উপলব্ধি
উপলব্ধি
এ কে আজাদ দুলাল
বেশ ক’দিন ধরে তাহের সাহেবের মনটা ভাল যাচ্ছে না। অল্পতেই মেজাজটা বিগড়ে যায়। সামাজিক অবক্ষয় দিন দিন বেড়েই চলেছে। করোনার আক্রমণেএমনিতে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। আবার চলছে মুরুব্বী দেশগুলোর টিকা নিয়ে ভূ-রাজনীতি। মৃত্যুর হার দিন দিন লাফিয়ে উর্ধ্বগতির দিকে চলেছে। এর ভেতরে এক শ্রেণির মানুষ দুর্নীতিকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন টিভি আর খবর কাগজে দুর্নীতি, নারী ধর্ষণ, খুন-খারাবীর খবর প্রচার হচ্ছে। ছেলে- মেয়েদের লেখা পড়া বন্ধ। পাবলিক পরীক্ষা সময় মত নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ সব চিন্তাগুলো তাহের সাহেবকে রীতিমত বিচলিত করে তুলেছে। জীবন সায়াহ্নে এসে আর কত কি দেখতে হবে কে জানে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কি হবে।
দুদিন হলো পার্কে হাঁটতে বের হচ্ছেন না। সাধারণত তিনি বিকেলেই বেশি হাঁটেন।মাঝে মধ্যে সকালে হেঁটে থাকেন। আজ সকালে ভেবে রেখেছেন বিকেলে পার্কে নয় অন্য কোথাও এবং মুক্ত এলাকায়। সাজানো- গোছানো পরিচ্ছন্ন অভিজাত পার্কে নয়। প্রতিদিন তো পরিচিত লোকজনের সাথে সাতপাকের মত হাঁটা হয়। ভাল না লাগলেও তবুও হাঁটতে হয় অনেকটাই মনের বিরুদ্ধে। একা একা হেঁটে আনন্দ পাওয়া যায় না। চার- পাঁচ জন এক সাথে হাঁটলে সময়ও যায় আর গল্পও করা যায়। সবাই ভদ্র এবং অভিজাত শ্রেণির মানুষ। কথা -বার্তা বুনিয়াদী। অধিকাংশ ব্যবসায়ী অথবা অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা। ভাবটা এখন রয়ে গেছে। তাদের জন্যই গড়ে উঠেছে সুরক্ষিত মাঠ। সব বয়সী পুরুষ, মহিলা হেঁটে থাকেন। চলে নানান ধরণের গল্প-সল্প। তাহের সাহেব তাদেরই একজন। তবে তিনি একটু কম কথা বলেন। আবার সবার কথাবার্তা তার পছন্দ হয় না।
অনেকের কথাবার্তার ভেতরে আত্ম অহংকার ফুটে উঠে। মনে হয় তারা গ্রাম চেনেন না। অথচ তার পুর্বাপুরুষ গ্রাম বাঙলার মানুষ ছিল। অনেকে হালে লেখাপড়া শিখে বিদ্বান হয়ে ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়িয়ে আর একধাপ এগিয়ে গেছে। মাঝে মাঝে তাহের সাহেবের মনটা খারাপ হয়ে উঠে। কি আর করবেন। তার বয়স হয়েছে। হাঁটাহাঁটি না করলে শরীরটা অকেজো হয়ে যাবে। তাই বিকেলটা এদের সাথে হেঁটে সময়টা ব্যয় করেন। কিন্তু আজকের সময়টা একটু অন্যভাবে কাটাতে চাইছেন।
আরও পড়ুন গল্প হাইয়া আলাল ফালাহ
বাসা হতে সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে বের হলেন তাহের সাহেব। বেশ কিছু খুচরা টাকা আর মোবাইল ফোনটা এবং ছোট ছাতাটা সঙ্গে নিতে ভুল করলেন না। আষাঢ়ে ঝকমকে বিকেলটা। বিক্ষিপ্তভাবে মেঘমালা আকাশে খেলা করছে। শৈশবে বর্ষাকালে গ্রামে এ রকম দৃশ্য দেখেছে। চমৎকার বিকেলটা। রোদের প্রখরতা অতটা নেই।নরম চাহনি সুর্য মামার। বাসা হতে বের হয়ে সোজা চলে গেলেন রেল লাইনের পশ্চিম পাশে। কোভিড-১৯ এর ঠ্যাঁলায় রেল চলাচল কমে গিয়েছে। তাই রেল লাইনের ধার দিয়ে হাঁটার জন্য মন স্থির করে নিয়েছেন। সোজা উত্তর দিকে হাঁটা শুরু করলেন।
এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখেননি তাহের সাহেব। গত পনের- ষোল বছর অভিজাত এলাকায় বাস করে আসছেন। কিন্তু এমন সুন্দর দৃশ্যবলী অবলোকন করেন নি। বিভিন্ন ধরণের মানুষ রেল লাইনের ওপর বসে আছে। আবার বিচ্ছন্নভাবে চলাফেরা করছে। একেই বলে ব্যক্তি স্বাধীনতা।রেল লাইনের ওপর বসে গল্প করছে। তার মত কেউ কেউ হাঁটছে। আবার জোড়ায় জোড়ায় ছেলে- মেয়েরা বসে আছে। এ যেন অন্য এক জগৎ।অভিজাত এলাকায় সবুজ মাঠ হার মানায়। চারিদিকে ওয়াল ঘেরা সুরক্ষিত হাঁটার মাঠ নয়। ফুলের সমাহার নেই।কর্তৃপক্ষের নির্দেশমালা মোড়ে মোড়ে লেখা নেই। নিয়ম- কানন বালাই নেই।সবাই বাঁধনহারা।
স্বাধীনভাবে সবাই হাঁটাহাঁটি করছে। কিছু দুর গিয়ে চিনাবাদাম কিনলেন। মাঠে আবার এগুলো খাওয়া নিষেধ। চিনাবাদাম খেতে খেতে হেঁটে চলেছেন। আজ সহজে শরীরে ক্লান্তি আসছে না। বিশ মিনিট পথ হাঁটা হয়ে গেছে।আর একটু সামনের দিকে যেতে হবে।দুরে বেশ কিছু লোকজন চারদিকে কি যেন ঘিরে রেখেছে। দ্রুত হেঁটে চলেছেন তাহের সাহেব।সময় বেশি হাতে নেই। ফিরতে হবে সন্ধ্যার আগেই। জটালোর কাছে পোঁছেতে ভেসে এলো লালনের গান।আহা। কি সুন্দর গানের সুর! প্রাণ জুড়িয়ে যায়। ভীড় ঠেঁলে দেখে, মধ্যম বয়সী একজন সাধু মন-প্রাণ উজার করে গায়ছে। একটা দশ-বারো বছরের বাচ্চা মেয়ে সবার কাছে সাহায্যের হাত পাতছে।
আরও পড়ুন গল্প লালু
এখানকার লোকজন বড়ই দয়ালু। পকেটে সামন্য যা আছে হৃদয় উজার করে দান করে যাচ্ছে। তাহের সাহেব একটু লজ্জা পেয়ে গেলেন। এদের চেয়ে একটু বেশি দেয়া দরকার। কিন্তু রিক্সাভাড়া কত লাগবে তা তার আন্দাজ নেই। হয়ত ষাট- সত্তর তো লাগতে পারে। তাহলে বাকী ত্রিশ টাকা।টাকাটা হাতে নিয়ে গোপনে মেয়েটির হাতে গুঁজে দিয়ে কেটে পড়লেন। মান-সম্মানের ব্যাপার। একটা ছেলের কাছ হতে জেনে নিলেন সেক্টরে যাওয়ার ভাল রাস্তা কোন দিকে।ছেলেটি আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে কেটে পড়লো।
তাহের সাহেব ভাবছেন, করোনা এখানে পরাজিত। যে মানুষগুলো আজ দেখলেন তারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের আগুনে তেরি। স্যালুট তোমাদের । জায়গায়টা মন্দ না। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। একটু ভেতরে বেশ ক’খানা রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে।সবার চেহারা একবার দেখে নিলেন তাহের সাহেব। এদের ভেতরে একজন রিক্সাওয়ালার পছন্দ হলো। দরদাম মিটিয়ে রিক্সায় চেপে বসলেন। রিক্সাওয়ালা তার নিজের নিয়ন্ত্রণ গতিতে রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছে। তাহের সাহেবের মনে আজ খুব আনন্দ। এমন একটা দিন আর জীবনে আসবে না। সবুজ ঘেরা পার্ক আর পার্কে তথাগত ভদ্র মানুষেরা তাদের অতীত বংশ পরিচয় নিয়ে গর্ববোধ করতে থাক।
আরে বাপু, আমরা তো এ বাঙালার মানুষ। আমরা বাঙালী। তাদের কথা-বার্তায় তাহের সাহের অস্বস্তিবোধ করেন। সবাই যেন এককালে জমিদারের রাজপুত্র ছিলো। ধানের খেত, পাটের খেত এরা কখনো চোখে দেখেনি। আবার বড় গলায় বলে গ্রামের বাড়ীতে বাবা- মার নামে মসজিদ-মাদ্রাসা তৈরি করে দিয়েছে। গরীব- এতিম বাচ্চারা মাদ্রাসায় পড়ে আলেম হবে। অন্যদিকে এদের ছেলে-মেয়েরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে। এদের সাথে আলাপে জানা যায়, তাদের ছেলে- মেয়েরা বিদেশে পড়াশুনা করে।
আরও পড়ুন গল্প সুরেন বাবু
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেউ বিরূপ মন্তব্য করলে তাহের সাহেবের মন আরো বিগড়ে যায়।পঞ্চাশ বছর পরও একশ্রণির নাদান লোকেরা বলে সাত মার্চ শেখ সাহেব স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন না কেন? পাকিদের হাতে ধরা দিলেন কেন আরো কত কি? সবাই মিলেমিশে একসাথে দেশের কাজ করলে অসুবিধা কোথায়? আরে বাপু, তুমি তো সে দিন বোতলে দুধ পান করতে। কার সাথে মিলেমিশে কাজ করবে।যারা এখন একাত্তরকে মেনেই নেয় নি। যাক বাবা,আজকের দিনটা এদের হাত হতে রক্ষা পাওয়া গেল।হঠাৎ রিক্সাওয়ালার ডাকে তাহের সাহেবের চিন্তায় বাধা পরে গেল।
- স্যার, ডানে না বামে।
- ডানে। দুটো বাড়ির পর।
বলতে বলতে রিক্সা বাসার সামনে এসে দাঁড়ালো।
অনেক সময় রিক্সায় বসে থেকে কোমরটা একটু ধরে গেছে। আস্তে আস্তে ডান পা মাটির ওপর রেখে নেমে পড়লেন। ভাড়া ষাট টাকা।পকেট হতে একটা পঞ্চাশ ও বিশ টাকা মিলে সত্তর টাকা রিক্সাওয়ালার হাতে দিলেন। রিক্সাওয়ালা সত্তর টাকা হাতে নিয়ে কি যেন চিন্তা করলো। তারপর তাহের সাহেবের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
-
স্যার, মাফ করবেন। আপনাকে একটা কথা বলতে চাই যদি অনুমতি দেন।
তাহের সাহেব এবার মসিবদে পড়লেন।কি জানি কি বলবে। হয়ত মেয়ের বিয়ে অথবা বৌ অসুস্থ ইত্যাদি।এত রাস্তা তো চুপচাপ রিক্সা চালিয়ে এলো কোন সাড়া শব্দ নেই।বাসা দেখে কি বাড়তি আব্দার করে বসবে নাক। তবুও শুনতে হবে কি বলতে চায়।
-
বেশ বলুন।
তাহের সাহেবের একটা বড় গুণ আছে তিনি সব শ্রেণির লোকের সাথে আপনি করে কথা বলেন।চাকরি জীবনেও এটা বজায় রেখেছিলেন।
-
স্যার, আপনি এই যে এতদুর রাস্তায় এলেন, আমি কি একবারের জন্য জানতে চেয়েছি বামে না ডানে যাব।
-
না, তা বলি নি।
-
তাই বলছি স্যার, রিক্সায় উঠার আগে ভাড়াটা ঠিক করে নিবেন আর কত নম্বর রাস্তা,সেক্টর কত তা রিক্সাওয়ালাকে বলে নিবেন।
-
ধন্যবাদ।
-
স্যার, একটু দাঁড়ান।
আরও পড়ুন দুলাইয়ের জমিদার আজিম চৌধুরী
বলেই রিক্সাওয়ালা জামার বুক হতে একখানা দশ টাকার নোট তাহের সাহেবের সামনে ধরলেন। তাহের সাহেব তাকে সত্তর দিয়েছে। এটা তিনি মন থেকেই দিয়েছেন। তাই বললেন,
-
দেখুন বাড়তি দশ টাকা খুশি হয়ে দিয়েছি।
-
কিন্তু ভাড়া তো ষাট টাকা।
-
চা- বিস্কুট খেয়ে নিবেন।
-
তা হলে চা- বিস্কুট খাওয়ার জন্য।
-
যদি তাই মনে করেন।
আচ্ছা রিক্সাওয়ালার সাথে এত কথা বলা হলো।পরিচয় তো জানা হলো না।
-
ভাই আপনার নাম কি, কোন জেলায় বাড়ী?
রিক্সাওয়ালা তাহের সাহেবের দিকে একটা বিব্রত দৃষ্টিতে তাকালো।মনে হলো প্রশ্নটা তার পছন্দ নয়।প্রায় মিনিট পাঁচেক মাটির দিকে চেয়ে কি যেন ভাবল।তারপর মাথা তুলে বললো,
-
সারা বাংলাদেশ আমার বাড়ী।এই দেশের মানুষ আমি।আমার কোন আলাদা পরিচয় নেই।আমার ঘর- বাড়ী বাংলার মাটির সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে স্যার।নাম জেনেই বা কি করবেন।
-
তবুও জেনে রাখা ভাল।আমার নাম মোঃ আবু তাহের।
-
স্যার, আপনার একটা পরিচয় আছে।এখানে তো একটা সুন্দর পার্ক আছে।ভোর ছয়টা হতে নানান বয়সের পুরুষ-মহিলা হাঁটেন।তাদের মনে আনন্দ দেয়ার জন্য ভেতরে চারিদিকে কি সুন্দর সবুজ গাছ,সারি সারি রঙ- বেরঙের ফুলের গাছ।তাদের সাথে আপনি হাঁটেন,গল্প করেন। তারা অতীত জীবনে চৌদ্দ পুরুষের ইতিহাস শুনায়।আচ্ছা, আপনি কত বছর ঢাকা শহরে বসবাস করে আসছেন।
তাহের সাহেব একটু চিন্তা করলেন লোকটা এত কথা বলছে কেন? তবুও তার কেন যেন আর কিছু জানার আগ্রহ বেড়ে গেল।
-
তা তো পঁয়তাল্লিশ-ছয়চল্লিশ বছর হবেই।
-
এই এলাকায় কত দিন।
-
ষোল-সতের বছর।
-
তার মানে দাঁড়ালো আপনি ত্রিশ বছর ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা বাস করে এখানে বসবাস করছেন।
আরও পড়ুন গল্প তৃতীয় স্বাক্ষী
স্যার, বেকুবিবের মত বেখাপ্পা কথা বলছি মাফ করবেন।পার্কে যাদের সাথে হাঁটেন তাদের কথাবার্তায় অনেক সময় আপনার মন খারাপ হয়ে যেত।তাই আজ রেল লাইন ধার দিয়ে হেঁটে দেখলেন জীবনটা কত সহজ সুন্দর, এদের ভেতরে কোন আত্ম অহংকার নেই।এরা রাতে অভিজাত পালঙ্কে ঘুমায় না। গ্রামে ফেলে আসা অতীতের কথা মনে পড়ে।কিন্তু যাওয়া হয় না।তাই বলে ঢাকা শহর আপনার জন্য নয়।আবার ছাড়তে পারছেন না।
রিক্সাওয়ালা করুন দুটো চোখ তুলে তাহের সাহেবের দিকে তাকালো।চোখের ভেতরে দীর্ঘদিনের ঘৃণা জমে আছে।কাউকে বলার অবকাশ পায়নি।সে আজ বলতে চায়। তাহের সাহেব শুনতে চায়।
-
কিছু বলার থাকলে বলুন।
কিছুক্ষণ নীরব থেকে মাথা তুলে বলতে থাকে,
-
নদী ভাঙ্গনের মানুষ নিঃশেষ হয়ে যায়। নদীর পেটে বিলীন হয়ে যায় তার চৌদ্দ পুরুষের ভিটামাটি। চোখের পানি নদীর পানির সাথে মিশে ফেলে চলে আসে ঢাকা শহরে বস্তিতে। আজ এ বস্তি কাল অন্য বস্তি তারপর একদিন বেওয়ারিশ লাশ। সবশেষ।কিন্তু মানুষ নামে নদী যখন গ্রাস করে তখন তাকে কি বলবেন। আমার চোদ্দ পুরুষের আধাবিঘে জমির ওপর একটা বাড়ী ছিল। ছোট সংসার। বাড়িতে সবজির চাষ করতাম। একটা গাইগরু ছিল। দুধ বিক্রি করতাম পাশের গ্রামে বাজারে। ছোট একটা চায়ের দোকানও ছিল। কোন রকমে ভাল-ভাত খেয়ে দিন চলে যাচ্ছিল। সাধ বাঁধলো শহরে বসবাসরত গ্রামের এক ধনী লোকের। প্রচুর টাকার মালিক। কেমন করে টাকা কামিয়েছে কেউ জানে না। গ্রামে আলীসান বাড়ী-বাগান-পুকুর কি নেই তার। সখ জননেতা হবেন। জনগণের খেদমত করতে চায়। এক শ্রেণির উঠতি বয়সের যুবকদের হাত করে নিয়েছে।
আরও পড়ুন গল্প পরাজিত নাবিক
-
চেয়ারম্যান-মেম্বর দস্তি মানুষ। তার পাড়ায় জনগনের জন্য একটা মসজিদ-মাদ্রাসা তৈরি করা তার জীবনের বড় স্বাদ। জায়গা দরকার। গ্রামে আরো একটা মসজিদ চাই তার।ইজ্জতের ব্যাপার। মাদ্রাসাটা হবে তার মৃত্য বাবা-মার নামে। কি বলবো স্যার, তার ছেলে-মেয়েরা শহরে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে অথচ গ্রামের গরীব মানুষের জন্য মাদ্রাসা। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার কত রকমের ধান্ধা। তার পুকুর পাড়ে উত্তর দিকে নিজের জমি আছে ওটা চলবে না। নজর পড়লো আমার বসতবাড়ীর ওপর। শকুনের নজর যদি একবার গরুর ওপর পড়ে সে গরু বেশি দিন বেঁচে থাকতে পারে না। আমার দশা তাই হয়েছিল। কথা আছে বিত্তশালীদের গুন্ডার অভাব নেই। সব কিছু ঠিক করেই আমার পিছনে লেগেছিল।
-
রাতের অন্ধকারে নকল দলিলে জোড় করে স্বাক্ষর নিয়ে যৎসামান্য টাকা দিয়ে একটা ভাড়া নৌকায় যমুনায় ছেড়ে দিয়েছিল। পরিবারসহ কোথায় যেন নামিয়ে দিয়েছিল মনে নেই। সে তো দশ বছর হবেই।জোয়ান মানুষ সাথে বৌ আর একটা পাঁচ বছরের ছেলে।অনেক কষ্টে ঢাকা শহরে এসেছিলাম।এখনো বেঁচে আছি।সেই হতে চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি ছাড়া।এবার বলুন কোথায় আমার সাকিন।তাই সারা বাংলায় আমার ঘর।আপনি যাদের সাথে বিকেলে -সকালে হাঁটেন তাদেরই মধ্যে সেই বিত্তশালী ছদ্মবেশী আপনাদের বন্ধু হয়ে অহরহ ঘুরে বেরাচ্ছে।কতজন মানুষকে আপনি চেনেন।আমরা রিক্সাওয়ালা তাদের চিনি।স্যার বাবার কাছে যুদ্ধের গল্প শুনেছি।একাত্তর হত্যা হলো পঁচাত্তরে। সব শেষ হয়ে গেল।এখন শুধু ভন্ড- মুখোশধারী ভদ্র লোক।
তাহের সাহেব তাকিয়ে দেখলেন রিক্সাওয়ালার দু’ চোখে অশ্রু ভরে যমুনা হয়ে গেছে।কিছু বলার আগেই রিক্সাওয়ালা স্থান ত্যাগ করার আগে ব্যাঙ্গ সুরে বলে গেল,
-
স্যার, অসৎ আর ভন্ড মানুষদের হাত হতে দেশটাকে বাঁচান।
তাকিয়ে আছেন তাহের সাহেব।তাই তো সারা বাংলাদেশ তার বাড়ি।চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে গেল।একজন আত্মসচেতন মানুষ দশ টাকা বেশি নেয়াটা অন্যায়।আমরা অন্যায়ভাবে প্রতিদিন কত দুর্নীতি করে আসছি, শুধু তাই নয় প্রতিনিয়ত মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছি তার কোন ইয়ত্তা নেই।যার কথা বলে গেলো সেই বিত্তশালী লোকটি হয়ত তো আমাদের সমাজের মুখোশধারী গন্যমান্য ব্যক্তি।আমরা কি তাহলে মিথ্যে কুহেলিকা আচ্ছন্ন সমাজে বাস করছি।কবে হবে আমাদের উপলদ্ধি।
ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
উপলব্ধি