প্রচ্ছন্ন-কুয়াশার-দিন
কবিতা,  রিঙকু অনিমিখ,  সাহিত্য

প্রচ্ছন্ন কুয়াশার দিন, ত্রিমোহনী, আমাদের ছোট নদী, পতঙ্গ, সহজ সমীকরণ

প্রচ্ছন্ন কুয়াশার দিন

রিঙকু অনিমিখ

 

সমুদ্রের দুঃখ তুমি কী আর বুঝবে
যখন তার সমস্ত শরীরজুড়ে অশ্রুর স্বাদ!

সমুদ্রের দুঃখ বুঝতে হলে
আপাদমস্তক
নেমে যেতে হয় তার সমস্ত জলে
যদি নামো
যদি তুলে ধরো খোলা চোখ
অবারিত জলে
তবে তুমিও লবণে প্রতারিত
জেনে রেখো
তোমারই চোখের অজুহাতে
সমুদ্র কাঁদে

আরও পড়ুন কবি রিঙকু অনিমিখের কবিতা-
শোকবার্তা
দ্বিধা

 

ত্রিমোহনী

বাংলাদেশ
লাল টিপটি পরার আগে
কিছুটা সবুজ মেখে নিও,
আজকের সূর্য না হয় উঠলো তোমার কপালেই

মুক্তিযুদ্ধ
ন্যুনতম মানুষের
খুনতম প্রতিবাদ

টিয়া
বাঙলাদেশের উড়ন্ত পতাকা

 

আমাদের ছোট নদী

আমাদের ছোট নদীগুলো
বড় বড় ব্রিজের নীচে লুকিয়ে থাকে

বালু ফোটে, বালু পাকে
এরই এক ফাঁকে
চুরি করে নিয়ে যায় নৌকার ঘাটে;
ঘাট ও ফ্যাশনপ্রিয়; নৌকা ছাড়াই
নিতম্ব ফুলিয়ে-ধুলোবালি উড়িয়ে
কোমর দুলিয়ে হাঁটে

এদিকে, আকাশের বিষণ্ন মুখে
ইঁটের হলুদ গুড়ো কারা যেন মাখে

এরই এক ফাঁকে-
আমাদের বার হাত নদীর ভেতর
তের হাত রুই-কাতলা জুড়ে বসে থাকে।

পতঙ্গ

তোমাদের উপেক্ষা আর হিংস্র চোখের দিনে
আতকে উঠেছিলো আমার যত ভয়

একটা কাচের দেয়াল তুলে তোমরা পৃথক হয়ে গেলে
আমি যখন কাচের স্বচ্ছতা এবং অন্ধকার সম্পর্কে জানলাম

আমাদের মাঝখানে কাচের বধিরতা

দেয়ালের এইপাশে আমি বড় একা

সহজ সমীকরণ

সহজে কি সহজ হতে পার?
আমি যদি সহজ না হই আরো।

আমি যদি সহজ না হই আরো
তুমি কি আর হাত বাড়াতে পার?
অভিমানের দেয়াল তুলে দিয়ে
ঠোঁটের মায়া-স্পর্শ দু’একবারও।

আমি যদি সহজ না হই আরো

আমি যদি সহজ না হই আরো
যুদ্ধে তুমি ক্ষান্ত দিতে পার?
গ্রেনেড বোমের দম্ভ ঝেড়ে ফেলে
ভালোবাসার আলোক-উৎসারও-

কৃষ্ণ প্রেমের মানব অবতারে
চৈতন্যের যোগ্য সমঝদারও

আমি যদি সহজ না হই আরো
সহজে কি সহজ হবে তারও?
সসঙ্কোচের পর্দা ছিঁড়ে ফেলা
ভেঙে ফেলা কঠিন সিংহদ্বারও-

ছিঁড়ে ফেলা সীমান্ত-কাঁটাতারও
আমি যদি সহজ না হই আরো

আমি যদি সহজ না হই আরো
সহজে কি বলতে তুমি পার
সহজ করে বলার মত কথা
সহজ যদি সহজ না হয় আরো?

লোকেশন

ভালোবাসার কাছাকাছিই অভিমানের বাড়ি
দুঃখ তার সহজাত ছোটবোন,

আর সজল আঁখির বাঁধ পেরোলেই
ঘৃণার স্টেশন

তাচ্ছিল্য

যদি জলের প্রসঙ্গে আসি

বন্যায় প্লাবিত হলে
ভূমিতে মানুষের কোনও
কর্তৃত্ব থাকে না

সব জলের হাতে চলে যায়

অথচ জলকে আমরা সবচেয়ে
সস্তা দরের উদারহণ টানি

এমনকি
এই যে বাতাস
স্পর্শ ছাড়া চোখেই পড়ে না

সেও কিন্তু জায়গা দখল করে।

অন্তরালে

এই যে শুয়োপোকা
যাকে দেখে ভয়ে ও ঘেন্নায়
কুঁকড়ে যাচ্ছো তুমি
হয়তো একদিন এখান থেকেই
সৃষ্টি হবে বর্ণিল প্রজাপতি;
যার চিত্রল ডানায় ভর করে
তুমি স্বর্গে যেতে পারো।

আরও পড়ুন কবিতা-
লিপিকার আমিই তোমার
এসেছি স্বাধীনতা সাথে করে
দুর্বিনীত পুত্রগণের প্রতি
অন্য আলো
প্রকৃতিতে হবো লীন

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

প্রচ্ছন্ন কুয়াশার দিন

Facebook Comments Box

রিঙকু অনিমিখ একজন কবি ও চারুশিল্পী হিসেবে সমধিক পরিচিত। লেখালেখির বিষয় মূলত কবিতা, গদ্য ও কলাম। লেখার ক্ষেত্র মূলত ছোটকাগজ। প্রকাশিত কাব্যগ্রস্থ: বিমূর্ত মিউজিয়াম, নিষিদ্ধ সাইরেন, বসন্ত এসে ফিরে যায়, দল বেঁধেছি একা; সংকলন: প্রেমের কবিতা; সম্পাদনা: জীবনানন্দ দাশের অগ্রন্থিত প্রেমের কবিতা ও অন্যান্য, যুক্তি-তর্কে বিমূর্ত চিত্রকলা। তিনি ১৯৮২ সালের ৫ এপ্রিল, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত  আহম্মদপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের মিয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!