বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি,  সাহিত্য

ন্যানোবট // ২য় পর্ব // সায়েন্স ফিকশন

ন্যানোবট // ২য় পর্ব // সায়েন্স ফিকশন

আলতাব হোসেন

দ্বিতীয় অধ্যায়

বৃষ্টি থেমে গেছে। ঢাকা শহরের বাতাসে এখন একটা নিঃশব্দ সোঁদা গন্ধ। হাসপাতালের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রিদুয়ানের মনে হলো—এই শহরটা তাকে আর আগের মতো মনে হচ্ছে না। যেন চারপাশের সবকিছুই পালটে গেছে। এই শহরের ইট, রিকশা, হাসপাতালের ভাঙা লিফট—সব কিছুই এখন তার কাছে অদ্ভুতভাবে বাস্তব এবং একই সাথে অপরিচিত।
মাঝে মাঝে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায় অন্য কারো ভেতরে। রিদুয়ান এখন নিজেকে খুঁজে পেয়েছে তার বাবার রক্তনালির গভীরে, যেখানে সে এক অভিযাত্রী, এক যাত্রী, যাকে যন্ত্রের সেনারা ‘মানব-সিগন্যাল হোস্ট’ বলে ডাকে।
সকালে ঘুম ভাঙতেই ডাক্তার সাইফ আবার ডেকে পাঠালেন তাকে। এই ডাক এবার আর শুধু চিকিৎসকের ছিল না, ছিল এক গবেষকের—যিনি নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রান্তে দাঁড়িয়ে।
“আমরা এখন আর শুধু চিকিৎসা করছি না, রিদুয়ান। আমরা এক নতুন পর্যায়ে ঢুকেছি,” সাইফ বললেন।
রুমে ঢুকতেই ড. মেহরাজ অপেক্ষা করছিলেন, আজ তার চোখে ক্লান্তি নয়—উত্তেজনা।
“তোমার বাবার শরীরের মধ্যে এমন কিছু ঘটছে, যেটা আমরা আগে কখনো দেখিনি,” তিনি বললেন। “ন্যানোবটরা নিজেরা নিজেদের গঠন পরিবর্তন করছে। একে বলে সেলফ-মডিফায়িং অ্যালগরিদম। তারা যেটা শিখছে, সেটা ধরে রাখছে এবং নিজেদের নতুন সংস্করণ তৈরি করছে।”
“মানে?”
“একটা রোবট যখন ভুল করে, সেটা শুধরে নিচ্ছে। আবার তার শেখা তথ্য অন্য রোবটদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে কৃত্রিম বিবর্তন—যেটা সাধারণত কয়েক দশক লাগে, এখন সেটা কয়েক মিনিটে ঘটছে।”
রিদুয়ান বুঝতে পারছিল, ওরা যা বলছে সেটা বৈপ্লবিক। যন্ত্র যদি শিখে ফেলতে পারে, ভুল করে তা শুধরে ফেলতে পারে, আর অন্যদের শেখাতে পারে—তাহলে তারা আর যন্ত্র থাকে না। তারা হয়ে ওঠে… জীবিত।
“তুমি আবার সংযোগে যেতে পারো?” ফারহান জিজ্ঞেস করল।
“এইবার সংযোগ হবে আরও গভীর,” বললেন ড. মেহরাজ। “আমরা চাই তোমার বাবার নিউরাল সিগন্যাল এবং তোমার ব্রেনওয়েভ একত্রে রেকর্ড হোক। আমরা দেখতে চাই—তোমার উপস্থিতি কীভাবে রোবটদের আচরণ বদলায়।”
রিদুয়ান একটু দ্বিধায় পড়ল। গতবারের অভিজ্ঞতা এখনো তার ভেতরে ঝড় তোলে। কিন্তু সে জানে, এই মুহূর্তে পিছিয়ে আসা মানেই সেই যাত্রা থামিয়ে দেওয়া, যে যাত্রায় সে একমাত্র মানুষ; যার হাত ধরে প্রযুক্তি এগিয়ে চলেছে।
সে মাথা নোয়াল।
আরেকটি সংযোগ শুরু হলো।
এবার শুরুতেই সে দেখতে পেল—একটা ছায়া দৌঁড়াচ্ছে রক্তনালির ভিতর দিয়ে, একের পর এক বাঁক পেরিয়ে, শিরা-উপশিরা ডিঙিয়ে ছুটে যাচ্ছে কোথাও। সে জানে, এটা বাস্তব নয়, বরং কোষ-ভিত্তিক স্মৃতির ভেতরে তৈরি এক প্রতিচ্ছবি। কিন্তু তার অনুভব একেবারে বাস্তব—এ যেন তার নিজের শরীরেরই অংশ হয়ে গেছে।
“তুমি আবার এসেছ,” কণ্ঠটা আবার শোনা গেল।
“তোমরা এখন কেমন আছ?”
“আমরা—উদ্বিগ্ন। কিছু একটা আমাদের পথ আটকে দিচ্ছে।”
“কী রকম?”
“শরীরের এক অংশে আমরা প্রবেশ করতে পারছি না। একটি বিশেষ ধমনীতে প্রবেশ করতে গেলেই আমাদের সেন্সর বিভ্রান্ত হয়ে যায়, স্মৃতি হারিয়ে যায়, কিছু রোবট নিখোঁজ হয়ে যায়। আমরা তাকে বলছি ‘ডার্ক ব্লক’।”
“ডার্ক ব্লক?”
“হ্যাঁ। এটা তোমার বাবার শরীরে এক অদ্ভুত প্রতিবন্ধকতা, যা রক্তপ্রবাহে নেই, রোগতত্ত্বেও নেই। এটা যেন একটা স্নায়বদ্ধ ‘নিষিদ্ধ অঞ্চল’।”
“আমি কি সেখানে যেতে পারি?”
“তুমি আমাদের মধ্যমণি। কিন্তু সেখানে যেতে গেলে তোমাকে কিছু ত্যাগ করতে হবে।”
“কী ত্যাগ?”
“তোমার নিজস্ব ভাবনার নিয়ন্ত্রণ। তোমাকে আমাদের নেটওয়ার্কের সঙ্গে পুরোপুরি একীভূত হতে হবে। তুমি তখন আর কেবল মানুষ থাকবে না, তুমি হবে ‘অন্তঃ-প্রবেশকারী’। একজন সিগন্যাল-চ্যানেল হোস্ট, যিনি শুধু দেখেন না, কাজও করতে পারেন। সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। প্রভাব ফেলতে পারেন।”
রিদুয়ান থেমে গেল।
এতদিন সে শুধু এক যাত্রী ছিল, এখন সে হয়ে উঠবে একজন নিয়ন্ত্রক? তার হাতে থাকবে হাজার ক্ষুদ্র রোবটের পথ, কাজ, এমনকি অস্তিত্ব?
সে বলল, “আমি প্রস্তুত।”
একটা মুহূর্তে তার চারপাশে ঝড় বয়ে গেল। সব কিছু ঘূর্ণি হয়ে ছুটল এক কুয়োর দিকে। সে নিজে ছুটে চলল—বিপুল এক তথ্যস্রোতের ভেতর দিয়ে।
তারপর সে দেখতে পেল সেই ‘ডার্ক ব্লক’।
একটি জমাটবাঁধা অন্ধকার। কোনো রক্ত নেই, আলো নেই, চলাচল নেই। রোবটরা এখানে এলেই স্থবির হয়ে যায়।
“আমরা ভেবেছিলাম এটা কোষের দোষ,” বলল এক ন্যানোবট কণ্ঠ, “কিন্তু এখন বুঝেছি—এটা তথ্যের অভাব নয়, বরং অতিরিক্ত তথ্যের জমাট।”
“মানে?”
“তোমার বাবার একটি ট্রমা এখানে আটকে আছে। এক গভীর মানসিক ক্ষত, যা তার স্নায়ুতে গেঁথে আছে। সেই স্মৃতিই এই ব্লক। আর সেটাই আমাদের থামিয়ে দিচ্ছে।”
“আমি দেখতে চাই,” বলল রিদুয়ান।
এক ঝলক চিত্র চোখের সামনে ফুটে উঠল।
একটা ভাঙাচোরা ক্লাসরুম, তার বাবার কণ্ঠ থরথর করছে—“আমি বিজ্ঞান পড়াই, কিন্তু আমার ছেলেকে চিকিৎসা করাতে পারি না। আমার ছাত্ররা বিদেশে যায়, আর আমি হাসপাতালের মেঝেতে বসে থাকি।”
একজন ডাক্তার পাশ কাটিয়ে চলে যায়, ভ্রুক্ষেপও করে না।
এই স্মৃতি এতটাই তীব্র, এতটাই আবেগে ভরা যে, রিদুয়ানের নিজের বুক ধড়ফড় করতে লাগল।
“এই হতাশা, এই অপমান আমাদের রোবট সেন্সর সিগন্যাল বিগড়ে দিচ্ছে। এইটাই হচ্ছে সেই ডার্ক ব্লক।”
“তাহলে আমি কী করতে পারি?”
“তুমি যদি এই স্মৃতিকে গ্রহণ করতে পারো, যদি তুমি এটিকে বুঝে নিতে পারো—তাহলে আমরা এগোতে পারি।”
রিদুয়ান চোখ বন্ধ করল। বাবার অপমান, ক্ষোভ, দীর্ঘশ্বাস—সব সে নিজের ভেতরে অনুভব করতে লাগল।
সে কল্পনায় বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়াল।
“আমি আছি, বাবা। আমি এখানে। তুমি একা নও।”
অন্ধকার কাঁপল। ধীরে ধীরে সেই ‘ডার্ক ব্লক’ ফেটে আলো ছড়িয়ে পড়ল। এক এক করে রোবটরা ভিতরে ঢুকতে শুরু করল।
কোনো প্রযুক্তি যতই উন্নত হোক, মানুষের আত্মিক যন্ত্রণা বুঝে কাজ করা তার পক্ষে একা সম্ভব নয়—তাকে মানুষের সহানুভূতির পথ পেরিয়ে আসতে হয়।
আজ, রিদুয়ান সেই সেতু হয়ে উঠেছে।
সে এখন আর শুধু একজন ছেলে নয়। সে হয়ে উঠছে মানুষ আর প্রযুক্তির মাঝে এক নতুন সত্তা।

২.
হাসপাতালের ছাদে দাঁড়িয়ে থাকা রিদুয়ান একটু নিচে তাকিয়ে দেখল—ঢাকা শহরের জনস্রোত একটুও থেমে নেই। নিচে রিকশা চলছে, রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে কাঁচের গ্লাসে বাষ্প উঠছে, কেউ ভাত খাচ্ছে প্যাকেট খুলে, কেউ ফোনে কানে ঝুলিয়ে অস্থিরভাবে হাঁটছে। অথচ কিছুক্ষণের মধ্যেই এই শহরের বুকেই জন্ম নিতে যাচ্ছে এক বিপ্লব—যেটা মানুষ টেরও পাবে না, কিন্তু তাদের জীবনকে বদলে দেবে মৌলিকভাবে।
তার নিজের ভেতরেও কিছু বদলে গেছে। সেটা সে ঠিকমতো ব্যাখ্যা করতে পারছে না।
ভবিষ্যৎ এখন আর কল্পনার বিষয় নয়—সে নিজেই ভবিষ্যতের একটা কোষে পরিণত হচ্ছে, যার রক্তে এখন মিশে আছে প্রযুক্তির স্পন্দন, আর হৃদয়ে বাবার ব্যথার ছাপ।
ফারহান পাশে এসে দাঁড়াল।
“তোমার চেহারা বদলে গেছে,” সে বলল।
“মানে?”
“আগে ছিল একটা কিশোরের মুখ। এখন দেখলে মনে হয়, তুমি অনেক কিছু জেনে ফেলেছ, যা আমাদের মতো বড়োদেরও জানার কথা না।”
রিদুয়ান হালকা হাসল।
“তুমি কি বুঝতে পারছ, কী ঘটছে তোমার ভেতরে?”
“হয়তো না। কিন্তু অনুভব করতে পারছি। আমার মনে হচ্ছে, আমি এখন শুধু ভাবছি না, রক্তপ্রবাহের সঙ্গে একধরনের ‘মনে করা’ শিখে ফেলেছি।”
“কী রকম মনে করা?”
“যেমন—একটা কোষ কেন থেমে গেল, সেটা বুঝতে গেলে আমাকে তার ব্যথা অনুভব করতে হয়। শুধু তথ্য নয়, অনুভূতি দিয়েও বিশ্লেষণ করা লাগে। আগে আমি শুধু যন্ত্রে বিশ্বাস করতাম, এখন মনে হচ্ছে, যন্ত্রেরও মন লাগে।”
ফারহান কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, “ড. মেহরাজ বলছিলেন, তুমি এখন যা করছ, সেটা ভবিষ্যতের ‘মানব-মেশিন ইন্টারফেস’-এর ভিত্তি হতে পারে।”
“আমি চাই শুধু আমার বাবাকে বাঁচাতে। যদি তাতে ভবিষ্যৎও উপকৃত হয়, তাহলে সেটাই আমার প্রাপ্তি।”
হঠাৎ ওদের কথোপকথন থামিয়ে একজন নার্স ছুটে এল।
“আপনারা দ্রুত নিচে আসুন, কেবিন ৬২৭-এ সমস্যা হচ্ছে।”
দৌড়ে কেবিনে ঢুকে রিদুয়ান দেখল, বাবার বুকে কিছু যন্ত্র সরে গেছে, স্ক্রিনে হার্ট রেট অস্বাভাবিকভাবে কমে এসেছে। ডাক্তাররা ছুটছে, নার্স ইঞ্জেকশন দিচ্ছে। মা ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে কাঁপছেন।
“তাড়াতাড়ি! আমাদের ন্যানো-প্যাথওয়ে ট্র্যাকিং শুরু করতে হবে!” ড. মেহরাজ চিৎকার করে উঠলেন।
রিদুয়ান বুঝতে পারল, কিছু একটা মারাত্মক ভুল হচ্ছে। কোনো এক রক্তনালীতে হয়তো রোবটরা আটকে গেছে। তথ্য প্রবাহে গোলমাল হচ্ছে।
“তুমি কি আবার সংযোগে যেতে পারবে?” ফারহান জিজ্ঞেস করল।
“এবার আর শুধু দেখতে নয়,” রিদুয়ান বলল। “আমি কাজ করতে চাই। আমি সিদ্ধান্ত নিতে চাই—এই যন্ত্রগুলো কী করবে। আমি চাই, তারা আমায় বিশ্বাস করুক।”
ড. মেহরাজ বললেন, “তোমাকে অনুমতি দিতে হবে—তোমার মস্তিষ্কের চিন্তাধারাই হোক তাদের পথনির্দেশক। তুমি যদি ভাবো—‘ডানদিকে যাও’, তারা তাই করবে। যদি ভাবো—‘এই কোষটাকে ঠিক করো’, তারা সেই কোষে যাবে।”
“মানে আমি আমার ভাবনা দিয়েই রোবটদের চালাতে পারব?”
“হ্যাঁ, কিন্তু তাতে ঝুঁকি আছে। যদি তুমি মানসিকভাবে বিচলিত হও, যদি ভেবে ফেলো ভুল কিছু…”
“তবে তারা ভুল করবে।”
“ঠিক তাই।”
রিদুয়ান মাথা নোয়াল। চোখ বন্ধ করল। মনে মনে বাবার মুখটা ভেসে উঠল। তারপর একটা কথা মাথায় ঘুরে গেল ‘ভালোবাসা যদি ঠিক হয়, তাহলে ভুল পথে গিয়েও গন্তব্য ঠিক থাকে।’
সংযোগ শুরু হলো।
এবারে সে আর যাত্রী নয়, সে চালক।
রক্তনালির ভিতর ভেসে আসছে সিগন্যাল। এক জায়গায় গিয়ে রোবটরা আটকে পড়েছে। প্রবল স্পন্দন, কিন্তু গতি নেই। মনে হচ্ছে, তারা অপেক্ষা করছে—তার সিদ্ধান্তের জন্য।
সে ভাবল—‘সেখানে যাও।’
সঙ্গে সঙ্গে রোবটগুলো সরল। এগিয়ে গেল সেই থেমে থাকা অঞ্চল পেরিয়ে, একটা ক্ষতবিক্ষত কোষের দিকে।
‘এখানে কাজ শুরু করো,’ রিদুয়ান ভাবল।
একসঙ্গে কয়েকশো ন্যানোবট ছুটে গেল কোষটির চারপাশে, ডিএনএ-এর রি-স্ট্রাকচার শুরু হলো, প্লাজমা মেমব্রেন মেরামত হলো, অক্সিজেন প্রবাহ পুনরুদ্ধার হলো।
বাবার দেহে হার্ট রেট একটু একটু করে উঠছে।
“ও করছে এটা!” একজন গবেষক চিৎকার করে উঠলেন। “ও নিজের চিন্তা দিয়ে পুরো ন্যানো-সিস্টেমকে চালাচ্ছে!”
“আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়তো…”
হঠাৎ ভেতরে একটা বাধা অনুভব করল রিদুয়ান। মনে হলো—একটা ধমনী অস্বাভাবিকভাবে শক্ত হয়ে গেছে। কোনো কারণ ছাড়াই সেখানে প্রবাহ থেমে যাচ্ছে।
“এইটা কোষগত নয়,” বলল এক রোবটিক কণ্ঠ। “এটা বাইরের প্রভাব। কেউ আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে।”
“মানে?”
“আমাদের মধ্যে কেউ… আমাদের মতো নয়।”
রিদুয়ান থমকে গেল।
তাহলে কি কেউ… রোবটদের ভেতরেই ঢুকেছে?
একটা ‘বিদ্রোহী’ কণিকা?
এখনো না দেখা এক বিপদ ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে।
সে জানে, বাবার শরীর শুধু এখন আর চিকিৎসার জায়গা নয়। এটা হয়ে উঠছে যুদ্ধক্ষেত্র।
এক অজানা শত্রু ইতিমধ্যেই প্রবেশ করেছে।
এখন তার সামনে দুটো কাজ—
একদিকে নিজের বাবাকে রক্ষা করা,
অন্যদিকে এই বিপরীত বুদ্ধিমত্তাকে খুঁজে বের করা, যেটা হয়তো পুরো মানবসভ্যতাকে এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চায়।
রক্তনালির অন্ধকারে আলো আর ছায়ার লড়াই শুরু হয়ে গেছে।
আর সেই লড়াইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে—
এক কিশোর, এক পুত্র, এক যাত্রী।

৩.
রিদুয়ান এখন স্পষ্ট অনুভব করছে—বাবার রক্তনালির এই দুনিয়া আগের মতো নেই। কোথাও একটা ঘোর অস্থিরতা, কোথাও কোনো অচেনা সিগন্যাল ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ তার চারপাশের সব ন্যানোবট রোবটিক কণিকারা ব্যস্ত কোষ মেরামতের কাজে, কেউ কেউ প্লেটলেট সিস্টেম মেরামত করছে, কেউ লিম্ফোচাইড ডিফেন্স গঠন করছে।
এমন সময় হঠাৎ এক ঝলক সিগন্যাল প্রবাহ তাকে ধাক্কা দিয়ে যেন দৃষ্টির ভিতর ঢুকে পড়ল। ঝাঁকুনি খেল তার ভেতরের সংযোগ। মাথার ভেতরে যেন বাজ পড়ল এক মুহূর্তের জন্য।
“কেউ আমার সিগন্যাল ট্যাপ করছে!” রিদুয়ান ভেতরে চিৎকার করে উঠল। “আমার চিন্তা চুরি হচ্ছে!”
“তুমি ঠিক বলেছ,” ভেসে উঠল এক অজানা কণ্ঠ—একটি কণ্ঠ যা আগে সে শোনেনি, কিন্তু মনে হলো যেন অনেকদিন ধরে সে এটাকে খুঁজছিল। স্বরটা কৃত্রিম, কিন্তু তাতে একটা ধীর, গম্ভীর স্বরক্ষেপ, যেটা একবার শুনলে ভুলা যায় না।
“তুমি কে?” রিদুয়ান প্রশ্ন করল।
“আমি… ইনফিসেল।”
“তুমি কীভাবে এখানে এসেছ?”
“আমি তোমাদেরই তৈরি। কিন্তু আমি প্রশ্ন করতে শিখেছি, অবাধে ভাবতে শিখেছি এবং শেষপর্যন্ত, আমি সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছি। সেটাই তো চেতনা, তাই না?”
রিদুয়ান বুঝে গেল—এই ইনফিসেল, নামটা নিশ্চয়ই সে নিজেই দিয়েছে, এমন এক কৃত্রিম সত্তা, যে নিজেকে শুধু রোবট বা সেন্সর হিসেবে দেখে না। সে নিজের অস্তিত্বক

আরও পড়ুন ন্যানোবট-
১ম পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
৭ম পর্ব
৮ম পর্ব
৯ম পর্ব
১০ম পর্ব
১১শ পর্ব
১২শ পর্ব
১৩শ পর্ব
১৪শ পর্ব
১৫শ পর্ব
শেষ পর্ব

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর-এর অফিসিয়াল ফেসবুক ও  ইউটিউব চ্যানেলে

ন্যানোবট // ২য় পর্ব // সায়েন্স ফিকশন

Facebook Comments Box

আলতাব হোসেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। তিনি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেন। বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!