তবুও ভালোবাসলাম (২য় পর্ব)
তবুও ভালোবাসলাম (২য় পর্ব)
শাহানাজ মিজান
ফারিহা: তা কি বাচাতে বিয়ে করতে বাধ্য হলেন? বাবার জীবন নাকি সম্পত্তি?
ইমন: মানে?
ফারিহা: মানে, আপনার বাবা আপনাকে ত্যাজ্য করতে চেয়েছেন মানে তো সবকিছু থেকেই আপনি বঞ্চিত হতেন- তাই বলছিলাম।
ইমন: বিশ্বাস করুন, বাবা মা, ছোট বোন সবাইকে আমি খুবই ভালোবাসি – – – –
ফারিহা: আর বন্যাকে?
ইমন:( থতমত করে) হ্যা, আমি বন্যাকেও খুব ভালোবাসি কিন্তু বাবা কিছুতেই আমার কোন কথা শুনতে চাইলেন না।
ফারিহা: তো এখন কি করতে চাইছেন?
ইমন: কি করবো?
ফারিহা: আমার সাথে সংসার করবেন নাকি করবেননা?
ইমন; আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা কি করবো।
ফারিহা: আশ্চর্য মানুষ আপনি, আপনি একটা কোম্পানির এম ডি, তাও আবার গ্রুপ অব কোম্পানি। আর নিজের বিয়ের ব্যপারে আপনি- – –
ইমন: আসলে আমি এমনই।
ফারিহা: এমন মানুষ আমার পছন্দ নয় (ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো)
ইমন: আমি কি বিছানায় শোব নাকি – – – -?
ফারিহা: সেটা আপনার ইচ্ছে।
ইমন কোল বালিশ ছাড়া শুতে পারেনা কিন্তু ওটাতো ফারিহা নিয়ে নিয়েছে। বাববা কি মেজাজ, কোলবালিশ চাইতে গেলে আবার যদি রেগে যায়, ইমন একবার সোফার দিকে এগিয়ে আবার বিছানায় একপাশে জরো-সরো হয়ে শুয়ে পড়লো।
আজ ইমন অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। ফারিহা নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাকতে এলো।
ইমন: আপনি অফিস যাবেন না?
ফারিহা: আমার অফিস আগামী রোববার থেকে।
ইমন: ফারিহা, I am sorry.
ফারিহা: হঠাৎ sorry কেন?
ইমন: আজ রাতে কিছু ভুল হয়ে গেছে, না মানে আজ থেকে আমি না হয় আলাদা থাকবো।
ফারিহা: আলাদা মানে?
ইমন: মানে- আপনি বিছানায় আর আমি সোফায়।
আরও পড়ুন গল্প ভাঙা গড়ার টান
ফারিহা: ভুল কি শুধু আজ হলো নাকি আগেও হয়েছে? তাছাড়া ভুল তো করেই ফেলেছেন, এখন আর আলাদা থেকে কি হবে। আর আমি আজ বাবার ওখানে চলে যাচ্ছি। আপনি একাই থাকবেন আপনার বিছানায়।
ইমন: কেন চলে যাবেন, না মানে কবে আসবেন?
ফারিহা: আর আসবনা।
ইমন: কেন? আমি ভুল করেছি বলে তাই? আমি তো sorry বললাম।
ফারিহা: আজকের ভুলের জন্য নয়, সেদিন বাসর ঘরে আমাকে একা বসিয়ে রেখে আপনি বারান্দায় বসে একটার পর একটা সিগারেট খেয়েছেন। তারপর টানা দশদিন আমার সাথে কোন কথা বলেন নি। আমি নিজে থেকে কথা না বললে হয়তো এখনো বলতেন না।
ইমন: বললাম তো sorry, আসলে, আমি তো কখনো এত সিগারেট খাইনা। বন্যা আমাকে বলেছিল, সিগারেট খেলে কোন টেনশন থাকেনা, তাই- – – –
ফারিহা: তা কি দেখলেন?
ইমন:দেখলাম যে এটা ভুল কথা। যতই সিগারেট খাচ্ছিলাম, টেনশন ততই বাড়ছিলো- – – –
ফারিহা: কিসের টেনশন?
ইমন: মানে যদি কোন ভুল হয়ে যায় তাই- – –
ফারিহা: এই শুনুন, আমি শুনেছি, আপনি অফিসে খুব চড়া মেজাজে থাকেন অথচ আমার সামনে এমন ভাব করছেন যেন ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানেননা। অথচ ভাজা মাছ কি করে খেতে হয় তার সবই আপনার জানা।
ইমন: অফিস হলো কাজের জায়গা, সেখানে কেউ কাজে ফাকি দিলে কিংবা ভুল করলে মেজাজ তো খারাপ হবেই। আমি কাজে ফাকি দেয়া একদম পছন্দ করিনা কিন্তু বিশ্বাস করুন, কোন সুন্দরী মেয়ের দিকে তাকাতে ভয় পাই।
ফারিহা: কেন, আপনার বন্যা কি সুন্দরী নয়?
ইমন: বন্যা যেমন, তাকেও হয়তো সুন্দরী বলে কিন্তু আপনার মধ্যে কি যেন আলাদা আছে।
ইমনের এই কথাটি কেন যেন ফারিহার খুব ভালো লাগলো। আসলে ইমনের মতো মানুষকে কি সোজা সরল ভালো মানুষ বলা চলে নাকি কোন ক্যাপশন দেয়া যায়না?
আজ একমাস হয়ে গেলো ওদের বিয়ে হয়েছে। দুজন একসাথে কোথাও ঘুরতে যায়নি। বাবা মা কতবার বলেছে অথচ কেউই গেলনা কোথাও।
আরও পড়ুন গল্প রঙিন ঘুড়ি
ফারিহা বাবার বাড়িতে চলে গেছে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে নিজের রুমে ঢুকে ইমনের বুকের ভেতরটা কেমন খালি খালি লাগছিলো। কেন এমন লাগছে? ফারিহা নেই বলে? ইমন তো ফারিহাকে ভালোবাসেনা। আর তাছাড়া বাসায় আগে যারা ছিলো, তারাই তো আছে। বাসার জিনিস পত্র যেটা যেখানে ছিলো, সেটা সেখানেই আছে, তবুও সবই কেন শূন্য লাগছে। ইমন ফারিহাকে ফোন দিলো: আপনি সত্যিই চলে গেলেন?
ফারিহা: হুম, কেন?
ইমন: আমি তো sorry বলেছিলাম।
ফারিহা: তাতে কি?
ইমন: তবুও চলে গেলেন? আমাকে ক্ষমা করলেন না?
ফারিহা: ক্ষমা করার কথা আসছে কেন? আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না। বাবার কথা রক্ষার্থে আমাকে বিয়ে করেছেন। এমনই তো কথা ছিলো, আমি তো বলেছিলাম আমি চলে যাব। তাছাড়া আমার ছুটি শেষ হয়ে গেছে। অফিস করছি- – –
ইমন: আপনি সত্যিই আর আসবেননা?
ফারিহা: কেন আসবো কেন?
ইমন এই কেনর কোন জবাব দিতে পারলোনা। সত্যিই তো। ইমন ফারিহাকে ভালোবাসেনা। ফারিহা আসবে কেন? দিনের পর দিন যাচ্ছে, ফারিহার জন্য ইমন অস্থির হয়ে উঠছে। বাবা মা, ইরিনা কতবার বলেছে- যা ফারিহাকে নিয়ে আয়। ইমন যায়না। ফারিহাকে মাঝে মাঝেই ফোন দিয়ে আসতে বলে, ফারিহাও ঐ একই প্রশ্ন করে- কেন আসবো? ইমন কোন জবাব ও দিতে পারেনা, ফারিহাও আসেনা।
সেদিন বৃহস্পতিবার, ফারিহার বাবা ইমনের বাবাকে ফোন করলেন- ফারিহা খুবই অসুস্থ, হাসপাতালে। তাড়াতাড়ি সবাই হাসপাতালে চলে গেল। ফারিহা একেবারে নিথর হয়ে বেডে শুয়ে আছে। মুখটা শুকিয়ে গেছে, চোখের নীচে কালো হয়ে গেছে, মনে হচ্ছে ও কতদিন ভালো করে খায়নি, স্যালাইন চলছে। ফারিহার দিকে তাকিয়ে ইমনের মনে হচ্ছিলো, বুকটা ফেটে যাবে। অভিমান করে মেয়েটা নিজের এই অবস্থা করেছে? ইমন বারান্দায় গিয়ে কাদছে।
আরও পড়ুন গল্প তৃতীয় স্বাক্ষী
ইরিনা: (পেছন থেকে) এখন কাঁদছিস কেন? কতবার বলেছি, যা ভাবীকে নিয়ে আয়। তখনতো আসিসনি, আজ এসেছিস কেন?
ইমনের মা, ফারিহার মাকে বলছে- ভাবী, কি হয়েছিলো? কেন এমন হয়ে গেল? আমাদের কাছে কেন বলেননি?
ফারিহার মা: জানিনা ভাবী, ও মন মরা হয়ে থাকে। ভালো করে খায়না, এক কথা জিজ্ঞেস করলে রেগে যায়, বলে সব ঠিক আছে। ভাবি, এখন আমার মেয়েটার কি হবে? আমার মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করে বাচবো ভাবী?
ইমনের মা একথার কোন শান্তনা দিতে পারছেন না, নিজেও কাদছেন। ইমনের বাবা বারান্দায় গিয়ে আস্তে আস্তে দাতে দাত চেপে ইমনকে বললেন-এই হাদারাম, তোকে কে আসতে বলেছে এখানে, যা বলছি এখান থেকে। তোর মতো ছেলে আমার চাইনা, তোকে আমি গুলি করে মারবো।
অন্য দিন হলে হয়তো সত্যি সত্যিই ভয়ে এখান থেকে পালাতো কিন্তু আজ মাথা নিচু করে শুধু চোখ মুছেই যাচ্ছে।
ফারিহার বাবা কাউকে কিছু বলতে পারছেনা, শুধু চোখ থেকে চশমাটা খুলছে, চোখ মুছছে, চশমা মুছছে আবার পরছে।
তিনদিন পর ফারিহার জ্ঞান ফিরলো। ফারিহা চোখ খুলে দেখে, ইমন ওর হাত ধরে বসে আছে।
ইমনের চোখদুটো ফুলে লাল হয়ে আছে, মনে হয় অনেক কেদেছে।
ফারিহা: আপনি এখানে এসেছেন কেন?
ইমন: কোন কথা বলনা, চুপ করে শুয়ে থাকো।
সত্যিই ফারিহার কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। চোখ বন্ধ করেই ভাবছে ইমন।
তবুও ভালোবাসলাম গল্পের-
১ম পর্ব
শেষ পর্ব
ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজে
তবুও ভালোবাসলাম (২য় পর্ব)