আত্মকথন-১ম-পর্ব
আত্মজীবনী,  ভায়না,  সাহিত্য,  হেমরাজপুর

আত্মকথন (১ম পর্ব)

আত্মকথন (১ম পর্ব)

আদ্যনাথ ঘোষ

 

আমি আদ্যনাথ ঘোষ। নেশা লেখালেখি। মানুষের অন্তরে বসবাস। জন্ম পদ্মা নদীর তীরবর্তী হেমরাজপুর গ্রামে। পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায়। আমি যখন ছোটবেলায় সাতবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি, তখন কবিতা লেখা শুরু করি। সেটা ছিল ১৯৮৪ সাল। ছন্দে ছন্দে লিখতাম। হতো কিনা সেটা বলা মুশকিল। আমার পাশের গ্রামের একটি ছেলে পাবনা শহরে মাঝে মধ্যেই আসত। তার নাম এখন আর বললাম না। তার কাছে একটি কবিতা দিলাম পাবনার একটা পত্রিকায় দেওয়ার জন্য। সে কবিতাটি নিজের নামে পাবনার একটি পত্রিকায় ছাপিয়ে ফেলল। আমি দেখে হতাশ, হতবাক। যাহোক, পরবর্তীতে পাবনা শহরে ১৯৯১ সালে সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে স্নাতক কোর্সে ভর্তি হলাম। ভর্তি হওয়ার পর থেকে দৈনিক পাবনা বার্তা, দৈনিক ইছামতি, দৈনিক নির্ভর ও দৈনিক উত্তর বাংলা ও সাপ্তাহিক নয়া রাজনীতি পত্রিকায় নিয়মিত লিখতাম। এ পত্রিকাগুলোর কাছে আমি অনেক ঋণী। আমাকে লেখালেখিতে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।

ঐ সময় আমার জীবনের সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় কবি ওমর আলী, কবি জয়নুল আবেদীন মাহবুব, লেখক ও সাংবাদিক মোসতাফা সতেজ, এ্যাডভোকেট রণধীশ ভট্টাচার্য, কবি ছিফাত রহমান সনম, বেতার ও টেলিভিশন কণ্ঠশিল্পী ফুলরেণু রায়, নজরুল গীতির কণ্ঠশিল্পী ও আমার ওস্তাদ শফিক উদ্দিন আহমেদ, কবি হোসনে আরা চৌধুরী ও রূপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও কবি মানিক মজুমদার দাদাকে কাছে পাই। এদের সান্নিধ্য আমাকে  চর্চায় অনুপ্রাণিত করে। এসময় বাংলাদেশ কবিতা সংসদ ও উত্তর বাংলা সংস্কৃতি পরিষদের সদস্য হই।

আরও পড়ুন কবি, ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক আনন্দ বাগচী

আমি যখন এমএ তে পড়ি তখন আমার ছোট ভাই অসুস্থ হয়। ওর চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক টাকা পয়সা খরচ ও সময় অতিবাহিত হয়। সুস্থ হতে প্রায় চার বছর লেগে যায়। আমার বাবা অনেক দেনায় পড়ে যায়। আমার বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার ঘোষ ও মাতা নিভা রানী ঘোষ। বাবা, পাবনা জজকোর্টের আইনজীবী সহকারীর কাজ করতেন। কোন কোন দিন একবেলা খেয়েও আমাদের চলতে হত। বাবা পাবনা থেকে বাড়ি যেতেন, তারপর চাউল কিনে আনতেন, এরপর রান্না হত। এভাবেই আমাদের সংসার চলত। আমাদের সংসারটা ছিল অনেক বড়। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোন। বাবা-মা, কাকা-কাকিমা, কাকাতো তিন ভাইবোন ও আমরা মিলে সংসারে সদস্য সংখ্যা ছিল ১৫ জন। এত বড় সংসারের ক্ষুধার জ্বালা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও লেখাপড়া চালানো অনেক দুঃখের ও কষ্টের ছিল। এক কথায় বর্ণনাতীত। কিভাবে এ পর্যন্ত আসলাম সেটা নয় আরেকটি লেখায় বলব। যাহোক ভাই-বোনদের লেখাপড়া ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ২০০০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে আমার লেখালেখি কখন যে বন্ধ হয়ে যায়, আমি টেরও পাইনি।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখ। আমার জীবনের একটা দুর্যোগময় দিন। এ দিনের পর থেকে আমার জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু অর্থাৎ পুনরায় লেখালেখি শুরু। এ দিনে কী হয়েছিল? সেটা পরবর্তীতে আরেকটি লেখায় প্রকাশ করব। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি প্রথম একটা কবিতা লিখে ইছামতি পত্রিকায় দিতে গেলাম। প্রথমেই দেখা পাই, পত্রিকাটির সাহিত্য সম্পাদক ও প্রধান প্রতিবেদক কবি ছিফাত রহমান সনমের সাথে। আমাকে বললেন, দাদা আবার এইপথে আসুন, একসাথে চলি। আজও তাঁর কথা মনে পড়ে। সেই থেকে লেখা চলছে।

আরও পড়ুন  কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক বিমল কুণ্ডু

ইতোমধ্যে নয়টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। পাবনার স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক ইছামতি, দৈনিক সিনসা, দৈনিক বিশ্ববার্তা, দৈনিক জোড় বাংলা, দৈনিক বিপ্লবী সময়, দৈনিক বিবৃতি ও ঢাকার জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ করে দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক আমাদের সময়, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক মানবকণ্ঠ, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক সমকাল, দৈনিক যায় যায় দিন, দৈনিক সময়ের আলো, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ, দৈনিক বাংলাদেশের খবর, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশ হচ্ছে। আমি এ পত্রিকাগেুলোর কাছে ঋণী।

আমার লেখালেখিতে যারা উৎসাহ দিতেন তাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। তাদের মধ্যে বিশেষ করে আমার বাল্য বন্ধু মো. সাইদুল হক, কথাসাহিত্যিক সাইদ হাসান দারা, আমার অগ্রজ সহকর্মী কবি ও প্রাবন্ধিক আজাদ এহতেশাম, কবি মাকিদ হায়দার, কবি অসীম সাহা, কবি ওবায়েদ আকাশ, কবি আলমগীর রেজা চৌধুরী, কবি মজিদ মাহমুদ, কবি হাসান মাহমুদ, কবি সুমন শামস, আমার শিক্ষক বাচিকশিল্পী মো. মোতাহার আলী বিশ্বাস, ছড়াকার অঞ্জন শরীফ, কবি অচিন্ত্য চয়ন, লেখক গাজী মুনছুর আজিজ, আমি যাকে দিদি বলে ডাকি কবি মিলু শামস ও দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিক আমার হাসান স্যার এর নিকট। আমাকে আর একজন কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা জোগায়, তিনি হলেন আইনজীবী ইমরান ভাই।

আমার কবিতা জীবনের অনেক কষ্টের কথা আছে। আমার স্ত্রী অপর্ণা রানী ঘোষ (সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক) আমাকে কবিতা লেখায় উৎসাহ প্রদান করে। তবে মাঝে মধ্যে সংসারের জিনিসপত্র আনতে ভুলে যাই। কবিতা লিখতে লিখতে তোমার মাথাটা গেছে-এ কথা শুনতে হয়। আমি তো মনে করি সব কবির ক্ষেত্রেই হয়তো এ রকম হয়। আমার এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে অনুশ্রী ঘোষ অমৃতা। নবম শ্রেণিতে পড়ে। গান করে। ছেলে আয়ুস্কর ঘোষ আয়ুস। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। গান করে। দু’জনই আবৃত্তিশিল্পী। দু’জনই আমার কবিতাগুলো আবৃত্তি করে। তখন আমি অনুপ্রেরণা পাই। মাঝেমধ্যে আমার স্কুলের ছাত্রীদেরকে দিয়ে আবৃত্তি করাই। মনে তখন খুশির আনন্দ বয়ে যায়।

আরও পড়ুন  কবি ও গল্পকার খলিফা আশরাফ

আমি যখন প্রথম ঢাকার পত্রিকাগুলোতে ইমেইলে ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে লেখা কবিতা পাঠাতাম। এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ, একমাস, দুইমাস চলে যায় পত্রিকার সাহিত্য পাতায় আর লেখা আসে না। কোনো কোনো পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের সাথে মোবাইলে কথা বলতাম, কেউ বলতো কবিতাই হয়নি। আবার কেউ বলতো এগুলো তো রাবীন্দ্রিক ভাষা। আবার কেউ কেউ আবার লেখা পাঠান, বলতেন। দুই একজন অবশ্য বলতেন, লিখে যান। আমার বাল্যবন্ধু মো. সাইদুল হক একটা পত্রিকায় চাকুরী করেন। ও আমার কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা জোগায়। তাকে বলার পর, সেই প্রথম আমার ‘মা’ শিরোনামের একটা কবিতা যুগান্তরে ছাপেন। তাকে এ সময় অনেক শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।

এরপর আসি লিটল ম্যাগাজিন এর কথায়। প্রথমে বাংলাদেশ কবিতা সংসদের সাহিত্য পত্রিকা ও যৌথ কাব্যগ্রন্থে লেখা প্রকাশ হত। এরপর মহিয়সী প্রকাশনার সাহিত্য পত্রিকা, উত্তরণ প্রকাশনার সাহিত্য পত্রিকা, কবি মজিদ মাহমুদের সাহিত্য পত্রিকা, কবি হানিফ রাশেদীন এর সাহিত্য পত্রিকা, জয়তী সাহিত্য পত্রিকা, নতুন এক মাত্রা সাহিত্য পত্রিকা, সাপ্তাহিক পূর্বাপর, দৈনিক আমাদের সময় এর ঈদ সংখ্যা ও বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখা প্রকাশ হয়।

আরও পড়ুন কবি ও কথাশিল্পী ডা. আবু জাফর খান

আমার কবিতার উপর যারা আলোচনা করেছেন, তাদের মধ্যে: কবি ও প্রাবন্ধিক আজাদ এহতেশাম, কথাসাহিত্যিক সাইদ হাসান দারা, কবি ও ছড়াকার অঞ্জন শরীফ, প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ আব্দুর রউফ, ঔপন্যাসিক খান আনোয়ার হোসেন, গল্পকার আতাউল হক মাসুম, কবি ও প্রাবন্ধিক জহুরুল ইসলাম, চলচ্চিত্রের পরিচালক ও ছড়াকার দেওয়ান ওহিদুজ্জামান বাদল, প্রাবন্ধিক মীর্জা মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী, প্রাবন্ধিক মো. কাউসার হোসেন, প্রাবন্ধিক এমরান হোসেন ও প্রাবন্ধিক মামুন রশীদ। এদের সকলের কাছে আমি ঋণী ও কৃতজ্ঞ। এছাড়াও আমার কবিতা লেখার জন্য যাঁরা উৎসাহ দেন তাদের মধ্যে আমার শিক্ষক শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, আমার শিক্ষক কবি ও গীতিকার মো. আব্দুল করিম, কবি ও প্রাবন্ধিক মনোয়ার হোসেন জাহেদী, পাবনা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, ডা. মধুসূদন বিশ্বাস, ফোল্ডার কবিতা এর সম্পাদক কবি ইদ্রিস আলী, কবি রেহানা সুলতানা শিল্পী, কবি জাহাঙ্গীর আলম, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক কে বি এম এম মোসলেহ, লিটল ম্যাগাজিন তূর্যনিনাদ এর সম্পাদক মীর্জা রানা ।

বিশেষভাবে ঋণী যে সমস্ত ব্যক্তি কাছে, তাঁদের নাম না বললে আমি অকৃতজ্ঞ থেকে যাব। তাঁরা হলেন: কবি অসীম সাহা, কবি আলমগীর রেজা চৌধুরী, কবি মাকিদ হায়দার, কবি মজিদ মাহমুদ, কবি ওবায়েদ আকাশ, কবি মুনছুর আজীজ ও কবি জুননু রাইন। এঁরা আমাকে সবসময় পরামর্শ দিয়ে লেখায় উৎসাহ প্রদান করেন।

আমার কবিতার পাঠকদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। জানাই অপরিসীম ভালোবাসা ও প্রীতিময় শুভেচ্ছা। সেইসাথে লেখকদেরকেও অনেক অনেক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও ভালোবাসা। আপনাদের আশীর্বাদ আমার চলার পাথেয়। আপনাদের মাঝে যেন একটু ঠাঁই পাই। এটাই আমার প্রত্যাশা।

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

আত্মকথন (১ম পর্ব)

Facebook Comments Box

কবি ও প্রাবন্ধিক আদ্যনাথ ঘোষের স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির হাতেখড়ি। তিনি প্রতিনিয়ত কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখে চলেছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: আলোর রেখা, লাল নীল শাড়ির আঁচল, হৃদয়ে উতল হাওয়া, জন্মভূমি তুমি মাগো, আমি তোমাদেরই একজন, উত্তরের জানালা, ভোরের পাখি, স্বপ্নবালিকা, বিধিলিপি মন, একমুঠো স্বপ্নের রোদ্দুর, তৃষ্ণার পৃথিবী ছুঁয়ে, দূর জংলার গান। তিনি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার ভায়না ইউনিয়নের  অন্তর্গত  পদ্মার তীরবর্তী নিসর্গ সৌন্দর্যশোভিত গ্রাম হেমরাজপুরে ১৯৭৩ খিষ্টাব্দের ২রা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষক হিসেবে পাবনা জেলা স্কুলে কর্মরত আছেন।

error: Content is protected !!