নেপোলিয়ন-বোনাপার্টির-দেশে
তাহমিনা খাতুন (ভ্রমণকাহিনি),  ভ্রমণকাহিনি,  সাহিত্য

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দেশে (১ম পর্ব)

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দেশে (১ম পর্ব)

তাহমিনা খাতুন

 

ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়নের নাম শোনেনি, এমন শিক্ষিত মানুষ বাংলাদেশে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষত তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি,”তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি দেব!” এ এক অমোঘ সত্য। যাই হোক সে প্রসঙ্গ আপাতত থাক। ইতিহাসের সেই অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর নেপোলিয়নের দেশ ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে কয়েক দিনের জন্য ঘুরে আসার সুযোগ হল।

শুধু নেপোলিয়ন বোনাপার্টের কারণে নয়, আরও অনেক কারনেই বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর শহরের তালিকায় প্যারিসের নাম উপরের দিকেই থাকে! স্কুল জীবনে পড়া ‘দি লানচন’ গল্পটি এখনও স্মৃতিতে ভাস্বর। এই গল্পের প্রখ্যাত ইংরেজ লেখক ‘সমার সেট মম’ তাঁর সাহিত্যের একজন গুণ মুগ্ধ পাঠককে প্যারিসের ব্যয় বহুল ‘ফয়ো’ রেঁস্তোরায় আপ্যায়ন করতে গিয়ে কতটা নাস্তা নাবুদ হয়েছিলেন, সে গল্প অনেক পাঠককেই এখনও ভাল লাগার আবেশে মুগ্ধ করে নিশ্চয়ই। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল কবিবর মধুসূদন দত্তের প্যারিসের দুঃখ ভরা জীবন কাহিনী বাঙ্গালী পাঠকের মনকে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তোলে। এছাড়া বিশ্ব বিখ্যাত আইফেল টাওয়ার, বিশ্বের সবচেয়ে বড় লুভ মিউজিয়াম প্যারিসেই। সব কিছু মিলিয়ে প্যারিস বা প্যারি নগরীতে একবার ঘুরে আসার লোভ সামলানো মুশকিল। আর তা যদি হয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে থাকা অবস্থায়!

লুভ-মিউজিয়াম
                        লুভ মিউজিয়াম

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা রেল স্টেশন থেকে ট্রেনে মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টার দূরত্বে প্যারিসের ‌অবস্থান। প্যারিস হলো,”অর্ধেক নগরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা”! প্যারিসে পা দিলে এ কথার সত্যতা মেলে শতভাগ। শহরের প্রতিটি রাস্তা অসংখ্য গাছে ছাওয়া আর পাখীর কলকাকলীত মুখরিত! শহরের কৃত্রিমতা মনে হয় পুরোপুরি গ্রাস করতে পারেনি প্যারিসকে! বহু কাল আগে থেকেই ভাস্কর্য, চিত্রকলা, বিজ্ঞান, ফ্যাশন, ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত এ নগরী! 

আরও পড়ুন ভ্রমণকাহিনী তাজমহলের শহর আগ্রায়

ইতিহাস থেকে জানা যায়, দুই হাজার বছরের বেশি প্রাচীন প্যারিস! আনুমানিক ২৫৯ খৃস্টপূর্বে কেলটিক নামের এক জনগোষ্ঠীসীন নদীর তীরে তাদের আবাস গড়ে তোলে! এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবী। ৫২ খৃস্টপূর্বে রোমান সৈন্যবাহিনী জোর পূর্বক মৎসজীবীদের বিতারিত করে লিউটেশিয়া দখল করে নেয় এবং এর নাম দেয় প্যারিস। রোমানদের আধিপত্যের কারণেই হয়তো প্যারিসের স্থাপত্য শিল্পে রোমান প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

বিশ্ব বিখ্যাত অনেক স্থাপত্য শিল্পের সাথেই প্যারিসের নাম জড়িয়ে আছে। প্যারিসের কথা আসলেই চলে আসে আইফেল টাওয়ারের কথা। ছবিতে দেখা আইফেল টাওয়ার, নিজ চোখে দেখতে পাওয়া রোমাঞ্চকর ব্যাপার বৈকি! এছাড়া প্যারিসে রয়েছে ইতিহাস বিখ্যাত ভার্সাই প্যালেস, বিশ্বের সর্ববৃহৎ লুভ জাদুঘর, আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফ বা শঁজেলিজে আরও বিশ্ব বিখ্যাত কত কি!

প্রথমেই যাওয়া গেল ‘আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফ’ বা ‘শঁজেলিজে’ দেখতে। শঁজেলিজের অবস্থান  La Plus Bell Avenue Due Monde (লা পলু বেল আভন্যু দু মোঁদ) তে। ফরাসী ভাষায় যার অর্থ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা। বারোটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা মিলিত হয়েছে এই তারকা চত্বরে। এই স্থাপনাটি ফ্রান্সের জাতীয় প্রতীক। ১৮০৬ সালে ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন অস্ট্রলিটজের যুদ্ধে রোমান সম্রাট ২য় ফ্রান্সিসের  নেতৃত্বে গঠিত হয় রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়ান তিন জোটের এক বাহিনী। নেপোলিয়ন এই বাহিনীকে পর্যুদস্ত করেন। যৌথ তিন শক্তিকে হারানোর  মাধ্যমে তথাকথিত পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। সম্রাট নেপোলিয়নের এই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে ‘আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফের’ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকরা হয়। প্রায় ৩০ বছরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

আরও পড়ুন ভ্রমণকাহিনী শানশি লাইব্রেরি ও মোরগ ডাক
লুভ-মিউজিয়ামের-অভ্যন্তর
         লুভ মিউজিয়ামের অভ্যন্তর

ফ্রান্সের জাতীয় দিবস, বাস্তিল দূর্গের পতন এবং ফরাসী সেনা বাহিনীর বীরত্বের প্রতীকও এই শঁজেলিজে বা ‘আর্ক দ্য ট্রায়াম্ফ’।  ভারতের রাজধানী দিল্লীর রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে স্থাপিত ইন্ডিয়া গেটের সংগে এর আকৃতিগত  মিল রয়েছে। শঁজেলিজে  ১৬৪ ফুট উঁচু এবং ১৪৮ ফুট প্রশস্ত চক্রাকার একটি স্থাপনা। এর চূড়ায় উঠতে ২৮৪ টি ঘোরানো সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। শঁজেলিজের চূড়ায় উঠলে প্রায় সমগ্র প্যারিস শহর দৃষ্টিগোচর হয়। শঁজেলিজের সর্বোচ্চ চূড়ায় তো ওঠা গেল কিন্তু আবার এতগুলো সিঁড়ি বেয়ে নামতে হবে, ভাবতেই গায়ে জ্বর আসার উপক্রম। কপালের জোরে একজন দর্শক নীচে নামার জন্য একটি লিফটের সন্ধান পেলেন। আমরাও তাঁর সহযাত্রী হয়ে সিঁড়ি ভাঙ্গার কষ্ট থেকে রেহাই পেলাম!

প্যারিসের সঙ্গে প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের নামটি যেন একসূত্রে গাঁথা। ১০৫০ ফুট উঁচু টাওয়ারটি ১৮৮৯ সাল থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত  ছিল বিশ্বের উচ্চতম টাওয়ার। ছোট বড় বিভিন্ন  আকৃতির ১৮০৩৮ খণ্ড লোহার তৈরী ছোট বড় কাঠামো জোড়া দিয়ে আইফেল টাওয়ার তৈরী করা হয়েছে!  ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ আমেরিকার স্বাধীনতার প্রতীক এবং ১৮৮৬ সালে এটি ফান্স কর্তৃক আমেরিকাকে উপহার দেওয়া হয়েছিল। সেই স্টাচু অব লিবার্টির নির্মাতা ‘গুস্তাভ আইফেল’ আইফেল টাওয়ারেরও অন্যতম নির্মাতা। প্রায় ৩০০ শ্রমিক ২ বছর ২ মাসে টাওয়ারটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন।

আরও পড়ুন ভ্রমণকাহিনী ঘুরে এলাম পর্তুগাল

ইতিহাস পাঠে আগ্রহী শিক্ষিত মানুষ মাত্রই বাস্তিল দূর্গের কথা জানেন। এই দূর্গ  ছিল ফান্সের ‘বুরবো’ রাজবংশের ক্ষমতা আর অন্যায়, অবিচার, শোষণ, নির্যাতনের প্রতীক। ১৭৮৯ সালের বাস্তিল দূর্গের পতনের আগে ফ্রান্সের ৯৫ শতাংশ ভূমির মালিক ছিলেন মাত্র পাঁচ ভাগ মানুষ। তারা কোন ট্যাক্স দিত না কিন্তু সমস্ত সুবিধা ভোগ করতো।পক্ষান্তরে ৯৫ ভাগ সুবিধা বঞ্চিত মানুষকোন সুবিধা ভোগের সুযোগ ছাড়াই ট্যাক্স দিতে বাধ্য হত। এই অন্যায় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করতো তাদেরকে ধরে নিয়ে বাস্তিল দূর্গে বন্দী করে নির্যাতন, এমনকি হত্যা করা হত! ১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সের সাধারণ মানুষ দূর্গের প্রধানের নিকট প্রতিবাদকারী ৭ জন রাজবন্দীর মুক্তির দাবী করলে অগ্রাহ্য করা হয়। উত্তেজিত জনতা তখন বাস্তিল দূর্গ ভাঙতে শুরু করে। জনতাকে বাধা দেওয়ার জন্য দূর্গের ভিতর থেকে সৈন্যরা কামান দাগতে থাকে। ফলে ২০০ প্রতিবাদী মানুষ হতাহত হয়।

বাস্তিল দূর্গ ভাঙ্গার মাধ্যমে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ‘ফরাসী বিপ্লব’ সংঘটিত হয়। ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটে এবং ফ্রান্সে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐতিহাসিক এই বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্যারিসে বিশ্ব বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয় এবং একই দিনে ‘আইফেল টাওয়ার’ উদ্বোধন করা হয়। কাজেই ‘আইফেল টাওয়ার’ শুধুমাত্র লোহার তৈরী একটি টাওয়ার নয়, বরং ‘লৌহ প্রাচীর ভেঙে অন্ধকার দূর করে মানবতার জয়গান গাওয়ার এক অবিস্মরণীয় লৌহ চূড়া! এর চূড়া থেকে বিচ্ছুরিত হাজার বাতির আলোকচ্ছটা যেন সাম্য, মৈত্রী আর গণতন্ত্রের আলোকবর্তিকা হয়ে বিশ্ববাসীকে হাতছানি দিয়ে সেই বার্তাই জানাতে চাইছে।

রাতের-আইফেল-টাওয়ার
             রাতের আইফেল টাওয়ার

‘আইফেল টাওয়ার’ আজ কেবলমাত্র ফ্রান্সের ইতিহাসের অংশই নয়, ফান্সের অর্থনীতিতে এর রয়েছে বিশাল অবদান। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসু মানুষ এই টাওয়ারের চূড়ায় উঠে আলোয় ঝলমল ‘প্যারিস’ শহরকে দেখে মুগ্ধ হয়।

আরও পড়ুন গল্প রাজামারা

‘আইফেল টাওয়ার’ দিনের বেলায় দেখলে এটি তেমন আবেদন তৈরি করে না। সে কারণে রাতেই টাওয়ারে যাওয়া হল। লিফটে ১০৫০ ফুট উঁচু টাওয়ারে উঠে রাতের আলোয় ঝলমল প্যারিস শহর দেখা সত্যিই এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি! সূর্যাস্তের পর প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ মিনিট পর পর বিশ হাজার রঙিন বাল্বের আলোকচ্ছটা এক স্বপ্নিল আবহের সৃষ্টি করে। এছাড়া সেদিন ছিল পূর্ণিমা। কাজেই কৃত্রিম আলোর ঝলকানির সাথে আকাশের অপূর্ব পূর্ণ চন্দ্র যেন একাকার হয়ে মিশে গিয়েছিল আর অপরুপ এক সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে আমাদের জন্য বাড়তি আনন্দের খোরাক নিয়ে হাজির হয়েছিল!

আইফেল টাওয়ারকে ‘সিম্বল অব লাভ’ বা ‘ভালোবাসার প্রতীক’ ও বলা হয়ে থাকে। কারণ বছরে কয়েক হাজার যুগল আইফেল টাওয়ারের নীচে এসে একে অপরকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। 

পরদিন যাওয়া হল ভার্সাই রাজপ্রাসাদ দেখতে। প্যারিস শহর থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে ভার্সাই শহর। প্যারিসের আগে প্রায় ১০০ বছরের বেশী সময় পর্যন্ত  ‘ভার্সাই’ ছিল ফ্রান্সের রাজধানী। এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ‘ভার্সাই’ চুক্তির কারণেও ভার্সাই বেশ পরিচিত নাম। কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মিত্র পক্ষ এবং জার্মানীর মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটি পৃথিবীর ইতিহাসের এক বিশাল ঘটনা। ১৯১৯ সালের ২৮ জুন  ‘ভার্সাই প্রাসাদের’ মিরর্ হলে স্বাক্ষরিত হয়েছিল এই চুক্তি। আমাদের বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর কাছে ভার্সাই আরো বিশেষভাবে আকর্ষণীয়, বাংলা কবিতায় ‘অমিত্রাক্ষর’ ছন্দের প্রবর্তক এবং বাংলা সাহিত্যে প্রথম সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতার রচয়িতা মাইকেল মধুসূদন দত্তের কষ্টকর জীবনের অংশটুকু এই ভার্সাই নগরীতে অতিবাহিত হয়েছিল।

আরও পড়ন ভ্রমণকাহিনী কুনমিংয়ের বৃষ্টি ও শৈশবের বৃষ্টিবিলাস
ভার্সাই-রাজপ্রাসাদ
ভার্সাই রাজপ্রাসাদ

ভার্সাই চুক্তি এবং অন্য প্রসঙ্গ আপাতত বাদ রেখে ভার্সাই প্যালেস বা রাজপ্রাসাদের দিকে নজর দেওয়া যাক। ১৬২৩ খৃস্টাব্দে ‘ত্রয়োদশ লুই’ শিকারের সুবিধার্থে ইট, পাথর দিয়ে একটি ‌অস্থায়ী নিবাস তৈরী করেছিলেন। ভার্সাই এর তৎকালীন ঘন সবুজ অরণ্য ভূমি পরবর্তী রাজা চতুর্দশ লুই এর পছন্দ হয়ে যাওয়ায় তিনি এই প্রাসাদ এবং সংলগ্ন বাগানের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি ভাবে শুরু করেছিলেন। প্রাসাদের মূল ফটকের সামনেই চোখে পড়বে ঘোড়ার পিঠে বসা রাজা চতুর্দশ লুই এর মূর্তি। মূল প্রাসাদের ঢোকার অনেক আগেই দূর থেকে দেখা যায় ভার্সাই প্রাসাদের ৮০ মিটার লম্বা স্টীলের প্রবেশ দ্বার যা এক লক্ষ সোনার পাতে মোড়া!  দূর থেকে সোনালী রঙের প্রবেশ দ্বারটি দেখে যে কারও মনে হবে সোনা দিয়েই প্রবেশ দ্বারটি তৈরী করা হয়েছে। ভার্সাই প্রাসাদের আয়তন ৮ হাজার স্কয়ার হেক্টর। মূল প্রাসাদটি ২ হাজার ১৪ একর জমির উপর নির্মিত! বাকিটা জুড়ে রয়েছে লেক, বাগান, ঝর্ণা, অসংখ্য বৃক্ষরাজী পরিবেষ্টিত পায়ে চলা পথ!

১৬৮২-১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একচ্ছত্র ক্ষমতার মালিক ছিল বুরবোঁ রাজবংশ। ভার্সাই প্রাসাদ এসব ক্ষমতাদম্ভী রাজা-রানী আর তাদের সঙ্গী-সাথীদের আড়ম্বরপূর্ণ, বিলাসী জীবনযাপনের এক জাজ্বল্য প্রমাণ! প্রাসাদটিতে রয়েছে এক হাজার আটশতটি কক্ষ। বহু মূল্যবান মার্বেল পাথর, সোনা, রুপার পাতেগড়া বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য শিল্প সম্ভার, নজর কাড়া মূর্তি, বহুমূল্য ভেলভেটে মোড়া রাজা-রানীদের শয়ন কক্ষ দর্শকদের বিস্ময়াভিভূত করে! রাজা চতুর্দশ লুই, রাজা দশম চার্লস, লুই ফিলিপ, নেপোলিয়ন এই প্রাসাদেই অবস্থান করতেন। প্রাসাদের আরেকটি বিস্ময়হলো ‘হল অব মিরর্’ ৭৩ মিটার লম্বা, ১০.৫ মিটার প্রস্থ এবং ১২.৩ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট কক্ষে বিশাল বক্রাকার জানালার বিপরীতে একুশটা করে আয়না। সব মিলিয়ে মোট ৩৫৭ টি আয়না! মিরর্ হলের দেয়ালের চোখ ধাঁধানো মূর্তিগুলির চাকচিক্য উদ্ভাসিত করে তোলে চারিদিক! হলের সিলিং, দেয়ালে অপূর্ব সব চিত্রকর্ম, গ্র্যান্ড গ্যালারিতে রঙ-বেরঙের ঝাড়বাতির শোভা অনবদ্য!

আরও পড়ুন গল্প লালু
ভার্সাই-প্যালেসের-বাগান
ভার্সাই প্যালেসের বাগান

ভার্সাই প্রাসাদ সংলগ্ন বাগানটিতে প্রতি বছর একুশ লক্ষ বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ, দুই লক্ষ নানান প্রজাতির গাছ-পালা রোপিত হয়। বাগানটিতে আরও রয়েছে লেক, ঝর্ণা, গ্রীক পুরানের সূর্য দেবতা এ্যাপলোসহ অসংখ্য দেব-দেবীর মূর্তি! এসব মূর্তি থেকে উৎসারিত পানির ফোয়ারা বাগানটিকে করে তুলেছে অনিন্দ্য সুন্দর! বিশ্বের ১০টি সেরা বাগানের মধ্যে ভার্সাই প্রাসাদের বাগানটি অন্যতম।

এক হাজার আট শত কক্ষ সমৃদ্ধ প্রাসাদ, প্রাসাদ সংলগ্ন একলক্ষ নয় হাজার ছিয়াত্তর একর জমির উপর তৈরী বিশাল বাগান, কোন মানুষের পক্ষেই একদিনে দেখে শেষ করা সম্ভব নয়। তবু যতটুকু দেখা সম্ভব হোল, সেটুকুই মনে হোল জীবনের একবিশাল প্রাপ্তি!

আরও পড়ুন নেপোলিয়ন বোনাপার্টের দেশে-
শেষ পর্ব

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

Facebook Comments Box

তাহমিনা খাতুন একজন বহুমুখী প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছড়া, কবিতা, গল্প, ভ্রমণকাহিনি এবং নারীর অধিকার নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলাম লিখে থাকেন। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তার পেশাগত জীবনে তিনি নারীদের আইনি সহায়তা প্রদান এবং তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতেন। তাহমিনা খাতুন ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের দ্বারিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে এই গ্রামেই।

error: Content is protected !!