বাঁঝা
কবিতা,  মোহাম্মদ আব্দুল বাছেত,  সাহিত্য

বাঁঝা

বাঁঝা

মোহাম্মদ আব্দুল বাছেত

 

সখিনার কোল খালি সকলেই কয় বাঁঝা
তার জন্যে পদে পদে পায় কথার সাজা।
কী যে সে করেছিল মহাপাপ
তাই পেটে লেগেছে অভিশাপ!

পাড়ায় পাড়ায় গ্রাম সুদ্ধ গেছে তাহা রটে
বাঁঝা বৌটি অপয়া তাই বাচ্চা নাই পেটে।
প্রতিবেশীর মেয়ের বিয়ে বিরাট আয়োজন
সখিনার উপস্থিত থাকা সেইখানেও বারণ।

বাঁঝা বলেই তো আপত্তি
ঘটতে পারে বড়ো বিপত্তি!
এমন দিনে অপয়া বাঁঝা ভীষণ অমঙ্গল
শুভক্ষণে অবাঞ্চিত-শূন্য যাদের কোল।

মুদি সকালে ইহাই বলে চলেন গদি ঘরে
হে ভগবান বাঁঝার ছায়া চোখেতে না পড়ে।
সন্তান ধরে নাই পেটে
ব্যবসা যে ওঠবে লাটে।

মা লক্ষ্মী রুষ্ঠ হবেন এমন তরো হলে
আমি বড়ো তুষ্ট হই বাঁঝা এখনি মোলে!
জননী জায়া কন্যা লাগে পুরুষের হিতে
তবু সমাজ সিদ্ধহস্ত নারীর সাজা দিতে।

শুধুই নারীতে হয় রুষ্ট
একই দোষে পুরুষ দুষ্ট।
সকলখানে রাধা-ই দোষী কেষ্টরা হয় শ্রেষ্ঠ
অবলারাও অবলিলায় মেনে নেয় অদৃষ্ট!

সন্তান না হওয়ায় নারীর দোষ নয় একক
পতিবরও হতেই পারেন-বাঁঝা নপুংশক।
সন্তান পেটে ধরেনি বলে
কালি মাখো নারীর গালে?

বীজ যদি নিষ্ফলা হয় ভূমির দোষ কীসে?
শস্য উৎপাদন করে বীজ-মাটিতে মিশে।
নারীর নাড়ী টিপে দ্যাখো-প্রজাতি অবলা
স্বামী মশাই পুরুষ তাই সকল দ্বার খোলা।

বন্ধ্যা শুধু নারী নয়
পুরুষেও বাঁঝা হয়।
স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলেই জন্ম দেয় সন্তান
তবে কেন বাঁঝা বলে-নারীকে অসম্মান?

আরও পড়ুন কবিতা-  
প্রেম ও নির্জনতা
দহন
অসমাপ্ত অধ্যায়
ফেলানী

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

Facebook Comments Box

অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আব্দুল বাছেত ১৯৭৩ সালের ১লা জানুয়ারিতে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের মালিফা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।   তাঁর লেখায় চলমান জীবনের বাস্তবতা এবং গ্রামীণ জীবন চিত্র সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে। গ্রামের প্রাচীন শব্দ সম্ভারকে পূনুরুদ্ধার ও  লেখায় সংরক্ষণ করার চেষ্টারত আছেন।

error: Content is protected !!