নীল সমীকরণ, মেঠো গন্ধ
নীল সমীকরণ
আষাঢ়ের বৃষ্টিস্নাত রাত
ধূসর দৃষ্টির উপত্যকায়
নেমেছে নিকষ আঁধার;
জানালার গ্রীলে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে,
কদম ফুলের পাপড়ি ধোয়া বৃষ্টিজল
টিপটপ শব্দে টিনের চালে অনিবার পড়ছে।
নীলহীন বদলে যাওয়া আকাশটা স্থির একা
কোথাও নেই জোনাকির আলো
না আছে পাখিদের কূজন,
সঙ্গী বলতে মাঝেমধ্যে অদূরে ঝিঁঝিপোকার ক্ষীণ ডাক অনুভব করছি।
রাত এগিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের খেয়ায়,
একাকিত্বের অতল গহীনে ডুবে যাচ্ছি একটু একটু করে;
তৃষ্ণালু চোখের বিদগ্ধ পাতায়
স্মৃতিরা সাড়ম্বর
কবেই শুকিয়ে গেছে অশ্রু চোয়ানো বেওয়ারিশ লোনা জল,
বুকের ভেতর বয়ে যাওয়া বেসামাল উত্তাল ঢেউ
মিশে গেছে বার্তাহীন ছেঁড়া পথে।
জানি না,সে এখনও আষাঢ়ে বৃষ্টিতে ভিজে কিনা;
মুঠোভরা শেফালি ফুলের হাসির মতো চাঁদ
মুখের অপ্রতিম নরম প্রতিচ্ছবি আর প্রজাপতি মন
কদমফুল হাতে আজও যেনো কাতর অপেক্ষায়,
বাউণ্ডুলে সময় এঁকেছে পথের বিভক্তি।
আরও পড়ুন ফজলুল হকের কবিতা-
সময়ের স্মারকলিপি
নিরবতার খোলস ভেঙে
তোমার ভালোবাসা
প্রশ্ন তোমাকে
আত্মবিরহ
মেঠো গন্ধ
সময়ের সিঁড়ি ভেঙে
আজও দেখি মেঠোপথে
ধুলোর মেঠোগন্ধ ছড়ায় উদাস দুপুর,
কর্ষিত জমির সমতলে ফসলের প্রতিটি দানায়
কৃষকের শুকনো ঘাম জমে আছে।
ঘুঘুডাকা বাঁশঝাড়ে পাতার ফাঁকে
ভোরছোঁয়া সূর্যের উঁকিঝুঁকি
উপভোগ করেছি উদাম শরীরে উৎসুক নয়নে,
বিলিকাটা বেড়ার ফাঁকে দেখেছি কতো
সোনালি আলোর লুকোচুরি খেলা।
সূর্যঘড়ি দেখে পথ হেঁটে হেঁটে
ভয়ে কেঁপেছি আমরা স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়ে
এই বুঝি দেরি হলো পাঠশালার।
পদ্মার চরে ঘন কাশবনে
ছেলেবেলার দুরন্তপনা আজও ভেসে ওঠে নিরব শব্দচয়নে,
ক্ষুদে জামগাছের রুগ্ন ডালে
টুনি পাখির বাসা বুননের দৃশ্য দেখে
স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন জাগত কিশোর মনে।
পেটে খিদে, তাতে কিইবা যায় আসে
বাদল দিনে বেনোজলে ভাসিয়েছি ভেলা
গ্রামের ছেলেরা মিলে।
পাখির ডাকে আজও ভোর হয়
সবুজ পাতায় ফোটে রুপালি আলো,
শঙ্খধ্বনি শুনে সন্ধ্যেপ্রদীপ জ্বালে
গ্রামের পিসি মাসি দিদিমণি,
ইচ্ছে হলেই কী এসব এখন উপভোগ করতে পারি!
পাটপচা পুকুরে গামছায় মাছ ধরত
কিশোরী বকুল লতা
কাদাজল ঘেটে পুঁটি আহরণ
কোথায় গেলো যৌবন ছুঁই ছুঁই সেই কিশোর বেলা?
বিকেলের আকাশে ঘুড়ির লড়াই
চোরকাঁটায় ছুঁয়ে যেতো কৈশোরের উচ্ছল গতিপথ
সেও কী ছিলো কম মজার ব্যাপার!
সোহাগী লতার মতো দুলছে আহা
জীবনের মধুর সেসব স্মৃতি!
শোনো শহুরে মেয়ে,
সোডিয়াম লাইটে স্বপ্ন পোড়াও
চড়াদামে ভালোবাসা করো কেনাবেচা রাজপ্রাসাদের অন্তরীণে,
ইচ্ছে করলেই পারো না তুমি
আঁচল ভরে জোছনা কুড়োতে শিমুল বনে।
তোমার আছে পারিজাত সুখ
আমার আছে–
সবুজ গাছের নীচে স্নীগ্ধ কোমল ছায়া
পা-ছোঁয়া নরম উর্বর মাটি, ঢেঁকিছাটা চাল
আর অবারিত দিগন্তছোঁয়া অখন্ড নীল আকাশ।
ধু ধু পদ্মার বালুচরে
ডুবুডুবু সূর্যের লীলারঙে
আজও ফেলে আসা জীবনের অপূর্ব এক চিত্র আঁকি।
আরও পড়ুন কবিতা-
অবহেলার বৃত্তে
কবিতা জমিনে
বাঁকা দুটি আঁখি
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
নীল সমীকরণ