সোনালী (৩য় পর্ব)
সোনালী (৩য় পর্ব)
এ কে আজাদ দুলাল
সোনালী কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো। কি বলে শান্ত্বনা দেব বুঝে উঠতে পারছি না। আবার চোখ মুছে বললো।
-মুহুর্তের মধ্যে উঠে দাঁড়িয়ে আমার মুখের ওপর একগাল থুথু দিয়ে বলে গেল।
-কি বলে গেল? জানতে চাইলাম।
-স্যার, আমি নাকি হিজড়া।
কথাটা শুনে আমার মাথায় যেন বাজ পরলো।
-শুধু এখানেই শেষ নয়। শাসিয়ে গেল, মাকে বললে সকালে সারা গ্রামে প্রচার করে দিবে সোনালী হিজড়া।
-বলেন কি?
আরও পড়ুন গল্প কাঠগোলাপ ও প্রেম
ঠিক তাই। কিন্তু সকালে যাওয়ার আগে মাকে সব বলে গিয়েছিল। আর সে দিন হতে আমার কপাল ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। পৃথিবী আমার কাছে অচেনা হয়ে গেল। আর মানুষ! কি বলবো স্যার।
-তা তো বুঝলাম। কিন্তু আপনার কণ্ঠস্বর তো মহিলাদের মত।
-সেটাই তো আমার সবচেয়ে বিপদের জায়গা।
-সেই দিন সারারাত ঘুমাতে পারে নি। আর খালাতো ভাই প্রতিশোধ নেয়ার জন্য গ্রামের উঠতি বয়সের যুবকদের কাছে সোনালী হিজড়া বলে প্রচার করে গেল। বেশ ক’জন যুবক সুযোগ পেলেই খারাপ ইঙ্গিত করত।
হিজড়াকে গ্রামে রাখা যাবে না। যে বাড়িতে থাকবে তাকে সমাজ হতে আলাদা করে রাখা হবে। এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেয়া হলো আমার বাবাকে। নিজের ঔরসজাত মেয়ে, তাকে ঘর ছাড়া করতে হবে। কোথায় থাকবে, কেমন করে জীবনযাপন করবে। আবার সমাজের সাথে বসবাস করতে হবে। এ কেমন বিচার। বাড়ীতে রান্না-খাওয়া-দাওয়া বন্ধ। সাত দিনের বাকী আর মাত্র একদিন। মা প্রায় পাগলের মত। বড়ভাই আর নিত্যদিনের খেলার সাথী ছোট ভাই মন মরা হয়ে ঘরের দুয়ারে বসে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে। কিছুই করার নেই তাদের।
শীতের রাত। খড়ের বিছানা। তার ওপর ছিঁড়া কাকথা গায়ে দিয়ে ছোট ভাইকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। বাড়ির অন্যরাও ঘুমিয়ে পড়েছে। হঠাৎ বাড়ীর বাইরে লোকজনের ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙ্গে যায় সবার। জোর করে তারা আমাকে নিয়ে চলে যায় রাতের আঁধারে। এসবের পিছনে ছিল আমার খালাত ভাই।
আরও পড়ুন গল্প সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা
হিজড়াদের আড্ডাখানায় জায়গা হলো আমার। নাচ-গান শেখানো হলো। এবার সঙ সেজে মানুষকে খপ্পরে ফেলে টাকা আদায় করা। বছরখানেক চটলদারী ব্যবসা আর মানুষকে ফাঁদে ফেলে টাকা উপার্জন কাজটা বেশ ভাল চলছিল। শরীর ও মন উভয়ই অশান্তিতে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। সমাজে এক শ্রেণির অসহায় মানুষ কত দুর্বিষহ জীবন যাপন করে কেউ তার খবর রাখে না। সোনালীদের সমাজে পরিচয় কি? কেনইবা তাদের আর দশজনের মত বাবা-মা- ভাই-বোনদের সংসারে জায়গা হয় না। সমাজে তারা অবহেলিত। কত প্রতিবন্ধী সন্তানেরা বাবা-মায়ের আশ্রয়ে বড় হয়ে উঠছে। তাদের জন্য রয়েছে কত সাহায্য সংস্থা। প্রতিদিন হিজড়াদের জীবনে নেমে আসে কালবৈশাখী ঝড়। ভাবছেন সোনালী নামের অশিক্ষিত এক পদ্মা পাড়ের গরীব দিনমজুরীর মেয়ে এত জানলো কি করে?
-স্যার, প্রতিদিনের ঘটনা আমাকে সব শিখিয়েছে। ছোট বেলায় একবার যা শুনতাম তা অবিকল মনে থাকতো। গলায় সুর ছিল। তাই তো হিজড়া সর্দানীর হুকুমে সৌখিন নিম্ন মধ্যবিত্ত বাড়ীতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গানের জন্য যেতে হতো। অল্প সময়ে ভাল বাংলা পড়া শিখেছিলাম এবং সুযোগ পেলেই খবরের কাগজ পড়তাম নিয়মিত। কত প্রেম পত্র পেয়েছিলাম। কপালে যদি থাকে হাড়, কি করবে চাচা খাজেনদার।
আরও পড়ুন সোনালী গল্পের-
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৪র্থ পর্ব
৫ম পর্ব
শেষ পর্ব
ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে