নন্দিত-নন্দন
কবিতা,  জহুরা ইরা,  সাহিত্য

নন্দিত নন্দন, আশাহত ব্যথার ঘায়ে

নন্দিত নন্দন

জহুরা ইরা

 

একুশ-
তুমি নয়কো শুধুই তারিখ পঞ্জিকার
তুমি রক্তে রাঙা জয়ধ্বজা নব ফাল্গুনী ঊষার।

একুশ-
তুমি রক্ত ঝরানো ফাগুনের আগুন
তুমি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে গড়ে তোলো বর্ষণ মুখর শ্রাবণ।

একুশ-
তুমি নয়কো শুধুই সংখ্যার প্রতীক
তুমি তো শেখালে প্রতিবাদের ভাষা-অন্যায়ে তীব্র ধিক।

একুশ-
তুমি জাতির বিবেক-নির্মম উদাহরণ
তুমি স্বৈরাচারির সংহারে ঘটাও বিদ্রোহ বিস্ফোরণ।

একুশ-
তুমি বাঙালির ভাষা-প্রতিবাদের মানদণ্ড
তুমি দিয়ে নাকো ঠাঁই দেশ জুড়ে যেথা আছে যত ভেক ভন্ড।

একুশ-
তুমি ধ্বংস করো লোভীরে-নস্যাৎ করো ঔদ্ধত্ব
কাঙালীপনা ঘুচাও বাঙালির, আছে যারা নেশায় মত্ত্ব।

একুশ-
তুমি নতুন চেতনা জাগাও সবার বুকে
অনিয়ম ভেঙে বাঁচাও তাদের-যারা মরছে ধুঁকে ধুঁকে।

একুশ-
তুমি একটি বিশ্বাস আস্থা চিরকালের
নৈতিকতার সূচক তুমি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যেতের।

একুশ-
তোমায় মহান করতে ঝরেছে তাজা প্রাণ
তারা পৃথিবীর মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে অমলীন সুঘ্রাণ।

একুশ-
তুমি হৃদয়ের হাঁক-জীবনের স্পন্দন
স্মরণীয় তুমি-বরণীয় তুমি-তুমি নন্দিত নন্দন।

আরও পড়ুন জহুরা ইরার কবিতা-
খুঁজি স্বাধীনতা
হৈমন্তী ভালোবাসা

 

আশাহত ব্যথার ঘায়ে

তোমরা দেখেছ,
দখিনা হওয়া কেমন মৃদু মন্থরে বয়ে চলেছে
মুকুলিত বৃক্ষের পত্র-পল্লব,
সে হাওয়ায় দোলায়িত হতে
যেন নীরব ব্যথায় কাঁপছে।
বন বিথিকায় ঘুরছে ফাল্গুনি সমীরণ
সপ্তসুর মিলিয়ে গড়েছে যে সুর
সে সুর যেন করুণ বিরহ রাগিনী
নতুন ঊষার জাগরণী যেন বেদনা বিধুর।
তবে বলি শোন-
বাতাস আজ বইবে না জেনো মত্ত মাতাল হয়ে
বৃক্ষরাজিও দোলাবে না শাখা ব্যথায় গিয়েছে ক্ষয়ে
যে সুরে ভ্রমর তুলতো গুঞ্জন সকাল-দুপুর সাঁঝে
শত পুষ্পের সমারোহ তবুও বিধূরতা তার মাঝে।
শিমুল শাখাতে ফুটেছে শিমুল মেলেছে রক্ত আঁখি
তৃষিত হৃদয়ের ক্ষয়িষ্ণু চোখ সে রক্তে গিয়েছে ঢাকি।
বাসন্তি আমেজে অপেক্ষমাণ কৃষ্ণচুড়া বলে ডাকি
সবুজ বনানি ভরেছে আলোয় পলাশ জেগেছে নাকি?
সবাই কেমন বিহ্বল হ্রদে বঞ্চিতের বোঝা বহি
নিষ্প্রভ হয়ে জাগিতেছে যেন একুশেতে রহি রহি।
চারদিকে বাজে মত্ত দামামা হৃদয়ে উদাস তান
শহিদ মিনারে চলছে সবাই গাইছে ভাষার গান।
এত যে চমক জনতার মাঝে অফুরান প্রাণশক্তি
এর মাঝেও শহিদ আত্মারা খুঁজে ফেরে স্নেহ-ভক্তি।
যে দিনটি সবে করেছে পালন মহা উৎসব ভরে
এর মাঝেও বুকের যাতনা যেন অশ্রু হয়ে ঝরে।
দুঃখে পাথর শহিদ আত্মারা কি ছিল প্রাণের বাসনা?
বাংলার সাথে মিলায়ে অন্য মেটাবে প্রাণের বাসনা?
ব্যকুল জিজ্ঞাসা ভেসে বেড়ায় পৃথিবীর আলো ছায়ে
ত্যাগের দ্যুতি ম্লান হয়ে যায় আশাহত ব্যথার ঘায়ে।
বাংলার মতো মধুর এমন কে কবে শুনেছে বলো
সেই বাংলার বুকে ঝড় তোলে আজ মিশ্র কলরোল।
পেলব কথাকে করেছে কঠোর বিবর্তন আর মিশ্রণ
কাঁদে যারা বাংলা ভ্রণ জন্ম দিতে করেছে আত্মবিসর্জন।

আরও পড়ুন কবিতা-    
স্মৃতিতে অম্লান
একুশ বছর পর
বাংলা ভাষার দুর্দশা

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

নন্দিত নন্দন

Facebook Comments Box

জহুরা ইরা বাল্যকাল থেকেই কবিতা ও গল্প লিখে চলছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: স্মৃতির দরজায়, ঝরাপাতা, নিমগ্ন ভালোবাসার বৃক্ষ; উপন্যাস: সায়াহ্ন সমীরণ। তিনি ১৯৬২ সালের ২৪ মে, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত মানিকহাট ইউনিয়নের ভিটবিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!