পর্বে। একমাত্র ছেলে রুয়েটের ছাত্র। তাদের উৎসাহে এবং তার স্ত্রী লুনার আগ্রহ ও সহযোগিতায় আজ সমুদ্র দর্শন।
দুজনে মিলে প্রায় এক বছর ধরে সংসারের বরাদ্দকৃত বাজেট হতে অর্থ বাঁচিয়ে আজ কক্সবাজার মানে সমুদ্র দর্শনে এসেছেন। তা না হলে স্কুল জীবনে পাঠ্য বইতে পড়া সমুদ্র দেখা, চোখের নোনা পানিতে স্বাদ গ্রহণ করতে হতো। আপাতত তা হয়নি। এ ব্যাপারে তার ছোট শ্যালককে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কারণ তিনি সব কিছু ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু তার স্ত্রী, তিনি তো আবার বড়লোকের রাজকন্যা। সব কিছুতে নাক উঁচু। হোটেলে তাদের থাকার জায়গা বেশ ক’টা রুমের পর ব্যবস্থা করেছে। শ্যালক সাহেব তার বউয়ের গতিমতি ভাল করেই জানেন। শ্যালক সাহেবের বুদ্ধি আছে বলতে হয়।তারও একটু নাক উঁচু আছে। নিজেদের আবার বুনিয়াদী বংশ বলে জাহির করতে গর্ববোধ করে থাকেন। ভাইয়ের আচরণ বোন জেনেও না জানার ভান করেন। এটা মনে হয় ভাই-বোনদের রক্তের আসল সম্পর্ক। সংসার ঠিক রাখতে হলে অনেক কিছু এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।
-
এই, সমুদ্র দেখতে এসেছ না-কি তোমার উপজেলার স্কুলের হিসাব কষতে এসেছে।
পাশে বসা স্ত্রী লুনা একটু ঝাঁঝালো সুরে কথাগুলো বললো।
আরও পড়ুন গল্প সুরেন বাবু
-
আরে না। ভাবছি এই যে এখানে আসাটা নিয়ে। তুমি আগ্রহ না দেখালে তো আসাই হতো না।
-
বলছো।
-
হ্যাঁ। ঠিক তাই।
-
দেখ দেখ, ছেলে-মেয়েরা আনন্দে সমুদ্রের নোনা পানি গিলছে।
মনের আবেগ নিয়ে কথা গুলো বলল মিসেস লুনা।
-
আমিও তাই এত সময় ধরে ভাবছিলাম চোখের নোনা পানিতে সমুদ্র দেখার স্বাদ মেটাতে হতো।
দুজন খুবই আনন্দিত। তাদের জীবনের শেষ পর্যায়ে।দুজনের চাকরি বেশী দিন নেই। মেয়েটির বিয়ে দিতে হবে।অনেক টাকার ব্যাপার- স্যাপার। ভাগ্যিস একটু জায়গা কিনে ছোট একটা বাড়ী তৈরী করা হয়েছে। দুজনের চাকরি আছে বলে।
মিসেস লুনা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বলল,
-
কি জানি, আবার কখনো আসা হবে কি না, কে জানে।
-
আমার মনে হয় আবার আসা হবে।
-
কেমন করে হবে আমার মাথায় তো কিছু ঢুকছে না।
-
তোমার চাকরি কত বছর হলো?
-
তা পঁচিশ – ছাব্বিশ তো হবেই।
-
মানে তুমি দু’বার গাধা হয়েছ।
-
বুড়ো কালে মাথাটা একদম গেছে।
-
আরে আমার যায় নি। গেছে তোমার। শোন ছেলে- মেয়ের লেখাপড়া শেষ হবে। চাকরি করবে। ওরাই দেখ, একদিন মনের আনন্দে বুড়োবুড়িকে নিয়ে আসবে।
মিসেস লুনা তার স্বামীর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
-
তাই যেন হয়।
মিসেস লুনা ভাবে সেই যে বিএ পড়ার সময় তার বিয়ে হয়েছিল। তার স্বামী সরকারী চাকরি করেন। কোন পদে চাকরি করেন তা জানার আগ্রহ ছিল না। হবু বরকে দেখে তার খুব পছন্দ হয়েছিল। তবে তার একটা ইচ্ছে পূরণের কথা তার ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে হবু বরের নিকট পাঠিয়েছিল। তার ইচ্ছে পূরণ তো হবেই যদি সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে আগ্রহ থাকে। মনে মনে হবু বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা মাথা নত হয়ে গিয়েছিল আর মনের কোণে ভালবাসা তৈরী হয়েছিল। তারপর বিয়ে হলো।পরীক্ষার জন্য বাবা- মার কাছে চার- পাঁচ মাস থাকতে হয়েছিল। তাতে তার স্বামীর তরফ হতে কোন বাধা আসে নি। পরীক্ষা হয়ে গেলে স্বামীর বাসায় স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যায়। আজও আছে সেই তাদের ছোট সংসার। তাদের অর্থ- সম্পদ নেই কিন্ত সংসার জুড়ে আছে আনন্দ আর ভালবাসা।
আরও পড়ুন গল্প তৃতীয় স্বাক্ষী
সবাই এক আত্মার মানুষ। স্বামী তার একটু চুপচাপ। তবে আনন্দ করতে তার কোন ক্লান্তি নেই বা বলতে গেলে কৃপণতা নেই। একটা অভ্যাস সময় পেলেই বই পড়া চাই। মিসেস লুনা এতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি। সে দেখেছে অনেকের স্বামী রাত ভরে তাস খেলে। বাসায় ফিরে স্ত্রীর সাথে অকারণে ঝগড়া-ঝাঁটি বাধিয়ে নেয়। স্বামী তার কথা রেখেছেন। স্কুলে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ভাবতে ভাবতে মিসেস লুনা অবাক দৃষ্টিতে অশান্ত সাগরের দিকে পলক ফেলে। ছেলে- মেয়েরা সাগরের নোনা পানিতে নিজেদের একাকার করে নিয়েছে। ওদের আনন্দে আজ তারা আনন্দিত। পাশে বসা স্বামীর দিকে নজর দিয়ে চিন্তা করলো জীবনে নিজের কথা একটু চিন্তা করেনি। ভাই-বোনদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছে। এখন তারা প্রতিষ্ঠিত। বড় ভাইকে তারা বড়ই সম্মান করে। এতেই সে মহাখুশি। আর বলে, “লুনা তুমি পাশে না থাকলে এত বড় দায়িত্ব আমার পক্ষে একা পালন করা সম্ভবপর হতো না।”দেবর- ননদ বড়ভাবীকে শ্রদ্ধা করে এবং বিভিন্ন কাছে পরামর্শ নিয়ে থাকে। পাশে বসা রাজ্জাক সাহেব স্ত্রীকে বলে,
-
এই শোন, এক কাপ কফি হবে।
-
কেন হবে না।
ফ্ল্যাক্স হতে এক কাপ কফি স্বামীর হাতে তুলে দিল। হঠাৎ তার ছোট ভাই হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বললো,
-
জব্বর একটা খবর আছে।
-
কি খবর?
-
তুমি শুনে তাজ্জব হয়ে যাবে।
-
এই শোন, কোন নাটক না করে খুলে বলো ঘটনাটা কি?
-
ঘটনা আবার কি। হয়ত রিতা নিশ্চয় নতুন কোন পরিকল্পনা এঁটেছে।
বললেন রাজ্জাক সাহেব।
-
আরে না দুলাভাই।
-
তাহলে কি। বললো মিসেস লুনা।
-
তোমার কলেজ জীবনের সেই চতুর মুখী স্মার্ট সুন্দরী বলে নিজেকে প্রচার করার কথা মনে আছে?
-
মানে বিলকিস।
-
একদম ঠিক কথা।
-
তুই কি বলেছিস আমরা এখানে এসেছি।
-
বলি নি মানে রীতিমত এখানে আসার দাওয়াত দিয়ে এসেছি। দশ মিনিটের মধ্যে এলেই সব দেখে নিতে পারবে।তবে বুবু ওর স্বামী খুব অমায়িক এবং ভদ্র।
-
দেখ, তুই ওদের আসতে বলেছিস ভাল কিন্তু শুনেছি বিলকিসের স্বামী নাকি বেসরকারী অফিসের মস্ত বড় কর্তা।
আরও পড়ুন গল্প সোনালী
-
তা- তো মনে হলো না। সে যাকগে। তোর পুরানো বন্ধুর সাথে দেখা হবে তাও আবার সাগর তীরে কি বলেন দুলাভাই।
বিলকিস নামটা শুনেই মনের স্মৃতিতে জেগে উঠলো কলেজ জীবনের প্রথম বর্ষের ঘটনাবলী। সবেমাত্র এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। সবার মনে খুব আনন্দ।এ বছরে কলা বিভাগে অনেক ছাত্রীর আনাগোনা। কলেজ জীবনটাই আলাদা। সবার সঙ্গে পরস্পর পরিচিত হয়েছে। সপ্তাহ খানেক পর দেখা হলো বিলকিসের সাথে।লুনার চারজন ঘনিষ্ট বন্ধু সব সময় একসঙ্গে কলেজে সময় অতিবাহিত করেছে। বিলকিসের সঙ্গে গভীরভাবে আন্তরিকতা ছিল না। বিলকিস ছিল স্মার্ট তবে সুন্দরী বলা যাবে না। বেশভুষায় নিজেকে সাজিয়ে রাখতো। অনেক আজব গল্প বলতো যা বিশ্বাস করা ছিল অসম্ভব। ওর এক আত্মীয়ের কাছ হতে বিলকিসের পারিবারিক অবস্থার কথা সবাই জেনে গিয়েছিল। তাই বেশী পাত্তা দিতো না। এমন ভাব দেখাতো শহরের শিক্ষিত-ধনী বড় লোক বিলকিসদের আত্মীয়। তবে সম্পর্কটা কত গভীর তা ওর আত্মীয় বোনের কাছে জানা যায়।
বেশ মজা আর আনন্দ করে প্রথম বর্ষ শেষ হতে চলেছে। সামনে বার্ষিক পরীক্ষা। পড়াশোনা নিয়ে সবাই ব্যস্ত। পাস করতে না পারলে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে। মেয়ে বলে কথা। পরীক্ষা হলো। দ্বিতীয় বর্ষে আবার বন্ধুদের সাথে দেখা হলো কিন্তু বিলকিস কোথায়? ও তো পরীক্ষা দিয়েছিল। একেবারে লা পাত্তা। মাস তিনেক পর হঠাৎ একদিন বিলকিস কলেজ প্রাঙ্গনে হাজির। এবার ছাত্রী হিসেবে নয় নতুন বধুঁ সাজে।সবাই ঘিরে ধরে একের পর এক প্রশ্ন। এখনই বিয়ে করলে কেন ইত্যাদি। তিনি সগৌরবে উত্তর দিলেন বড় চাকরি, ঢাকায় বাড়ী- গাড়ী আছে এমন সুযোগ কে হাত ছাড়া করে।ঢাকায় বিলকিসদের কেমন যেন এক আত্মীয় থাকেন।তাদের সহযোগিতায় বন্ধনটা হয়েছে। কথায় বলে না, পরের ধনে পুদ্দারী। পরে সেটা জানা গিয়েছিল সবই ছিল বিলকিসের আষাড়ে গল্প। কলেজে যে ক-মাস পড়েছিল, ক্লাসে পড়ার চেয়ে নিজেকে হাম্ববড়াই গল্পের জুড়ি ছিলো না। কিন্তু ওর কাজিন নার্গিস ঠিক ওর বিপরীত।
আরও পড়ুন গল্প অশরীরী আত্মা
লুনা ভাবে অনেক দিন পর বিলকিসের সঙ্গে দেখা হবে। দেখা যাক তার কতটুকু মানসিক- চরিত্র গুণাবলী পরিবর্তন ঘটেছে। ফিরে গিয়ে বান্ধবীদের তো বলতে হবে। বিলকিস ঢাকায় থাকে বলে কথা। আর আমাদের আদি বাস সেই মফস্বল শহর। লুনার চিন্তার বাধ হঠাৎ ভেঙ্গে গেল তার ছোট ভাইয়ের উচ্চ গলার স্বরে।
-
আপা ঐ তো তোমার বান্ধুবী এবং তাহার সম্মানিত স্বামীর ধীর গতিতে আগমন করিতেছেন।
-
এই চুপ কর।
-
জো হুজুর জাঁহাপনা। আপনার আদেশ শিরোধার্য।
লুনা চেয়ে দেখলো দুটো- মানুষ তাদের দিকে হেঁটে আসছে।দু-জনের একই ধরণের পোশাক। মানে সমুদ্রে ভ্রমণের জন্য এ রকম পোশাক পরিহার্য্য। তাদের মাথায় ক্যাপ,গায়ে টি-শার্ট, পরণে গাঢ় রঙের নীল টাওজার । চোখে কালো সানগ্লাস। এখনো বিলকিসের কোন পরিবর্তন হয় নি। কাছে আসতে
-
লুনা, দেখ তোকে কেমন সারপ্রাইজ দিলাম।
লুনা মনে মনে বললো জানি তুমি এমন একটা ডায়লগ ছাড়বে।
-
কেমন আছিস বিলকিস? ইনি বুঝি আমাদের দুলাভাই।
-
আমি জামান। ঠিকই ধরেছেন।
-
বিলকিসের কাছে আপনার অনেক গল্প শুনেছি, আমরা বান্ধবীরা একটু একটু ভালবেসেছিলাম। ভাগ্যিস বিলকিস সেই যে উড়াল দিলো আর কোন খোঁজ-খবর নেই।
-
বলেন কি?
-
ঠিক তাই চব্বিশ বছর পর দেখা। তাই নারে বিলকিস?
-
একদম ঠিক বলেছিস। সাহেবের বারো মাসে তেরোবার বিদেশে যাওয়া আবার অফিসে যে কি চাপ।
একের পর এক বলেই যাচ্ছে। জামান সাহেবের অবস্থা বেগতিক। তার বৌ যে চাপা মারায় ওস্তাদ সে হারে হারে জানে। হায় আল্লাহ, ভুলেও জীবনের একদিনের জন্য বাংলাদেশ সীমানার বাইরে পা রাখিনি। বউ বলছে, বারো মাসে তেরোবার বিদেশে যেতে হয়। তাও আবার এ সব আষাঢ়ে গপ্প বয়ান করছে তারই বাল্য বান্ধবীর কাছে। এই জন্য ছেলে-মেয়েরা তার মাকে বাচাল আখ্যায়িত করেছে। লুনা ইতোমধ্যে খেয়াল করেছে বিলকিসের স্বামী অস্বস্তিবোধ করছেন। এ বার ভদ্রলোকের মান-সম্মান বাঁচানোর জন্য বিলকিসকে লাগাম টেনে ধরতে হবে।
-
বিলকিস তো বাচ্চারা কোথায়?
-
বিচে মজা করছে। তোর বেবীরা কোথায়?
-
আমার বেবী নেই। বড় মেয়ে স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষে আর ছেলে রুয়েটে কম্পিউটার সায়েন্স এ প্রথম বর্ষে।
-
বাহ। খুবই ভাল।
আরও পড়ুন গল্প পাথরে ফুল
কিন্তু বিলকিস কথাগুলো শুনে খুশি হতে পারলো না বলে মনে হলো। নার্গিসের কাছে জেনেছে সে নিজে বলতে পছন্দ করে। শুধু তাই নয় নিজদের সম্পর্কে অদ্ভুত গল্প বলে। অন্যদের কথা শুনার সে মোটেই আগ্রহ দেখায় না। বরং বিরক্তি প্রকাশ করাই তার স্বভাব। তাই শেষের দিকে বিলকিসকে এড়িয়ে চলতো। তারপর তো বিয়ে এবং স্বামীর ঘর। সেই আমাদের বিলসিক জামান।
-
চলুন কফি পান করা যাক।
আমন্ত্রণ জানালেন রাজ্জাক সাহেব। সবার হাতে কফির কাপ। রাজ্জাক সাহেব জামান সাহেবকে নিয়ে একটু দুরে গিয়ে কফি পানরত অবস্থায় নিজেদের মধ্যে পরিচয় পর্বটা শেষে করে নিলেন।
-
ভাই আমার স্ত্রীর কথায় কিছু মনে করবেন না। মাঝে মাঝে ওকে নিয়ে আমাকে খুব বিব্রত অবস্থায় পড়তে হয়। মনে হয় এটা এক প্রকার মানসিক রোগ।
কথাগুলো আক্ষেপের সুরে বলল মিঃ জামান।
-
না- না। আরে ও হচ্ছে আমার স্ত্রীর বাল্য বান্ধবী।
-
দেখুন ভাই, এই একটু সময়ে আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে আপনাদের আন্তরিকতা ও ভদ্রতার বিষয়ে আমাকে আর বলতে হবে না।
-
অনেক ধন্যবাদ।
-
অনেক সময় বন্ধুদের বাসায় বেড়াতে গেলে আমার স্ত্রী ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে।
-
কেন?
-
এই ধরুণ, কোন বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। সময়টা আনন্দ করে বাসায় ফেরা হলো। সব ঠিক আছে। কিন্তু বাসায় ঢুকতেই আমার স্ত্রীর গম্ভীর চেহারা দেখে আতঙ্কে সময় কাটাতে হয়। এর জের বেশ ক’দিন চলতে থাকে।
-
কারণ জানতে চেয়েছেন।
-
জানতে তো চেয়েছি।
-
কি বলেছে।
আরও পড়ুন গল্প
মি. জামান একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললো,
-
পরশ্রীকাতরতা।
-
এ বার বুঝতে পেরেছি।
-
আমার সাধ্যমত ওর ইচ্ছে পূরণ করে চলেছি। রেগে গেলে আর রক্ষা নেই। বাচ্চা দুটো আতঙ্কে ভোগে বেশ কিছুদিন।তবে এখন ওদের মায়ের আচরণ বুঝে নিয়েছে।
-
বলেন কি?
-
সপ্তাহখানেক কথাবার্তা বন্ধ।
-
তারপর।
-
আস্তে আস্তে তাপমাত্রা জিরো ডিগ্রীতে পোঁছায়।
আরও পড়ুন গল্প রঙিন ঘুড়ি
বলেই হেসে উঠেন জামান সাহেব। সঙ্গে যোগ দেন রাজ্জাক সাহেব। কিছু সময় গল্প করে সময় কাটায় দু-জনে। জামান সাহেব মনে মনে খুব আনন্দ পান। এমন একটা পরিবারকে পাশ কাটিয়ে চলা বিলকিস জীবনে বড় ভুল করেছে।
-
ভাই, আমার বেগম যেভাবে আমাকে সবার কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে আসলে আমি তা নই। আমি আজ যে পর্যায়ে এসেছি তা অনেক পরিশ্রম করে, এটা সে বুঝে না বা বুঝার ক্ষমতা তার নেই। ভাই, অল্প সময়ে আপনাদের বিশেষ করে আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে মনের কিছুটা কথা বলে নিজেকে বেশ হালকা মনে হচ্ছে। ছেলে- মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। ওরা বড় হয়েছে। অন্যের সাথে তুলনা করে তো আর জীবন চলে না।
রাজ্জাক সাহেব ভাবছেন, চিন্তায় ভাবনায় দু’ মেরুর দু’জন বাসিন্দা একই ছাদের নিচে সুখ-দুঃখ নিয়ে সংসার করে চলেছেন। কেউ কাউকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবেনি। এটাই জীবনের বাস্তবতা।
হঠাৎ বিলকিস জামান সাহেবের নাম ধরে ডেকে বলল,
-
জামান, এবার চল বেবীরা আমাদের জন্য ওয়েট করছে।
জামান সাহেব একটু মুচকি হেসে বললো,
-
রাজ্জাক সাহেব কি বুঝলেন?
-
১০০% বিপরীত।
আবার দু-জন এক সঙ্গে জোড়ে হেসে উঠলেন।
ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
বিপরীত