সোনালী-৪র্থ-পর্ব
এ কে আজাদ দুলাল (গল্প),  গল্প,  সাহিত্য

সোনালী (৪র্থ পর্ব)

সোনালী (৪র্থ পর্ব)

এ কে আজাদ দুলাল

 

অনেক দিন কেটে গেছে হিজড়া পরিবারের সাথে। সুখ-দুঃখ মিলে একাকার হয়ে গেছে। বয়স বিশ পার হয়ে গেছে কখন, জানি না। কিন্তু একটা জিনিস মনের ভেতর উপলব্ধি  হতো। শরীরে যৌন আকাঙ্খা বলে কিছু আছে। কিন্তু প্রকাশ করা মানেই সবার কাছে উপহাসের পাত্র হওয়া। মনের ভেতর তুষের অনল জ্বলে আবার ধপ করে নিভে যেতো। দিন বেশ কেটে যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন রাতে আঁধারে পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেলাম নিষিদ্ধ পল্লীতে। এখানেও তাকে নিয়ে হিজড়াদের সর্দারনী ছলচাতুরী করতে ছাড়ে নি। এবার নিকৃষ্টতম নরকে স্থান হলো আমার। মৃত্যুর পর পাপীষ্ঠ লোকদের নরকে জায়গা হবে শুনেছি। সে নরক কি রকম তা মানুষের চিন্তার বাইরে। এটা একটা বাস্তব নরক। এখানে যে একবার  পা রেখেছে সেই জানে রাতের অন্ধকারে এ নরকে  কি হয়। বিভিন্ন স্তরের মানুষ এখানে আনাগোনা করে। তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ আয়োজন।

আরও পড়ুন গল্প একজন অনন্যা

সর্দারনী ভেবেছিল আমার চেহারা সুন্দর তাই আমাকে দিয়ে বড় মাপের খদ্দের ধরা যাবে।  কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। আর আমি প্রস্তুত থাকতাম নির্যাতনের অপেক্ষায়। ইতোমধ্যে খদ্দেরা জেনে গিয়েছিল আমি একজন হিজড়া।

স্যার, বেশি দিন সেই নরকে থাকতে হয় নি। সেখানে মাদক চোরাচালানিদের আসর বসতো। আমার  হিজড়ে পরিচয় তা তারা জেনে যায়। দশ হাজার টাকায় আবার  বিক্রি হয়ে যাই। এবার তৃতীয়বার বিক্রি হলাম। কি বিচিত্র জীবন। চিন্তা করতে থাকি আমি মেয়ে মানুষ, না পুরুষ মানুষ। আসলে আমার পরিচয় কি। আমি কি হিজড়ে মানুষ। আসলে আমি পরিচয়হীন নিকৃষ্ট প্রাণী। সব পাত্রে ধারণ করতে হয়েছে।

আনা হলো সুন্দর একটা বাড়ীতে। বেশ নিরিবিলি এলাকায়। বেশ ক’জন যুবক-যুবতীকে দেখতে পেলাম। কিন্তু আশ্চর্য্য হলাম তারা কেউ আমার সাথে কোন কথাই বললো না। দেখতে সবাই ভদ্র ঘরে সন্তান বলে মনে হলো। কথায়-বার্তায়-আচরণ বুঝার উপায় ছিল না। তারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। সকাল হতে কে কোথায় যাচ্ছে কে খবর রাখে। এক সপ্তাহের মধ্যে  টের পেলাম আসলেই এদের একজন নেতা আছে। সে কোথায় থাকে কেউ জানে না। নিখুঁত তাদের নেটওর্য়াক এবং সুশৃংখল কর্মীবাহিনী। সবাই জীবনের ধান্দায় এই কাছে নেমেছে।

আরও পড়ুন গল্প সোনালি সকাল

নতুন জীবন। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এবার সোনালী সমাজের একজন স্মার্ট মহিলা। গায়ে দামী থ্রী-পিচ। তার ওপর বোরখা, চোখে সানগ্লাস,পায়ে দামী সেন্ডেল, হাতে ভ্যানিটি ব্যাগ আর গায়ে মাখে  দামী সুগন্ধী পারফিউমার। এছাড়া হাতে থাকে একটা সাধারণ মোবাইল ফোন। কাজের ভেতর  ভ্যানিটিব্যাগটি  ঠিক জায়গায় হাতে বদল করা। কাজটা ঝুকিঁপূর্ণ কিন্তু জীবনটা বেশ সুখেই কেটে যাচ্ছিল।

একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল স্যার, হয়ে গেলাম সোনালী ম্যাডাম।  বাবা-মার দেয়া সেই নামটা গ্রাম ছাড়ার সময় রাতের আঁধারে মিলিয়ে গিয়েছিল। গরীব বাবা মা ধর্ম মোতাবেক আকিকা করে নাম রেখেছিল কিনা জানি না। এখানে থেকে লেখাপড়া শিখেছি। কতগুলো নির্দিষ্ট ইংলিশ শব্দ ব্যবহার করা হতো তাও শিখেছিলাম।

উঠতি বয়সের যুবক আর একশ্রেণির তথাকথিত সমাজের মানুষের লোলুপদৃষ্টি পরতে শুরু হয়েছিল। দামী রেস্তরায় কফি পানের অফারও পেতাম। কিন্তু, শুধু কি তাই। অনেকে লং ড্রাইভিং এর সঙ্গী হওয়ার অনুরোধ করতো। শুনে শুধু মুচকি হাসি হেসেছি। সুকৌশলে কেটে পরা ছাড়া আর কোন গতি ছিল না। এ নিয়ে বেশ ক’বার বিপদে পড়তে হয়েছিল। গ্যাংগের বড় ভাইরা বিপদমুক্ত করেছে। কড়া নজরদারীতে ছিল জীবনটা। যাতে  ধরা না পড়ি আমি। তার  সঙ্গে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি দলের লোকজন। এদের সারা দেশ জুড়ে নেটওয়ার্ক। দিনে এক জগৎ আর রাতে অন্য জগৎ। সেই জগতের ধারণা  সাধারণ মানুষে জ্ঞানের বাইরে। বেশ চলে যাচ্ছে সোনালীর হাত বদলের ব্যবসা।

আরও পড়ুন সোনালী গল্পের-
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৫ম পর্ব
শেষ পর্ব

 

 

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে

সোনালী (৪র্থ পর্ব)

Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক তিনি। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!