ফজলুল-হক
ভাটপাড়া,  লেখক পরিচিতি,  সাতবাড়িয়া,  সাহিত্য

মো. ফজলুল হক

কবি মো. ফজলুল হক, পেশায় একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও রোমাঞ্চকর কাব্য রচয়িতা হিসেবে কাব্যিক জগতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। তাঁর লেখায় জাগতিক জগতের প্রেম-ভালোবাসা, বিরহ-ব্যথা, প্রকৃতি ও সমাজে ঘটে যাওয়া নানা অসঙ্গতি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।

জন্ম ও শৈশব
কবি মো. ফজলুল হক ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১লা আগস্ট, পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের (বর্তমান ভাটপাড়া) বিশ্বাস পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।

পদ্মা নদী বিধৌত পলি ও বালি মাটির সান্নিধ্য তাঁর জীবনের অপার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। পদ্মার পাড় ঘেঁষে বিস্তৃত গ্রামেই দুরন্তপনায় কেটেছে শৈশব-কৈশোর। তিনি দেখেছেন নদীর উন্মত্ততা ও আগ্রাসী থাবা! নদীর জলে ছিল তাঁর অবাধ্য সাঁতার। গ্রামের সবুজাভ প্রকৃতি, মেঠোপথ, নদী, উৎসব, নির্মল আকাশ ও মানুষে মানুষে সখ্য কবিকে বিমোহিত করেছিল; যা পরবর্তী জীবনে কবিতা লেখার পথকে বেগবান করেছে নিঃসন্দেহে।

আরও পড়ুন কবি, কথাসাহিত্যিক ও গবেষক বিমল কুণ্ডু

পারিবারিক জীবন
পিতা মৃত ওয়াহেদ আলী বিশ্বাস ছিলেন একজন ডিপ্লোমাধারী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় গ্রামের যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ ও প্রশিক্ষণে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন ক্রীড়া অনুরাগী একজন সদালাপী হাসিখুশি মানুষ। পিতার এই সংগ্রামমুখর জীবন, সাহসিকতার গল্পগুলো ফজলুল হকের মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। মাতা মোছা. শেফালী খাতুন ছিলেন গৃহিণী; যিনি স্নেহ, মমতা এবং ভালোবাসার ছায়ায় তাঁর সন্তানদের বড়ো করেছেন। বাবা-মায়ের সাত সন্তানের মধ্যে ফজলুল হক দ্বিতীয়।

স্ত্রী কবি পূর্ণিমা হক। তাদের সংসারে দুই মেয়ে।

শিক্ষাজীবন
ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে কৃতিত্বের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে সাতবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি এবং সাতবাড়িয়া কলেজ হতে ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ঢাকা কলেজ হতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

আরও পড়ুন কবি ও চারুশিল্পী রিঙকু অনিমিখ

কর্মজীবন
মো. ফজলুল হক পরপর দুটো সরকারি চাকরি ছেড়ে, তৃতীয় সরকারি চাকরি হিসেবে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে সহকারী পরিচালক পদে জেলা কার্যালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, নওগাঁয় কর্মরত আছেন। তাঁর কর্মজীবনেও প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর সংগ্রাম, মানবিকতা এবং নৈতিকতা।

লেখালেখি ও প্রকাশিত কবিতা
কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর থেকেই মূলত লেখালেখি শুরু। কবি মো. ফজলুল হকের কবিতায় জড়িয়ে আছে পদ্মার পাড়ের বাতাস, শ্যামল প্রান্তরের মাটির গন্ধ, আর গ্রামবাংলার সরল জীবন। তাঁর লেখার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় মানুষের হৃদয়ের গভীর অনুভূতি, সমাজের অসঙ্গতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কবি নিজেই যেন তাঁর কবিতার চরিত্র, যেখানে তিনি নিজের হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা কথাগুলো শব্দে শব্দে সাজিয়ে তুলেছেন।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তাঁর কবিতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা, অনলাইন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ভাঁজপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছ। এ ক্ষেত্রে তাঁর সহধর্মিণীর অনুপ্রেরণা উল্লেখযোগ্য। তাঁর প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা প্রায় ৪০০। তবে গ্রন্থাকারে প্রকাশ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাঁর কবিতাগুলিতে প্রেম, বিরহ, প্রকৃতি ও সামাজিক অসঙ্গতির ছবি সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।

আরও পড়ুন কবি ও চারুশিল্পী আদ্যনাথ ঘোষ

পুরস্কার ও সম্মাননা
সঞ্চালক ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে সম্মাননা স্মারক, লিখিয়ে সাহিত্য পরিষদ হতে পাণ্ডুলিপি পুরস্কার, বিভিন্ন সাহিত্য সংগঠন হতে সাপ্তাহিক সেরা কবিতার স্বীকৃতি এবং কর্মজীবনে দক্ষ কর্মকর্তার পুরস্কার অর্জন করেছেন।

শখ ও স্বপ্ন
গান শোনা, ভ্রমণ করা, বই পড়া, কবিতা লেখা ও খেলাধুলা ফজলুল হকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাঁর স্বপ্ন হলো, নিজেকে মানুষ ভাবতে গেলে যেসব অযোগ্যতা সামনে এসে দাঁড়ায়, তা দূর করে মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখা। এই চেষ্টায় তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন সারা জীবন।

তাঁর প্রতিটি শব্দে, প্রতিটি বাক্যে, প্রতিটি কবিতায় জীবনের ছন্দ ধ্বনিত হয়। কবির হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা এই সৃষ্টিগুলো আমাদের মনে জাগিয়ে তোলে এক অনন্য অনুভূতি, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে একাত্ম হয়ে যায়।

 

ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

Facebook Comments Box

আলতাব হোসেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। তিনি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!