অভিনেতা, মডেল, শিক্ষক ও গায়ক চঞ্চল চৌধুরী
চঞ্চল চৌধুরী একাধারে একজন অভিনেতা, মডেল, শিক্ষক ও গায়ক। তিনি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র দুই মাধ্যমেই অভিনয় করে থাকেন।
হাস্যরস অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। সেরা অভিনেতা বিভাগে একটি দর্শক জরিপ পুরস্কার ও দুটি সমালোচক পুরস্কার বিজয়সহ মোট বারোটি মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন।
জন্ম: অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ১৯৭৪ সালের ১ জুন, পাবনার জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের কামারহাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিক জীবন: চঞ্চল চৌধুরীর পিতা রাধা গোবিন্দ চৌধুরী এবং মাতা নমিতা চৌধুরী। পাঁচ বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। স্ত্রীর নাম শান্তা। তিনি একজন ডাক্তার এবং একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। নাম শুদ্ধ।
শিক্ষা জীবন: চঞ্চল চৌধুরী নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত কামারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর একই ইউনিয়নের উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক এবং ১৯৯২ সালে রাজবাড়ি সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পূর্ণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর ১৯৯৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ভর্তি হন।
আরও পড়ুন লোকসাহিত্যবিশারদ মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন
মঞ্চাভিনয় : ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি আর নাটকের প্রতি নেশা ছিল। পরে মঞ্চ নাটকের প্রতি একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ছাত্র অবস্থাতেই ১৯৯৬ সালে মামুনুর রশীদের আরণ্যক নাট্যদলের সাথে কাজ করার মধ্য দিয়েই অভিনয় জীবনের শুরু করেন। তার অভিনীত প্রথম নাটক আরণ্যক নাট্যদলের ‘কালো দৈত্য’। পরবর্তীতে এই নাট্যদলের সাথে সংক্রান্তি, রাঢ়াঙ, শত্রুগণ সহ আরও অনেক নাটকে কাজ করেন।
টিভিতে অভিনয়: ২০০৪ সালে, অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু চঞ্চল চৌধুরীকে পরিচয় করিয়ে দেন প্রখ্যাত পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম এবং মোস্তফা সারওয়ার ফারুকির সাথে। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক নাটক করে দর্শক মনে নিজ জায়গা করে নিয়েছেন। ফরিদুর রহমান পরিচালিত ‘গ্রাস’ নাটকে তিনি প্রথম নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর ‘তাল পাতার সেপাই’ নাটক দিয়ে দর্শকের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে অসংখ্য নাটক ও টিভি সিরিজে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। তারপর থেকেই তিনি মঞ্চের পাশাপাশি বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন টিভি নাটকে।
চলচ্চিত্রে অভিষেক ও প্রশংসাপ্রাপ্তি: বড়পর্দায় অভিষেক হয় ২০০৬ সালে তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘রূপকথার গল্প’ দিয়ে। তিনি ২০০৯ সালে গিয়াস উদ্দিন সেলিম পরিচালিত ‘মনপুরা’ ছবিতে সোনাই চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি ৩৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ফেরদৌসের সাথে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ১১তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার -এ সেরা অভিনেতা হিসেবে দর্শক জরিপ পুরস্কার লাভ করেন। পরের বছর গৌতম ঘোষ পরিচালিত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ‘মনের মানুষ’ ছবিতে অভিনয় করেন। ছবিটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রচিত উপন্যাস মনের মানুষ অবলম্বনে লালন শাহের জীবনী নিয়ে নির্মিত।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘টেলিভিশন’ ছবিতে অভিনয় করেন। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চঞ্চলকে অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত ‘আয়নাবাজি’ ছবিতে দেখা যায়। এই ছবিতে তিনি নাম চরিত্র আয়নাসহ ছয়টি চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে তার দ্বিতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন, এছাড়া সমালোচকদের জরিপে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেবী’ অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চলচ্চিত্রে মিসির আলি চরিত্রে অভিনয় করেন।
আরও পড়ুন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী চিন্ময় লাহিড়ী
চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত চলচ্চিত্র:
- রূপকথার গল্প (২০০৬ খ্রি.)
- মনপুরা (২০০৯ খ্রি.)
- মনের মানুষ (২০১০)
- টেলিভিশন (২০১৩ খ্রি.)
- আয়নাবাজি (২০১৬ খ্রি.)
- দেবী (২০১৮ খ্রি.)
- পাপ-পুণ্য (২০২২ খ্রি.)
- হাওয়া (২০২২ খ্রি.)
টিভি নাটকে সাফল্য: ২০১১ সাল থেকে তিনি আরটিভির ‘অলসপুর’ ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেন। মামুন অর রশিদের রচনা ও আল হাজেনের পরিচালনায় ধারাবাহিকটি ১২ মে থেকে প্রচারিত হয়। এই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১২ ও ২০১৩ সালে টানা দুবার তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এছাড়া তিনি এই কাজের জন্য ২০১৩ সালে ধারাবাহিক নাটকে শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনেতা বিভাগে বিভাগে আরটিভি আরটিভি স্টার অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
২০১২ সালে নভেম্বর মাস থেকে চ্যানেল নাইনের ‘ইডিয়ট’ ধারাবাহিকে অভিনয় শুরু করেন। এই ধারাবাহিকে অভিনয়ের জন্য তিনি ২০১৪ সালে তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। এই বছরের ১৪ ডিসেম্বর মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধভিত্তিক পিতা চলচ্চিত্রে ইমন সাহার সঙ্গীতায়োজনে তিনি শাওনের সাথে ‘তোর ভিতরে আমি থাকি’ গানে কণ্ঠ দেন।
২০১৪ সালে ভালোবাসা দিবসে এনটিভিতে প্রচারিত মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ‘লাল খাম বনাম নীল খাম’ টেলিভিশন নাটকে তাকে দেখা যায়। এই নাটকটিতে অভিনয় করে তিনি ২০১৫ সালে সমালোচকদের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেতা বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। সমালোচক শাখায় এটি তার প্রথম মনোনয়ন। ২০১৫ সালে তিনি বৃন্দাবন দাস রচিত এবং সালাউদ্দিন লাভলু পরিচালিত ছয় পর্বের মিনি ধারাবাহিক ‘ওয়াইফ মানে স্ত্রী’-এ অভিনয় করেন। নাটকটি ঈদুল আযহা উপলক্ষে বাংলাভিশনে প্রচারিত হয়।
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে