অন্তরালে
কবিতা,  পূর্ণিমা হক,  সাহিত্য

অন্তরালে, ছোটোবেলার মতো, পুনশ্চ প্রশ্ন করেছি

অন্তরালে

পূর্ণিমা হক

 

কোথায় দেখেছি তারে
আবছা আঁধারে
মনে না পড়ে চেতনে মননে,
সেই অবয়ব জেগে ওঠে মানসপটে
অতীতের অলৌকিকতায়।

কোথায় দেখেছি তারে
নয়নের নদীতট নিসর্গের নিরন্তর স্রোতে
খুঁজে ফিরি হৃদয়-ক্যানভাসে।

সেই মুখ, চকিত নয়ন
কল্পনা কিংবা বাস্তবতায় অর্ধবৃত্তাকারে
মন-মোহনার সৈকতে
আছড়ে পড়ে বারে বারে।

কোথায় দেখেছি তারে
সুনশান গাঁয়ের মাঠে,
বটবৃক্ষের ছায়ায়, প্রকৃতির নির্জনতায়
চেনাজানা অনুভূতির অন্তরালে
মনে না পড়ে।

কোথায় দেখেছি তারে
নেইকো স্মরণে,
ভুলেই তো যাই সে সব কথা
যখন ছিলো সত্তাজুড়ে
চেনা-জানা অনুভূতির অন্তরালে।

আরও পড়ুন পূর্ণিমা হকের কবিতা-
ভালোবাসি তোমায়
হৃদয়পটে
সন্ধ্যা

 

ছো্বেটোলার মতো 

সেই যে ছোটোবেলায় বাড়ির পাশের কাদাজলে
মাছ ধরতে গিয়েছিলাম,
আমার বন্ধু মোহন্ত ডেকেছিলো আমায়।
কাদা গায়ে মেখে দিয়ে বলেছিলো-
তোকে খুব সুন্দর লাগছে রে
একেবারে গ্রাম্য বধূর মতো!
আমি হেসেছিলাম মোহন্তের কথায়-
কাদা মেখে কেউ কি বধূ হয়?
আমি অনেক বড় হয়ে গেছি
বদলেও গেছি কিছুটা,
বধূ হয়েছি এক চাকুরে বাবুর।
হতাশার কাদা গায়ে মেখে
বেদনার নীল শাড়ি পরে
আমার গাঁয়ের সেই স্মৃতির
মাঠ ঘাট পেরিয়ে
আমি বধূ হয়েছে শহুরে বাবুর।
বাবু আমায় খুব ভালোবাসে
জীবনের প্রয়োজন তাও মেটায়,
আদর করে ‘লাল বউ’ বলে ডাকে।
তবুও আমি মোহন্তকে খুঁজি,
আমার গাঁয়ের কাদাজলকে খুঁজি।
মোহন্তও অনেক বড় হয়ে গেছে
ঘর-সংসার তাও বেঁধেছে,
কাদাজলের মাঝে  খড়ের ছাউনি দিয়ে।
শান্তির ঘর তুলেছে।
মোহন্ত আমায় আর ডাকে না আগের মতো,
চার দেয়ালের বন্দি জীবনে
আমি মোহন্তের ডাক অনুভব করি।
কিছুটা ক্ষণের জন্যে হলেও,
আমি আবারও যদি কাদাজলে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম!
ছোটবেলার মতো মাছ ধরতে পারতাম!

 

পুনশ্চ প্রশ্ন করেছি

জীবনের সামান্যতম সুখগুলো
একদিন কানে কানে বলে গেলো আমায়
তুমি কি খুব ভালো আছো?
তাৎক্ষণিক জবাব মেলেনি,
অনেকটা সময়ের অপচয় শেষে
পাল্টা প্রশ্ন করেছি-
তবে কি ভালো নেই আমি?
আবার কেনো জানি হঠাৎ করেই
জীবনের গুটিকয়েক সুখের কথা মনে পড়ে যায় জীবন চক্রের বৃত্তে,
এক পলকে সামান্যতম সুখের স্মৃতিচারণ-
মনে হয় যেনো স্বপ্নচক্রের প্রতিচ্ছবি।

গভীর রাতের একাকীত্বতায়
আবারও শীতের চাদরে মোড়া সুখগুলো
ফিসফিস করে বলে যায় আমায়-
এ্যাতো যে মনের বিশালতা
তবুও সুখের সীমানার সীমাবদ্ধতা।
তাই তো একান্ত একাগ্রতায়
খুব জানতে ইচ্ছে হয়-
আমি কেমন আছি?
জবাব মেলেনি কিছু,
অনেকটা সময়ের অপচয় শেষে
পুনশ্চ প্রশ্ন করেছি-
তবে কি ভালো নেই আমি?

আরও পড়ুন কবিতা-
প্রচ্ছন্ন কুয়াশার দিন
মানুষ হয়ে উঠা
আত্ম বেদনা
আমার গ্রাম

 

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

অন্তরালে

Facebook Comments Box

পূর্ণিমা হক, একজন জনপ্রিয় কবি হিসেবে কবিতা প্রেমিদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ: কষ্ট নৈঃশব্দ্য, নীলান্তে নীল, কালের বেদিতে লাল কৃষ্ণচূড়া। তিনি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামের পুত্রবধু।

error: Content is protected !!