একুশ-মানে
কবিতা,  জাহাঙ্গীর পানু,  সাহিত্য

একুশ মানে, দুয়ারে একুশ

একুশ মানে
জাহাঙ্গীর পানু

একুশ মানে –
ফাগুন মাসের ঠান্ডা হাওয়ায়
তপ্ত মনের উচ্ছাস।
বাংলা মায়ের দামাল ছেলের
বীরত্বগাঁথা উপন্যাস।

একুশ মানে –
কৃষকের মুখের হাসি
স্বপ্নবোনা সোনার মাঠ।
নদীতটের বটতলার
বিকিকিনির গঞ্জ হাট।

একুশ মানে –
কিশোরীর মলিন ঠোঁটে
মুক্ত আলোর বিচ্ছুরণ।
সন্ধেবেলা পড়তে বসা
খোকার কণ্ঠের উচ্চারণ।

একুশ মানে –
পাতা ঝরা শেষ বিকেলের
মুক্ত ধরার প্রাণ।
মধুর সুরে গেয়ে যাওয়া
কোকিল পাখির গান।

একুশ মানে –
শিমুল পলাশ কৃষ্ণচূড়ার
লাল বর্ণে ধারণ।
রাজপথে দামাল ছেলের
রক্তমাখা বসন।

একুশ মানে –
নদীর বুকে মাঝির কণ্ঠে
ভাটিয়ালি সুর।
উর্দুই শুধু রাষ্ট্র ভাষার
দম্ভ ভেঙে চুর।

একুশ মানে –
আঞ্চলিকতার মধুর সুরে
বাঙলা মায়ের বকুনি।
হলুদ বরণ গ্রাম্য বধুর
কাজল চোখের চাহনি।

একুশ মানে –
দীপ্ত চোখে এগিয়ে যাওয়া
স্বাধীনতার স্বপ্নরথ।
আসবে একদিন স্বাধীনতা
বীজ বপনের শুরুর পথ।

 

দুয়ারে একুশ

শুকনো গাছের ডালে আজ কচিপাতার সমাহার
পলাশ ফুলের দ্বাদশী পাপড়িগুলো আজ
সুরভিত যৌবন মেলে ধরার অপেক্ষার প্রহর গুনছে
কৃষ্ণচূড়ার উঠন্ত কলিগুলো সবে বণর্মালার রূপ ধারণ করেছে।

সরিষা ক্ষেতের হলুদ বনে প্রজাপতির ডানায়
সালাম-বরকতের সংগ্রামী চেহারার ছবি ভেসে ওঠে।
বসন্তের পুবাল হাওয়ায় কৃষ্ণচূড়া আর পলাশের
আগুন রঙে দেখা যায় রফিক-শফিকের তাজা রক্তমাখা শহিদের প্রতিচ্ছবি।

কাকডাকা ভোরে শিমুলের শাখায় পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর নগ্ন পায়ে
গ্রামের মেঠো পথে হাটা খোকার নগ্ন পায়ের শব্দে ভেসে আসছে প্রভাতফেরি আবহ।
সন্ধেবেলা শিশুর কণ্ঠে ভেসে আসে রক্তমাখা বর্ণমালা সুর
স্বরে অ স্বরে আ হ্রস্ব ই দীর্ঘ ই।

গভীর রাতে কিশোর-কিশোরীর কণ্ঠে ভেসে আসে গীতিকবিতা আবৃত্তি
“মোদের গরব মোদের আশা
আ-মরি বাংলা ভাষা।”
শোকাহত হৃদয় আপন মনে গেয়ে ওঠে
সেই কালজয়ী সুর –
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।”

আরও পড়ুন কবিতা-  
একুশ তুমি
ভাষা শহিদ স্মরণে
কলকাকলি

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

Facebook Comments Box

কবি জাহাঙ্গীর পানু—এক নিরন্তর পথিক, যাঁর কলম চলে জীবনের বিভিন্ন বাঁকে। তাঁর লেখালেখির কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই; সময়, প্রাসঙ্গিকতা এবং অন্তরের আকর্ষণই তাঁকে পথ দেখায়। তিনি শব্দের মাঝেই খুঁজে নেন জীবনের গভীরতাকে, যেখানে প্রতিফলিত হয় তাঁর অনুভূতির মগ্নজগৎ। তাঁর সৃষ্টিকর্মে গ্রামীণ জীবনের স্নিগ্ধতা, প্রকৃতির মমতা, আর মানুষের অন্তর্লীন আবেগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কখনো তাঁর রচনায় দেখা মেলে গ্রামবাংলার উর্বর মাটির টান, কখনোবা সংস্কৃতির রঙিন বৈচিত্র্য। প্রতিটি লেখায় তিনি সময়ের চিহ্ন ধরে জীবনের মায়াজাল বুনে চলেন। তিনি নিয়মিত লিখছেন ‘আমাদের সুজানগর’ ওয়েব ম্যাগাজিনে, যেখানে তাঁর লেখাগুলোর মাধ্যমে পাঠক খুঁজে পান নতুন এক ভাবনার দিগন্ত। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “বিষণ্ণতার নীল চাদর” এক অনন্য সংকলন, যেখানে বিষণ্ণতার নীল ছায়ায় ঢাকা জীবনের নানা রূপ, অনুভূতি আর প্রতিফলন মূর্ত হয়ে উঠেছে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে জন্ম নেওয়া কবি জাহাঙ্গীর পানু প্রকৃতির স্নেহছায়ায় বেড়ে ওঠা এক সৃষ্টিশীল কবি। তাঁর লেখায় আজও মেলে সেই মাটির গন্ধ আর শেকড়ের টান।

error: Content is protected !!