মামৃত্যু
মামৃত্যু
মায়ের সঙ্গে আরিফের গোসসা করবার কারণ,
একটাই তার মা সকালে ফোন দিবো আরিফ ঘুমঘুম চোখে বাতি মুরগির মত একটু রাগ ও ঝিম মেরে কথা কইয়ে ফোনের লাইন কেটে দিল। ফোনটা বালিশের নিচে রেখে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। আরিফের মা হয়তো মনে করল নেটওয়ার্ক সমস্যার জন্য লাইন কাট্টা গেছে। আবার ফোন দেয়। আরিফ লাইন কেটে দেয়। একটা সময় বিরক্ত হয়ে ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরে। কাজের বুয়া এসে দরজায় কড়া নাড়লে বা কলিং-বেল বাজালে দরজা খুলে দিয়ে, ব্যস্ত হয়ে পরে অফিসে যাওয়ার জন্য।
সকালে মেয়ে মানসির কাজের অভাব নাই। ঘর ঝাড়ু দাও, রান্না ঘরের বাসি থালাবাসন ধোও, সকালের নাশতা তৈরি করো। এই কাজ ছাড়াও মেয়ে মানুষির আরও কাজ থাকে। সকালে আয়নার সামনে গিয়ে নিজের দিকে একটু নজর দেওয়া। তার পর গোরুর মত জাবর কাটতে কাটতে মুখে ব্রাশ নিয়ে বাথরুমে যাওয়া। আবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় চিরুনি করে রান্নাঘরে গিয়ে কাজ শুরু করল মনিরা। তার পরেও অভিযোগের শেষ নেই। খাবারের প্লেটে চুল থাকার অভিযোগ। লবণ কম, ঝাল একটু বেশি হয়েছে আজ।
‘তেলের যে দাম তাতে মনে হয় হিংসুটে হয়ে তরকারিতে তেল বেশি দিচ্ছো।’ এমন একটি শব্দ মনিরার কান স্পর্শ করে বের হয়ে গেল।
এগুলো হল কমন অভিযোগ। মনিরা বেগম সহজে তা মেনে ও মানিয়ে নিয়েছে হয়তো এই শহরে কাজের বুয়ারা কত কিছু মানিয়ে চলে। সে গুলো মানুষের কল্পনার বাইরে।
আরও পড়ুন গল্প সময়ের পাঁচফোড়ন
আরিফ ঘুম থেকে ওঠে দেখল, তার মা তেরোবার ফোন দিয়েছে। এমন পাগলামো তার মা করে। মায়ের আবেগ থাকবে,ছেলের প্রতি টান থাকবে। এটাই স্বাভাবিক ! কিন্তু আরিফ ভেবে নেয় । তার মা তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। পৃথিবীর সব সন্তান-ই তাই মনে করে । মনে না করবার বিশেষ কোনো কারণও নেই?
পরের দিন আবার ফোন।
-বাজান আরিফ, তুই কবে আসপি রে বাপ । তোর জন্ন্যি আষাঢ়ে গাছের কয়ডা আম রাখছি । তুই না আসলি কিন্তু আমি আম মুখে দেবো না-নে।
-মা , করোনার অবস্থা তো ভালো না । দেখছো না প্রতিদিন কত মানুষ মারা যাচ্ছে।
-টিভির ব্যাটারা মিত্থি কতা কয়।’ তুই ক’ বাজান কবে আসপি।
-লকডাউন তো চলছে, শিথিল করবার কথা শুনছি, অফিস ছুটি দিলে আসব মা । এবার খুশি ত, মা।
-হ বাজান খুব খুশি হইছি।
-শোনো তোমার ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তুলে দিও। আমি তো অফিস থেকে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছি, তোমার জন্য রেজিস্ট্রেশন করব যাতে ঈদে বাড়ি আসলে তুমি নিতে পার।
আরও পড়ুন অশরীরী আত্মা
আরিফ ঈদে বাড়ি এসেছিল মায়ের ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন পেপার সঙ্গে নিয়ে। আসার দুদিন পর থেকে অসুস্থ। ডাক্তার দেখানো হল গ্রামের ডাক্তার। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে বললেন। কর্তব্যরত ডাক্তার করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য বললেন। দু’দিন পর রিপোর্ট আসল। আরিফের মা সত্যিই করোনায় আক্রান্ত! রোগির অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেল একটা সময়। আরিফ অসহায় হয়ে পড়ল। মায়ের আবেগের সঙ্গে আবেগ মেলানো ঠিক হয়নি। আবেগ সব সময় মঙ্গলময় নাও হতে পারে, তবে এটা সত্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আবেগ কাজে লাগালে তা ভুল সিদ্ধান্ত। করোনার টিকা নেওয়া ছিল ঠিকই তবুও আরিফ নিজ শরীরে বহন করেছিল, করোনা ভাইরাস। তার থেকেই তার মা আক্রান্ত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত সে আর দুনিয়ার আলো দেখেনি। শহরের মানুষ আবেগে গ্রামে গিয়ে, গ্রাম হয়ে উঠবে করোনার নতুন শহর, তার সঙ্গে যুক্ত হবে কান্নার খেলা।
আরিফ ঈদের ছুটি শেষ করে নগরবাড়ি ঘাটে বসে থাকে আজ কোনো নৌকা, লঞ্চ, কিংবা ফেরি কিছুই পারাপার হচ্ছে না। বাতাসে শুধু মৃত্যুর গন্ধ ভেসে আসছে চারিদিক থেকে।
ঘুরে আসুন আমাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেইজে
মামৃত্যু