একুশ বছর পর
একুশ বছর পর
একুশ বছর পর সেদিন রাতে
তোমার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হলো।
তুমি ছিলে সিঁড়ি বারান্দায় বসা,
মেয়েদের মাঝে গল্পে মশগুল।
বিদ্যুতের আলোটা ঠিকরে পড়ছিল বার বার
তোমার সুন্দর মুখের উপর।
পিছন ফিরে বসেছিলে কিছুটা সামনে ঝুঁকে।
বার বার মন বলছিল তুমিই সে,
যাকে একটি বারের জন্যও দেখিনি একুশটি বছর।
দুরু দুরু বুকে ভীরু পদক্ষেপে
একটু একটু করে এগুলাম,
ঠিক তোমার পিছনটায়।
বুকের মধ্যে হঠাৎ কেমন যেনো করে উঠল,
হার্ট বিটটাও বেড়ে গেল অনেক গুনে।
ডাকব কি ডাকব না, এমনি করে
দ্বিধাহীনতায় ভুগছিলাম অনেকক্ষণ ধরে।
তারপর শত ভাগ নিশ্চিত হয়েই
ডাক দিলাম তোমার নাম ধরে।
শুনলে না প্রথমটায় বুঝতে পারলাম।
একেবারে মশগুল মেয়েলি আড্ডায়।
আবার ডাকলাম কিছুটা ভীত স্বরে,
এবার বোধ করি স্পষ্টই শুনতে পেলে
আমার সে ডাক।
না হলে পিছন ফিরে তাকাবে কেন?
এতদিনের পুরনো কণ্ঠ
পরিচিতি পেতে সময় নেয়নি মোটেও।
বলে উঠলে, ‘ভাই’ কেমন আছেন?
সৌজন্য রক্ষার সামান্য প্রয়াস মাত্র।
পাশের বাড়ির বৈদ্যুতিক বাতির আলোটা
মুখের উপর স্পষ্টই গিয়ে পড়ছিল।
হঠাৎ চমকে উঠলাম মুখখানা দেখে,
বিশ্বাসই হয়নি প্রথম প্রথম।
অবশ্য কণ্ঠস্বর ভেঙ্গে দিল সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব।
ভরসা পাচ্ছিলাম না মোটেই,
অথচ যার পর সব কিছুই ভরসা করতে পারতাম
নিশ্চিন্তে এক সময়।
সেই আগেকার সৌন্দর্য কোথায় চলে গেছে-
অনেকটাই ভাটা পড়ে গেছে সেই জ্বলন্ত যৌবনটায়-
মনটা হু হু করে কেঁদে উঠলো মুহূর্তেই।
কেন তোমার এ দশা?
কেন এত বিমলিন হয়ে গেছো তুমি?
উত্তরটা খুঁজে পেতে খুব একটা সময় লাগেনি আমার।
ভাবলাম, আমিইতো দায়ী এ সবের জন্য-
তাহলে কেন এত প্রশ্ন করি বার বার?
প্রায় ঘন্টা দেড়েক চলল না বলা কথার গল্প,
একুশ বছর আগে যা কখনই সাহস করে বলতে পরিনি আমি।
সেই না বলা কথাগুলো আজ
এক নিঃশ্বাসেই বলে দিলাম অবলীলায়।
লাভ কিছুই হলো না আমার,
বরং বুকের ব্যথাটাই বেড়ে গেল অনেক গুন।
কিন্তু, আমি যা পেলাম তা হিমালয়ের চেয়েও অনেক বড়।
সময়ের প্রয়োজনে পথ ধরতে হলো দুজনকেই।
বিশ্বাস কর, সে রাতে আর ঘুমই হয়নি আমার।
বৃথাই কত ভাবনা ভাবলাম সেদিনের সে রাতে।
স্বপ্নেও দেখলাম তোমাদের সবাইকে।
যা ভাববার নয় তাও ভাবি অবুঝের মত-
তবে শুধু এটুকুই বলি ভালো থেকো-
এভাবেই তোমাকে দেখে যাব
দূর থেকে বার বার এসে।
আরও পড়ুন কবিতা-
পথের বাঁকে
মরা নদী
অপেক্ষা
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
একুশ বছর পর



