ওরা তেরোজন (১ম পর্ব)
ওরা তেরোজন (১ম পর্ব)
শিশু আর ক্ষমতালোভী নির্বোধের হাতে অস্ত্র বা ক্ষমতা থাকলে তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। তার খেয়াল খুশির অন্তরালে থাকে একান্তই ব্যক্তিস্বার্থ। ভারসাম্য হারিয়ে উন্মাদ বিবেকের পিঠে সওয়ার তার অর্বাচীন অভিলাষের দীঘল স্বপ্নচারিতা। মহাকালের অপ্রতিরোধ্য বহমান স্রোতে জগত জীবনের সবকিছুই অসহায়। ক্ষণিকের আস্ফালন আর লুকোচুরি যেন কচুপত্রে মুক্তা সদৃশ শিশির বিন্দু। পৃথিবীর কোনো দম্ভই স্থায়িত্ব বা প্রশংসিত হয়নি, হবেও না।
পদ্মা-মেঘনার গর্ভে যে অঞ্চল বিলীন হয়, তা আবার কালচক্রে চর হিসেবে জেগে ওঠে। আবার বিলীন হয়। এ যেন প্রমত্তা নদীর স্বৈরাচারী স্বভাব। জেগে ওঠা বুকে আশ্রয় নেয় লাঠিয়াল স্বভাবের লোকগুলো। কিছু ভূমিহীন অসহায় লোকও বিশেষ কারণে আশ্রয় নেয়। বেশিরভাগই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত । এদের প্রজন্ম যারা শিক্ষার আলোয় আলোকিত, তারা অনেকটাই সুশীল সামাজিক বলে পরিগণিত হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশ থকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। ফলে সন্ত্রাসীরা তাদের অভয়ারণ্য হিসেবে এসব অঞ্চল বেছে নেয়। অস্ত্রের মুখে অধিবাসীদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে বাধ্য করে। অনেকেই বাধ্য হয়ে তাদের হয়ে যায়।
সুশীল সমাজের কিছু অশীল তাদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করে। এমনকি গ্রামের চৌকিদার পর্যন্ত মাসিক অর্থের বিনিময়ে প্রশাসনের অনেক খবরাখবর তাদের সাথে বিনিময় করে। পুলিশের উপস্থিতি সম্পর্কে তারা তাদেরকে জানিয়ে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখে তারেক সাহেব এর ভোর রাতের ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি প্রায়ই এমন দুঃস্বপ্ন দেখেন। ইদানীং তার চলাফেলা স্বাভাবিক মানুষের মত নয়। কেউ কেউ আজকাল তাকে আড়ালে পাগল বলে থাকেন
আরও পড়ুন গল্প জারজ
সকালে নাস্তার সময় তার স্ত্রী মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
──আপনি দেখছি, আজ কয়েক দিন খুব চিন্তা করেন। মনে মনে কী যেন ভাবেন। আমাকে বলুন তো, একা একা কি ভাবেন?
──না রে বউ কিছু না।
──বললেই হল। আমি বুঝি না মনে করছেন? নিজেকে আড়াল করবার কি আছে?
── ঠিক আড়াল না। মনের ভেতরে এক ধরনের ভয় কাজ করে।
──ভয় বলতে কিছু নেই। সাহস করে ভয়ের সামনে দাঁড়ালে ভয় নিজেই পালিয়ে যায়।
──শোনো তাহলে বলি,
লাকা চুচবা অনূর্ধ্ব পঁচিশ বছরের এসএসসি পাস এক যুবক। জমিজমা নেই। সামান্য বসত বাড়ি, এই তার সম্বল। বিবাহ করে এক ছেলের জনক হয়েছে। বেকারত্ব তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। বেকারত্ব থেকে সে মুক্তি চাইলেও কর্ম পায় না। সঙ্গদোষে পানিতে লোহা ভাসে অবস্থা। রিক্তদলে যোগ দিয়ে অপরাধ জগতে নাম লেখায়। এটা এমন এক জগত যেখানে জীবিত হয়ে নাম লেখানো যায়; কিন্তু ভালো হতে চাইলে তাকে লাশ হয়ে ফিরতে হয়। যাকে ধরে তাকে সর্বস্বান্ত করাই তাদের কাজ।
──কী বলেন, তাই নাকি?
──হ্যাঁ, আমি ঠিক বলছি।
আরও পড়ুন গল্প রাজামারা
ওদের বিভিন্ন কর্ম পরিকল্পনা ছিল-বেগতিক । প্রাগৈতিহাসিকভাবে ইহধাম থেকে জীবনের লীলা সাঙ্গ করতেও ওদের হৃদয়ে ন্যূনতম মায়ার উদ্রেক হয় না। হাসতে হাসতে বর্বরোচিত কায়দায় শেষ করে দেয় কাকুতি মিনতি ভরা পার্থিব জীবনটা। নিথর দেহ পাশবিক ভাবে ফেলে দেয় নদীতে, জঙ্গলে অথবা পুঁতে রাখে মাটিতে। আপনজন বুঝতেও পারে না কী হয়েছে তার প্রিয় মানুষটির।
লাকা চুচবা চিন্তা করে এ আমি কী করছি? কেন অমানুষ হয়ে গেলাম? মিশ্রণ মেশিনের মতো নানাবিধ চিন্তা তাকে তোলপাড় করে তোলে। সে ভালো হতে চায়। কিন্তু ভালো হওয়াটা নিক্ষিপ্ত তীর ফিরে আসার মতই অসাধ্য ব্যাপার। লাকা চুচবা ওদের সাথে মিলামিশা এবং যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ এক গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী এক লিডার কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তার বাড়িতে হাজির। লিডার,
──কীরে ব্যাটা? পীর সাহেব হয়ে গেছিস বুঝি? অস্ত্র জমা দে। সাধুগিরি দেখাচ্ছিস?
──আমার কাছে তো অস্ত্র নাই।
──অস্ত্র নাই বললেই হয়? হয় অস্ত্র জমা দিবি, নচেৎ মরার জন্য প্রস্তুত হ।
──তুই আমার মারবি? দেখবো তোর বুকের কত পাটা।
ওরা ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে আসে। লাকা চুচবা ভাবে, ওরা আমাকে রেহাই দিবে না। বিকল্প রাস্তা চিন্তা করে। সে যোগ দেয় আরও ভয়ঙ্কর নকশালে। বিলগাজনার দুর্গম এলাকায় ওদের বীরোচিত পদচারণা।
আরও পড়ুন ওরা তেরোজন গল্পের-
২য় পর্ব
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
ওরা তেরোজন (১ম পর্ব)