তুমি-কাঁদিতেছ-কেন
কবিতা,  জাহাঙ্গীর পানু,  সাহিত্য

তুমি কাঁদিতেছ কেন, অযাচিত অহমিকা

তুমি কাঁদিতেছ কেন?

জাহাঙ্গীর পানু

 

শীতকালে এমন বৃষ্টি দেখিনি কখনো!
ব্যথিত হৃদয়ে তুমি কাঁদিতেছ কেন?
নেই বৈশাখের ইশান কোণের নিকষ কালো মেঘ
নেই আষাঢ়ের কালো মেঘের ঘনঘটা
তবে কেন তোমার চোখে ঝরছে বারিধারা।

হঠাৎ সঙ্গীহারা কোনো যুবতীর আর্তনাদের মতো
ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ নীড়হারা আশ্রয়হীন পাখির মতো
যেমন কাঁদে ব্যর্থ প্রেমিকের বিধ্বস্ত হৃদয় ;
অনেক জমানো কথা না বলার অভিযোগে-
আশাহত পৌষ তুমি কাঁদিতেছ কেন?

নেই নদীর উত্তাল তরঙ্গের প্রথাগত আস্ফালন
নেই শ্রাবণের বিরামহীন বারিধারার প্রচণ্ড ঢল
নেই নদী স্রোতের তোরে নদীভাঙা কোনো জনপদ
তবে কেনো নদীগর্ভে সব হারানো রমণীর মতো-
নির্লীপ্ত মাঘ তুমি কাঁদিতেছ কেন?

নেই দখলদার কোনো রাজার রক্তচক্ষুর চোখ রাঙানি
নেই কোনো মায়ের মুখের ধ্বনি উচ্চারণের প্রতিবন্ধকতা
নেই ভাদ্রের রুদ্র মেঘের কোনো তর্জন গর্জন
তবে কেনো সন্তান হারা বাংলা মায়ের মতো-
প্রেয়সী ফাল্গুন তুমি কাঁদিতেছ কেন?

আরও পড়ুন জাহাঙ্গীর পানুর-
অন্ধকারের জ্যোতি
স্বপ্ন সারথি
শ্বাশত বাণী
অযাচিত অহমিকা
ক্ষণকাল দূরে দৃষ্টি পরিসীমায় দাড়িয়ে
অভুক্ত হৃদয়ে সুনিপুণ কোনো কারুকাজের দিকে
দৃষ্টিপাত ফেলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে স্মৃতির পাতা আওড়ানো।
চৈত্রের কোনো এক রাতে তৃতীয়া তিথীর ধনুকের চাঁদের আবছা আলোয় এসে বলেছিলে-
একদিন দেখা হবে সোনালী ধানের ক্ষেতে
মেঠোপথের পানে,
সহসাই উঠবে হেসে সোনালি সূর্য
রুপালি মাছের সাথে হবে আলিঙ্গন
পদ্মাপাড়ের ডুবো চরে।
বালুকাবেলায় রঙিন ঘুরি উড়ায়ে দিনাতিপাত যাবে
সুখের তরী ভাসিয়ে।
একদিন দেখা হবে কোনো এক কংক্রিটের শহরে
বিলেতের মতো সুউচ্চ দালানকোঠা আর সুপ্রশস্থ ইট পাথরের পথের বাঁকে।
কথা হবে সুশিক্ষার আলোয় আলেকিত সমাজের চূড়ায় দাঁড়িয়ে
আলাপচারিতার বিষয় হবে সফলতার সোপান,
অভাব অভিযোগের বিষয় সে-তো দুঃস্বপ্নের অতীত
মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে থাকবে তুমি আপোষহীন।
নিজ স্বার্থে কখনও ভুলবে না মানবসেবার গিরিপথ
মানবতার সেবা আর সুশাসনে অতিবাহিত হবে
নিজের জীবন যৌবনের রঙ।
সেসব প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে –
অযাচিত অহমিকায় আপন দৈহিক সৌন্দর্য আর
নিজস্ব পরিমণ্ডলে স্বার্থ বিকাশে হয়েছ আজ তুমি নিঃশেষে বিলীন।
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে
Facebook Comments Box

কবি জাহাঙ্গীর পানু—এক নিরন্তর পথিক, যাঁর কলম চলে জীবনের বিভিন্ন বাঁকে। তাঁর লেখালেখির কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই; সময়, প্রাসঙ্গিকতা এবং অন্তরের আকর্ষণই তাঁকে পথ দেখায়। তিনি শব্দের মাঝেই খুঁজে নেন জীবনের গভীরতাকে, যেখানে প্রতিফলিত হয় তাঁর অনুভূতির মগ্নজগৎ। তাঁর সৃষ্টিকর্মে গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা, প্রকৃতির মমতা, আর মানুষের অন্তর্লীন আবেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনো তাঁর রচনায় দেখা মেলে গ্রামবাংলার উর্বর মাটির টান, কখনোবা সংস্কৃতির রঙিন বৈচিত্র্য। প্রতিটি লেখায় তিনি সময়ের চিহ্ন ধরে জীবনের মায়াজাল বুনে চলেন। তিনি নিয়মিত লিখছেন ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনে, যেখানে তাঁর লেখাগুলোর মাধ্যমে পাঠক খুঁজে পান নতুন এক ভাবনার দিগন্ত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণতার নীল চাদর” এক অনন্য সংকলন, যেখানে বিষণ্ণতার নীল ছায়ায় ঢাকা জীবনের নানা রূপ, অনুভূতি আর প্রতিফলন মূর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে জন্ম নেওয়া কবি জাহাঙ্গীর পানু প্রকৃতির স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা এক সৃষ্টিশীল কবি। তাঁর লেখায় আজও মেলে সেই মাটির গন্ধ আর শেকড়ের টান।

error: Content is protected !!