খোকা
কবিতা,  সাহিত্য

খোকা, বর্ণমালা ও স্বাধীনতা

কখোকা

রাফিয়া লাইজু কিলিজ

আবীর রাঙা পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়া ডালে
কত কথা কয় প্রকৃতি, নীরবে নিভৃতে,
স্মৃতির মিনারে থোকা থোকা ফুলে
কত বেদনার মালা গাঁথা, প্রাতে!

আসি বলে, গরম ভাতের থালাটা রেখে, সেই যে গেলো ভাই
আসলো না আর ফিরে,
ফিরতি পথে, চুড়ি-মালা, আরো কত কী নিবে
সবকিছু আজ স্মৃতির মণিকোঠায়, সয়ে যাওয়া ফিকে!

অশ্রু শুকায় মায়ের চোখেতে
পথ চেয়ে চেয়ে থেকে,
এই বুঝি খোকা ডাকল আমায়
মা…মা…বলে দূর থেকে!

খোকা ফিরে আর আসে না, মা আশা ছাড়ে না
যেন তীর বৃদ্ধ পাখি ডাকে,
কুঞ্জ মাঝে ঝরে পড়ে পাতা
শূন্য তা ছেয়ে যায় শাখে!

আবার রঙিন ফুলে-ফলে সাজে
দোয়েল-কোয়েল-শ্যামা ডাকে দূরে,
প্রকৃতির বুকে পরিপূর্ণতা আসে
আসে না খোকা মোর ফিরে!

ক্রমশ মায়ের আশার প্রদীপ নিভে
মন ভেঙে যায়, শরীরও চলে না আর,
সবকিছুতেই প্রাণহীন ছোঁয়া
খোকাকে ছাড়া, জীবন তাঁর অসাড়!

হাতছানি দেয়…আসছি…খোকা…
পারছি না আর ওরে,
জীবন প্রদীপ নিভু নিভু করে
থাকব না আর তোকে ছেড়ে!

আরও পড়ুন কবি রাফিয়া লাইজু কিলিজের কবিতা-
ভালোবাসা
শীতার্ত

 

বর্ণমালা ও স্বাধীনতা

যে ভাষায় কত সহজেই বলছি মনের কথা
সহজ তো নয় সে ভাষা অর্জন, অশ্রুসিক্ত ইতিহাসের পাতা!
বিভক্ত এ দেশের শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ধ্বংসে মেতে ওঠে শোষকশ্রেণী
আন্দোলনের বীজ বপন হয় তখন, বাঙালিরা বিকোতে তা চায়নি।

উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করতে ওরা, মেতেছিল ষড়যন্ত্রে
গর্জে উঠেছিল প্রতিবাদে বাঙালি, ভাষা রক্ষার গণতন্ত্রে;
জনসভা, মিছিল, নিষিদ্ধ করে ওরা, একশত চুয়াল্লিশ ধারা করে জারি
গুলিবর্ষণে শহিদ হন কত প্রাণ, আকাশ-বাতাস হয়ে যায় ভারী!

শহিদ স্বরণে স্মৃতির মিনার গড়লে, ভেঙে দেয় হায়নার দল
আবার গড়ে তাঁরা, সাথে নিয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ী মনোবল।
মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে প্রচন্ড বিক্ষোভে এক হয় দেশবাসী
বাধ্য হয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয় শাসকগোষ্ঠী।

একুশের শোক, সংগ্রাম আর শপথের স্মৃতিচিহ্ন, শহিদ মিনার যার প্রতীক
আত্বত্যাগের বীজমন্ত্র একুশে গাঁথা, যার মর্যাদা অপার অধিক;
ছয়দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, সাধারণ নির্বাচনে হলে জয়ী
স্বাধীনতার জয় নিশ্চিত হলে, শোষকরা পালায় দেশ ছাড়ি।

ভাষা-আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ, সুদীর্ঘ পথ রঞ্জিত হয় রক্তে
মাথা নত করেনি তবুও তাঁরা, দেশ শত্রুদের কোনো শর্তে।
বাংলার বুকে চিরকাল রবে, তাঁদের আত্বত্যাগের অবদান
অবিনাশী তাঁরা, লাল-সবুজে-মহীয়ান অম্লান।

বিশ্বমাঝে আজ মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা সমুন্নত
এত ত্যাগের বিনিময়ে যে ভাষা, যে স্বাধীনতা, রাখতে হবে তা অক্ষত! সমাদৃত!

আরও পড়ুন কবিতা-  
শহিদের রক্ত
ভাষা শহিদ স্মরণে
মতলববাজ

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

Facebook Comments Box

রাফিয়া লাইজু কিলিজ একজন কবি। তাঁর সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থ: অব্যক্ত কাব্য কথা, নিকুঞ্জ পূর্ণিমায় কবিতাগুচ্ছ। তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত সাগরকান্দি ইউনিয়নের পুকুরনিয়া গ্রামে নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস একই উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের মালিফা গ্রাম।

error: Content is protected !!