-
বেলীফুলের ঘ্রাণ (শেষ পর্ব)
বেলীফুলের ঘ্রাণ (শেষ পর্ব) শফিক নহোর ৩. শোন, খেয়ে নে। আজ ঢাকা থেকে তোর জাহিদ ভাই আসবে। আমরা ফকির বাড়ি যাবো পিঠার চাইল কুটতে, ঢেঁকিতে। এতদিন পর ছেলেটা বাড়ি আসছে। তোর মেঝ মামাকে বললাম, রোকেয়াকে নিয়ে আপনিও আসেন। জাহিদের সঙ্গে তার নাকি অফিসে অনেক কাজ, আসতে পারবো না। মানুষ একবার শহরে গেলে গ্রামে আর ফিরে আসতে চায় না। কেউ যদিও আসে লাশ হয়ে। বেঁচে থাকতে আর ক’জন আসে গ্রামে। তাই না রে পারুল? তোর মেঝ মামা বলেছে, তোর লেখাপড়া ভালো হলে ঢাকা নামকরা কলেজে তোকে ভর্তি করবে। তোকে নাকি ডাক্তারি পড়াবে, তোর মায়ের না কি স্বপ্ন ছিল। তুই ডাক্তারি…
-
বেলীফুলের ঘ্রাণ (১ম পর্ব)
বেলীফুলের ঘ্রাণ (১ম পর্ব) শফিক নহোর ১. পারুল গ্রামের মেয়ে। বেলিফুলের মতো সাদা চেহারা, চোখ দুটি মায়া ভর্তি। কথা বললে মনে হয় কথার সঙ্গে রসগোল্লার রস বেরিয়ে আসে। ঠোঁটের কিনারে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের ঝিলিকের মতো মিহি আবেগি ঢঙ লেগে থাকে সর্বক্ষণ। লেখাপড়ায় গাঁয়ের মধ্যে সেরা। স্কুলের মাস্টাররা স্নেহ করে খুব, এক নামে তাকে সবাই চেনে জানে ভালো ছাত্রী হিসাবে। পারুল স্বপ্ন দেখত ডাক্তার হওয়ার। সেই স্বপ্ন একটা সময় অধরা রয়ে যায়। তার মা মারা যাওয়ার পর। মায়ের মৃত্যুতে পারুল যেন ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা বনে যায়। উদাস একটা ভাব চেহারার ভেতর। বেলে মাছের মতো জাবর কাটতে থাকে সারাক্ষণ। বাড়িতে বেশিদিন…
-
গৃহবন্দি বিড়াল
গৃহবন্দি বিড়াল শফিক নহোর মিনু কলেজ থেকে ফিরে আসার পর, তার মা তাকে জানিয়ে দিলো, তার আদরের বিড়াল বাড়িতে রাখা যাবে না। এমনিতেই দেশের অবস্থা বেশি একটা ভালো না। মানুষই খেতে পাচ্ছে না, বিড়াল পুষে কি হবে। তাছাড়া বিড়ালের শরীরে ঘা হয়েছে। পরের দিন মিনু কলেজে যাওয়ার পর, তার মা বস্তায় ভরে বিড়াল জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে। বাড়িতে ঢুকেই মিনু কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছে, ‘ডাল মে কুছ কালে হে।’ কাঁধের ব্যাগ টেবিলের উপরে রাখতেই তার মা কিছু একটা বলতে চাইল। কথা ঠোঁটের কিনারে আসতেই হাত ইশারা করে বলল, আমি সব জানি। তোমাকে কিছুই বলতে হবে না। মায়ের মুখের দিকে…
-
পেতনি
পেতনি শফিক নহোর বউরে আমি কালটি বলে ডাকতাম, এ ডাকটি ছিল তার কাছে বিষের মতো। নাম ধরে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে মুখটা এমন কালো হয়ে যেত, মনে হতো অমাবস্যার অন্ধকার রাত নেমে এসেছে আকাশ থেকে। তার মুখের রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত সহজে। সাত সকালে ভূতের মুখ দেখে ঘুম ভাঙলে কী সেদিন ভাল যায়? কপাল পোড়া হলে যা হয়, ঠিক আমারও তাই। তবে ও হাসলে দাঁতগুলো খুব চকচক করত। ওকে কখনো আদর করতে ইচ্ছে হয়নি, ভালবাসতে ইচ্ছে হয়নি, কখনো আপন করে কাছে পেতে ইচ্ছে হয়নি, ভাত খাবার কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি, ভালো কাপড় কিনে দিতেও কখনো ইচ্ছে হয়নি। কেন ইচ্ছে হয়নি-…
-
নীলভোর
নীলভোর শফিক নহোর নুরজাহানের চোখের দিকে আজকাল তাকানো যায় না। ভাবছি একটি চাকরি হয়ে গেলে নুরজাহানকে জানিয়ে দিবো, “আমি তোকে বউ করে ঘরে তুলে নিবো, আমার যে জীবন কখন বাঁচি কখন মরি।” নুরজাহান আমাকে স্বামী হিসাবে মেনে নিবে কি? নয় ছয় ভাবতে ভাবতে চায়ের দোকানের সামনে চলে আসলাম। ─ এই! এককাপ বিষ চা দাও হে। ─ সারারাত হনে অকাম করছু হে? চোখমুখ লাল হয়ে আছে। ─ বেটা তুমি বুঝবে লয়। রাজনীতিতে ব্যাপক মজা হে। ─ মজা হবি লয়, পরের তা খালি পরে তো মজাই আলাদা, তোগরে তো মরা লাগবি নে। ─ কাকা, তোমার একখান কথা কই? মানুষের হক না…
-
কাঠগোলাপ ও প্রেম
কাঠগোলাপ ও প্রেম শফিক নহোর প্রতীক্ষার প্রহর যেন সতীনের যন্ত্রণার চেয়েও তীব্র কষ্টকর। দেওয়াল ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে দেখছি; নিজের হাতের মোবাইল ফোনের স্কিনের ঘড়িতে সময় দেখতে ভুলে গেছি। তলিয়ে যাওয়া জাহাজের নাবিকের মতো। হালকা শীত তবুও শরীর ঘেমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঘড়ির কাঁটা শত্রুপক্ষ শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। কাঙ্ক্ষিত সময়ের কাটা ঘড়ির বুক জুড়ে জেগে উঠুক; নদীতে চর পরার মতন নতুন এক আশার প্রদীপ নিয়ে। আবারো যখন দেওয়াল ঘড়িটার দিকে নিজের অজান্তে দৃষ্টি চলে গেল, ঠিক তখন মোবাইল ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। বুকের ভেতর থেকে ছন্দের তালে নেচে উঠল হৃদয়। কোনো আনন্দের সংবাদ নেই, কোনো মানুষের আগমন নেই।…
-
পরাভূত
পরাভূত শফিক নহোর জীবনে অনেক ছোটো খাটো ব্যথা থাকে যা ইচ্ছে করলেই কারো নিকট প্রকাশ করা হয় না। গত বছর মেজো আপার মেয়ের বিয়ের দাওয়াতে গেলাম। মোবাইল ফোনের দাওয়াত। আগে মানুষ দাওয়াত দিতে আসত। বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে আসত। এখন আর এ সব নেই। ডিজিটাল যুগ বলে কথা। সেদিন রাতে দুলাভাই আমাকে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছিল! তা ছিল ভারি অন্যায়। মান সম্মানের ভয়ে চেপে গেলাম। থাক, একটু দুষ্টুমি তো করতেই পারে, তাই নয় কি! এভাবেই আমার মতো কত মেয়ে প্রতিদিন প্রিয় কিছু মানুষের দ্বারা নিদারুণ নিপীড়ন সহ্য করে। আমার মতো সরল মেয়েদের কপালে এই থাকে। আমি ভয়ে কাউকে কিছুই বললাম না।…
-
তিল তাল
তিল তাল শফিক নহোর ক. প্রচণ্ড শীত। বাড়ি থেকে আসার সময় ছোট একটা চাদর নিয়ে এসেছিল শরিফ। যদিও আজ কয়েক দিনে সে বুঝতে পারছে, চাদর দিয়ে শীতকে কাবু করা যাবে না । শরিফকে এয়ারপোর্ট থেকে আলী নামের একজন ভদ্রলোক রিসিভ করেছে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে কথা হয়েছে। শরিফ অনুভব করতে পারল, ভাপা পিঠা তৈরি করতে যেমন পানির ভাপ বের হয়, কান দিয়ে ঠিক তেমন গরম ভাপ বের হচ্ছে । কেরালা একটা হোটেল থেকে রাতের খাবার খেয়ে, দুজন রওনা হল শরাফিয়া নামক ছোট্ট শহরে। সেখানে তিনতলা একটা বাড়িতে শরিফের থাকার জায়গা ঠিক করে রেখেছে আলী। লোকটাকে আজ ক’দিন দেখে যা বুঝতে…
-
নীরুর মা
নীরুর মা শফিক নহোর মহা ধুমধামে বিয়ে হলো আমার। বউ দেখে সবার পছন্দ। কিন্তু আমার নিজের মনের মাঝে প্রায় সময় যোগ-বিয়োগ হতো। আমার বউ তমা, নতুন অতিথির জন্য ব্যাকুল! বিয়ের তিন মাসের মাথায় সে সুখবর দিল। এমন একটা খবরে বাড়ির সবার ভিতর এক ধরনের স্বস্তি দেখতে পেলাম। কিন্তু কেন? সে প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই। আমার শাশুড়ি চাইতো আমি তার মতো করে চলি। আমার তা কখনো হয়ে ওঠেনি। এ নিয়ে তমার সঙ্গে মাঝে মধ্যে দু-চার কথা হতো। অনেক কিছুর কৈফিয়ত সে আমার কাছে চাইতো! আমি প্রচণ্ড অস্বস্তিবোধ করতাম। আমার ব্যক্তিগত জীবনে অন্য মানুষের প্রভাব পড়ুক, সেটা আমার কাম্য ছিল…
-
আড়ালের চোখ
আড়ালের চোখ শফিক নহোর নাসির ভাইদের বাড়ির পাশে খোলা মাঠ, তার সঙ্গে আবাদি জমি। ডীপ মেশিনের পানি দিয়ে ধানের আবাদ করে। ধানের মাঠ বাড়ি থেকে দেখা যায়। কেউ কেউ গোসল করতে আসে। মামী আমাকে সেদিন বলেছিল, ──আমরা ডীপ মেশিনে গোসল করতে যাব। আমি আর ছোট মামী একসঙ্গে গোসল করতে গেলাম। ডীপ মেশিনের ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে পরান ডা জুড়িয়ে যায়। পানি এত ঠাণ্ডা! গোসল করার পর মনে হয়, সারা দিনের ক্লান্তি এক নিমেষে দূর হয়ে যা। কোনো কোনো দিন বিদ্যুৎ না থাকলে একটু বসে থাকি, বাঁশের একটি পুরাতন মাচালের উপর। কত বিচিত্র রকমের গল্প হয় সেখানে! আমাদের দেখাদেখি…