অশরীরী-আত্মা
গল্প,  সাহিত্য

অশরীরী আত্মা

অশরীরী আত্মা

বাকী বিল্লাহ বকুল

 

১.

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল, ছাতা ছিল না সাথে। এই বৃষ্টির মধ্যেও হেঁটে বাসায় ফিরছিলাম।
রাত একটা।
সেন্ট ক্যাথরিন স্ট্রিট থেকে দু ফোর্ট তারপর টানেল দিয়ে সেন্ট এনতোয়ায় আসলাম।
ভিনেত স্ট্রিটের মাথায় এসে চমকে গেলাম। রাস্তাটা নির্জন। বাম পাশে পার্ক। পার্কের ভিতর ঘুট ঘুটে অন্ধকার, বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম পার্কের ভিতর।
অন্ধকার তারপরেও পার্কের ভিতর তাকালাম। না কেউ নেই। কান্নার আওয়াজ আসছে।
পার্কের বেঞ্চের উপর নজর পরলো। আবছা কি যেন নড়ে উঠলো। গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল।
-বকুল..
-কে?
সামনে পিছনে তাকালাম কেউ নেই। অনেকক্ষন চুপ
আবারো আমার নাম ধরে ডাকলো মেয়ে কন্ঠে।
-বকুল
-কে?

আমার ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেললো,
পিছন থেকে ঘাড়ে হাত রাখলো। আবারো ডাকলো,
-বকুল
আমার শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গেল সাহস সঞ্চয় করে বললাম কে আপনি। দোয়া দরুদ পড়তে থাকলাম।
-তোমার নায়িকা।
প্রচন্ড ভয় পেলাম এক দৌড়ে সেন্ট জ্যাক স্ট্রিটে আসতেই টেক্সি পেলাম। টেক্সি তে ঢুকে পরলাম।
টেক্সি ভাড়া মিটিয়ে নেমে পরলাম।
কিন্তু একি টেক্সির ভিতরে বসে আছে এক মেয়ে…।

২.
.প্রচন্ড গরম। কাজ শেষে বাসায় ফিরছি। গত সপ্তাহে ভিনেত পার্কের অলৌকিক ঘটনা এখনো মন থেকে দুর করতে পারি নাই।তবুও আজ রাতে কাজ শেষে প্রশান্তি পেতে সেই ভিনেত পার্কে আসলাম।
আজ ঘুটঘুটে অন্ধকার নাই। ঝলমলে আলো। একেবারে দিনের আলোর মতো।
একটা বেঞ্চে বসে গুন গুন করে গান করছি। বাতাস গায়ে লাগছে। বেশ সজীব লাগছে নিজেকে।
চারিদিকে তাকালাম, কেউ নেই।
হঠাৎ কি মনে হলো গত সপ্তাহের যে গায়েবী মেয়ে কন্ঠে বলেছিল আমি তোমার নায়িকা।
আমি জোর গলায় বললাম ‘ আমার নায়িকা আছো’?
আবারো ডাকলাম ‘নায়িকা আছো?
তৃতীয়বার ‘ না য়ি কা আ…….। শেষ করতে পারলাম না।

আরও পড়ুন গল্প তৃতীয় স্বাক্ষী

পার্কের সমস্ত লাইটগুলো বন্ধ হয়ে গেলো। ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটি গাছের ডালে বাতি জ্বলে আবার নিভে গেলো। সেই গাছের উপর থেকে কান্নার আওয়াজ আসলো। গা ছম ছম করছে। কপাল থেকে ঘাম ঝরছে, মোছার সময় নাই।
বেঞ্চ থেকে উঠতে চাইলাম, পারলাম না। পা দুটো ভারী হয়ে আছে। খাঁটি বাংলায় আমার নাম ধরে মেয়েলী কন্ঠে….
-বকুল
-কে?
-তোমার নায়িকা।
একটা সুগন্ধ বাতাসে ভেসে এলো। কেউ আমার পাশে বসলো, একই বেঞ্চের থেকেই বলছে..
-আমি রোজী, রওশন জাহান রোজী। তোমার নায়িকা।

ত্রিশ বছর পূর্বের কথা….
রোজীব সাথে মঞ্চে নাটক করেছি, টিএসসিতে প্রতিদিন আড্ডা দিয়েছি… সেই রোজী….না না না। অসম্ভব।

৩.

পাখির কিচিরমিচির শব্দে চোখ মেলে দেখি আমি পার্কের বেঞ্চে শুয়ে আছি। রাতের সমস্ত ঘটনা মনে পরে শিউরে উঠলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ছয় ঘন্টা পরে জ্ঞান ফিরেছে।

রাতে বাসায় ফিরিনি। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
বাসায় যেতে পা বড়ালাম।
স্ত্রী গটমট করে আমার দিকে তাকাল কিছু বললো না।
ওয়াসরুমে গিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম
ভয়ে আমার সমস্ত অনুভুতি হারিয়ে গেল।
আয়নায় আমার ছবি নাই। আয়না থেকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে রোজী। রওশন জাহান রোজী।
বের হয়ে গেলাম ওয়াসরুম থেকে।
কি হয়েছিল রোজীর? কেন সে আমার পিছনে? রোজী এখন কোথায়?
শেষবার তাকে দেখেছিলাম জার্মান কালচারাল সেন্টারে ইন্জিনিয়ার স্বামীর হাত ধরে। আমার দিকে তাকিয়ে ছিল কিন্তু কথা হয় নাই। আমার সাথেও ছিল আমার স্ত্রী।

আরও পড়ুন গল্প  রঙিন ঘুড়ি

আজ এত বছর পর ওর কথা ভেবে বুকের ভিতর মোচর দিয়ে উঠলো।
কত স্মৃতি, কত কথা, রিকশায় ঘুরে বেড়ানো, বৃষ্টিতে ভেজা, রোজীর ঠান্ডা লাগা। চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো এসব ভেবে।
রোজীর অবস্থা জানতে ঢাকায় ফোন করে ওর খবর জেনে ভয়ে ঘেমে গেলাম।
বছর পাঁচেক আগে রোজী তার কোলের শিশুকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেছে।
রোজীর অতৃপ্ত আত্মা আমার কাছে কেন আসে?
আমার কি করা উচিত ভাবতে ভাবতে লিভিং রুমে এসে জানালার পর্দা হাত দিতেই চমকে গেলাম।
রোজী। আমার সামনে সোফায় বসে তাকিয়ে আমার দিকে।
লা ইলাহা ইল্লা আনতা সোবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জলেমিন। বুকে ফু দিলাম। সাথে সাথেই মিলিয়ে গেল।
মনটা ব্যাথা ভরে গেছে। বুকের ভিতর কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা মন হচ্ছে।
পুরো ঘটনাটা আমার স্ত্রীকে খুলে বলি।
বিকেলে এক হজুরকে বাসায় নিয়ে আসলো আমার স্ত্রী।
দোয়া কালমা পড়ে রোজীর জন্য তার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করা হলো।
রবিবার থেকে এখন পর্যন্ত আর কোন কিছু নজরে আসছে না।

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

অশরীরী আত্মা

Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক তিনি। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!