তিনি-একজন-মহিলা-মুক্তিযোদ্ধ-শেষ-পর্ব
খলিফা আশরাফ (গল্প),  গল্প,  মুক্তিযুদ্ধ,  সাহিত্য

তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব)

তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব)

খলিফা আশরাফ

 

যুদ্ধাহত মহিলা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ময়নার তখন আলাদা সম্মান। এলাকার মানুষের কাছে তার বীরের মর্যাদা। একদিনের অপাংতেয় ময়না এখন সকলের গর্বের প্রতিক। ক্র্যাচে ভর করা ময়নাকে যেদিন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হলো, অবাক হয়ে সে দেখলো তার জন্যে আয়োজন করা হয়েছে বীরোচিত সংবর্ধনা। প্যান্ডেল টাঙ্গিয়ে স্টেজ করা হয়েছে, দুপাশে বাঁশের মাথায় বাঁধা হয়েছে মাইক, তিনকোণা করে রঙ্গিন কাগজ কেটে আর বাংলাদেশের ছোট ছোট পতাকা দড়িতে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়ে সাজানো হয়েছে চারিদিক। উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে স্টেজ। তার উপর টেবিল, পেছনে কয়েকটা চেয়ার। মাঝখানের চেয়ারটা একটু বড়। উপরে সুন্দর একটা তোয়ালে বিছানো। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা আর জনগণ মিলেই করেছে সবকিছু। ঘটনাস্থলে পৌঁছুতেই তার নামে মুহুর্মুহু শ্লোগান দেয়া হল। ‘জয় বাংলা’র সাথে তার নামও উচ্চারিত হল বারবার। আনন্দে-আবেগে শিহরিত হল ময়না।

তাবৎ মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা মুগ্ধ করলো তাকে। যখন ষ্টেজে রক্ষিত সেই বিশেষ তোয়ালে ঢাকা চেয়ারে বসালো হল তাকে, তখন অগণিত মানুষের উচ্ছ্বসিত করতালিতে অভিনন্দিত হল সে। অবাক হয়ে সে তাকিয়ে দেখলো, তার দিকে উৎসুক চেয়ে আছে অগণিত ভালোবাসার চোখ। আনন্দে উচ্ছ্বাসে ঝলমল করছে মুখ। শত শত এই সব মুগ্ধ মানুষের সাথে এসেছে মধুর বাবা আর সৎ মাও। সেই চরম বিপদের দিনে জায়গা না দিয়ে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিলো যারা, তারাও এসেছে আজ তাঁকে বরণ করে নিতে। সকলের সাথে সংবর্ধনা সভায় তারাও উচ্চ স্বরে শ্লোগান দিয়ে, হাততালি দিয়ে খুশিতে ডগমগ করছে।

আরও পড়ুন গল্প জীবনের উপহাস

সংবর্ধনা শেষ হল মুক্তিযোদ্ধা ময়নার অজগ্র প্রস্বস্তি আর গুণগানের মধ্য দিয়ে। তার সহযোদ্ধারা গাইলেন দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে সন্মুখ সমরে ময়নার দুঃসাহসিক অংশগ্রহণের বর্ণনা, প্রশংসিত কৃতিত্বপূর্ণ বীরত্বগাঁথা, মেডেল আর ফুলের মালায় সম্মানিত হল সে। অষ্টম শ্রেণি পাশ ময়না শুধু সবার প্রতি তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন আর শহিদ স্বামীর জন্যে সকলের দোয়া চাইলো। ময়নার এই বিনয়ে খুশি হল সবাই। সভা শেষে মধুর মা-বাবা এগিয়ে এলো, তারা অনুরোধ করলো ময়নাকে তাদের বাড়িতে থাকার জন্যে। একদিনের প্রত্যাখ্যাত ময়না আজ তাদের কাছে হয়ে উঠেছে গর্বের ধন। কিন্তু ময়না উঠলো মধুর সেই দূর সম্পকের চাচার বাড়িতে, যারা দুঃসময়ে আশ্রয় দিয়েছিলো তাদের। বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়নাকে পেয়ে যারপর নাই খুশি রল তারা।

সবার কাছেই ময়না এখন সম্মানিত ব্যক্তি। এলাকায় যে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন হয়েছে, তাতে ময়নাকে করা হয়েছে সহ-সভাপতি। ইতোমধ্যে ৫০০/= টাকা অনুদানসহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সম্মননা পত্রও পেয়েছে ময়না। এই বিরল সৌভাগ্য ময়নার কাছে ছিলো আশাতীত। এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র সেইই পেয়েছে জনকের এই পত্র। এতে সকলের কাছে তার সম্মান আরও বেড়ে গেলো। কিছুদিনের মধ্যেই ভাসমান ময়নার নামে প্রশাসন থেকে ঘর করার জন্যে ৫ শতাংশ খাস জমি বরাদ্ধ দেয়া হল। কিন্তু ওই জমিতে কখনো ঘর করা হয়নি ময়নার। যতদিন সেখানে ছিলো সে, সেই চাচার বাড়িতেই থেকেছে। কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা আটকে রেখেছিলো তাকে।

আরও পড়ুন গল্প হাতের চুড়ি

‘৭৫ এর পট পরিবর্তন সকল মুক্তিযোদ্ধার সাথে ময়নাকেও শংকিত করে তুললো। শুরু হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মুছে দিতে হাজারো ষড়যন্ত্র। রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার হতে লাগলো অপপ্রচারে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য-উপাত্ত পরিবেশন করে নতুন প্রজন্মকে বিপথগামী করার নীল নকশা প্রণীত হল। ঠিক তখনই দন্ত-নখর বিস্তার করে অন্ধকারের অন্তরাল গুহা থেকে সদর্পে বেড়িয়ে এলো স্বাধীনতা বিরোধী নরপিশাচ ঘাতকেরা। সরকারি মদদে তাদের আস্ফালন ক্রমেই বেড়ে যেতে লাগল। তারা হয়ে উঠলো দুর্বিনীত, জিঘাংসা পরায়ন। এরই মধ্যে ক্ষমতালোভী রাজনীতির কূটচালে রাজাকার-আলবদররা সরকারের হিস্যা হয়ে গেলো। তারা মন্ত্রীও হলেন কেউ কেউ। স্বাধীনতা বিরোধীদের সরকারি গাড়িতে পৎপৎ করে উড়তে লাগলো স্বাধীন বাংলাদেশের পবিত্র পতাকা।

ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি সুসংহত হল। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ‘৭১-এর লক্ষ্য- আদর্শকে লঙ্ঘিত, দলিত করার অপচেষ্টা হতে থাকলো। স্থানে স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের অপদস্ত এমনকি হত্যাও করা হল। ‘৭১ সালে পরিকল্পনা অনুসারে যেমন করে হত্যা হয়েছিলো বাঙালীদের, তারই পুনরাবৃত্তি হতে লাগলো স্থানে স্থানে। বেছে বেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় নেতা আর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হতে লাগলো। রাতের আঁধারে খুন হয়ে গেলো সর্বজন শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা তাদের ‘স্কোয়াড লিডার’ নাদের ভাই। আতংক ছড়িয়ে পড়লো এলাকায়। মুক্তিযুদ্ধদের স্বপক্ষের শক্তির জন্যে এই সময়টা ছিলো বীভৎস শংকাকাল, স্বাধীনতার জন্যে অশনি-সংকুল চরম দুর্যোগ মুহূর্ত। সেই দুঃসময়েই তার এক সহযোদ্ধা শফির অনুরোধে ঢাকায় চলে এলো ময়না।

আরও পড়ুন গল্প অশরীরী আত্মা

ঢাকায় এসে একেবারে বসে থাকেনি ময়না। যে দেশের জন্যে সে যুদ্ধ করেছে, সেই দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসাই তাকে ভেতর থেকে উদ্বুদ্ধ করলো কিছু করার জন্যে। তার যেটুকু সাধ্য-ক্ষমতা আছে তাই দিয়ে মানুষের সেবা করার সিদ্ধান্ত নিলো সে। এ নিয়ে আশ্রয়দাতা মুক্তিযোদ্ধা শফি ভাইয়ের সাথেও আলোচনা হলো। সেও চায় দেশের জন্যে কিছু করতে। কিন্তু গরিব মানুষ সে, তারই বা কতটুকু সাধ্য আছে? ময়না যে সরকারি অনুদান পায় তাও সামান্য। তবুও এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই যাত্রা শুরু করলো তারা। পাশেই যে হতদরিদ্র সুবিধা বঞ্চিত শিশুরা রয়েছে, তাদেরকেই বিনি পয়সায় পড়ানো আরম্ভ করলো ময়না। প্রথমদিকে এই শুরুটাও খুব সহজ হয়নি। নিজেদের টাকায় বই কিনে দিয়েও বাচ্চাদের বাবা-মাকে রাজি করাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। তাদের ধারনা, শুধু শুধু পড়িয়ে সময় নষ্ট করে কোন লাভ নেই। বরং ওই সময়টা কিছু আয়-রোজগারের ধান্দায় ব্যয় করলে অভাবের সংসারে কিছুটা জোড়াতালি লাগে।

পড়ার ব্যাপারে শিশুদের মধ্যেও বেশ অনাগ্রহ। অবশেষে অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে, বাচ্চাদের চকলেটের লোভ দেখিয়ে শুরু করতে পেরেছিলো ময়না। শফির বারান্দাই হল পাঠশালা। শুরুর পরে আর তেমন অসুবিধা হয়নি। আস্তে আস্তে বেড়েছিলো পড়ুয়ার সংখ্যা। ময়না নিরক্ষর বয়েসী মানুষগুলোকেও লেখাপড়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে পেরেছিলো। নিজেদের স্বার্থেই যে পড়ালেখা জানা দরকার, সে বোধ জাগ্রত হয়েছিলো তাদের মধ্যে। সন্ধ্যার পরে তাদের পক্ষে সময় দেয়াও সহজ হয়েছিলো। সব কাজ সেরে একটু দেরি করেই আসতো তারা। আস্তে আস্তে কর্মজীবী মহিলারাও আসা শুরু করলো। অচিরেই শিক্ষার্থীদের স্থান সংকট দেখা দিলো। ফলে ময়নাকে ২/৩ শিফট করে পড়াতে হত। এই আশাতীত সাড়া ময়নাকে আরও বেশি আত্ম-প্রত্যয়ী করে তুললো। সে তখন যোগাযোগ করলো এক এনজিও-এর সাথে। তারা খোঁজখবর নিয়ে, পরিদর্শন করে রাজি হয়ে গেলো ময়নাকে সহযোগিতা করতে। এই এনজিও পড়ানোর জন্যে একটা ঘর ভাড়া করে দিলো। তাদের তত্ত্বাবধায়নেই পরিচালিত হল শিক্ষালয়।

আরও পড়ুন গল্প মামৃত্যু

ময়নাকে নিয়োগ দেয়া হলো শিক্ষিকা হিসেবে। একেবারেই ন্যুনতম বেতন। কিন্তু এতেই তৃপ্ত, সন্তুষ্ট ময়না। তার কাজের স্বীকৃতি আর বঞ্চিত মানুষের জন্যে কিছু করাই তার কাছে বড়। পাঠদান শুরু হল দুই ভাগে, শিশুদের এক শিফট আর বয়স্কদের জন্যে আর এক শিফট। পড়ার সব উপকরণই সরবরাহ করতো ওই এনজিও। পাঠদানের সাথে সাথে নৈতিকতা, আচার-আচরণ, দেশপ্রেম সম্পর্কেও কথা বলতো ময়না। শোনাতো মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বলতো শহিদদের কথা, পাকি আর রাজাকার, আল-বদরদের নৃশংস অত্যাচার, ধর্ষিত নারীদের মর্মন্তুদ বেদনার কথা। প্রচণ্ড বৈরী সময়েও কোন পরিণতি নিয়ে ভাবতো না সে। গোলার আঘাতেও বেঁচে যাওয়া দেশের জন্যে উৎসর্গীকৃত এ জীবনকে সে ভাবতো অতিরিক্ত পাওয়া। তার আর চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। স্বামী, সংসার সবই তো গেছে। এখন দেশের জন্যে তুলে রাখা বাড়তি এ জীবনে মানুষের জন্যে কিছু করতে পারলে সেটাই হবে মুক্তিযোদ্ধা ময়নার বড় পাওয়া।

শিক্ষার্থীদের সাথে ময়নার সম্পর্ক ছিলো আন্তরিক, মধুর এবং নিবিড়। নিঃসন্তান ময়না শিশু ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসতো আত্মজের মতো। সন্তান বভুক্ষু হৃদয়ের অপার স্নেহে সবাইকে আপন করে কাছে টেনে নিতো সে। কোমলমতি সব শিশুরাই স্নেহ-ভালোবাসার কাছে সমর্পিত হয়। দেশ-কাল-স্থানের কোন বিভেদ নেই। সর্বত্রই শিশু-কিশোররা ভালবাসার মানুষকেই আপন ভাবে, আঁকড়ে ধরে। ছাত্র-ছাত্রীরাও তেমনি ময়নার নিবিড় আপত্য স্নেহে একাত্ম হয়ে উঠেছিলো। তাদের কাছে স্কুলে আসার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছিলো ময়না আপার নিখাদ স্নেহ। সে ছিলো তাদের আপনজন, আনন্দ-উচ্ছ্বাসের উৎস। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বয়সীদের কাছে তার ছিলো আলাদা সম্মান। আস্থা-বিশ্বাস, ভালোবাসা, মমতায় সে হয়ে উঠেছিলো সবার নিকট আত্মীয়। গভীর আস্থায় অনেকে সাংসারিক বুদ্ধি-পরামর্শও নিতো তার কাছে। সবার প্রয়োজনেই নির্দ্বিধায় ছুটে যেতো সে। বিনয়ী এই পরোপকারী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা অচিরেই এলাকায় সকলের কাছে প্রিয়জন হয়ে উঠলো।

আরও পড়ুন সময়ের পাঁচফোড়ন

এনজিও প্রতিষ্ঠান ময়নার কাজ আর সর্ব-প্রিয়তায় অত্যন্ত খুশি হল। পাঠশালার আশাতীত সাফল্য এবং জনসমর্থন তাদেরকে আরও অনুপ্রাণিত করলো। সাথে সাথে ময়নার প্রতি আস্থাও বাড়লো। কিছুদিনের মধ্যেই মিরপুর এবং এর সন্নিহিত এলাকায় ওই এনজিও পরিচালিত বেশ কয়েকটি স্কুলের ‘সুপারভাইস’ করার দায়িত্ব দেয়া হল তাকে। ময়না তার নতুন দায়িত্ব নিলেও তার নিজের এলাকার স্কুলের পাঠ দানের দায়িত্ব ছাড়তে পারলো না সে। ছাত্র-ছাত্রী আর অভিভাবকের অনুরোধে দুটো দায়িত্বই পালন করতে হল তাকে। প্রথমে এনজিও রাজি না হলেও এলাকার অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারলো না তারা। সকলের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে এ স্কুলের বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হল ময়নাকে। একটু বেশি কষ্ট হবে জেনেও সানন্দেই মেনে নিলো সে।

এলাকার মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা তাকে আরও আস্থাশীল করে তুললো। তার কাজ যে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে, প্রশংসিত হয়েছে সেটাতেই তার বড় আনন্দ। আর এই শিক্ষাদান তার কাছে সামান্য বিষয় নয়, এটা তার ব্রত, একটা আদর্শিক ‘মিশন’। বয়েসী মানুষগুলো বা কোমলমতি শিশুদেরকে শুধু লেখাপড়া শেখানোই নয়, সাথে সাথে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত করা এবং সঠিক ইতিহাসকে অবহিত করার মহান স্বপ্ন নিয়েই কাজ শুরু করেছে সে। ১৯৭৫-এ পট পরিবর্তনের পরে স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্থান, পুনর্বাসন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ইতিহাসকে বিকৃত ভূলুণ্ঠিত করার যে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় প্রয়াস তা ময়নাকে প্রচণ্ড ভাবে আহত করেছে। কিন্তু সরাসরি এ অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার ক্ষমতা তার নেই। তাই তার সামান্য সামর্থ্যে সাধারন মানুষের মধ্যে ‘৭১-এর আদর্শিক বীজ বপন করার দায়িত্ব নিয়েছে সে। নীরবে সংগোপনে সেই কাজটিই করে যাচ্ছে ময়না।

আরও পড়ুন গল্প হাইব্রিড

তার স্বপ্ন, সাধারণ মানুষ আর নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জেনে একদিন এই ঘৃণ্য নরপিশাচ স্বাধীনতাবিরোধীদের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবেই। সেই প্রত্যাশায়ই অহোরাত্র কাজ করে যাচ্ছে ময়না। তাই বাড়তি কষ্ট তাকে একটুও ভাবায়নি। বরং সে আনন্দিত আশান্বিত হয়েছে অনুকুল সাড়া পেয়ে। ময়নার দায়িত্ব বাড়লেও বেতন তেমন বাড়লো না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম থাকায় সমপর্যায়ের সহকর্মীর তুলনায় অনেক কম বেতন পেতো সে । কিন্তু এ নিয়ে কোন অনুযোগ নেই তার। কার তার কাছে অর্থটা মুখ্য নয়, মুখ্য হল জনমানুষের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রোথিত করা, বিস্তারিত করা। এনজিও-এর মাধ্যমে সেই সুযোগটা পাওয়াই তার কাছে অনেক বড় বিষয়।

আর তা ছাড়া বেতনের বেশীর ভাগ টাকাতো সে শিক্ষার্থী শিশুদের জন্যেই খরচ করে ফেলে। কখনো প্রয়োজন হলে শফি ভাইও টাকা দেয়। তার কাজে সর্বপ্রকার সহযোগিতা দেয় আশ্রয়দাতা এই গরীব মুক্তিযোদ্ধা। তার সহযোগিতা অনুপ্রেরণা ময়নাকে সাহসী হতে সহায়তা করে। সে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। নতুন প্রজন্মের উপর নিশ্চিত আস্থায় একাত্তুরের স্বপ্ন সাথে নিয়ে বছরের পর বছর নীরবে সবার অলক্ষ্যে নিরলস কাজ করে সে। তার দুচোখে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশিত সোনার বাংলা হেসে ওঠে। আজও গভীর প্রত্যয়ে মানুষের বুকের কন্দরে রক্তস্নাত স্বাধীনতার কাংখিত চেতনার বীজ বুনে যায় ময়না। তার মগ্ন চৈতন্যে স্বপ্নের একাত্তুর খেলা করে।

আরও পড়ুন তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা-
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব

 

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

তিনি একজন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (শেষ পর্ব)

Facebook Comments Box

খলিফা আশরাফ জীবন ঘনিষ্ঠ একজন কবি ও গল্পকার। তাঁর লেখায় মূর্ত হয়ে ওঠে সমসাময়িক কাল, মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার বিপর্যয় এবং মানুষের অভাবিত সার্থলোলুপতার ক্লিষ্ট চিত্র। তিনি বৈরী সময়কে গভীর ব্যঞ্জনায় অনুপম রূপায়ন করেন তাঁর লেখায়, সামাজিক অন্যায় অসঙ্গতি এবং নির্মমতার কারুণ্য ফুটিয়ে তোলেন অন্তর্গত তীক্ষ্ম অনুসন্ধিৎসায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: বিপরীত করতলে, কালানলে অহর্নিশ, অস্তিত্বে লোবানের ঘ্রাণ; গল্পগ্রন্থ: বিল্লা রাজাকার ও সেই ছেলেটি, অগ্নিঝড়া একাত্তুর, একাত্তরের মোমেনা, পাথরে শৈবাল খেলে; ছড়াগ্ৰন্থ: ভুতুড়ে হাওয়া, কাটুশ-কুটুশ। তিনি  ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। 

error: Content is protected !!