-
নিরুপায় নীলাঞ্জনা
নিরুপায় নীলঞ্জনা শফিক নহোর তখন আমার নিগূঢ় প্রণয় চলছে মৌমিতার সঙ্গে। মৌমিতা খুব আবদার করে বলতো, ─ তোমার দেশের বাহিরে যাবার কী প্রয়োজন? দেশেই ভালো একটা চাকরি করতে পারলে, আমাকে রেখে তুমি যেও না। তুমি দেশের বাহিরে চলে গেলে বাবা আমাকে অন্য জায়গায় পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দিবে। ─ তোমাকে বিয়ে দিবে কেন, আমি আছি না?’ আমাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করতো। ওর আবদার ছিল একটু শিশুসুলভ। এত অভিমানী মেয়ে অল্পতেই চোখের কোণায় জল গড়িয়ে পড়ত। আমার উপর রাগ করে কখনো কখনো রাতে ভাত খেত না, সকালে খেত না। আমাকে মেসেজ দিয়ে জানিয়ে দিতো আজ সারাদিন না খেয়ে আছি; আমি বিভিন্ন…
-
সে আমার কেউ না
সে আমার কেউ না শফিক নহোর ক. সুমনাকে চুমু দেবার পর, ও আমাকে শয়তান, জানোয়ার, তোর সঙ্গে কোনদিন কথা বলবো না বলে তিরস্কার করতে লাগলো। কথা শেষ না হতেই ওর চোখে জোয়ার ভাটার মত পানি বইতে শুরু করল। একটু ঢং স্বভাবে ওর শরীর ঘেঁসে দাঁড়িয়ে, আহ্লাদ করে ওর ওড়না দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে দিতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলো। তখন বুঝতে পারলাম। সুমনাকে বোঝাতে গেলে বোকা হয়ে যাবো। তার চেয়ে এই মুহূর্তে আমি কোন কথা না বাড়িয়ে সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে যাই। বের হতেই মৌ আমাকে দাঁড়াতে বললো। আমি বিদ্যুৎ গতিতে নজর এড়াতে চেষ্টা করলাম। সুমনা এই ক’দিনে আমাকে কল…
-
প্রথম প্রভাত
প্রথম প্রভাত শফিক নহোর ডিসেম্বর মাসে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেছে। এখন ছুটি। ছেলে মেয়েরা বায়না ধরেছে, এবার ফয়েজ লেক দেখতে যাবে। চট্টগ্রাম খুব সুন্দর শহর, নানুপুরের মন্দির দেখবে। বড় দিনের অনুষ্ঠান শেষ করে, বাবার বাড়িতে তিন চারদিন থেকে, নববর্ষের বিশেষ দিনে লিটনকে অবাক করার মতো পরিকল্পনা চলছে রীতার মনে। ফয়েজ লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কোন মানব হৃদয়ে প্রেমের নৈসিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারবে। স্বচ্ছ পানির ভেতর দিয়ে আকাশের নীল রোদন মায়ায় বিকেলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, জলে ভেসে বেড়ানো পানকৌড়ি। এদের আলিঙ্গনে তখন মনে হয় আমার সবকিছু থাকতেও লিটনের সংসারে সুখ খুঁজে পেলাম…
-
মৃত বৃক্ষ
মৃত বৃক্ষ শফিক নহোর অনেকদিন ধরে বোয়াল মাছ খাওয়ার বায়না ধরেছে মিনু। ও চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আজ চলতি মাসের একুশ তারিখ, হাতের অবস্থা বড়ই নাজুক। মিথ্যা সান্তনা দিয়ে বললাম, ─ বেতন হাতে পেলে তুমি যা যা খেতে চাও, সব এনে দিবো। চিন্তা করো না। এখন খাবার দাও। আমার অফিসে যাবার সময় হলো। ভিলেন মার্কা অভদ্র একজন অফিসার আছে, সবসময় মানুষের পিছনে একটা পিন বিধিয়ে দেবার পায়তারা করে অবিরাম। আস্তাগফিরুল্লাহ, মানুষ কী তাই এত খারাপ হয়? এ অফিসে চাকরি না হলে হয়তো বুঝতাম না। সকালে বউ রসুনের পাতা দিয়ে টমেটো ভর্তা করেছে। আহা! কি স্বাদ। গরম ভাতের সঙ্গে হালকা একটু…
-
বেলীফুলের ঘ্রাণ (শেষ পর্ব)
বেলীফুলের ঘ্রাণ (শেষ পর্ব) শফিক নহোর ৩. শোন, খেয়ে নে। আজ ঢাকা থেকে তোর জাহিদ ভাই আসবে। আমরা ফকির বাড়ি যাবো পিঠার চাইল কুটতে, ঢেঁকিতে। এতদিন পর ছেলেটা বাড়ি আসছে। তোর মেঝ মামাকে বললাম, রোকেয়াকে নিয়ে আপনিও আসেন। জাহিদের সঙ্গে তার নাকি অফিসে অনেক কাজ, আসতে পারবো না। মানুষ একবার শহরে গেলে গ্রামে আর ফিরে আসতে চায় না। কেউ যদিও আসে লাশ হয়ে। বেঁচে থাকতে আর ক’জন আসে গ্রামে। তাই না রে পারুল? তোর মেঝ মামা বলেছে, তোর লেখাপড়া ভালো হলে ঢাকা নামকরা কলেজে তোকে ভর্তি করবে। তোকে নাকি ডাক্তারি পড়াবে, তোর মায়ের না কি স্বপ্ন ছিল। তুই ডাক্তারি…
-
বেলীফুলের ঘ্রাণ (১ম পর্ব)
বেলীফুলের ঘ্রাণ (১ম পর্ব) শফিক নহোর ১. পারুল গ্রামের মেয়ে। বেলিফুলের মতো সাদা চেহারা, চোখ দুটি মায়া ভর্তি। কথা বললে মনে হয় কথার সঙ্গে রসগোল্লার রস বেরিয়ে আসে। ঠোঁটের কিনারে ক্ষয়ে যাওয়া চাঁদের ঝিলিকের মতো মিহি আবেগি ঢঙ লেগে থাকে সর্বক্ষণ। লেখাপড়ায় গাঁয়ের মধ্যে সেরা। স্কুলের মাস্টাররা স্নেহ করে খুব, এক নামে তাকে সবাই চেনে জানে ভালো ছাত্রী হিসাবে। পারুল স্বপ্ন দেখত ডাক্তার হওয়ার। সেই স্বপ্ন একটা সময় অধরা রয়ে যায়। তার মা মারা যাওয়ার পর। মায়ের মৃত্যুতে পারুল যেন ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা বনে যায়। উদাস একটা ভাব চেহারার ভেতর। বেলে মাছের মতো জাবর কাটতে থাকে সারাক্ষণ। বাড়িতে বেশিদিন…
-
গৃহবন্দি বিড়াল
গৃহবন্দি বিড়াল শফিক নহোর মিনু কলেজ থেকে ফিরে আসার পর, তার মা তাকে জানিয়ে দিলো, তার আদরের বিড়াল বাড়িতে রাখা যাবে না। এমনিতেই দেশের অবস্থা বেশি একটা ভালো না। মানুষই খেতে পাচ্ছে না, বিড়াল পুষে কি হবে। তাছাড়া বিড়ালের শরীরে ঘা হয়েছে। পরের দিন মিনু কলেজে যাওয়ার পর, তার মা বস্তায় ভরে বিড়াল জঙ্গলে ফেলে দিয়েছে। বাড়িতে ঢুকেই মিনু কিছু একটা আন্দাজ করতে পারছে, ‘ডাল মে কুছ কালে হে।’ কাঁধের ব্যাগ টেবিলের উপরে রাখতেই তার মা কিছু একটা বলতে চাইল। কথা ঠোঁটের কিনারে আসতেই হাত ইশারা করে বলল, আমি সব জানি। তোমাকে কিছুই বলতে হবে না। মায়ের মুখের দিকে…
-
পেতনি
পেতনি শফিক নহোর বউরে আমি কালটি বলে ডাকতাম, এ ডাকটি ছিল তার কাছে বিষের মতো। নাম ধরে ডাকার সঙ্গে সঙ্গে মুখটা এমন কালো হয়ে যেত, মনে হতো অমাবস্যার অন্ধকার রাত নেমে এসেছে আকাশ থেকে। তার মুখের রঙ পরিবর্তন হয়ে যেত সহজে। সাত সকালে ভূতের মুখ দেখে ঘুম ভাঙলে কী সেদিন ভাল যায়? কপাল পোড়া হলে যা হয়, ঠিক আমারও তাই। তবে ও হাসলে দাঁতগুলো খুব চকচক করত। ওকে কখনো আদর করতে ইচ্ছে হয়নি, ভালবাসতে ইচ্ছে হয়নি, কখনো আপন করে কাছে পেতে ইচ্ছে হয়নি, ভাত খাবার কথা বলতে ইচ্ছে হয়নি, ভালো কাপড় কিনে দিতেও কখনো ইচ্ছে হয়নি। কেন ইচ্ছে হয়নি-…
-
নীলভোর
নীলভোর শফিক নহোর নুরজাহানের চোখের দিকে আজকাল তাকানো যায় না। ভাবছি একটি চাকরি হয়ে গেলে নুরজাহানকে জানিয়ে দিবো, “আমি তোকে বউ করে ঘরে তুলে নিবো, আমার যে জীবন কখন বাঁচি কখন মরি।” নুরজাহান আমাকে স্বামী হিসাবে মেনে নিবে কি? নয় ছয় ভাবতে ভাবতে চায়ের দোকানের সামনে চলে আসলাম। ─ এই! এককাপ বিষ চা দাও হে। ─ সারারাত হনে অকাম করছু হে? চোখমুখ লাল হয়ে আছে। ─ বেটা তুমি বুঝবে লয়। রাজনীতিতে ব্যাপক মজা হে। ─ মজা হবি লয়, পরের তা খালি পরে তো মজাই আলাদা, তোগরে তো মরা লাগবি নে। ─ কাকা, তোমার একখান কথা কই? মানুষের হক না…
-
কাঠগোলাপ ও প্রেম
কাঠগোলাপ ও প্রেম শফিক নহোর প্রতীক্ষার প্রহর যেন সতীনের যন্ত্রণার চেয়েও তীব্র কষ্টকর। দেওয়াল ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে দেখছি; নিজের হাতের মোবাইল ফোনের স্কিনের ঘড়িতে সময় দেখতে ভুলে গেছি। তলিয়ে যাওয়া জাহাজের নাবিকের মতো। হালকা শীত তবুও শরীর ঘেমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ঘড়ির কাঁটা শত্রুপক্ষ শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে। কাঙ্ক্ষিত সময়ের কাটা ঘড়ির বুক জুড়ে জেগে উঠুক; নদীতে চর পরার মতন নতুন এক আশার প্রদীপ নিয়ে। আবারো যখন দেওয়াল ঘড়িটার দিকে নিজের অজান্তে দৃষ্টি চলে গেল, ঠিক তখন মোবাইল ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। বুকের ভেতর থেকে ছন্দের তালে নেচে উঠল হৃদয়। কোনো আনন্দের সংবাদ নেই, কোনো মানুষের আগমন নেই।…