কপিশ-নয়ন-২য়-পর্ব
আবু জাফর খান (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

কপিশ নয়ন (২য় পর্ব)

কপিশ নয়ন (২য় পর্ব)

আবু জাফর খান

তিন.
মজহাব চৌধুরী ওরফে মজু মামা উচ্চ বংশীয় মানুষ। পুরুষ পরম্পরায় তাঁদের আভিজাত্য যেমন ছিল, ধন সম্পদেরও কমতি ছিল না। তাঁর বাবা ব্রিটিশ এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের আমলে পদস্থ পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি ছিলেন কর্মনিষ্ঠ অতি সজ্জন। উদারহস্ত এই পুলিশ কর্মকর্তা দু’হাতে দুঃস্থ মানুষদের দান করতেন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অতি সুখের সংসার ছিল তাঁর। ছেলে-মেয়েরা অতিশয় মেধাবী। মজহাব চৌধুরী পাকিস্তান আমলে ম্যাট্রিকুলেশনে রাজশাহী বোর্ডে প্রথম হন। তিনি ইংরেজি বিষয়ে ছিলেন তুখোড়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরজিতে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন। তাঁর মতো একজন মানুষের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও তিনি হয়ে যান ভবঘুরে ধরনের এক উদ্ভ্রান্ত পথিক।

তার মা বেঁচে থাকাকালীন সময়ে জমি-জিরাত বিক্রি করে দুই ছেলেকে ভরণ-পোষণ করে গেছেন। দৈন্য কী বুঝতে দেননি। মা অসুস্থ হয়ে পড়লে মজহাব চৌধুরী তাঁর চিকিৎসায় সমস্ত সম্পদ শেষ করেন। তবুও মাকে ধরে রাখতে পারেননি। জীবনের কোনো এক সময় কেউ কাউকেই আটকাতে পারে না। মা চলে গেলে তিনি টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। ছোট ভাইটি ছাড়া তাঁর কোনো পিছুটান ছিল না। ভীষণ ভালোবাসতেন ভাইটিকে। সবসময় নিজের সঙ্গে রাখতেন। ছোট ভাইটি ছোটবেলা থেকেই অসুস্থ ছিল। পোলিও আক্রান্ত রোগী।

আরও পড়ুন গল্প একজন অনন্যা

মজহাব চৌধুরীর কাছে ইংরেজি পড়তে দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রী আসত। তাঁর মতো ইংরেজি জানা কেউ ঐ তল্লাটে একজনও ছিল না। তদুপরি তিনি ছিলেন অত্যধিক বন্ধুবৎসল। সুতরাং ছাত্রছাত্রী তাঁর পিছু ছাড়ত না। অর্থেরও তেমন চাহিদা ছিল না। যে যা দিত বিনা বাক্যে তাই নিতেন। তবুও কম রোজগার হতো না।
ছোট ভাইটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় মজহাব চৌধুরী ভাইকে বাঁচাতে দুহাতে টাকা ঢালেন। চিকিৎসার খরচ যোগাতে শেষ সম্বল বসত ভিটেটিও বেচে দেন। তবুও ভাইকে বাঁচাতে পারলেন না। মজহাব চৌধুরী এখন একেবারে একা। মাথা গোঁজার জায়গাও নেই। অনন্যোপায় হয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছোট বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন।

মজহাব চৌধুরী বোনের বাড়ি আশ্রয় নিলেন ঠিকই, কিন্তু তার মন সায় দেয়নি । এক মুহূর্তও বোনের বাড়ি থাকতে ইচ্ছে করে না চিরকুমার এই মানুষটির। না, বোনকে তিনি অত্যধিক ভালোবাসেন। পছন্দ করেন ভাগ্নে-ভাগ্নিদেরও। ছোট ভাগ্নেটি তো তাঁর অতি পছন্দের। তবে দুচোখে দেখতে পারেন না ছোট বোনের স্বামীকে। ঐ লোকটির প্রতি ঘৃণার স্তূপ জমতে জমতে অনেক আগেই পর্বতশীর্ষ অতিক্রম করে গেছে। আকাশ সমান ঘৃণা যে লোকটির ওপর, তার আশ্রয়ে থাকার চেয়ে যন্ত্রণাময় গ্লানি বুঝি আর কিছু হতে পারে না। তবু বোনের চোখের জল আর ছোট ভাগ্নেটির ব্যাকুল আর্তি উপেক্ষা করতে পারেনি। আরও এক তরুণ যুবক তাঁর হাত ধরে বলে, “মজু মামা, আপনার বলতে তো কেউ নেই আর! কেবল ছোট বোনটি আছে। জানি, এখানে থাকা মানেই লজ্জাকর বিসংকুল জীবন পার করা। তবুও থাকেন। আমারও তো দুইকুলে কেউ নেই। পথের মানুষ আমি। থাকা-খাওয়ার ঠিক নেই। তা না হলে আমার কাছে নিয়ে যেতাম।” তরুণ যুবকের চোখে অশ্রু টলমল করে।

আরও পড়ুন গল্প ও রিহানা

মজহাব চৌধুরীর আদরের ছোট বোন ভাইয়ের জন্য বহুকাল ধরে পড়ে থাকা ইঁদুর-তেলাপোকার অভয়াশ্রয় খ্যাত খুপরি মতো ছোট্ট কক্ষটি পরিষ্কার করে দেয়। নিরুপায় বোন ঘরটি সাফসুতরা করার সময় চোখের জল আটকাতে পারেনি। সে জানে, এই পরিত্যক্ত ঘরটিতেও ভাইকে ঠাঁই দেবার জন্য স্বামীর কত যে লাঞ্ছনা কত অপমানই যে সইতে হবে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার পর্যন্ত হতে হবে হয়তো। লোকটি কারণে অকারণে এই বয়সেও গায়ে হাত তোলে। ত্রিশ বছর সে লোকটির ধারে-কাছে ঘেঁষে না। ঘেন্না লাগে। চৌত্রিশ বছর বয়সে সে তার সঙ্গ ত্যাগ করেছে। লোকটি মনুষ্য পর্যায়ভুক্ত কিনা এ বিষয়ে তার ঘোরতর সংশয় আছে। বড় ছেলেকে কোটিপতি ভুসিমালের ব্যবসায়ীর মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দিতে না পেরে আজও সে হাপিত্যেশ করে। কী বিস্ময়কর এক প্রাণী! এমন আজব দ্বিপাদ প্রাণী পৃথিবীর জনপদে সত্যিই বিরল।

আব্দুর রহিত ব্যাপারীর বড় ছেলে নিজের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করবে বলে পণ করলে, ব্যাপারী ব্যাটা চিংড়ি মাছের মতো লম্ফঝম্ফ শুরু করে। তার চেহারা সরু হতে হতে অনেকটা চিচিংগা জাতীয় সবজির রূপ ধারণ করে। মুখের কোণ বেয়ে গাঁজলা ঝরতে থাকে। সে প্রলাপ বকার মতো বারবার বলতে থাকে, “মরলে হাতির পায়ের তলায় মরা ভালো। তা না, সে বিয়ে করবে চালচুলোহীন এক মেয়েকে।”

তরুণ যুবকের মাথায় ঢোকে না, ভুসিমালের ব্যবসায়ীর ভেতর ব্যাপারী হাতি দেখল কোথায়! সে তো নোংরা টাইপ একজন ব্যবসায়ী। কিছু অর্থ আছে এই যা। অথচ বড় ছেলেটি যাকে বিয়ে করতে চাইছে, মেয়েটি চমৎকার। মোটেই চালচুলোহীন নয়। শিক্ষিত ভদ্র ঘরের মেয়ে। রূপে গুণে অসাধারণ। তরুণ যুবক উঠে-পড়ে লাগে এবং পছন্দের মেয়েটির সঙ্গেই বড় ছেলের বিয়ে হয়। তারা এখন সুখে ঘর করছে। তবে রহিত ব্যাপারীর খেদ কিন্তু আজও রয়ে গেছে।

আরও পড়ুন গল্প রাজামারা

 

চার.
তরুণ যুবকের নাম রুদ্র শাওন। সে আব্দুর রহিত ব্যাপারীর দূর সম্পর্কের ভাগ্নে। হঠাৎ হঠাৎ মামা রহিত ব্যাপারীর বাড়ি আবির্ভূত হয়। দুই-একদিন থাকে। আবার অদৃশ্য হয়ে যায়। মামা তাকে পছন্দ অপছন্দ কোনোটাই করে না। আসলে খুশিও হয় না, আবার তাড়িয়েও দেয় না। মন্দ আচরণ করতে গিয়েও কী ভেবে যেন চুপসে যায়। তার ধারণা, তার এই দূর-সম্পর্কিত বোনপো ভবঘুরে হলেও উচিত-অনুচিত নানান ধরনের প্রভাবশালীদের সঙ্গে সংযোগ আছে। রুদ্র শাওনের সামনে তাই কিছুটা গুটিয়ে থাকে। জীবনের সঙ্গে অসঙ্গত বিষয় জড়ানো থাকলে যা হয় আর কি। নানা কারণে মন বিচলিত থাকে। মামা রহিত ব্যাপারীরও সেই অবস্থা। সে লেবাসধারী, অতি কুঞ্জুস, ভয়ঙ্কর লোভী এক পাপিষ্ঠজন। তাই চিত্ত দুর্বল। ভীতিগ্রস্ত মন। অন্তঃকরণে সর্বদা শঙ্কার স্রোত বয়। অবিশ্যি তার এই বিচলিত ভাব কেবল রুদ্র শাওনই বুঝতে পারে। অন্য কেউ নয়। কারণ, শাওন ছাড়া কেউই তার চোখে চোখ রেখে কথা বলে না।

রুদ্র শাওন, মজু মামা মানে মজহাব চৌধুরীর একনিষ্ঠ একজন ভক্ত। যে কদিন মামাবাড়ি থাকে, দুজন টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। লাগামহীন বাঁধনছাড়া দুটি মানুষ কবে কখন দুজনার মনের অতি কাছাকাছি এসেছে বুঝতেও পারেনি। রুদ্র শাওনকে কাছে পেলে সব হারানো মজু মামার মন আনন্দে ভরপুর থাকে। হাঁটতে হাঁটতে দুজন বহুদূর চলে যায়। কখনো কখনো নির্জনে বসে নিষিদ্ধ ধোঁয়া সেবন করে। যে মানুষটিকে কেউ কখনো হাসতে দেখেনি, তিনি অকারণে প্রাণ খুলে হাসেন। যেন আনন্দ-ভরা বাঁধন-ছেঁড়া হাওয়ায় ভাসা এক মানুষ। আগল খুলে নিজের জীবনের কথা বলেন। বলতে বলতে কখনো তাঁর চোখে রঙের ঝিলিক ঝলমল করে, কখনো চোখভর্তি জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে। শাওনের কষ্ট হয়। কী অদ্ভুত জীবন এই মানুষটির! কি না হতে পারতেন তিনি! অথচ পাকিস্তান আমলের ভীষণ মেধাবী এই মানুষটি আজ আশ্রয়হীন কপর্দকহীন উদ্ভ্রান্ত এক মানুষ। যাঁকে নিজ ইচ্ছের বিরুদ্ধে মনের সাথে যুদ্ধ করে আব্দুর রহিত ব্যাপারীর মতো একজন অতি নীচ মনোভাবাপন্ন মানুষের বাড়ি থাকতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন গল্প বড় বাবা

মজু মামা কপর্দকহীন ঠিকই, কিন্তু মনটি আকাশের মতো বিশাল। নির্মেঘ ঝকঝকে একটি মন। নির্লোভ, নির্মোহ, ক্লেদহীন অবারিত হৃদয়। অভীপ্সা নেই, আক্ষেপ নেই, অপ্রাপ্তির অনুতাপ নেই। সমস্তই ছিল, সবই গেছে, তবুও মনস্তাপ কিংবা আপসোস নেই। বুকের কোথায় যেন কারও জন্য একটুখানি চিনচিনে বেদনা আছে বলে মনে হয় শুধু। কে তিনি? শাওন প্রশ্ন করতে গিয়েও করে না। তিনি বলেন, “শাওন, ক্ষণস্থায়ী জীবন। এই অতি অল্প সময়ে কি সবকিছু পাওয়া হয়? মিছেই ছুটোছুটি। তবে হ্যাঁ, চলতে চলতে যতটুকু পাওয়া যায়, দুহাত ভরে সেটুকুই গ্রহণ করে প্রাণটা জুড়িয়ে নেয়া কর্তব্য।

আর মানুষের জন্য প্রকৃতি যে অপার অঢেল অপূর্ব সম্ভার সাজিয়ে রেখেছে, তার জন্য মাথা নুয়ে অভিবাদন জানানো উচিত। মূর্খ মানুষ অযথাই ‘হা কপাল’ বলে বিলাপ করে। কী লাভ! ব্যাপারীর কথাই ধর না। ব্যাটার ‘হা হন্ত’ ভাব আর বিষয়-তৃষ্ণার লোলুপতা দেখে আমার কেবল করুণাই হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, কষে একটি চড় মারি। ভিখিরি একটা। আজীবন বদ্ধকোষ্ঠের রোগী। কেবল স্তূপ বানাতে চায়। উদর মধ্যস্থিত মলভাণ্ডের স্তূপও। মৃত্যুর সময় মুখে এক ফোঁটা জলও জুটবে না দেখিস।”

মজহাব চৌধুরী মানুষ হিসেবে মোটেই সাধারণ কেউ নন। সাধারণের কাতারে বন্দী করা যায় না তাঁকে। শাওন তাঁকে দীর্ঘদিন ধরে জানে। তবু এই অসাধারণ মানুষটিরই কেন এই অবস্থা? কেন তিনি চিরকুমার? কেন এরূপ জীবন তাঁর? এমন একজন শিষ্ট মানুষকে টীকা টীপ্পনী সয়ে নানা জনের ঠোকর খেয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এভাবে জীবন চালাতে হয় কেন? নিয়তির কী নির্মম তামাশা! রহিত ব্যাপারীর মতো খোদগরজ, লোভী, মানুষ হিসেবে অতি সাধারণের চেয়েও নিম্ন শ্রেণির জীব যারা, তারা বুক চিতিয়ে চলবে, আর মজহাব চৌধুরীর মতো অসাধারণ মানুষেরা হোঁচট খেয়ে ধুলোয় পতিত হয়ে আমৃত্যু মুখ থুবড়ে পড়ে থাকবে—সৃষ্টির একি বেতাল লীলা! শাওন মানতে পারে না। তার মন ভার হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন গল্প চোখে দেখা নীল কণ্ঠ

রুদ্র শাওন একটি প্রশ্নের উত্তর হাতড়িয়ে বহুদূর পথ পাড়ি দিয়েছে। কেন মজু মামার বিরাগী জীবন? অবশেষে জানতে পারে, ছাত্রাবস্থায় তিনি প্রেমে পড়েন। সামাজিক নির্বন্ধে সেটি ছিল অসম প্রেম। কিন্তু তাঁদের বিহগ মন তথাকথিত সংস্কার উপেক্ষা করে পানকৌড়ির মতো জললহরি তুলে ভাসতে চেয়েছিল। সামাজিক রীতি-নিগড় তাঁদের অবারিত হতে দেয়নি। পালিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। পারেননি। মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে হয়। মজু মামা নিখোঁজ হন।

প্রায় বছর দশেক পর মজু মামার ছোট ভাই কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে ফকির লালন শাহের মাজারে সন্ন্যাসীদের আখড়ায় তাঁকে খুঁজে পান। তাঁকে চেনার উপায় ছিল না। কারণ, তিনি তখন জটাচীরধারী সন্ন্যাস। মুখে দশ বছরের না-মুণ্ডিত দাঁড়ি-গোঁফ। রীতিমতো সিদ্ধ সাধক। তবুও তাঁর ছোট ভাই ঠিকই চিনেছিলেন।মজু মামাকে জোর জবরদস্তি করে আখড়া থেকে ফিরিয়ে আনা হয় এবং চুল-দাড়ি-গোঁফ কামিয়ে ভদ্র সমাজের মানুষ হিসেবে সুবিন্যস্ত করা হয়। তাঁর মা যতদিন বেঁচে ছিলেন, ছেলেকে আর চোখের আড়াল হতে দেননি।

রুদ্র শাওন মজু মামাকে পরিশীলিত অবস্থায়ই দেখেছে। কে বলবে মানুষটি দীর্ঘ দশ বছর সন্ন্যাস জীবনের তাপস ছিলেন! শাওন অনেকটাই মজু মামার মতো। পথে পথে ঘোরে। তার কৌতূহলও সীমাহীন। সে ঠিকই মজু মামার প্রেমিকার সন্ধান বের করে এবং একদিন তাঁর মুখোমুখি হয়।

আরও পড়ুন অশরীরী আত্মা

ভদ্রমহিলা মধ্য পঞ্চাশেও কী দারুণ ঋজু এবং সুদর্শনা। অটল ব্যক্তিত্বের অঙ্কিত প্রতিরূপ। তাঁর ভাসা ভাসা চোখ দুটি কী এক কষ্টে অঘোর বৃষ্টির জলে মগ্ন! শাওন একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে দীর্ঘ ছয়মাস ধরে পাগলের মতো তাঁকে খুঁজেছে। কোনো মানে নেই, তবুও।
“আপনি কি সুখী?”
ভদ্রমহিলা স্থির দৃষ্টিতে শাওনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কী খোঁজেন শাওন জানে না। তবে তাঁর চোখে অনুক্ত বেদনার জলভ্রমি ঠিকই দেখতে পায়।
তিনি বলেন,
“তুমি কে আমি জানি না। তবে আপনের চেয়েও আপন একজনকে জানো বলে আন্দাজ করি। পৃথিবীতে কিছুই অনশ্বর নয়। অনিত্য এইখানে অতি অল্প সময়ের জন্য এসেও কত না তাড়ন! রীতি শৃঙ্খলের জট। সেই জটিল নিয়মের গিঁটে আটকা পড়ে হাজারো মানুষ দীর্ঘশ্বাস সঙ্গী করে বাঁচে। আসলে বাঁচে না। একেকটি মাটির শব। তাঁকে বলো, আমিও বেঁচে নেই। ওপার যদি থাকে, সেখানে দেখা হবে।”

ভদ্রমহিলা বড় শ্বাস ফেলেন। রুদ্র শাওন হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে ত্বরিত দূরে সরে যেতে চায়। তার চোখভর্তি জল।

আরও পড়ুন কপিশ নয়ন-
১ম পর্ব
৩য় পর্ব
শেষ পর্ব

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

কপিশ নয়ন (২য় পর্ব)

Facebook Comments Box

কবি ও কথাশিল্পী আবু জাফর খান নিবিড় অন্তর অনুভবে প্রত্যহ ঘটে চলা নানান ঘটনা, জীবনের গতি প্রকৃতি, বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি, ব্যক্তিক দহনের সামষ্টিক যন্ত্রণা তুলে আনেন নান্দনিক উপলব্ধির নিপুণ উপস্থাপনায়। তাঁর লেখায় ধ্বনিত হয় বিবেক কথনের অকৃত্রিম প্রতিভাষা। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: পাথর সিঁড়িতে সূর্যাস্ত বাসনা, অনির্বেয় আকাঙ্ক্ষায় পুড়ি, যে আগুনে মন পোড়ে, যূপকাঠে যুবক, একটি জিজ্ঞাসাচিহ্নের ভেতর, সোনালী ধানফুল, রাতভর শিমুল ফোটে, বীজঠোঁটে রক্তদ্রোণ ফুল, স্যন্দিত বরফের কান্না, প্রত্নপাথর মায়া; গল্পগ্রন্থ: মাধবী নিশীথিনী, পথে পথে রক্ত জবা, উপন্যাস: মেখলায় ম্যাগনোলিয়ার মুখ, জ্যোৎস্নায় ফুল ফোটার শব্দ, কুমারীর অনন্তবাসনা, জ্যোৎস্নাবাসর, মেঘের বসন্তদিন, রূপোলী হাওয়ার রাত, একাত্তরের ভোর, তৃতীয় ছায়া। তিনি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১শে জানুয়ারি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত আহম্মদপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। 

error: Content is protected !!