বাংলা-ভাষার-দুর্দশা
কবিতা,  তাহমিনা খাতুন,  সাহিত্য

বাংলা ভাষার দুর্দশা

বাংলা ভাষার দুর্দশা 

তাহমিনা খাতুন

 

দুখিনী বাংলা কাঁদে, কাঁদে আমার মায়ের ভাষা
যেদিকেই চাই, দেখি শুধু হায় তাহার দুর্দশা!

ভাষার মান রাখিবে বলিয়া, বাংলার সন্তান
পিচ ঢালা পথে ঢালিয়া দিল, আপন  প্রিয় প্রাণ,
“রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই” গর্জিল দৃপ্ত শপথে
তপ্ত শোণিত ঢালিয়া দিল, কঠিন সে রাজপথে।

বিদেশি প্রভুর রক্ত চক্ষু, উপেক্ষিয়া অনায়াসে
রফিক, শফিক, বরকত সেদিন, রক্ত গাঙেতে ভাসে,
যে ভাষার তরে জীবন সঁপিল শফিউর, জব্বার,
সে ভাষার তরে কারও কারও আজ, ঘৃণা ভরা অন্তর।

বাংলা ভাষারে উপেক্ষিয়া চলে, বিদেশি ভাষার বন্দনা
বুঝি না এ কোন আত্মগ্লানি, আত্মপ্রবঞ্চনা,
ভিনদেশি ভাষা আসীন আজ,আত্ম অহমিকায়
বাংলা ভুলিতে ব্যস্ত যেন, না ধারে বাংলার ধার।

যে ভাষায় রচিল অমর কবিতা, রবীন্দ্র, নজরুল,
সে ভাষা ত্যজিতে মোরা কেন আজ, হই এত ব্যাকুল?
যে ভাষারে ভালোবেসে মধু কবি, সৃজিল নতুন ছন্দ
সে ভাষা ভুলিতে আমরা আজ, পাই কেন এত আনন্দ?

বাংলা কাব্য সৃজিয়া রবী, লভিল অমূল্য পুরস্কার
সেই ভাষাকে দিতে যোগ্য সন্মান কুণ্ঠিত মোরা , এ কোন আত্মবিকার?
এই ভাষায় কাব্য রচিয়া ‘দুখু’, দেয় বিদ্রোহের ডাক
যে  কবিতা শুনিয়া পরাধীন জাতি, বাজায় হৃদয়ে ঢাক।

এই ভাষায় করিল সাহিত্য সৃষ্টি, বঙ্কিম, তারাশংকর
যে ভাষা আছিল বাঙালি জাতির, চির অহংকার,
এই ভাষায় ভাটিয়ালি গেয়ে মাঝি, পেরোয় অকুল পাথার
জারি, সারি আর  মুর্শিদী গানে জুড়ায় সে অন্তর।

বাংলা ভাষায় রচিত হলো কত ভজন আর কীর্তন
এই ভাষা দিয়ে জগৎ মাতায় কত শত গুণিজন।
এই ভাষা দিয়ে নট আর নটী ছন্দ তোলে পায়
এমন মধুর ভাষা সবার, আবেশে মন ভরায়,

যে ভাষায় রচিত অযুত কবিতা, অজস্র সঙ্গীত
কত শত সুরে গীত হয়ে তা, মাতায় চতুর্দিক।
সেই বাংলারে উপেক্ষিয়া মোরা, করি তারে অপমান
এ কেমন তরো আচরণ আজ, এ কেমন আত্মপীড়ন?

ঘুমিয়ে পড়েছে  বাঙালি বুঝি, এসেছে আঁধার রাতি
আলোর মশাল জ্বলিবে কবে, জাগিবে নিদ্রিত জাতি?
দূর করে দেই আত্মগ্লানি, ভ্রান্তি বিলাস ভুলি,
মায়ের ভাষারে সন্মান দিয়ে, মাথা উঁচু করে চলি।

আরও পড়ুন কবিতা-
আমার ভাষা
চাইনি এমন স্বদেশ
তৃষিত নয়নের ভাষা

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে
বাংলা ভাষার দুর্দশা
Facebook Comments Box

তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি এবং নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তার পেশাগত জীবনে তিনি নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাহমিনা খাতুন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে এই গ্রামেই।

error: Content is protected !!