মাওলানা-শেখ-মোহাম্মদ-আব্দুল্লাহ
উলাট,  মানিকহাট,  শিক্ষকবৃন্দ,  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ

মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ছিলেন উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসার সাবেক আরবি প্রভাষক।

শারীরিক প্রতিবন্ধী এই মানুষটিকে যখন মহান স্রষ্টা পৃথিবীতে প্রেরণ করেছিলেন তখন বাবা, মা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গ্রামবাসী কেউ ভাবেননি যে এই মানুষটিই মহান রাব্বুল আলামীনের কৃপায় একদিন অত্র এলাকায় নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে আর দশজন প্রতিবন্ধীর জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করবেন।

‘জন্ম হোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো’ বাংলা ব্যাকরণের ভাব সম্প্রসারণের এই প্রবাদটির একটি অনন্য উদাহরণ তিনি।

জন্ম: মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর, পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের উলাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মো: আলহাজ্ব আব্দুল কুদ্দুস সেখ।

শিক্ষা জীবন: তিনি বাড়ির পাশেই উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন ১৯৭১ সালে। অনেক সুনাম ও কৃতিত্বের সাথে  দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সে বছর পাকিস্তান মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন।

পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে আরিফপুর মাদ্রাসা থেকে আলিম, আব্দুর রব কলেজ, পাবনা (বর্তমান শহিদ বুলবুল কলেজ) হতে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি এবং পুষ্পপাড়া আলিয়া মাদ্রাসা হতে ১৯৭৫ সালে ফাজিল ও ১৯৭৭ সালে কামিল পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।

আরও পড়ুন মোহাম্মদ আবিদ আলী

কর্ম জীবন: মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ পড়াশোনার পাঠ শেষ করে ১৯৭৭ সালে উলাট সিদ্দিকীয়া ফাজিল (ডিগ্রী)  মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে আরবি সাহিত্য ও ব্যাকরণে যথেষ্ট বুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি ইসলামী আইনশাস্ত্র মানতিকে (ইসলামী শরিয়তের উপর উত্তরাধিকারী সম্পদ বন্টনের নিয়ম পুস্তক) খুবই পারদর্শী ছিলেন। তিনি ১৯৮৯ সালে অধ্যাপক সমমান পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

তিনি তাফসিরুল কোরআনেও যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেন এবং পরবর্তীতে দেশের মধ্যে বিশিষ্ট বক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। বিশেষ করে বিংশ শতাব্দীর নব্বই ও একুশ শতকের প্রথম দশকে বৃহত্তর খুলনা ও রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় জনপ্রিয় বক্তা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।

সম্মাননা: ২০০৩ সালে জাতীয় শিক্ষক নির্বাচন প্রক্রিয়ায সুজানগর উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন।

১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত প্রয়াত সাংবাদিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব ফজলে লোহানীর উপস্থাপনায় জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘যদি কিছু মনে না করেন’ অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। উল্লেখ্য আজকের জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত ছিলেন তখন ফজলে লোহানীর শিষ্য ও অনুষ্ঠানের সহযোগী।

মৃত্যু: আপন মহিমায় উদ্ভাসিত এই মানুষটি ২০১১ সালের ২৭ মার্চ, খুলনা অঞ্চল থেকে মাহফিল করে ফেরার পথে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গভীর রজনীতে সড়ক দূর্ঘটনায় পরলোকগমন করেন।

 

লেখক-

জাহাঙ্গীর পানু

ঘুরে আসুন আমাদের সুজানগর এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেইজে
Facebook Comments Box

প্রকৌশলী আলতাব হোসেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি বিকাশ এবং সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিবেদিত অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠন ‘আমাদের সুজানগর’-এর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ‘আমাদের সুজানগর’ ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক। এছাড়া ‘অন্তরের কথা’ লাইভ অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক তিনি। সুজানগর উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, শিক্ষা, মুক্তিযুদ্ধ, কৃতি ব্যক্তিবর্গ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে ভালোবাসেন। বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে একটি স্বনামধন্য ওয়াশিং প্লান্টের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেকশনে কর্মরত আছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুন পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার অন্তর্গত হাটখালি ইউনিয়নের সাগতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

error: Content is protected !!