এসেছি-স্বাধীনতা-সাথে-করে
কবিতা,  খলিফা আশরাফ,  সাহিত্য

এসেছি স্বাধীনতা সাথে করে, তখন মানুষ মানুষ ছিলো না

এসেছি স্বাধীনতা সাথে করে

খলিফা আশরাফ

 

আদিগন্ত প্লাবিত রক্তজল মাড়িয়ে
তুমি যখন দাঁড়ালে সন্মুখে,
তখন তোমার প্রদীপ্ত চোখে
কনকোজ্জ্বল আনন্দ-জ্যোতি খেলা করছে,
স্থির অচঞ্চল তুমি গভীর প্রত্যয়ে,

তোমার হাতে মুখে সমস্ত শরীরে রক্তের আলপনা
সার্টে, লুঙ্গিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে লালের জমাট কারুণ্য,
মাংস ভেদ করা গুলির ক্ষত চিহ্ন তোমার দক্ষিণ বাহুতে
আরক্ত কানের ছেঁড়া লতিটা অসহায় দুলছে উত্তাল হাওয়ায়,
তোমার দু’পা বেয়ে তখনও রক্তের ঝর্ণা-ধারা,
অথচ কি আশ্চর্য
রক্তস্নাত মুখে তখনও তুমি অবলীলায় হাসছো অমলিন।

তোমার শরীরে হাজার বছরের সৌরভময় পলিমাটির ঘ্রণ
শর্ষে ফুলের সুবর্ণ রেনু দ্যুতি ছড়াচ্ছে চোখের পাতায়
প্রশস্ত কপালে শ্যামল বাংলার অপার নিসর্গঅটুট প্রোজ্জ্বল,
তোমার রক্ত-ক্লিষ্ট হাতে লাল-সবুজের দুলছে পতাকা
তুমি অবিস্মরণীয় কণ্ঠে প্রগাঢ় উচ্চারণ বললে,
“আমি মুক্তিযোদ্ধা
এসেছি স্বাধীনতা সাথে করে”।

আরও পড়ুন কবি খলিফা আশরাফের কবিতা-
মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু নেই
চাইনি এমন স্বদেশ

 

তখন মানুষ মানুষ ছিলো না

তখন সন্ত্রস্ত শহর ছিলো
অবরুদ্ধ নগরী, গ্রাম-গঞ্জ, হাটে-বাটে
মৃত্যু-ভয় সেঁটে ছিলো জীবনে জীবনে প্রতিটি প্রহরে,
লাশের পাহাড় ছিলো পায়ে পায়ে ছড়ানো সর্বত্র
অলিতে গলিতে,
সুবাতাস থমকে ছিলো
উৎকট বারুদের গন্ধ মেখে গায়ে,
তখন হিংস্র-উন্মত্ত ছিলো হায়েনা শকুন, পিশাচের দল
আর
জলপাই রং যুদ্ধ-যান সব সগর্জনে মৃত্যু-দূত হোত
যখন তখন,

সে সময় কবিতা ছিলো না
সঙ্গীতের সুরেলা কণ্ঠে প্রোথিত ছিলো আমুল বেয়োনেট
হৃদয়ের বোধিতল হতে
নারকীয় বলাৎকারে সমূলে উৎপাটিত ছিলো নান্দনিক-বিভা,
তখন সৌরভ ছিলো না কোন পুষ্প-কাননে
ফুলে ফুলে ছেয়ে ছিলো মৃত্যুর ঘ্রান,
তখন প্রেম ছিলো নাকো
কোমল অনুভূতির সুরম্য গহবরে ছিলো বিভৎস ধ্বংসযজ্ঞ
সবুজ আকুতির অসংখ্য নরক-কবর,
সুনন্দ স্নেহের সাগরে ছিলো অপার বিষাদ উন্মাতাল বেদনা-কল্লোল,

তখন জীবনে জীবন ছিলো না
শুধু বিনাশের পয়গাম ছিলো প্রতি পলে পলে,
তখন সভ্যতা ছিলো না, ছিলো না সুন্দর
যান্তব-দানব সব উন্মত্ত ছিলো মৃত্যু হাতে করে,
আশুরিক প্রলয় ছিলো অস্ত্রের ভাষায়
ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞ ছিলো, লাশের মিছিল,
শ্যামল পেলব ভুমি রক্তের লালে ছিলো নরক-বিশাল,

তখন মানুষেরা মানুষ ছিলো না।
পশুরাই শাসক ছিলো নির্লজ্জ হায়েনা কুকুর
তখন সময় ছিলো উনিশ শ’ একাত্তুর।

আরও পড়ুন কবিতা-
সাবাশ বাংলাদশ
তিলোত্তমা বাংলাদেশ
লিপিকার আমিই তোমার

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

এসেছি স্বাধীনতা সাথে করে

Facebook Comments Box

খলিফা আশরাফ জীবন ঘনিষ্ঠ একজন কবি ও গল্পকার। তাঁর লেখায় মূর্ত হয়ে ওঠে সমসাময়িক কাল, মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিকতার বিপর্যয় এবং মানুষের অভাবিত সার্থলোলুপতার ক্লিষ্ট চিত্র। তিনি বৈরী সময়কে গভীর ব্যঞ্জনায় অনুপম রূপায়ন করেন তাঁর লেখায়, সামাজিক অন্যায় অসঙ্গতি এবং নির্মমতার কারুণ্য ফুটিয়ে তোলেন অন্তর্গত তীক্ষ্ম অনুসন্ধিৎসায়। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: বিপরীত করতলে, কালানলে অহর্নিশ, অস্তিত্বে লোবানের ঘ্রাণ; গল্পগ্রন্থ: বিল্লা রাজাকার ও সেই ছেলেটি, অগ্নিঝড়া একাত্তুর, একাত্তরের মোমেনা, পাথরে শৈবাল খেলে; ছড়াগ্ৰন্থ: ভুতুড়ে হাওয়া, কাটুশ-কুটুশ। তিনি  ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। 

error: Content is protected !!