নির্জলা-উপবাস
কবিতা,  ফজলুল হক,  সাহিত্য

নির্জলা উপবাস, চন্দ্রমুখী, তোমার ভালোবাসা

নির্জলা উপবাস

ফজলুল হক

 

বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই
কার্ণিশে জল ঝরছে..
মন করিডোরের অন্ধগলির
দেয়াল ভাঙা পথে নিমগ্ন ভাবনার দ্বারে
শীস দিয়ে যায় ধূসর স্মৃতিরা।

রাত্রির আকাশে হেঁটে হেঁটে ইচ্ছেরা ক্লান্ত
চাঁদের দূরত্ব রেখায় আঁকে ক্ষয়িত জীবনের আল্পনা।
জানি না গন্তব্য কোথায়
তবুও পথ খোঁজার শেষ নেই;
অন্তর্গৃহে সুখের ছায়া স্পর্শে নয়
মরা নদীর শূন্যতার শেষ ঠিকানা অবধি
অবিশ্রাম তোমাকে খুঁজেছি,
খুঁজেছি–
গাঙচিল ওড়া উদার আকাশের নীচে
বুড়িগঙ্গার জোয়ার জলে
নায়তে আসা অজস্র রমনীর ভিড়ে।

কী এক অদ্ভুত বাসনায়
আচমকা গোত্র বদলে ফেলেছো
বদলেছে উচ্ছ্বাস,
তোমার আকাশেও ভিন্ন রঙের মেলা।
হেঁসেলের ধোঁয়া, পোড়া মাটির গন্ধ
তাল পাখার বাতাস–
এসবের কিছুই এখন তোমাকে স্পর্শ করে না,

কানে বাজে না সুতা কাটার ঠকঠক শব্দ।
এক ভিন্ন দেয়ালের ওপার থেকে
কে যেনো তোমাকে নাম ধরে ডাকে,
তুমিও নদীর মতো ছুটে যাও মোহনার খোঁজে,
তোমাদের উৎসবপুরীর ঝলমলে আলোর আড়ালে
কারো স্বপ্ন পোড়ে,ভালোবাসার শিরদার ভাঙে নিঃশেষ।

জীবন প্রাচীরের গভীরতায়
অসময়ের ফ্রেমে বন্দী প্রেম
সময়ের স্বাক্ষী হয়ে নির্বাক চেয়ে থাকে,
তবুও নির্জলা উপবাস
নির্লজ্জ তোমাকে পাবার।

আরও পড়ুন ফজলুল হকের কবিতা-
প্রশ্ন তোমাকে
নিরবতার খোলস ভেঙে
সময়ের স্মারকলিপি
চন্দ্রমুখী

আকাশে কালো মেঘ
প্রকৃতি ছুঁয়ে আছে গুমরো নিস্তব্ধতা,
ভেজা বিকেলে
আষাঢ়ে কোকিলের সিক্ত ডানায় অজানা আশঙ্কা,
এক অদ্ভুত গল্পের শিরোনাম বেলা শেষে বিনিদ্র নেশায় আমাকে ভাবায়।
চোখের পলক পড়ে
বদলায় স্বপ্নলেখা সবুজ কাগজ,
সিঁথিকাটা মেঠোপথ বিস্ময়ে বিষণ্ন অদূরে;
অসংযত আবেগে
গল্পে ভাবনার অবাধ্য অনুপ্রবেশ
কে সে শিরোনাম এ গল্পের?
জলসাঘরে সুসজ্জিত নারী
নুপুরের উন্মাদনা–সবই তুচ্ছ,
তুচ্ছ জগৎ সংসার
নেহাতি তার তুলনায়।
সুঢৌল নাকে ভালোবাসার নাকফুল
সোনালি রোদের মতো
আলোর বৃষ্টি ছড়ায়
অভিমান ছুঁয়ে থাকা বদনে।
ভালোবাসা জমে আছে নিষেধের প্রাচীরজুড়ে,
সংগুপ্ত বাসনায় আঁকা ভাস্কর্য
বেমালুম ক্ষয়ে যাবে কি
গন্তব্য খোঁজার ভুল শব্দের ভুল নির্দেশনায়?
গল্পের আড়ালে থেকে যায় গল্প
ভেঙে যায় অব্যক্ত শব্দজট,
চন্দ্রমুখী মুখখানা শুধু
আজও কি করতে পেরেছি আড়াল?

 

তোমার ভালোবাসা

তোমার উদ্যমতা
বৈশাখীর মাতাল ঝড়ের ন্যায়
আমার খরতপ্ত হৃদয়ের পরিতৃপ্ত জলে
শাদা শাদা হংসের
পালক ঝাপটানো উচ্ছ্বাস।

তোমার ভালোবাসা
সদ্য গজানো পত্র-পল্লব
আমার দেহে স্নিগ্ধ-সজীবতার ছোঁয়া
অন্ধকার নিষিদ্ধ গলিতে আলোর দীপশিখা।

তোমার স্পর্শ
সবুজ শস্যের দোলা,মেঠো ঘাসফুল
বসন্তের পুষ্পকানন
প্রকৃতির উন্মাদনার ন্যায়
বেঁচে থাকার সুধা।

সকালের কাঁচা রোদে এখনও কি
শেফালী কুড়াও
গাঁথো কি মালা বিশ্বাস জ্বালিয়ে মনে?
তোমার অস্তিত্ব অনুভব করি প্রতিটি নিঃশ্বাসে
ভুল করেও যদি কোনোদিন বলো
ভীষণ ভালোবাসো আমাকে।

আরও পড়ুন কবিতা-
ঘুড়ে দাঁড়াও ব্যাবিলন
প্রকৃতি আমার ভালোবাসা

 

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

নির্জলা উপবাস

Facebook Comments Box

ফজলুল হক মূলত একজন কবি। তাঁর লেখায় জাগতিক জগতের প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ-ব্যথা, প্রকৃতি ও সমাজে ঘটে যাওয়া নানা অসঙ্গতি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। তিনি ১৯৭০ সালের ১ আগস্ট,  পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের (বর্তমান ভাটপাড়া) বিশ্বাস পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। 

error: Content is protected !!