রকিবুল হাসান
কবিতা,  সাহিত্য

আজো তোমার কথাই ভাবি

আজো তোমার কথাই ভাবি

রকিবুল হাসান

 

কেউ কি শুনবে আমার মনের কথা ?
না, কেউ তো নেই !
তাইতো আজ উত্তাল মনে ভীত সংকোচ ক্ষণে
গোধুলির শেষ লগনে বসে আছি
সাউদিয়া ছাত্রাবাসের ব্যালকুনিতে।

পাশেই টবে ফুলহীন সদ্য বেড়ে ওঠা গাছ গুলো
হালকা বাতাসে দোলা দিচ্ছে আপন আমদের।
মাথার উপর টিপটিপ করে জ্বলছে লাল নীল বাতি
আর ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে দুঃখের রাজ্য আঁধার করে
নির্ঘুম রাত হচ্ছে আমার সাথী
আর আমি, তোমার কথাই ভাবি।

আমি আজ বড্ডো বেখেয়ালি !
জানালার গ্রিলে মাথা রেখে আকাশের দিকে চাইতেই
চোখে পড়ল একাকি একটা তারা
দূর দিগন্তে সে একলা একাই জ্বলছে
হয়তো সে ও আমার মতই একলা একা চলছে।

ব্যালকুনির রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে সেদিনের কথাই ভাবছি ।
যে দিন প্রথম হয়েছিলো কথা, অবিশ্বাসের ঘোরে,
তারপর, তারপর চেনা জানা কাছে টানা
বিশ্বাস যেনো নিঃশ্বাসে রূপান্তর হওয়া ।

ভাবতে ভাবতেই নেমে এসেছে রাতের আঁধার।
ব্যালকুনিতে বাসা বাঁধা চড়ুই পাখিটাও
ফিরে এসেছে আপন ঘরে।
পাশের বিল্ডিং গুলোতে জ্বলে উঠেছে বৈদ্যুতিক বাতি,
ধীরে ধীরে শান্ত হচ্ছে আশপাশের কোলাহল
আর আপন ঘরে ফিরছে আপন সাথী।
তবুও আমি, তোমার কথাই ভাবি ।

আজ এই একলা নীরব ক্ষণে
তোমার কথা আরো মনে করিয়ে দিলো
একটা পরিচিত সুবাস এসে ।
হঠাৎ দক্ষিণা বাতাসে একটা ঘ্রাণ পেলাম
এ যে মাধবীলতার ঘ্রাণ !
আমি জানি মাধবীলতা তোমার অতি পছন্দের ।

ব্যালকুনির এক কোনে পত্র পুষ্পে সুশোভিত হয়ে
গ্রিলে বেড়ে ওঠা মাধবীলতা যেন,
দেয়াল আঁকড়ে মনের সুখে বাতাসের সাথে করছে খেলা ।
আহ্… আজ যদি তুমি মাধবীলতার মত আঁকড়ে থাকতে ।

ব্যালকুনির অন্য কোণে অনাদরে বেড়ে ওঠা
মৃতপ্রায় ঘৃতকুমারী গাছটাও দেখছি
সতেজ হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে ।
ঘৃতকুমারীও হয়তো তার অনাদরের ক্রোধ সংবরণ করে
আবারও নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে ।
আহ্… আমাদের বন্ধন যদি আবার সতেজ হতো,
নিঃস্বার্থ ভাবে যদি আবার দুজন দুজনার হতাম ।

আমি যে আজো তোমাকেই চাই
তোমাকে কতোটা চাই, তা তুমি না জানলেও জানে
তোমাকে পাওয়ার আকাঙ্খার স্বাক্ষী হয়ে থাকবে
পাবনা সাউদিয়া ছাত্রাবাসের এই ব্যালকুনি,
আর ব্যালকুনিতে আমার প্রতিটা পদাচরণ।

হঠাৎ চলে গেলো বিদ্যুৎ
নিভে গেলো বিল্ডিং এর জানালা দিয়ে আসা আলোর ঝলক,
আর আমার ব্যালকুনিতে জ্বলা লাল নীল বাতি !
অন্ধকারে আচ্ছন্ন হলো সারা শহর !
আর নিশ্চুপ অন্ধকার এই শহরের ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে
চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো
আমি আজো তোমার কথাই ভাবি
তোমার কথাই ভাবি……।

কাব্যগ্রন্থ : কুঞ্জ কাব্য – ২
প্রকাশকাল : ২০২১ বই মেলা

 

ঘুরে আসুন আমাদের ফেসবুক পেইজে

Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক তিনি। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!