ফেলে-আসা
আনন্দ বাগচী,  কবিতা,  সাহিত্য

ফেলে আসা,মানুষের ঘর,স্মৃতি,স্বপ্নগুলি

ফেলে আসা

আনন্দ বাগচী

 

কিছুই হয়নি বলা, গল্প শেষ হয়ে গেল রোদ্দুরে বৃষ্টিতে
গল্পগ্রাম, ইস্টিশান, নদী, সাঁকো, নৌকোর গলুই
ধূসর স্মৃতির মধ্যে বিধে থাকল,
ক্রমে ক্রমে হলদে হয়ে আসা ফটোর মতন স্থির
সাবেক কালের বাড়িখানা, গভীর ঘুমিয়ে আছে কুয়াশায়,

কার শীর্ণ শাখাপরা হাত
খাটের বাজুতে আড় হয়ে আছে
তামাকের প্রৌঢ়গন্ধে ঘর ভরে আছে।
সটকার বোলের মত চমকে চমকে ওঠে কবুতর।
এখনো উলুর ধ্বনি কান পাতলে, প্রতিমার মত নববধূ

দামাল শিশু, বালাবেলা, বাঁশবনে আটকে থাকা চাঁদ
পুরনো ব্যথার মত লটকে আছে বুকের ভেতরে ।
কিছুই হল না বলা, গল্প শেষ হয়ে গেল রোদ্দুরে বৃষ্টিতে।

 

মানুষের ঘরে

এখনো রয়েছে কিছু পুষ্পগুচ্ছ,
শেষ অপরাহ্নের রোদ্দুরে মানুষের ভালোবাসা, মানুষের বুকের ভিতরে
এখনো নদীর মত সুবাতাস প্রবাহিত হয়
এখনো পাখির বাসা রূপসী নারীর দুই চোখে মমতায় গাঢ় প্রতিবিম্ব হয়,
এখনো সময় পৃথিবীর আঙিনায় শিশুর নিকটে খেলা করে।
গির্জায় মাঠের মধ্যে পবিত্র নির্জন জ্যোৎস্না জ্বলে
মন্দিরে অক্ষয়-বট, ঘণ্টা বাজে স্বপ্নের ভিতরে,
এখনো হৃদয় ভরে কবিতায়
পুষ্পগন্ধে শিশুর হাসিতে,
সমস্ত প্রবাস থেকে, নির্বাসন থেকে একে একে
সব যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসছে দূরের মানুষ,
দুই হাতে রক্ত কারো বারুদে ঝলসানো কারো মুখ।

 

স্মৃতি

বন্ধ কানাগলির মধ্যে টুকরো আকাশ
জেলেডিঙির জাল ছেঁড়া সব মেঘের ইলিশ কোথায় পালায়।
শিউলি ঝরে, দীপান্বিতায়
আতসবাজির আকাশ জুড়ে অন্য ভুবন,
দোরের পাশে কিশোরী মোম নীল আগুনে,
বুকের মধ্যে বুক পোড়ালো শহরতলির বাসাবাড়ির বারোয়ারির দোরগোড়াতে
আজও মাতামাতির চিহ্ন ফাগের আবীর
এমনি করে দিন গিয়েছে রাত গিয়েছে বছর বছর
কেয়াপাতার বদলে কেউ ক্যালেণ্ডারের ছেঁড়াপাতার নৌকা ভাসায়
শ্রাবণদুপুর টাপুর-টাপুর ছড়ার মধ্যে, চোখের জলের আয়না জুড়ে অনষ্ট চাঁদ,

গলির মোড়ে একাগাড়ি কোমরবন্ধে রাংতা মোড়া ভীষণ ভারী তরবারি
বন্ধ কানাগলির মধ্যে টুকরো আকাশ জানলা দিয়ে।

 

স্বপ্নগুলি

বিলুপ্ত সভ্যতা যেন তার কোনো নগর কঙ্কাল ফেলে গেছে এইখানে,
শুষ্ক করোটীর অন্ধ চোখে মণিহীন চেয়ে আছে,
ধু ধু বালি দিগন্ত অবধি বালুর সমুদ্র যেন বালুকা তটিনী সহমৃতা
বহুক্ষত চিহ্নে ভরা খেজুরের ছায়াগুলি স্তম্ভের মতন
অগ্নিময় ছাদ শিরোধার্য করে আছে।
উটের কনভয় বুঝি উদ্ভট বেচাল স্বপ্নগুলি
দিনান্তের দিকে ছায়া-সবাই খুঁজতে বেরিয়েছে,
এখনো দস্তুর মতো পথিমধ্যে বিগত কাহিনী।

আরও পড়ুন কবিতা-
লিপিকার আমিই তোমার
এসেছি স্বাধীনতা সাথে করে
দুর্বিনীত পুত্রগণের প্রতি
অন্য আলো
প্রকৃতিতে হবো লীন

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

Facebook Comments Box

আনন্দ বাগচী (জন্ম: ১৯৩২- মৃত্যু: ২০১২ খ্রি.) ছিলেন একাধারে একজন কবি, গল্পকার, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালী ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: স্বগতসন্ধ্যা, তেপান্তর, উজ্জ্বল ছুরি নীচে, বিস্মরণ, শ্রেষ্ঠ কবিতা ; কাব্যোপন্যাস: স্বকাল পুরুষ, স্বপ্নের দৌড়; গল্পগ্রন্থ: রাজ যোটক, শ্রেষ্ঠ গল্প; উপন্যাস: চকখড়ি, বিকালের রঙ, রাতের বাসা, প্রথম প্রেম, ছায়ার পাখি, চাঁদ ডুবে গেলে, সকলেই মেয়ে নয়, এই জন্ম অন্য জীবন, ফেরা বা ফেরা; গোয়েন্দা উপন্যাস: যাদুঘর, অদৃশ্য চোখ, গ্রহণের ছায়া, রাতের তীরন্দাজ, অদৃশ্য মৃত্যুর ছক; কিশোর উপন্যাস: কানামাছি, বনের খাঁচায়, মুখোশের মুখ, মৃত্যুর টিকিট, ভূত রহস্য, হিল হাউস রহস্য, ছো, মালয়ের জঙ্গলে, ছেলে ধরা, পরমায়ু; প্রবন্ধগ্রন্থ: সাহিত্যির নানা রকম, সাহিত্য সূত্রে; রম্যগ্রন্থ: নাচের পুতুল, বকলমে, চালচিত্র; নাটক: রূপান্তর, সমাধান; অনুবাদগ্রন্থ: মাদাম বো ভারি-গুস্তভ ফ্লবেয়ার, জন্তা অ্যান্ড কোং; সংকলনগ্রন্থ: প্রথম সাড়া জাগান গল্প, প্রথম সাড়া জাগান কবিতা।

error: Content is protected !!